পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৫

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৫
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

সময় বহমান,,,দেখতে দেখতে ছোঁয়াদের জে এস সি পরীক্ষা চলে এসেছে।
আজ ছোঁয়ার অষ্টম শ্রেণীতে শেষ ক্লাস।

ছোঁয়ার মনটা খারাপ, একেই তো পরীক্ষার টেনশন তার ওপর আবার অনেক দিন রাদিফের দেখা মিলবে নাহ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই কয়েকদিন ছোঁয়া স্কুলে এসে লুকিয়ে রাদিফকে দেখতো।
রাদিফ স্কুলে আসার আগে ছোঁয়া স্কুলে এসে সিরির কাছে দারিয়ে লুকিয়ে দারিয়ে থাকতো রাদিফকে দেখার জন্যে। আবার স্কুল ছুটির পরে দারিয়ে থাকতো কখন রাদিফ সিরি বেয়ে নামবে আর ছোঁয়া ওর পিছু পিছু ওকে দেখতে দেখতে যাবে অথচ একটা সময় ছুটির ঘন্টা বাজলেই কম্পিটিশন করে সিরি দিয়ে নামতো ছোঁয়া।

মাইশা অবশ্য এই কয়দিন রাদিফকে নিয়ে তাকে কম খুচিয়ে কথা বলেনি।
এই যে এখনো বলছে,

কিরে যা তোর রাদিফের থেকে দেখা করে দোয়া নিয়ে আয় অনেক দিন তো দেখতে পাবি নাহ কে জানে বাবা তার সোকে আবার স্ট্রোক করে ফেলবি পররে তো কারো কিছু হবে নাহ আমি বেস্ট ফ্রেন্ড হারাবো।

ছোঁয়া কিছু বললো নাহ। ওর এইসবে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন কিছু বললে মাইশা আরো বেশি করে ওকে পচাবে তাক চুপ থাকাই শ্রেয়।

ওইদিকে রাদিফের বন্ধুরা বলছে রাদিফকে সুনিয়ে বলছে,
আজ তো ছোঁয়াদের লাস্ট ক্লাস। কিছু দিন পরেই পরিক্ষা,, যাই যাই ওরে অল দা বেস্ট বলে আসি।
রাদিফ বললো,
তোর ওকে অল দ্যা বেস্ট বলতে হবে না তুই চুপচাপ ক্লাসে বসে নিজের কাজ কর।
কেনোরে আমি বলবো ওরে তোর জলে কেন ডান মে কুছ কালা হ্যাঁ।

রাদিফ দাতে দাত চেপে কিছু বলবে তখনি প্রেয়সি এসে বলে,
ইংরেজি গ্রামারটা আছিস, আমি না ভুলে গেছি এখনি লাগবে আনলে দে তো।

রাদিফ প্রেয়সীকে দেখে মুখের কথাটা গিলে আর কিছু না বলে বেগ থেকে বই বের করে প্রেয়সীকে দিয়ে দিলো।

ছুটির পরে গেটের সামনে প্রেয়সী রাদিফ সাব্বির সোহেল দাঁড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিল। দূর থেকে মাইসা ওদেরকে দেখে ছোঁয়া কে বললো,
চল ওইখানে যাই।
আমি প্রেয়সী আপুর সাথে কথা বলবো তুই তোর রাদিফকে দেখিস।
আমি কেনো ওনাকে দেখতে যাবো।
এমন একটা ভাব নিচ্ছিস যেনো আমি কিছুই জানিনা, এখন বেশি কথা না বলে চল।
এটা বলে মাইসা ছোঁয়ার হাত ধরে গেটের কাছে গেলো।

প্রেয়সী আপু কেমন আছো।
প্রেয়সী পাশে তাকিয়ে মাইসা আর ছোঁয়াকে দেখে মিষ্টি হেসে বললো,
এইতো ভালো তোরা কেমন আছিস, এখনো বাড়ি যাসনি কেন বাড়ি গিয়ে পড়তে বস।

মাইসা বললো,
আব.. আপু এইতো যাচ্ছিলাম তোমাকে দেখলাম তাই ভাবলাম এসে দোয়া নিয়ে যাই। বলেই মাইশা হাসলো।

প্রেয়সী কিছু বলবে তার আগে সাব্বির বলে উঠলো,
হ্যাঁ হ্যাঁ মুরুব্বীদের দোয়া নিতে হয় ভালো করে পরীক্ষা দিও আর ছোঁয়া দেখে শুনে চলাফেরা করো। তোমার তো আবার ঠাস ঠাস পড়ে যাওয়ার স্বভাব ওইখানে পড়ে গেলে কেও হাসলে তো আর রাদিফ থাকবে নাহ তাকে ধমকাতে বা তোমার হাত ধরে তোমায় পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচাতে।

বলে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো। সোহেলও মুখ টিপে হাসছে।

