পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৭

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৭
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

এপ্রিল মাসের কড়া রোদের মধ্যে স্কুলে যাচ্ছে ছোঁয়া আর মাইশা। গরমে ওদের অবস্থা নাজেহাল।
কালকে থেকে প্রথম সাময়িক পরিক্ষা ওদের। ছোঁয়া ভেবেছিলো আজকে স্কুলে যাবে নাহ কিন্তু মাইশা ওদের বাড়িতে গিয়ে টেনেটুনে স্কুলে নিয়ে এসছে ওরে।
এমনিতেও আজকে ১ টা ক্লাস করিয়ে ছুটি দিয়ে দিবে, যেহেতু কালকে থেকে পরীক্ষা।

উফ সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি একটা রিক্সাও পাচ্ছি নাহ কেমন লাগে। গরমে আমার কান্না পাচ্ছে।
ছোঁয়া মাইশার কথা শুনে বললো,
সকাল ৯ টা বাজেই যদি তোর এই অবস্থা হয় তাহলে দুপুরবেলা কি করবি।
তুই চুপ কর। সবাইকি তোর মতো শিতের রানি নাকি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওর কথায় ছোঁয়া মুখ ভেঙ্গালো।
তারপরে একটা রিক্সা দেখতে পেয়ে মাইশা রিক্সাটা ডেকে ছোঁয়াকে নিয়ে উঠে পড়লো।
ক্লাসে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে ছোঁয়া। মাইশা করিডরে গেছে হুদাই হাঁটতেছে।
ছোঁয়া যায়নি ওর সাথে। যাবেই বা কেনো হুদাই এমন হাটতে কারই বা ভালো লাগে। ও বসে বসে বাদাম খাচ্ছে। স্যার আসতে এখনো অনেক দেরি। ছোঁয়া হাতে থাকা লেডিস ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৯:৪০ বাজে।

আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছি৷ প্রতিদিন তো ৯:৩০ টায় আসি।
তারপরেই ওর মনে পড়লো রাদিফ তো এমন সময় স্কুলে আসে। সে তাড়াতাড়ি করে ব্যাগের ভিতর বাকি বাদাম গুলা রেখে ঝুড়িতে বাদামের খোসা গুলো ফেলে দৌড় দিলো।
ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেখে মাইশা এখানে নেই, আবারো দৌড়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই কিসের সাথে জানি ঠাস করে একটা ধাক্কা খেলো।পড়ে যেতে যেতেও ওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলো ছোঁয়া।
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কপাল কুচকে সামনে তাকিয়ে থাক্কা খাওয়া জিনিস টার দিকে তাকাতে দেখতে পেলো ওটা কোন জিনিস না একটা মানুষ এবং মানুষটা আর কেউ নয় বরং রাদিফ।

ছোঁয়া রাদিফকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো। পেটের কথাটা গিলে ফেলে মুখে জোর করে অল্প একটু হাসি ফুটিয়ে বললো,
আসোলে ভাইয়া দেখতে পাইনি আপনাকে সরি।
রাদিফ একটা ভাব নিয়ে বললো,
তা চোখ কি হাতে নিয়ে হাটেন নাকি, এভাবে দৌড়ানোরই বা কি আছে।

ছোঁয়া কপাল কুচকে তাকালো, ছেলেটা কিনা ওরে এইভাবে বললো।
সে যতই ছেলেটা কে ওর ভালো লাগুল না কেনো তাই বলে এমনে কেন কথা বলবে।
ছোঁয়াকে এইভাবে তাকাতে দেখে রাদিফ বললো,
এভাবে দেখছেন কেনো?
হুট হাট পড়ে গয়ে তো হাড্ডি সব ভাঙবেন তাই বলছি। যাই হোক সরেন ক্লাসে যাবো।

ছোঁয়া আর কিছু না বলে সরে দাঁড়িয়ে ওকে যাওয়ার জায়গা করে তারপরে নিজেও ক্লাসে চলে গেলো।
ছোঁয়া ক্লাসে গিয়ে বসে বসে ভাবছে একটু আগের ঘটনাটা, আর একা একা হাসছে। তখন মাইশা এসে ওর পাশে বসলো। ওকে এভাবে একা একা হাসতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
কিরে এমনে একলা একলা হাসছিস কেনো?

ছোঁয়া থতমত খেয়ে ওর দিকে তাকালো।
বললো, আরেহ তেমন কিছু না।
কিছু না হলে একা একা হাসবি কেনো হুদাই তুই বল আমায় কি হইছে।
ছোঁয়া আমতা আমতা করতে করতে বললো, আসলে সাফিটা কি যে দুষ্টুমি করে সারাদিন ওগুলা মনে পড়ে গেছিলো তাই হাসছিলাম আর কি। ছাড় তো কই ছিলি তুই?

নিচে গেছিলাম পানি খেতে।
ওহ,,
হুম।
ওইদিকে রাদিফ ক্লাসরুমে ভাব নিয়ে বসে আছে।
ভালোই হইছে আজকে একা আসছি স্কুলে, ওদের সাথে আসলে আজকে মেয়েটার সাথে দুইটা মজা করতে দেখলে কাহিনি বানাইতো ওরা। পরে সারাদিন পচাইতো।
রাদিফের ভাবনার মাঝেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করলো।

রোল কল করে ওদেরকে ছুটি দিয়ে দিলো আজ।
ছোঁয়া মাইশা সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলো রাদিফরাও দাঁড়িয়ে আছে, ভিড় কমার পরে নামবে।
ছোঁয়ার আবার ভিরের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নামতে ভাল্লাগে, একটা আজাইরা অভ্যাস বলা যায়। নয়তো কারই বা ভিরের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে নামতে ইচ্ছে করে।
গেইট দিয়ে বের হবার পরে দেখতে পেলো রাদিফ ওর বাসার দিকে যাচ্ছে। স্কুলের পেছন দিকের রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলেই রদিফদের বাসা। পেছনের গেইট দিয়ে বেরোলেই ওর বেশি সুবিধা, তবে সে সবসময় সামনের গেট দিয়ে বেরিয়ে ঘুরে তারপর যাবে।

