পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৪

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৪
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

কেটে গেছে বেশ কিছুদিন, আজ ছোঁয়াদের রেজাল্ট দিবে।
চিন্তায় মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম ছোঁয়ার।
কোন রকমে রেডি হয়ে তিন রাস্তার মোড়ে আসলো।
মাইশা আগে থেকে ওর জন্য ওয়েট করছিলো।
ছোঁয়া আসতেই মাইশা বলে উঠলো,

কিরে এতোখন লাগে সেই কখন থেকে দারিয়ে আছি।
ছোঁয়া বললো,
টেনশানে আমার লেইট হয়ে গেছে।
এতো টেনশন করার কি আছে বুঝিনা বাবা যা হবার হবে এবার চল স্কুলে নয় তো সত্যি সত্যি দেরি হয়ে যাবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাদিফের বন্ধু সোহেল এবং সাব্বির বলছে রাদিফকে বলছে,
তুই কতো টেনশন ফ্রি আছিস আর আমরা টেনশনে মরে যাচ্ছি।

রাদিফ বললো,
টেনশন করার কি আছে যেমন পরীক্ষা দিয়েছে তেমন ফলাফল হবে এবার বেশি কথা না বলে ক্লাসে চল স্যার চলে আসবে একটু পর।
তারপর ওরা ক্লাসে চলে গেলো।

মাইশা আর ছোঁয়া ক্লাসে পৌঁছানোর প্রায় সাথে সাথেই ক্লাসরুমের স্যার প্রবেশ করলো।
মাইশা বলল, যাকবাবা সময়মতো পৌঁছাতে পেরেছি।
রোল কল শেষ করে স্যার রেজাল্ট দিতে লাগলেন।
টেনশনে ছোঁয়ার হাত-পা কাঁপছে।
গণিত বাদে মোটামুটি সবগুলো সাবজেক্টে ভালো করেছে ছোঁয়া।
গণিতে যাকে বলে টেনেটুনে পাশ, বাসায় গেকে মা নিশ্চিত বকা দেবে তাইতো তার কাঁদতে মন চাইছে।
মাইশার রেজাল্ট মোটামুটি।

রাদিফ বরাবরের মতই অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে।
রাদিফের দুই বন্ধু সোহেল এবং সাব্বির তারাও মোটামুটি ভালই করেছে।
তারা ভালো স্টুডেন্ট হলেও রাদিফের চেয়ে কম।
প্রেয়সি অনেক ভালো স্টুডেন্ট, বরাবরই তার লেখাপড়ার প্রতি অনেক ঝোক।
তার রেজাল্ট ভালো হওয়াতে সে তো মহা খুশি।

রাদিফ এবং প্রেয়সি খুব ভালো বন্ধু।
প্রেয়সি রাদিফের কাছে গিয়ে বললো, কিরে তোর রেজাল্ট দেখা।
রাদিফ তার রেজাল্ট কার্ডটা প্রেয়সির হাতে দিলো।
চারটা ক্লাস করাবার পর স্কুল ছুটি দিয়ে দিলো।

নিচ তলায় নামতেই প্রেয়সি মাইশা আর ছোঁয়াকে ডাক দিলো।
প্রেয়সির সাথে রাদিফ, সোহেল, সাব্বির সহ তাদের আরো কিছু ফ্রেন্ড ছিলো।
মাইশা আর ছোঁয়া ওখানে যেতেই প্রেয়সি বললো,
কিরে মাইশা দেখি তোর রেজাল্ট, বলেই মাইশার হাত থেকে রেজাল্ট কার্ড দুটো নিয়ে নিলো।

অবাক হয়ে বললো, কিরে সব বিষয়ে এত ভালো কিন্তু গণিতের এই অবস্থা কেনো।
তারপরে নামের জায়গায় খেয়াল করে দেখলো ওটা মাইশা না ছোয়াঁর রেজাল্ট কার্ড।
তারপর বললো,
ওহ ছোঁয়া এটা তোমার।
রাদিফ এক পলক ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো এই অদ্ভুত মেয়েটার নাম ছোঁয়া।

রাদিফের সামনে এভাবে বলায় ছোঁয়া লজ্জা পেলো।
আমতা আমতা করে বললো, আসলে আপু গণিত পরীক্ষার দিন একটু অসুস্থ ছিলাম তাই পরীক্ষা ভালো ভাবে দিতে পারিনি।
মাঝখান থেকে সোহেল ফোড়ন কেটে বলল,
হ্যাঁ পড়ে গিয়েছিলে ওই আর কি।

ছোঁয়া কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।
মাইসা তেজী স্বরে বললো, পড়েছে তো কি হয়েছে বারবার এক কথা কেন বলেন পড়েছে বেশ করেছে দরকার হয় আরো দশ বার পড়বে আপনার কি, বলিই প্রেয়সির হাত থেকে ছো মেরে রেজাল্ট কার্ড দুটো নিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে হনহনিয়ে হেটে চলে গেলো।

