পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৭

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৭
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

কাল ছোঁয়ার শেষ পরীক্ষা,
তামিম পড়াতে এসেছে।
ছোঁয়া না পড়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে আর তামিম কিছুক্ষণ ধরে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। মূলত ইসলাম অনৈতিক শিক্ষা পরিক্ষা তাই সে না পড়ে এভাবে বসে আছে।

তামিম অনেকক্ষণ যাবত এইসব লক্ষ্য করার পর হঠাৎ বলে উঠলো,
সমস্যা কি তোমার।
তামিমের কথায় ছোঁয়া চমকে উঠে তার দিকে তাকালো। বললো,
ক’কই কি করলাম আমি।
সেটাতো তুমিই ভালো জানো। না পড়ে হুদাই এভাবে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো।
সারাদিন পড়তে কার ভাল লাগে বলেন, আমার এখন ঘুম পাচ্ছে একটুও পড়তে ইচ্ছে করছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছোঁয়া এসব ফালতু এক্সকিউজ না দিয়ে পড়ো। ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা তে কি হইছে যত ভালো করে লিখবে তোমার পয়েন্ট বাড়বে।
ছোঁয়া কিছু বললো নাহ। মাথা নিচু তামিমের নজর এড়িয়ে করে মুখ বাকালো। কিন্তু তামিমের নজরে সেটা এড়ালো না। সে মুচকি হাসলো।
এরপর বললো,
সোনো ছোঁয়া এখন আমায় যেতে হবে একটা কাজ আছে। তুমি কিন্তু পড়া থেকে একদম উঠবে না চুপচাপ পড়বে।

ছোঁয়া মাথা তুলে তাকালো। এরপর হেসে বললো,
ওকে স্যার। আপনি চিন্তা করবেন না আমি লক্ষী মেয়ের মতো পড়বো।
তামিম মুচকি হেসে বলল,
আচ্ছা গুডবাই।
ছোঁয়স বিনিময়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।
তামিম যেতেই ছোঁয়া বই খাতা গুছিয়ে নিয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

হুহ বয়েই গেছে আমার পড়তে, এখন আমি একটা ঘুম দিবো।
ছোঁয়া আজ তামিমের সাথে পরীক্ষা দিতে যাবে। মিস্টার সাহেদ চৌধুরীর অফিসে জরুরী একটা মিটিং পড়েছে আর আনিতা বেগমের পক্ষেও সম্ভব নয় ছোট বাচ্চা নিয়ে ছোঁয়ার সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাওয়া। ছোঁয়া যা বোকা ওকে একা ছারার প্রশ্নই উঠে নাহ। তামিমকে সে চেনে খুব ভালো ছেলে। তাইতো কাল রাতে কল করে বলেছিলো ফ্রি থাকলে ছোঁয়ার সাথে যাওয়ার কথা।
যদিও তামিমের একটু কাজ ছিলো তবুও বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যায়।

সকাল সকাল ছোঁয়া তৈরি হয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো। আনিতা বেগম ওর প্লেটে রুটি দিচ্ছিলেন তখন ছোঁয়া জিগেস করলো,
আম্মু আব্বু কোথায়।
আনিতা বেগম কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললো ওহ তোকে তো বলাই হয়নি তোর বাবার অনেক জরুরী একটা মিটিং আছে যেতে পারবে নাহ আজ। আমি তামিমকে বলেছি ও যাবে।
ছোঁয়া কিছু বললো না তবে বাবার সাথে যেতে তার ভাল্লাগে তাই একটু মন খারাপ হলো।
তবুও ভাবলো কাজ আছে কি আর করার। আনিতা বেগমকে বললো,

আম্মু স্যারকে বলে দিও স্কুলে যাবো কালকে প্র্যাকটিকাল পরিক্ষা আছে সেই জন্য স্কুল একটু দরকার।
আনিতা বেগম বল্লেন, আচ্ছা বলে দিবো।
তখনি কলিং বেল বাজলো।
আনিতা বেগম গিয়ে দরজা খুলে দেখলেন তামিম এসেছে। বললো,
তামিম এসো ভিতোরে।
আনিতা বেগমের কথায় তামিম মুচকি হেসে ভিতোরে ঢুকলো।

