পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৩

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৩
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

কেটে গেলো কয়েক দিন।
ছোঁয়ার পরিক্ষা শেষ হয়েছে বেশ কয়েকদিন হলো, গনিত বাদে বাকি সবগুলো পরীক্ষা মোটামুটি ভালই হয়েছে।

আজ কয়েকদিন পরে ছোঁয়া স্কুলে যাবে। পরীক্ষার পরে অসুস্থতার জন্য কয়েকদিন স্কুলে যেতে পারেনি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজ বেশ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে ছোঁয়া।
স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো ছোঁয়া,
একটু পরে ছোয়ার বাবা অফিসের জন্য তৈরি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে মেয়ের পাশে বসলো।

মিস্টার সাহেদ চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,

মা তোমার শরীর এখন কেমন,
ভালো বাবা।

তাদের কথার মাঝখানে মিসেস আনিতা বেগম টেবিলে খাবার এনে তাদের দিলেন।

খাওয়া শেষে মিস্টার সাহেদ চৌধুরীর ছোঁয়াকে বললেন,
ছোঁয়া চলো আমার সাথে আমি তোমাকে স্কুলে পৌঁছে দেই।
না আব্বু আমি তো মাইসার সাথে যাবো ও আমার জন্যে অপেক্ষা করবে।
আচ্ছা মা সাবধানে যেও।

ছোঁয়া বাসা থেকে বের হয়ে তিন রাস্তার মোরে আসতেই দেখতে পেলো মাইসা দারিয়ে আছে তার জন্য।
তারপর দুই জন একসাথে স্কুলে গেলো।

ছোঁয়া ক্লাসে বেগ রেখেই মাইসাকে বললো,
চল বাহিরে যাই,

তোর কি হয়েছে বল তো মাত্র স্কুলে আসলাম এখনই বাহিরে যাই বাহিরে যাই করতেছিস আমি যেতে পারব না আমার পা ব্যথা করছে।

ছোঁয়া করুন চোখে তাকিয়ে বললো,

চল না দোস্ত আমি পানি খাবো দেখ বোতল একদম ফাঁকা।

অগত্যা মাইসা ছোঁয়ার সাথে বাহিরে গেলো।

ছোঁয়া হাঁটার সময় বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে পুরো স্কুল ঘুরে ফেলল তবু সেই ছেলেটির দেখা পেলো নাহ।

ক্লাসরুমে স্যার প্রবেশ করার কিছুক্ষণ আগে দুই জন এসে রুমে বসে পড়ল।

পরপর চারটে ক্লাস করানোর পর টিফিনের ব্রেক দিলো।

মাইশা, ছোঁয়া টিফিন শেষ করে বাইরে বেরোলো হাটাহাটি করার জন্য।

হঠাৎই নবম শ্রেণীর একটা মেয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো এবং বলতে লাগলো,
মাইশা তোমাকে তোমার আপু একটু তার কাছে যেতে বলছে চলো আমার সাথে।

ছোঁয়া ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তারপর আবার মাইশার দিকে তাকিয়ে বললো,,
কিরে তোর আবার বোন এলো কোত্থেকে আমাকে তো কখনো বললি না,
আরে আমার আপন বোন নাহ খালাতো বোন।
ওহ আচ্ছা,
হুম।

মাইশা ছোঁয়ার হাত ধরে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
চলো আপু,,,

ছোঁয়া আর মাইশা মেয়েটার পিছু পিছু নবম শ্রেণীর কমার্সের রুমে পৌঁছালো।
মাইশা একটি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

আপু আমায় ডেকেছো?
মেয়েটি বললো,
হ্যাঁ তোর সাথে কথা আছে।

কণ্ঠটি ছোঁয়ার পরিচিত মনে হলো তাই সে মেয়েটির দিকে তাকালো এবং দেখতে পেল মেয়েটি অন্য কেউ নয় বরং প্রেয়সি।

ছোঁয়া প্রেয়সিকে দেখা মাত্র মিষ্টি এসে বলল আরে আপু তুমি যে কেমন আছো?
প্রেয়সি এতক্ষণে ছোঁয়া কে খেয়াল করলো, ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

আরে তুমি এখানে,,

মাইশা দুজনের কথার মাঝখানে বলে উঠলো, ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আপু।
তোমরা একে অপরকে চিনো?

ছোঁয়া বললো-

হ্যাঁ, আমি একদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলাম আপু আমাকে সেদিন হেল্প করেছিলো। আমাকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে এসেছিল।

মাইশা অবাক হয়ে বললো,
তুই তো সব সময় আমার সাথেই থাকিস তাহলে কবে পড়লি!