রাদিফ বললো,
এজন্যই বলি জুনিয়রদের সাথে কম কম কথা বলবি, এবার ছোট মানুষের কাছে কথা শুনতে কেমন লাগলো।
সাব্বির বললো, ওরা ততো ছোট কই মাত্র এক ব্যাচ জুনিয়র।
রাদিফ কতক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।

বাসায় আসতেই মায়ের কাছে এক দফা বকা খেয়েছে ছোঁয়া।
সে গণিতে দুর্বল হলেও কখনোই এতো খারাপ করেনি, এখন এমন খারাপ করায় মায়ের কাছে বকা খেতে হয়েছে। সব হয়েছে রাদিফের জন্য।
ছোঁয়া মনে মনে এই সব কথা চিন্তা করছিলো তার মাঝেই তামিম এলো ছোঁয়াকে পড়াতে।

ছোঁয়া এসে টেবিলে বসেছে সাথে সাথে তামিম প্রশ্ন করলো,
তোমার না আজকের রেজাল্ট দিয়েছে কই রেজাল্ট কার্ড দাও তো।
ছোঁয়া কাচুমাচু করে রেজাল্ট কার্ডটা তামিমের হাতে দিলো।
তামিম কিছু বলার আগেই ছোঁয়া বলে উঠলো,

স্যার আমি জানি আমি গণিতে খারাপ করেছে কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে করিনি আমি ঐদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলাম সেজন্য ব্যথায় কিছু লিখতে পারিনি এখানে আমার কি দোষ বলুন তো সবাই শুধু আমাকে বকাবকি করছে।

ছোঁয়া সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলো শুনে তামিম রেজাল্টের কথা ভুলে আতঙ্কিত কন্ঠে ওকে বলল,
সিরি থেকে পড়ে গিয়েছিলে আগে বলনি কেনো, বেশি ব্যথা পেয়েছো, কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখি।
স্যার সেই কবে পড়ে গিয়েছিলাম ব্যথা কি এখনো থাকবে নাকি আর আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন।

ছোঁয়ার কথায় তামিম চুপ করে গেলো।
বললো,
আব.. ব্যথা থাকলে তো ঠিকমতো পড়তে পারবেনা তারপর আবারও রেজাল্ট খারাপ করবে আর দোষ হবে স্যার ঠিকমতো পড়ায় না তাই রেজাল্ট খারাপ করেছো বুঝতে পেরেছো এখন বেশি কথা না বলে চুপচাপ পড়তে বসো।

তামিমের কথাগুলো ছোঁয়ার মাথার উপর দিয়ে গেলো। ছোয়া আর কিছু না বললে বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিলো।
তামিম মনে মনে ভাবছে,
কবে এই মেয়েটার একটু বড় হবে আর নিজের মনের কথাগুলো ওকে জানাবে।
রাতে বাড়িতে আসার পর সাহেদ চৌধুরী ছোঁয়াকে রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করলে ছোঁয়া বাবাকে ভয়ে ভয়ে রেজাল্ট কার্ড দেখালো। শাহেদ চৌধুরী ছোঁয়াকে বকাঝকা না করে বললেন,
সমস্যা নেই মা ভালো করে পড়াশোনা করো পরেরবার অনেক ভালো হবে।

মিসেস আনিতা এই কথা সুনে বললেন,
হ্যাঁ দাও দাও মেয়েকে আরো লাই দাও যাতে এর পরের বার ফেল করে আসে।
ছোঁয়া ছলছলো চোখে মায়ের দিকে তাকালো,
সে নাহয় এবার একটু খারাপ করেছে তাই জন্য এভাবে বলতে পারল। তুই সব সময় তো ভালো রেজাল্ট করেছে তাহলে একবার খারাপ করায় এমন করছে যেন সে সব সময় ফেল করে আসছে। ছোঁয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা খুব ভালো রেজাল্ট করে মাকে তাক লাগিয়ে দেবে তারপর দেখবে কিভাবে তাকে বকে হুহ।

সাহেদ চৌধুরী বললেন,
আহা এমন করছো কেনো এরপর থেকে আর হবে নাহ আর ও তো বললো বেথা পাওয়া তে লিখতে পারে নাই তেমন।
খাবার দাও তো খুদা লাগছে।
আনিতা বেগম আর কিছু না বলে টেবিলে খাবার দিলেন। সবাই এক সাথে রাতের খাবার শেষ করলো। খেয়ে দেয়ে রুমে যেতে ছোঁয়ার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো সে ঘুমিয়ে গেলো।

