পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৮

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৮
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

স্কুলের ভিতরে ঢুকে ছোঁয়া মাইশার জন্য অপেক্ষা করছিলো, তখনই মাইশা এসে ছোঁয়াকে এক ধাক্কা মারলো।
কিরে কখন আসছিস তুই
এইতো একটু আগেই এসে তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম,, তোর আপু কই ভিতরে আসে নাই।
না,, আপুরে বলছি তোর সাথে যবো ও যাতে চলে যায় তাই আমার স্কুলের সামনে নামায় দিয়ে চলে গেছে।
ও আচ্ছা, চল স্যার এর কাছে।
হুম।

স্যারের সাথে কথা বলা শেষ করে ছোঁয়া এদিক ওদিক তাকালো যাকে দেখার জন্য সে স্কুলে আসলো তার দেখা মিললো নাহ আর মিলবেই বা কি করে আজকে তো স্কুল টিফিন আওয়ারে ছুটি দিয়ে দিছে। সে মন খারাপ করে মাইশার হাত ধরে গেটের বাইরে বেরিয়ে আসতেই কেও একজন বলে উঠলো,,
আরেহ তোমরা যে,,,
ছোঁয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো রাদিফ, সোহেল, সাব্বির দারিয়ে আছে। ওদের দেখে ছোঁয়া অবাক হয়ে বললো,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

স্কুল তো আরো আগে ছুটি হয়েছে যখন আমি আসলাম তার একটু আগে তাহলে আপনারা এখনো এখানে কি করেন।
সাব্বির বললো,
আসলে ছুটির পরে আমাদের প্রাইভেট আছে। স্যারের বোধ হয় আজকে একটু কাজ আছে ছুটি হয়েছে ২০ মিনিট তবুও আসছে নাহ।
ছোঁয়া বললো, ওহ আচ্ছা।

সাব্বির আবারো বলে উঠলো,
তা তোমরা আজ স্কুলে কেনো আজ তো তোমাদের শেষ পরীক্ষা ছিলো।
মাইশা বললো, স্যারের সাথে একটু দরকারি কথা ছিলো কাল প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা তো তাই সেই ব্যাপারে।
হঠাৎ রাদিফ বলে উঠলো,
তা পরীক্ষা দিতেও কি দুজন একা একা গিয়েছিলে নাকি।

চমকে ছোঁয়া তাকালো রাদিফের দিকে।
সাব্বির সোহেলও তাকালো। সে ওদের সাথে কথা বললো বাহ,,,
মাইশা বলল, না ভাইয়া সাথে আপু গেছিলো প্রতিদিনই যায়। আর ওর সাথে (ছোঁয়াকে দেখিয়ে বললো) আঙ্কেল মানে ওর বাবা যায়। যদিও আজকে যায়নি।
রাদিফ ভ্রু কুচকে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
তবে আজ একা গিয়েছিলে নাকি।

ছোঁয়া তাকালো রাদিফের দিকে, রাদিফকে তার ভালো লাগে কখনো ওর সাথে কথা বলেনি দূর থেকেই দেখতো আজ সেই মানুষ ওর সাথে নিজে থেকে কথা বলছে ওর জানি কেমন কেমন লাগছে।
ছোঁয়া নিজেকে সামলে উত্তর দিলো,
আসলে বাবার আজকে জরুরি একটা মিটিং রয়েছে তার আম্মু তামিম ভাইয়াকে আমার সাথে যেতে বলেছে, তামিম ভাইয়া নিয়ে গেছিলো।

সোহের জিজ্ঞেস করলো,
এটা আবার কে?
আমায় পড়ায়।
ওহ।
ততক্ষণে রাশেদ স্যার কাজ শেষ করে রাদিফদের পড়ানোর উদ্দেশ্যে স্কুল থেকে বের হয়ে সামনে জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পরল। বললো,
কি ব্যাপার এখানে কি হচ্ছে?

