পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ২

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ২
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

সকাল সকাল মন খারাপ করে নিজের রুমে বসে আছে ছোঁয়া।
পরিক্ষার চিন্তায় ছোঁয়ার মনটা ভীষণ খারাপ।
কাল বাড়ি আসার পরে আনিতা বেগম ছোয়াকে জিগেস করেছিলেন।
তোর পরিক্ষা কেমন হয়েছে ছোয়া।

ছোয়া ভয়ে ভয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়েছে ভালো।
আনিতা বেগম কিছু খন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপরে বলল যা ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।
ছোয়া বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেস হয়ে খেতে আসে খেয়ে রুমে গিয়ে পরতে বসে কিন্তু আজব বেপার তার পরা তে মন বসে না।
কিছু খন বই নিয়ে বসে থেকে ভাবে ঘুমিয়ে পড়ি কাল তো পরিক্ষা নেই সকাল থেকে পরবো।কিন্তু বিছানাতে সুয়েও ঘুম আসে নাহ তার কল্পনায় কেবন সেই অচেনা ছেলেটি আসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এখন সকাল থেকেও সে কেবন ওই ছেলেটিকে নিয়ে ভেবে চলেছে যার বেপারে ছোয়া কিছু জানে নাহ এমনি কি নাম টাও না। ভাবনায় বিভোর থাকা অবস্থায় ছোয়ার রুমে ওর বোন সুফি এসে বললো আপু তোমায় আম্মু খেতে ডাকে সুফির কথায় ছোয়া বিরক্ত হয়ে ভাবলো সান্তি মতন কল্পনাও করা যাবে না এই বাসায়। অগত্যা সুফির সাথে ডাইনিং রুমে চলে গেলো উদ্দেশ্য খাবার খাওয়া।

ছোঁয়া খেতে খেতে তার মা কে প্রশ্ন করলো
বাবা কবে আসবে মা
কালকে বা পরশু চলে আসবে মা বেবসার কাজ তো তাই সময়টা একটু এদিক ওদিক হয়।
ছোয়া আর কিছু বলল না মনে মনে ভাবলো এই প্রথম তার পরিক্ষা অথচ বাবা বাসায় নেই।
ব্যবসার কাজে ঢাকা যেতে হয়েছে।

ছোয়ার ভাবনার মাঝেই ওর বোন এসে ছোয়ার চুল টেনে ধরলো ছোয়া জোরে চিৎকার দেওয়াতে আনিতা বেগম দুই মেয়ের কান্ড দেখে রেগে গেলেন সুফিকে বলতে লাগলেন
আপুর চুল ছাড়ো সুফি
কিন্তু সুফিতো নাছোড়বান্দা
আনিতা বেগম জোরে ধমক দিতে সুফি চুল ছেড়ে দিলো।
এত জোরে ধমক দেওয়াতে ছোঁয়ার ভাই সামি ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে।
আনিতা বেগম কমরে হাত দিয়ে তিন সন্তানের কান্ড কারখানা দেখে যাচ্ছে।

সামির বয়স সবে এক বছর আর ছোয়ার বোন সুফি সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

আনিতা বেগম গেলেন সামির কান্না থামাতে।
সুফি এসে ছোঁয়ার পাসে বসে ফিসফিস করে বললো
আমায় রেখে একা একা খাচ্ছ তাই এটা তোমার শাস্তি
ছোঁয়া কটমট করে সুফির দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো নাহ।

রুমে এসে ছোয়া বই নিয়ে বসে পড়লো কাল একদম পড়া হয়নি আজ সব কমপ্লিট করতে হবে।

বিকেলে ছোঁয়ার হোম টিউটর এলো ওকে পড়াতে।
ছোয়ার হোম টিউটর তামিম।
ছোয়াদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে তামিমদের বাসা দুনিয়ার যত আজগবি সব প্রশ্ন ছোঁয়ায় এসে তামিমকে করে।

এই যে এখন পড়তে পড়তে হঠাৎ তামিমকে প্রশ্ন করল
স্যার এই কঠিন কঠিন পড়া গুলো কে তৈরি করেছে আপনি তো অনেক শিক্ষিত নিশ্চয়ই তার নাম জানবেন আমার তাকে খুব দরকার প্লিজ আমাকে নিয়ে যান তার কাছে।

তামিম শান্ত দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো তুমি কি করবে তাকে দিয়ে?