রাদিফ বসে বসে পড়ছিলো।
তার ছোট বোন তার পাসে বসে একটু পরে পরে তাকে জালাচ্ছে। রাদিফ জানে অর বোন ঘুমানোর আগ পর্যন্ত এইগুলা ওর সহ্য করতে হবে, তার দোষ একটাই আজকে সে তার বোনের জন্য চকলেট আনতে ভুলে গেছে।
রাদিফের বোন রাইতা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে,
রাদিফকে জালাতে জালাতে তার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেল রাইতা।

রাইতা ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে রাদিফ ওর কপালে একাটা চুমু দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে ওর মা কে ডেকে বলল”
মা রাইতা ঘুমিয়ে গেছে ওরে নিয়ে যাও।
রাদিফের মা এসে মেয়েকে নিয়ে গেলো আর রাদিফের খাবার ওর টেবিলে দিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পরতে বলে গেলো।
পরের দিন যথারীতি ঘুম থেকে উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে তিন রাস্তার মোড়ে গেলো ছোঁয়া। কিন্তু মাইশা এখনো আসেনি আসবে কি করে সে তো একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। মিনিট পাচেক পরে এলো মাইশা এসেই বললো,

বাহ এতে উন্নতি কি করে টাইমের আগেই এসে পরেছিস।
মজা নিচ্ছিস তাই না।
আরেহ না মজা কেনো নিবো অলওয়েজ লেট করা মানুষটা আগে আগে এসেছে তো তাই বলছিলাম আরকি।
হয়েছে আমি অকারণে দেরি করি নাহ। চল এবার।

তারপরে দুজন একটু এগিয়ে বাজার থেকে রিক্সা নিয়ে স্কুলে গেলো।
স্কুলে এসে ছোঁয়া সিরির কাছে হাটাহাটি করছে, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
মাইশা এই ব্যাপারগুলো কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে কিন্তু কিছু বলছে না দেখে যাচ্ছে।

তখনই সিঁড়ি দিয়ে রাদিফ আর অর দুই বন্ধু উঠছে।
ছোঁয়া রাদিফকে দেখেই মাথা নিচু করে নিলো তার লজ্জা লাগছে। কিন্তু আরচোখে বারবার রাদিফকে দেখে যাচ্ছে।
সোহেল ওদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে জানে তখনি রাদিফ চোখের ইশারাতে মুখ খুলতে বারণ করলো।
তারপর হন হন করে ক্লাসরুমের উদ্দেশ্যে হেটে চলে গেলো। ছোঁয়ার দিকে একটা বার তাকালে না পর্যন্ত।

ছোঁয়া মন খারাপ করে রাদিফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, সে এতক্ষণ ধরে এত কষ্ট করে সিরির কাছে ওর জন্য দাঁড়িয়ে রইলো আর ও একটা বার অর দিকে তাকালো নাহ।
মন খারাপ করে মাইশাকে বললো চল ক্লাসে যাই।
মাইশা বললো বেপার কি তোর।
ছোঁয়া বললো, কই কিসের বেপার।
কি চলছে সত্যি করে বলতো

আরেহ কি হবে।
কিছু না হলে এতোখন হুদাই এভাবে হাটাহাটি করলি তারপর রাদিফ ভাইয়াকে দেখে লজ্জা পাওয়া আবার এখন মন খারাপ করে ক্লাসরুমে যাওয়ার মানে কি।
কি উল্টাপাল্টা বকছিস তো।
ছোঁয়া তোরে খুব ভালো করে চিনি আমি আমার থেকে না লুকিয়ে সত্যিটা বল।
আচ্ছা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে সুরু করে নিজের অনুভুতির কথা। রাদিফ ওইদিন ওদের ধমকানোর পর থেকে তাকে নিয়ে ভাবা, ভেবে এক্সাম খারাপ করা তাকে পরে যাওয়া থেকে বাচানো সব।

সব সুনে মাইশা উত্তেজিত হয়ে বললো,
দোস্ত তুই তো প্রেমে পড়ে গেছিস।
ছোঁয়া আতঙ্কিত হয়ে একপ্রকার ছিটকে মাইশার থেকে দূরে গিয়ে বলতে লাগলো,
কি বলছস এসব এমন কিছুই নাহ আমি অমন মেয়ে না মা সুনলে আমাকে মেরেই ফেলবে, বলতে বলতে কেঁদে দিলো।

মাইশা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো সে কি এমন বললো যে ওর এভাবে ভাবে কাঁদতে হবে।
ওর কান্না দেখে মাইশা বলে উঠলো, আরেহ কাঁদে না আমিতো এমনি বলেছি মজা করে সত্যি। তোর তো এমনি ভালো লাগে তাকে সে ভালো মানুষ তো তাই আর কিছু না।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৩

ছোঁয়া চোখের পানি মুছে বললো সত্যি তো।
আরেহ হ্যাঁ সত্যি সত্যি।
ছোঁয়া বললো আচ্ছা চল ক্লাসে।
ওকে চল।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৫