পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৬

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৬
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

আজ ছোঁয়ার জে এস সি পরীক্ষা।
প্রথম বাংলা পরীক্ষা। কাল সারারাত মন দিয়ে পড়েছে ছোঁয়া। ভোরে উঠে ফজরের নামাজের পর আবারো পড়তে বসেছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজে। বই খাতা রেখে ফাইল গুছিয়ে রাখলো।
তখন মিসেস আনিতা বেগম ছোঁয়ার রুমে এসে বললো,
রেডি হয়ে নে ছোঁয়া তারপর নয়তো দেরি হয়ে যাবে।
ছোঁয়া বললো,
হুম আম্মু এখনই উঠেছি তুমি চাও আমি রেডি হয়ে আসছি।
আচ্ছা আয়।

তারপরে ছোঁয়া একেবারে রেডি হয়ে ফাইল নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো।
সাহেদ চৌধুরী টেবিলে চলে এসেছেন নাস্তা করতে।
ছোঁয়া তার বাবার সাথেই যাবে পরীক্ষার হলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

টেবিলে বসেতে বসতে সাহেদ চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছো তো।
ছোঁয়া বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
হুম আব্বু সব ঠিকঠাক নিয়েছি।
তারপর চুপচাপ নাস্তা করতে লাগলো।

বের হবার সময় মিসেস আনিতা ছোঁয়ার কাছে এসে বললেন,
সুন্দর করে লিখবে টেনশন নেবে না কোনো, ভালো কিছুই হবে বুঝেছো।
ছোঁয়া বললো,
দোয়া করো আম্মু।
মায়ের দোয়া সব সময় সাথেই থাকে পাগলী।
ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসলো।

সুফি বললো,
আপু তুমি সুন্দর করে পরীক্ষা দিও কেমন।
ছোয়া সুফির গাল টেনে দিলো।
সাফিকে একটু আদর করে বাবার সাথে বেরিয়ে গেলো।

পরীক্ষার কেন্দ্র ছোঁয়াদের স্কুল থেকে খানিকটা দূরে। স্কুলের সামনে দিয়ে কেন্দ্রে যেতে হয়।
ছোঁয়া বাবার সাথে রিক্সায় বসে আছে। রিক্সাটা জ্যামে আটকে আছে ওদের স্কুলের সামনে।
ছোঁয়া বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে আর ভাবছে পরীক্ষার আগে যদি একটিবার তার দেখা পেতো কিন্তু তাকে আর সম্ভব।
বার কয়েক আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মন খারাপ করে মাথা নিচু করতে যাবে তখনই চমকে মাথা উপরে উঠালো।

সামনের লাইব্রেরীতে রাদিফ কলম কিনছে। সাথে তার দুই বন্ধু রয়েছে।
ছোঁয়া একদৃষ্টের সেদিন তাকিয়ে রইলো।
রাদিফে টাকা দিয়ে পিছনে ঘুরতেই ওর নজর গেলো রিক্সায় বসে থাকা মেয়েটির দিকে।
ছোঁয়া বসে আছে রিক্সায় ওর দিকেই তাকিয়ে। পাশে একজন লোক রয়েছে হয়তো ওইটা ওর বাবা।
ছোঁয়া রাদিফকে কে ওর দিকে তাকাতে দেখে মাথা নিচু করে নিলো।
জ্যাম ছেড়ে যাওয়াতে রিকশা চলতে লাগলো।
ছোঁয়া আরেকবার সামনে তাকালো দেখলো রাদিফ এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তখনই রিক্সাটা রাদিফদের ছাড়িয়ে চলে গেলো।

ছোঁয়া পরীক্ষার কেন্দ্রের সামনে এসে দাঁড়াতে আশেপাশে মাইশা কে খুজলো। একটু দূরে মাইসাকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়িয়ে ডাকলো।
মহিশা ছোঁয়াকে দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসলো।
মাইশার সাথে ওর বড় বোন এসেছে।
মাইশা ছোঁয়াকে বললো,
সেই কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি চল এবার ভেতরে।