সাব্বির বললো,
তেমন কিছু নয় স্যার ওদের জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি পরীক্ষা কেমন হয়েছে এই আর কি। বলেই বলদের মতন হাসছে।
স্যার ভ্রু কুঁচকালো। এরপর বললো,
জিজ্ঞেস করা শেষ হলে এবার পড়তে চলো।
আর তোমরা দেরি না করে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও স্কুলে কি হ্যাঁ জাও জাও।

এই বলে তিনি হাঁটা ধরলেন।
পিছু পিছু ওরা তিনজনও হাটা ধরল।
সাব্বির আস্তে করে রাদিফকে বললো, কিরে সামথিং সামথিং বলেই সয়তানি হাসলো। ওর সাথে সোহেলও হাসছে।
রাদিফ একবার কড়া চোখে ওর দিকে তাকিয়ে সেও আস্তে করে বললো,
একটা ফালতু কথা বললে মেরে পানিতে চুবিয়ে রাখবো।
আবারো সামনে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো। আর ওরা এখনো হাসছে।

রাশেদ স্যার বলে উঠলো,
মেয়েদের মতো কি ফিসফিস করছিস তোরা চুপচাপ হাট।
স্যারের ধমক খেয়ে ওরা চুপচাপ হাঁটতে লাগলো।
বাসায় আসতেই ছোঁয়াকে আনিতা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
পরিক্ষা কেমন হয়েছে তোর?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আম্মু।
আম্মু আমি রুমে গেলাম তুমি আমায় একদম ডাকবা নাহ আমি ঘুমাবো আহ কতো দিন ঘুমাই না সান্তি মতোন।
এই বলে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ধপাস করে বিছানায় সুয়ে গড়াগড়ি খেতে খেতে ঘুমিয়ে গেলো ছোঁয়া। তার এই ঘুম ভাঙবে একেবারে সন্ধ্যার পর।

রাদিফ সন্ধ্যার পরে বসে বসে ভাবছিলো,
আমি কেনো হঠাৎ মেয়েটার সাথে কথা বললাম। আমি তো ক্লাসের কয়েকটা মেয়ে ফ্রেন্ড ছাড়া কারো সাথে কথা বলি না উল্টে সাব্বির সোহেলকে ধমকাই সেই আমি কিনা মেয়েটার সাথে নিজে নিজে কথা বললাম কেনো,,, ধুর এমনি বলেছে ছোট্ট মেয়ে একা একা একা গিয়েছে ভেবে।
কিন্তু সাথে তো ছেলেটা গিয়েছিলো। উফ এতো ভাবছি কেনো সামান্য একটা বিষয়।
ফালতু জিনিস না ভেবে যাই গিয়ে পড়তে বসি।

এইদিকে একেবারে ৯ টায় ঘুম ভাঙলো ছোঁয়ার। আনিতা বেগম অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু ও উঠে নাই।
বার বার ডেকে ডেকে বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। অবশেষে নয়টার দিকে উঠেলো সে। উঠে কতক্ষণ থম মেরে বসে ছিলো। তারপর অনুভব করলো খুব খিদে পেয়েছে।
তাই তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে গিয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে মাকে ডাকতে লাগলো।
মা মা মায়ায়ায়া,,,
আরে হয়েছি কি ডকাত পড়েছে বাসায়।

ডাকাত পড়েনি কিন্তু খুদায় আমি মরে যাচ্ছি আম্মু তোমার মেয়ে এতো বেলা না খেয়ে আছে আর তুমি কিনা বলছো ডাকাত পড়েছে তাই চিল্লাছি এই আমায় ভালোবাসো তুমি আম্মু, সত্যি সত্যি বলো আমায় তুমি কারো থেকে নিয়ে আসোনি তো।
এই বলে কান্না কান্না ভাব ধরলো।
আনিতা বেগম বললেন,
কারো থেকে যদি দিয়ে আসতাম তবে তোরে সহ্য করতাম না তুই যা জালাস আমাকে তোরে সাথে সাথে দিয়ে আসতাম সেখানে।