আনিতা বেগম বললেন, টেবিলে বসো আমি নাস্তা দিচ্ছি।
তামিম বলল, আরে না আন্টি আমি বাসা থেকে খেয়ে এসছি।
আনিতা বেগম নাছোড়বান্দা তিনি জোর করে তামিমকে টেবিলে বসিয়ে নাস্তা দিলেন।
তামিম ছোঁয়ার উল্টো পাশের চেয়ারটায় বসেছে।
ছোঁয়া এক পলক তামিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি এসে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

খাওয়া শেষে ওরা দুইজন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
বের হবার আগে আনিতা বেগম তামিমকে বলে দিয়েছে আসার সময় ছোঁয়াকে স্কুলে নামিয়ে দিতে তামিম মাথা নাড়িয়েছে।

স্কুলে তেমন কোন কাজ নেই না গেলেও চলতো কিন্তু ছোঁয়া যাচ্ছে তার মনটা ছটফট করছে রাদিফকে দেখার জন্যে। এই প্রথম পরীক্ষতে দেখে ছিলো এতো দিনে একটি বার দেখা পায়নি তার। ও কালকের জন্য ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না তাই ঠিক করেছে আজই যাবে।

তামিম একটা রিক্সা নিয়ে সেটায় উঠে বসলো। ছোঁয়াকে বললো উঠে এসো।
ছোঁয়াও রিক্সায় উঠলো।
প্রেয়সীর সাথে রিক্সা ভ্রমন, রোমাঞ্চকর।
তামিমের মনে প্রজাপতি রা উড়ছে। সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে পাশে থাকা নারীটির জন্য।
কিন্তু সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই সেই রমণীর।

কেন্দ্রে পৌঁছে রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়ালো। তামিম ভাড়া মিটিয়ে ছোঁয়াকে নিয়ে এগিয়ে গেলো।
তখন মাইশা এসে বললো কিরে কখন এলি সেই কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি, চল সবাই ভিতরে চলে গেছে।
বলতে বলতেই পাশে থাকা তামিমের দিকে চোখ পড়তে হা করে তাকিয়ে রইলো।

তামিম ছোঁয়াকে বললো,
আচ্ছা ভিতরে যাও তাহলে,
ঠিকঠাক পরীক্ষা দিও, অল দ্যা বেস্ট।
ছোঁয়া বিনিময়ে মুচকি হাসলো। বললো, ওকে।

ভিতরে যেতে মাঝে ছোঁয়াকে বললো,
এই ছেলেটি কে রে।
আমার মাস্টারমশাই।
মাইশা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ সময় দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
এই পোলারে কোন অ্যাঙ্গেলে তোর মাস্টারমশাই টাইপ লাগে বল বইন। এতো দিন ভাবতাম কোন বুইরা বেডায় তোরে পড়ায় তাইতো তুই মাস্টারমশাই কস। ভাই আমি তো দেইখাই ক্রাশ।

ছোঁয়া মাইসার কথা শুনে বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকালো।
তুই আমার স্যারের উপরে ক্রাশ খাইছোস। খুশির খবরটা তো স্যারকে আজকেই দিতে হয়।
ভুলেও নাহ তুই কিচ্ছু বলবি নাহ বলে দিলাম তোরে। তাহলে তোর সাথে আড়ি।
তুই ক্রাশ খাইছোস এটা বলব না কেনো।
আরে বুঝস নাহ আমি মেয়ে লজ্জা তো আছে নাকি। বেশি কথা না বলে চল।

পরিক্ষা শেষে ছোঁয়া আর মাইশা একসাথে বের হলো। ভিরের মধ্যে আস্তে আস্তে মাইশার হাত ধরে এগোচ্ছে ছোঁয়া। কেবলি পিছন থেকে একটা ধাক্কা লাগবে ছোঁয়ার এমন সময় কেউ একজন ছোঁয়াকে শক্ত হাতের এক টানে সরিয়ে আনে।
ছোঁয়া যসামনে তাকিয়ে দেখে তামিম তাকে টান মেরেছে। ও বললো,
কি হলো মাস্টারমশাই এমন টানাটানি করছেন কেনো।
তামিম দাত চেপে বললো,
ইডিয়েট দেখছো না এতো ভির পরে বের হতে পারলে নাহ এক্ষুনি লাগতো একটা ধাক্কা।

ছোঁয়া কিছু বলবে তখনি তামিম বললো,
একটা ফালতু কথা না বলে এখন চলো এই ভিড় থেকে।
ছোঁয়া আর কিছু বলল না।