ছোঁয়া ওর বাবার দিকে তাকালো। সাহেদ চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
একদম নার্ভাস হয়ো না, ভালো করে পরীক্ষা দিও। বাবা আছে বাইরে।
ছোঁয়ার অনেক নার্ভাস লাগছিলো কিন্তু বাবার কথা শুনে এখন অনেকটা ফ্রেশ লাগছে।
ছোঁয়া মুচকি হেসে মাইসার হাত ধরে ভিতরের দিকে গেলো।
কেন্দ্রের ভিতর ঢুকে দুইজন সিট খুঁজতে লাগলো।
ওদের সিট একই রুমে খানিকটা আগে পরে।

পরীক্ষা শেষে দুইজন এক সাথে বের হয়ে ছোঁয়া ওর বাবা কে খুঁজতে লাগলো।
তখন ওই সাহেব চৌধুরী মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ালেন।
তখন মাইসা বললো,
ছোঁয়া আঙ্কেল তো চলে এসেছে তুই বরং আঙ্কেলের সাথে বাড়ি যা বাসায় গিয়ে আমায় কল করিস ওই যে আমার আপু আসছে আমি যাই বাই টাটা, বলেই মাইশা ভিড়ের মধ্যে ওর বোনের দিকে এগিয়ে গেলো।

শাহেদ চৌধুরী মেয়েকে বললেন,
চলো ভিড় থেকে বের হই বলে খুব যত্ন সহকারে আগলে মেয়েকে ভির থেকে বের করে আনলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন,
পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোমার।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা।
আলহামদুলিল্লাহ চলো বাড়ি যাই এবার বলে ছোয়াকে কতগুলো চিপস আইসক্রিম কিনে দিয়ে রিকশা ঠিক করে নিলেন।

বাসায় আসতে অনিতা বেগম ছোঁয়াকে জিজ্ঞেসা করলালেন,
পরীক্ষা কেমন হয়েছে ছোঁয়া?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আম্মু।
আনিতা বেগম ছোঁয়াকে আদর করে দিলেন।
ছোঁয়া মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলো, সুফি আর সাফি কই আম্মু।
ওরা রুমে আছে তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার আনছি। তারপর শাহেদ চৌধুরীকে বললেন, তুমিও যাও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসো আমি খাবার দিচ্ছি। তারপর উনি চলে গেলেন রান্নাঘরে। আর বাবা মেয়ে নিজেদের রুমে।

ফ্রেশ হয়ে ছোঁয়া টেবিল এসে বসলো।
আনিতা বেগম সাহেদ চৌধুরীকে খাবার বেড়ে দিলেন। আরেক প্লেটে খাবার নিয়ে ভাত মেখে ছোঁয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলেন।
ছোঁয়া তৃপ্তি সহকারে মায়ের হাতে খেতে লাগলো।
খাওয়াতে খাওয়াতে আনিতা বেগম বললেন,
নিজে খেলে তো খাবি পুটি মাছের মতোন বলি কি আমি খাওয়ালেও তো তোর পেটেই যায় আর তুই খেলেও তোর পেটেই যায়।

ছোঁয়া শুধু হাসলো কিছু বলল না। সাহেদ চৌধুরী ও হাসলেন।
ছোঁয়া মাইশার সাথে কলে কথা বলছিলো এমন সময় তামিম এলো পড়াতে।
তামিমকে দেখতে ছোঁয়া মাইসাকে বললো,
এই রাখ আমার মাস্টারমশাই এসেছেন। বলে নিজেই কল কেটে দিয়ে টেবিলে এসে বসলো।
তামিম ওর কথা শুনে ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

ছোঁয়া এসে টেবিলে বসতে তামিম প্রশ্ন করল,
পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোমার।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো স্যার।
হুম গুড। তা পড়তে না বসে ফোনে কি কার সাথে কথা বলছিলে আন্টি জানে নাকি ডেকে বলবো!
আরে আরে আমি তো আম্মুর থেকে চেয়ে নিয়ে আসলাম ফোন মাহিশার সাথে কথা বলবো বলে। একটুখানি কথা বলেছি আমি তো এখনই পড়তে বসতাম এমন করেন কেন।