এই কথা সুনে ছোঁয়া কান্না ভাব ধরে বলে আম্মু ভাল্লাগে নাহ তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো নাহ আমি খাবো নাহ।
হ্যাঁ তোরে ভালো না বাসলে তো এমনি এমনি এত বড় হয়ে গেছিস তাই না,, এবার নে খাবার দিচ্ছি তারাতারি খেয়ে নে।
হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো কতো কিছু বলবা, দাও খাবার। বলেই প্লেট নিয়ে খেতে সুরু করলো।
খেতে খেতে আবার প্রশ্ন করলো,
আম্মু আব্বু আসে নাই,, এটা বলতে বলতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।
আনিতা বেগম দরজা খুলে দেখলেন সাহেদ চৌধুরী এসেছেন। আনিতা বেগম সাহেদ চৌধুরীকে দেখে দরজা থেকে সরে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন,
আজ এতো দেরি কেনো।

আর বলো না অফিসে যা কাজ, এই বলে এক পলক টেবিলে তাকিয়ে ছোঁয়কে দেখে মিষ্টি করে হেসে বললেন,
আম্মু কেমন হয়েছে আজকে পরিক্ষা?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আব্বু।
বিনিময়ে সাহেদ চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন দেখবে খুব ভালো ফলাফল করবে ইনশাল্লাহ।
ছোঁয়া বিনিময় মুচকি হাসলো।
বাবার সামনে সে কোন দুষ্টুমি করে না, একদম ভদ্র বাচ্চা কাচ্চা।
সাহেদ চৌধুরী আবার আনিতা বেগমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
সুফি, সাফি কই?

সাফি খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে আর সুফি পড়ছে এক্ষুনি ডাকতাম ওকে। বলতে বলতেই সুফিকে ডাক দিলেন খাওয়ার জন্য।
সুফি এসে টেবিলে বসলো
সাহেদ চৌধুরী মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
তবে তোমরা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
আনিতা বেগম বললেন তুমি সাওয়ার নিয়ে এসো আমি অপেক্ষা করছি। সাহেদ চৌধুরী মাথা নেড়ে রুমে চলে গেলেন।
এমনিতে রাতের খাবার তারা একসাথে খায়। কিন্তু আজ সাহেদ চৌধুরী দেরিতে আশায় আর সারা বিকেল ছোঁয়া ঘুমে থাজায় এখন তাড়াতাড়ি খেতে আসায় একসাথে ডিনার হলো না।

ডিনার কমপ্লিট করর ছোঁয়া আর সুফি রুমে এসে পরেছে ঘুমুতে।
সুফি বললো, আপু চলো মারামারি করি।
ছোঁয়া বললো, হ্যাঁ, আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোর সাথে মারামারি করতে,, মারও বেশি খেতে হয় আমায় আর মায়ের কাছে বকাও চুপচাপ ঘুমা।
এই বলে বাতি নিভিয়ে ড্রিম লাইট জালিয়ে সুয়ে পরল।
সুফি মুখ বাকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েও গেলো।

ছোঁয়া যখন বুঝলো সুফি ঘুমিয়ে গিয়েছে তখন পাশ ফিরে ওকে একটু আদর করে দিলো।
তার ঘুম আসছে না। আসবে কি করে সারা সন্ধ্যা বিকেল ঘুমানোর পরে রাতে কারই বা ঘুম আসে।
শুয়ে থাকতে থাকতে সে রাদিফের কথা ভাবতে লাগলো।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৭

রাদিফ আজ নিজে ওর সাথে কথা বলছে মনে পড়তে একরাশ আনন্দ অনুভূতি হলো ছোঁয়ার ছোট্ট মনে।
আচ্ছা সে যে এতো ভাবে রাদিফের কথা তার কি কখনো মনে পরে ছোঁয়া নামের এই ছোট্ট মানবির কথা। তার মতো কল্পনায় না ভাবুক কখনো কি হঠাৎ করে এক ঝলক তাকে মনে আসে।
এসব আজগুবি কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো ছোঁয়া।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৯