গণিত পরীক্ষার দিন তিন তলা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম।

ওহ আর তুই এখন আমাকে বলছিস।

আরে,,,,

ওদের কথার মাঝেই প্রেয়সি অসহায় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো তোমরা থামো একটু পরে স্যার আসবে।

তারপর স্কুল ব্যাগ থেকে একটা তেতুলের ব্যাগ বের করে মাইসাকে দিলো, বললো”

তোর না তেতুল খুব পছন্দ তাই তোর জন্য নিয়ে এলাম, এবার তাড়াতাড়ি রুমে যা করি স্যার চলে আসবে পরে তোদের সাথে আড্ডা দিবোনি।

মাইশা খুশি হয়ে বলল” থ্যাংক ইউ আপু।

তারপর ছোঁয়াকে আসতে বলে খুশিতে দৌড়ে রুম থেকে আগে আগে বের হয়ে গেল।

ছোয়া মাথা নিচু করে ওর পিছু পিছু হাটা ধরলো,, দরজার কাছে আসতেই কারো সাথে তুমুল বেগে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যেতেই নিচ্ছিল কিন্তু কেউ একজন তার এক হাত ধরে তাকে পড়া থেকে বাঁচিয়ে নিলো।

ছোঁয়া নিজেকে সামলে সামনে তাকিয়ে দেখতে পেল সেই অচেনা ছেলেটি যাকে সে এতদিন ধরে খুঁজে যাচ্ছে।

হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে সে দিকবেদিক ভুলে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।

ততক্ষণে ছেলেটি ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু ছোয়ার সে দিকে কোন খেয়াল নেই সে তো শুধু সামনের অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে ব্যস্ত।

হঠাৎ ছেলেটির গলার স্বর কানে আসতেই ধ্যান ভাঙলো ছোঁয়ার।

দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন হয়তো বাহিরে যাও নয়তো সরে দাঁড়াও তোমার জন্য আমি ভিতরে যেতে পারছি না।

ছেলেটির কথায় ধ্যান ভাঙতেই ছোঁয়া আশেপাশে একবার তাকালো, দেখতে পেলো ক্লাসের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর সে এতক্ষণ হেবলার মত ছেলেটিকে দেখে যাচ্ছিলো।

কথাটা ভাবতেই ছোঁয়া এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
রাদিফ কপাল কুচকে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো, ভাবতে লাগলো এভাবে দৌড় দেওয়ার কি আছে আজব।
রাদিফ আর বেশি কিছু না ভেবে বেভে বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল।

ও হলো রাদিফ,, যাকে নিয়ে আমাদের গল্পের নায়িকা কল্পনায় বিভোর ছিলো।

অন্য দিকে ছোঁয়া ক্লাসরুমে এসে বারবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেতে লাগলো।
আর মাইশা তেতুল খাওয়া রেখে ভ্রু কুচকে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রইল বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো হঠাৎ তার অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ।

মাইশা কপাল কুঁচকে ছোঁয়া কে জিজ্ঞাসা করলো”
এই তোর কি হয়েছে রে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছিস কেনো?

ছোঁয়া নিজেকে সামলে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
কই কিছু নাতো, আব.. দৌড়ে আসছি তো তাই আর কি একটু হাপিয়ে গিয়েছে।
বলেই মুখটা ইনোসেন্ট করলো।

মাইশা কতক্ষণ কপাল কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, স্যার চলে আসায় এই নিয়ে আর বেশি ঘাটালো না মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে লাগল দুই জনেই।

স্কুল ছুটির পর ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে সিরির সামনে আসতেই ছোঁয়া রাদাফ কে দেখতে পেলো, সাথে ঐ দিন যে দুইটা ছেলে হেসেছিলো তারাও আছে।
ছোঁয়া বুঝতে পারল এর রাদিফের বন্ধু।

দুই তলার বাম পাশের কোনার ক্লাস রুমটা ছোঁয়াদের, আর ডান পাশের কোনার ক্লাসরুমটা নবম শ্রেণীর কমার্সের মানে রাদিফদের।
তাই নিচে নামতে গিয়ে রাদিফের সাথে ছোঁয়ার দেখা হয়ে গেলো।

রাদিফরা ছোঁয়াকে খেয়াল করেনি, ওরা দারিয়ে আছে ভির কমার আসায়।

মাইশা ছোঁয়ার হাত ধরে বললো কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো চল নামি।

রাদিফকে নিচে না নেমে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছোঁয়া বললো,

আরেহ দেখছিস না তুই কত্তো ভির এভাবে ঠেলাঠেলি করে নামার কি আছে একটু পরে নামলেই তো হয়।

মাইশা অবাক হয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, যেই মেয়ে স্কুল ছুটি হলে সবার আগে দৌড়ে দৌড়ে বের হয় সে আজকে এই কথা বলছে।