তা তুমি যার সাথে কথা বলো ভালো কথা, কথা বলছিলে আমায় কেন মাস্টারমশাই বললে, তোমার কাছে আমাকে কোন দিক থেকে পেট মোটা ভুড়ি হল মনে হয়।
ওমা আপনি কেনো পেট মোটা ভুড়িওয়ালা হবেন, আপনি তো আমায় পড়ান তাই মাস্টারমশাই বলেছি।
সে যাই হোক এইসব উদ্ভট নামে আমায় ডাকবে নাহ বুঝছো।
ওকে ওকে তাহলে এবার থেকে আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকবো।
এইই চুপ আমি তোমার স্যার ভাইয়া কেনো বলবা আমাকে স্যার বলবা বুঝছো স্যার কোনো ভাইয়া টাইয়া না।

ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তামিমের দিকে, রেগে গেলো কেনো ও রাগার মতো কি বললো।
তাকিয়ে কি দেখছো চুপচাপ পড়ো। এরপর ইংরেজি পরীক্ষা সে খেয়াল আছে।
ছোঁয়া চোখমুখ কুচকে বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়তে লাগলো।
রাত আট টা, ছোঁয়া টেবলে বসে বসে পেরাগ্রাপ পড়ছে। তামিম বলে গেছে সব রাইটিং গুলা আর পেসেজ পড়ে রাখতে। যেহেতু মাঝখানে একদিন সময় আছে বাকিগুলা কালকে পড়া যাবে। পড়তে পড়তে হঠাৎ সকালের কথা মনে পড়লো।

আচ্ছা উনি সকালে তাকিয়ে ছিলেন কেনো আমার দিকে। সুধুই কি আমাকে চিনে সেই জন্য,, হুম হবে হয়তো বা, তা না হলে আর কি।
সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে আবারো পড়াত মনোযোগ দিলো।
নয়টার দিকে আনিতা বেগম খাবার নিয়ে ছোঁয়ার রুমে আসলেন। ছোঁয়া বসে বসে পড়ছিলো।
আনিতা বেগম বললেন,
তোর টেবিলে যেতে হবে না।
তুই বরং বসে বসে পড় আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।

ছোঁয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
আচ্ছা আম্মু তাহলে আমি গিয়ে বিছানায় বসছি।
এই বলে বই নিয়ে বিছানায় চলে গেলো।
আনিতা বেগম মেয়েকে খায়িয়ে দিতে লাগলেন আর ছোঁয়া খেতে খেতে পড়তে লাগলো।
খাওয়ানো শেষে আনিতা বেগম প্লেট নিয়ে বাহিরে চলে গেলেন। একটু পরেই এক গ্লাস দুধ এনে সেন্টার টেবিলে রেখে বললেন,

ছোঁয়া দুধ টুকু খেয়ে নে তো মা।
ছোঁয়া দুধ দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।
আমি খাবো নাহ আম্মু নিয়ে যাও তুমি ভাল্লাগেনা আমার।
অনিতা বেগম কড়া চোখে ছোড়া
ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
এক্ষুনি আমার সামনে সবটুকু দুধ খাবি তুই।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৫

ছোঁয়া করুন চোখে মায়ের দিকে তাকাল, কিন্তু তার মন কি আর গলবে।
অগত্যা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে চোখ মুখ বিকৃতি করে খেতে লাগলো।
খাওয়া শেষ হতে আনিতা বেগম খালি গ্লাস হাতে নিয়ে রুম থেকে যেতে যেতে বললেন,
পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়বি আমি আর আসবো নাহ।
ছোঁয়া বললো, আচ্ছা আম্মু।
যদিও সে জানে তার মা সে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত ঘুমাবে না একটু পর পর এসে দেখে যাবে।
ছোঁয়া মুচকি হেসে আবারো বই নিয়ে পড়তে লাগলো।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৭