স্কুলের সামনে গেইটের পড়ে অল্প কিছু জায়গা রেখে একটা মেইন রোড। গেইট থেকে বরাবর ৫ পাঁ হাঁটলেই ৩ রাস্তার মোড়। রোড পার হয়ে বরাবর যে রাস্তাটা ওইখান দিয়ে ছোঁয়াদের বাসায় যায়। ওই রাস্তায় ঢোকার সাথে সাথে হাতের বা পাশে একটা বড় খেলার মাঠ,ওইটা অবশ্য স্কুলেরই মাঠ। ওদের স্কুলে ২ টা মাঠ, একটা গেটের ভিতরে আর একটা বাহিরে। ভেতরের মাঠ প্র্যাকটিসের জন্যে বা টিফিন আওয়ারে খেলার জন্যে। আর বার্ষিক প্রতিযোগিতার সময় বিভিন্ন স্কুলের সাথে যখন খেলা হয় তখন সব স্কুলের স্টুডেন্টদেরা ওদের স্কুলে আসে, তখন বাহিরের মাঠে খেলা হয়।

ছোঁয়া রাদিফের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।
কালকে থেকে তো কিছুদিন হয়তো দেখা হবে না।
ক্লাস 6,7,9 সকালে এক্সাম হবে ১০ টা থেকে ১২ টা আর ক্লাস 8, 10 দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত এক্সাম হবে। ওরা তো আসবে ১২:৪০ বাজার পরে কিন্তু আমি তো আর এতক্ষন থাকবো না স্কুলে।
এসব ভাবতে ভাবতে সেও মাইশার হাত ধরে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।

কিরে হাটছিস কেনো? এই গরমে মরে যাবো বইন!
তো কি করব, এক ঘন্টা দাঁড়ায় থাকবো!
চল হাটতে থাকি রিকশা পেলে উঠে যাবোনি। তাছাড়া বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে পড়তে বসতে হবে, তামিম ভাইয়ারে তো চিনিস না পুরা বইয়ের থেকে কোশ্চেন জিজ্ঞেস করবে, না পারলে আম্মুর কাছে বিচার দিবে। পরিক্ষা আসলেই এমন করে।
করুন সুরে কথাটা বললো ছোঁয়া।

আহা উনি তো আমার ক্রাশ!!
এমন সুন্দর স্যার থাকলে তো আমি প্রতিদিনই পড়া শিখে যাইতাম। যা পড়া দিতো তার চেয়ে আরো বেশি বেশি করে পড়া শিখতাম।
তাহলে তুইও আমার সাথে পড়তে আয়।

কিন্তু কেমনে?
কেমনে পড়ে ভাব, আগে বল পড়বি কিনা?
তোর স্যার আমার ক্রাশ, তোর কি মনে হয় আমি আবার না পড়বো।
গুড! সোন এবার তো এক্সাম চলে আসছে, এক্সাম শেষ হলে তুই বাসায় বলবি যে আমি ছোঁয়ার সাথে প্রাইভেট পড়বো। ওর টিচার অনেক ভালো পড়ায়।
কিন্তু আম্মু কি বিকেল বেলা তোদের বাসায় গিয়ে পড়তে দিবে?

হুম দিবে একটু পাম দিবি স্যারের নামে, আমারো একা ভাল্লাগে না দোস্ত তুই আসলে একসাথে পড়বো।
আচ্ছা, থ্যাংক ইউ বান্ধবী!! ক্রাশের সাথে প্রতিদিন দেখা করতে পারব তোর জন্য!
বলেই জড়িয়ে ধরলো ছোঁয়াকে
হইছে ছাড়। ক্রাশ ঠিক আছে এর বেশি কিছু ভাবতে যাইস না আমরা কিন্তু ছোট হুহ।
হু বুঝছি বইন।

ওদের কথার মাঝেই মাইশার চোখ পরলো মাঠের কোনায়।
ছেঁয়ার হাত ঝাকি দিয়ে বললো,
দেখ তোর আসিক!
ছোঁয়া মাইশার ইশারা করার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে নিলো।
গতো বছর ওরে পছন্দ করতে ছেলেটা। নাম রনি। ওকে ওনেক জ্বালাইছে। এক্সাম হলে এসেও জালাইতো, যদিও ওর সিট অন্য রুমে পড়ছে। গত বছরের এক্সামের কথা মনে পড়তেই একটা ভাইয়ার কথা মনে পড়লো ওর, ছেলেটা ওরে ম্যাথে অনেক হেল্প করছিলো। এই ছেলের সাথে এক ক্লাসেই পড়তো।

ওর ভাবনার মাঝেই মাইশা ওকে ডেকে উঠলো,
কিরে কই হারাইলি।
কই হারাবো।
তাইলে কি ভাবস?
ভাবতেছি ও আবার স্কুলে কি করে এস.এস.সি তো দিয়ে ফেলছে মেবি এবার।
হুদাই আসে ভাব নিতে আর মেয়ে দেখতে। যাই বলিস তোর জন্য কিন্তু অনেক পাগল ছিলো এখনো দেখ কেমনে তাকায় আছে তোর দিকে।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৬

ধুর বাদ দে,, এই ছেলে দুনিয়ার মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেড়াইছে।
চল সামনে একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে দেখি যাবে কিনা।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৮