ছোঁয়া মাথা নিচু করে নিলো।
রাদিফ কটমট করে সাব্বিরের দিকে তাকালো।

প্রেয়সী সরু চোখে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
ও পড়ে গেলে রাদিফ ধমকাবে মানে।
সাব্বির কিছু বলতে নেবে তখনই রাদিফ বলে উঠলো,
আরে বাদ দে না ওরা আজাইরা কথা। এই তোমরা বাড়ি যাও বাড়ি গিয়ে পড়তে বসো আর ভালো করে পরীক্ষা দিও।

প্রেয়সী বাড়ি যা আমার তারাতারি ফিরতে হবে আসছি।
তারপর সোহেল সাব্বিরের দিকে কটমট করে চেয়ে বললো চল।
ওরা একটা শুকনো ঢোক গিলে দুইজন রকে অপরের দিকে তাকিয়ে দৌড় দিতে দিতে বললো দেখি কে আগে বাসায় যেতে পারে।

সব কিছু প্রেয়সীর মাথার উপর দিয়ে গেলো।

ছোঁয়া বললো, আপু আমরা আজ যাই আমাদের জন্য দোয়া কইরো।

চল মাইশা, বলে মাইশার হাত ধরে হাটতে লাগলো।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বই নিয়ে বসে পড়লো ছোঁয়া। তার এখন অনেক পড়তে হবে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। কিন্তু পড়তে পড়তে হঠাৎ রাদিফের কথা মাথায় আসলো। মনে মনে বললো,

ইস কত্তো দিন দেখা হবে না।

আবার পরীক্ষার কথা মাথায় আসতে পড়তে লাগলো আবার একটু পরে রাদিফের চিন্তা করতে লাগলো। এভাবে করতে করতে তামিম চলে এসেছে ছোঁয়াকে পড়াতে। ছোঁয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বই খাতা গুছিয়ে টেবিলে চলে গেল পড়তে।

তামিম ছোঁয়াকে ম্যাথ বুঝাচ্ছে ছোঁয়া বুঝছে চোখের পলক ফেলতে রাদিফের শ্যাম বর্ণের মুখখানা চোখের পাতায় ভেসে উঠলো।

ছোঁয়া ভীষণ বিরক্ত, ছেলেটা এতো জ্বালাচ্ছে কেন তাকে। এত কেন মনে পড়বে। তবে কি মাশার কথাই ঠিক। ছোঁয়া ভালোবেসে ফেলল। নাহ কি করে সম্ভব এটা।

ভাবতে ভাবতেই তামিমকে প্রশ্ন করলো,
স্যার, আমরা কাউকে ভালোবাসলে সেটা কিভাবে বুঝবো।

তামিন চমকে তাকালো ছোয়ার দিকে, তার বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো। ছোঁয়া কেনো এই প্রশ্ন করছে। তবে কি,,,, নাহ এরকম কিছুই না। তামিম নিজেকে সামলে ছোঁয়াকে প্রশ্ন করল।

তুমি এইসব জেনে কি করবে।

ছোঁয়া আমতা আমতা করে বললো নাহ মানে এমনি।

তামিম এখনো ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে ছোঁয়া বললো,
আব.. তেমন কোন ব্যাপার না আমার বান্ধবী মাইশা জিগেস করছিলো তাই আমি ওরে বলেছি যে আমার মাস্টারমশাই অনেক জ্ঞানী উনি নিশ্চয়ই জানবে ওনার থেকে জেনে আমি তোরে বলবো নি হিহিহি ভালো করেছি বা বলেন।
বলেই হাসলো।

তামিমের বুকের থেকে পাথর নামলো। সে কতো কিছু ভেবে নিয়েছিলো। আজ কালের মেয়েরা যা পাকা এই বয়সে আবেক থাকে সেখানে আবেগে পরা তেমন বড়ো কোন বেপার নাহ যদিও ছোঁয়া অন্যরকম খুভ ভালো মেয়ে।

কম কথা বলে সবার সাথে গিয়ে মিসতে পারে নাহ কিন্তু যার সাথে মিশে ফ্রি হয় তার কাছে বাচাল উপাধি পায়। রাজ্যের সব কথা তাকে সুনায়। আজব আজব সব কথা বলে।

ভাবনা থেকে বেরিয়ে তামিম ছোঁয়ার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
তোমায় আমি কষ্ট করে পড়া বুঝাচ্ছি আর তুমি উলটা পালটা প্রশ্ন করছো আমায় মাইর কিন্তু একটাও মাটিতে পরবে নাহ ছোঁয়া।
আর আমাকে দেখে কি তোমার মাস্টারমশাই ফিস আসে পেট মোটা মাস্টারমশাই মনে হয় হ্যাঁ।

এবার রেজাল্ট একটু খারাপ হলেই হয়েছে দেখবে কত ধানে কত চাল।

পড়ছি তো এমন করেন কেনো একটু ভালো করেও তো কথা বলতে পারেন নাকি বলেই মুখ বাকিয়ে বইয়ের দিকে তাকায়।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৪

তামিম ছোঁয়ার মুখভঙ্গি দেখে নিঃশব্দে হাঁসলো।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৬