মাইশা বললো,
এই তুই আজকে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছিস কেনো, জিনে ধরছে।
ছোঁয়া বললো,
আরে প্রতিদিন ভিরের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে পায়ে ব্যথা পাই তাই বললাম তুই বেশি বুঝিস আমার আবার কি হবে।

মাইশা কিছু বললো না কপাল কুচকে রইলো।

ভির কমার পরে হঠাৎ রাদিফের দুই বন্ধু ছোঁয়া আর মাইশাকে খেয়াল করলো।
রাদিফকে খোঁচা মেরে বলো দেখ সকালের সেই মেয়েটা যার হাত ধরর হিরোগিরি করে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলি,, রাদিফ সামনে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই সেই মেয়েটা তাই সে চুপ করে রইলো।
কারন সে এখন কোন কথা বললেই তার বন্ধুরা এই মেয়েটার সামনেই তাকে আর এই মেয়েটাকে নিয়ে মজা শুরু করে দিবে।

এমনিতেই আজকে হাত ধরে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর ফলে সারাদিন তার অনেক মজা উড়িয়েছে কিন্তু এখন মেয়েটার সামনে কিছু বললে মান সম্মান আস্ত থাকবে না।

তাদের দুই বন্ধুর মধ্যে গলা খাকারি দিয়ে একজন বললো,,
তুমি সেই না যে পরীক্ষার সময় আমাদের সামনে ধপাস করে পড়ে গেছিলে।

হঠাৎ কারো কথা শুনে ছোঁয়া সামনে তাকিয়ে দেখল রাদিফের দুই বন্ধু থেকে একজন কথাটা বলছে।
সে তো ভেবেছিলো এতদিনে তারাই কথা ভুলে গেছে, হঠাৎ তাকে এইভাবে রাদিফের সামনে পড়ে যাওয়ার কথা বলায় সে কিছুটা লজ্জা পেয়েছে, লজ্জায় কিছু না বলে চোখ নামিয়ে নিলো।

রাদিফ একবার মেয়েটির দিকে তাকালো।

তারা আরো কিছু বলতে যাবে তখনই রাদিফ বলল,
চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বলেই সিঁড়ির দিকে হাটা ধরলো, অগত্যা তার দুজন বন্ধুও আর কিছু না বলে রাদিফের পিছু পিছু হাটা ধরলো।

মাইশা এতক্ষন সবকিছু দেখছিলো এবার ছোঁয়াকে প্রশ্ন করলো,
তুই আবার কবে পরলি ওদের সামনে?

ছোঁয়া বললো,

সকালেই না তোকে বললাম গণিত পরীক্ষার দিন সিরি থেকে পড়ে যাওয়ার পর প্রেয়সি আপু আমাকে সাহায্য করেছিলো, ঐদিন ওনাদের সামনে পড়ে গেছিলাম।
অতঃপর সবটা কাহিনী খুলে বললো এবং রাদিফ যে হাসার জন্য তার বন্ধুদের ধমক দিয়েছে সেটাও বললো।

সব শুনে মাইসা হাসতে হাসতে বললো,

আর কোনো জায়গা পেলি না ওই শয়তান দুইটার সামনেই তোর পড়তে হলো এবার তো তোকে ওরা যেখানেই দেখবে পচিয়ে মারবে।

ছোঁয়া করুন চোখে মায়ের সাথে দিকে তাকালো, সে কি জানতো নাকি সে পড়ে যাবে আর তার সামনেই এমন শয়তান দুটো ছেলে আছে।

মাইশা হাসি থামিয়ে বলল, তবে রাদিফ ভাইয়ার সামনে ওরা তোকে কিছু বলতে পারবে না।
জুনিয়রদের সাথে উনি তেমন কথা বলে না তাই ওরা অকারণে তোর সাথে মজা নিতে এলে সে আটকে দিবে সেদিনের মতোন।

ছোঁয়া বললো, রাদিফ কে?

দুই বান্দরের সাথে যে একটা ভদ্র ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল ওটাই রাদিফ ভাইয়া, ঐদিন যে ওর দুই বন্ধুরে ধমক দিয়ে নিয়ে গেল সে।

ছোঁয়া মনে মনে দুইবার নামটা আউড়ালো, রাদিফ রাদিফ।

মাইসা বললো,
চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।

হুম চল।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ২

(গল্পের নায়ক কে এখনো পর্যন্ত লেখিকাও তা জানে নাহ।
নিজের মন মতো কাওকে নায়ক ভেবে মন ভেঙে গেলে লেখিকা দায়ী নয়। 🥹
নায়ক রাদিফও হতে পারে বা অন্য কেউ।)

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৪