ছোয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
তার থেকে আমি সবকিছু টেকনিক শিখে নিজে আরো অনেক পড়া আবিষ্কার করবো তারপরে পুরো বিশ্ব আমাকে চিনবে আমি তো সেলিব্রেটি হয়ে যাবো সবাই আমার থেকে অটোগ্রাফ ফটোগ্রাফ নিবে কতো ভালো হবে তাই না স্যার।

কালকে পরিক্ষা আর এখন পড়া বাদ দিয়ে আজগুবি কথাবার্তা বলছে এজন্যে জন্য মুহূর্তেই তামিমের মেজাজ চটে গেলো। ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে কড়া করে একটা ধমক দিতে যাবে তখনই ছোঁয়ার চোখে চোখ পড়লো।
একজোড়া অসম্ভব মায়াবী চোখ, গোলগাল উজ্জ্বল ফর্সা মায়াবী মুখশ্রী এই মুখ দেখে তো বারবার ঘায়েল হয়েছে সে। কতক্ষণ নির্লিপ্ত তাকিয়ে রইলো ছোঁয়ার মুখের দিকে তারপর জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আস্তে করে করে বললো এখন এইসব আজগুবি কথাবার্তা রেখে পড়ায় মনোযোগ দাও পরীক্ষা শেষ হলে তারপর সব আজগুবি কথা বইলো।

ছোঁয়া মুখ গোমড়া করে বইয়ের পাতায় তাকালো মনে মনে ভাবলো সে কতো দারুন একটি আইডিয়া বের করল আর স্যার তাকে কিনা ধমক দিল তাকে সে মনে মনে শপথ করল যখন সে নতুন নতুন পর আবিষ্কার করে সেলিব্রেটি হয়ে যাবে এবং সবাই তার সাথে সেলফি নিতে চাইবে তখন সে মোটেও স্যারকে তার সাথে সেলফি নিতে দিবে না হুহ।

তামিম ছোঁয়ার মুখভঙ্গি দেখে নিঃশব্দে হাসলো।

পরের দিন ছোঁয়া স্কুলে গিয়ে মাইসাকে সাথে নিয়ে সারা স্কুল ঘুরঘুর করছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
মাইশা ছোয়ার সাথে হাঁটছে আর একটু পরপর বিরক্তি নিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে
মেয়েটা সে তখন থেকে হেঁটেই চলেছে না তো কোথাও বসছে না তো কোথাও যাচ্ছে।
এক সময় বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,

কিরে ছোঁয়া হাঁটতে হাঁটতে তো আমার পা ব্যথা হয়ে গেলো না তো কোথাও বসছিস আর না কোথাও যাচ্ছিস তুই কি করছিস বলতো।

ছোঁয়া রাগ নিয়ে বললো,
এমনি ভালো লাগছে না তাই একটু হাটাহাটি করছি তোর এতো সমস্যা হলে ক্লাসে গিয়ে বসে থাক যা।

আরে আরে রাগ করছিস কেন আমি তো এমনি বললাম চল হাটি,
বলেই ছোঁয়ার হাত ধরলো।
ছোঁয়া মুখ বাকালো মাইসা ফিক করে হেসে দিলো মাইসার হাসি দেখে ছোঁয়াও হেসে দিলো।

তখনই ঘণ্টা বেজে উঠলো
দুইজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে দৌড় দিলো উদ্দেশ্য ক্লাসরুম কারণ দশ মিনিটের মধ্যেই রুমে স্যার প্রবেশ করবে এবং পরীক্ষা শুরু হবে।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১

দোতলা পর্যন্ত দৌড়ে উঠে দুজনেই বলে উঠলো ভালো করে পরীক্ষা দিস দোস্ত এই বলে ছোঁয়া নিজের ক্লাসরুমের উদ্দেশ্যে ছুটলো এবং মাইশা ছুটলো তিন তলার উদ্দেশ্যে।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৩