তামিম ছোঁয়ার হাত ধরে রাখা অবস্থায় হাটা ধরলো আর মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, দাঁড়িয়ে না থেকে চলো। মাইশার তামিমের কথা শুনে ধেন ভাঙ্গে, এতক্ষণ ও তামিমকেই দেখছিলো। মাইশা ওদের সাথেই ভির থেকে বের হতে লাগলো।
আর তামিম ছোঁয়কে আগলে নিয়ে এবং মাইশাকে এক পাশে নিয়ে ভির থেকে বের হলো।
মাইশার বোন এগিয়ে আসতেই ছোঁয়াকে ওর জন্য স্কুলে দাঁড়াতে বলে চলে গেলো। আর মনে মনে তামিমের কথা ভাবতে লাগলো।

তামিম ছোঁয়ার জন্য আইসক্রিম চিপস কিনে রিক্সা ঠিক করে ছোঁয়াকে নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। তারপর ওকে চিপস আর আইসক্রিম দিয়ে বললো,
খুদা পেয়েছে তাই না খেয়ে নাও।
ছোঁয়া আইসক্রিম খেতে লাগলো আর তামিম ওকে দেখতে লাগলো। বাচ্ছাদের মতো জামায় মাখিয়ে ফেলেছে মেয়েটা অবশ্য কিউট লাগছে।

ছোঁয়া ছোট ছোট চোখ করে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
এনেছিলেন যখন দুইটাই আনতেন এভাবে আমার খাবারে নজর দিচ্ছেন কেনো যাতে করে আমার পেট ব্যাথা হয়।
তামিম কি বলবে ভেবে না পেয়ে নাক ছিঁটকে বললো,
তুমি তো বাচ্ছাদের মতো মুখ জামা কাপড়ে মাখিয়ে ফেলেছো কি অবস্থা করেছো আবার বলছো আমি নজর দিচ্ছি।
তারপর টিস্যু বের করে দিলো।

ছোঁয়া ঠোঁট উল্টালো। তার কি দোষ সে যাই খায় জামা কাপড়ে মাখিয়ে ফেলে ইচ্ছে করে তো আর করে নাহ। মায়ের থেকে কম বকা খায় না এই জন্যে।
কিছুক্ষণ পর তামিম জিজ্ঞেস করলো,
স্কুলে কি দরকার তোমার।
আব.. আসলে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা কাল তাই আর কি স্যারের সাথে একটু কথা আছে।

তামিম চোখ ছোট ছোট করে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
স্যাররা যা বলার আগেই বলে দিয়েছে এখন আবার কি দরকার।
ছোঁয়া কথা ঘুরাতে বললো,
আপনি তো দখছি সিআইডি অফিসার দয়ার মতো জেরা করছেন।
তামিম চোখ মুখ কুচকে নিলো মেয়েটা সবসময় ওকে আজেবাজে কথা বলে।
তারপর বললো,
চুপ করে খাও কোন কথা বলবে নাহ।

ছোঁয়া মুখ টিপে হেসে চুপ করে খেতে লাগলো।
স্কুলের সামনে আসতে ছোঁয়া রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
তামিম ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আমি কি তোমার জন্য ওয়েট করব, কথা শেষ করে আসো তারপর তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাই। নয়তো চলো তোমার সাথে যাই।

ছোঁয়া তাড়াতাড়ি করে বললো,
আরেহ তার কোন দরকার হবে না স্যার, বাসা তো বেশি দূরে না তাছাড়া স্কুল থেকে বাসা প্রতিদিনই যাওয়া আসা করি আর মাইশা তো সাথে আছেই।
তামিম আর কিছু বললো নাহ। তার একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে হবে। কিছুদিন পরেই তার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা। বন্ধুর থেকে দরকারি কিছু নোটস নেবে। সকালেই দেখা করার কথা ছিলো কিন্তু ছোঁয়ার সাথে যাওয়ায় এখন গিয়ে দেখা করতে হবে। নয়তো একেবারে ওকে নিয়েই ফিরতো।

তামিম ছোঁয়াকে বললো,
তবে সাবধানে বাসায় যেও।
বলে চলে গেলো।
ছোঁয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে স্কুলের ভেতরে ডুকলো।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৬

দূরে দাঁড়িয়ে এসব কিছুই দেখছিলো রাদিফ।
মনে মনে বললো,
কে ছেলেটা এই মেয়ের সাথে। ওর কি হয়।
একটু পরেই আবার নিজেই বললো যাই হোক তাতে আমার কি মেয়েটা আস্ত এক পাগল ওর বেপারে আমি কেনো ভাবছি।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৮