প্রেম পরিণয় পর্ব ৬

প্রেম পরিণয় পর্ব ৬
রাজশ্রী মজুমদার রাই

বিকালে শান্তি দেবী দিয়াকে নিয়ে বের হলো, দিয়া বার কয়েক জিজ্ঞেস করেছে, কোথায় যাবে, শান্তি দেবী শুধু বললেন,
শান্তি দেবী- গেলেই দেখবি,,
দিয়া আর কথা বাড়ালো না, মামির সাথে গেলো। ঘন্টা দুয়েক পর ফিরে এলো তারা, অভি আর অগ্নি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিলো, শান্তি দেবী খুশিতে গদগদ হয়ে বড় ছেলের পাশে গিয়ে বসলেন, দিয়াও মুখ মলিন করে অভির পাশে গিয়ে বসলো, শান্তি দেবী ব্যাগ থেকে একটা ছবি বের অগ্নির সামনে ধরলো, অগ্নি ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকালো, তিনি বললেন

শান্তি দেবী- ছবিটা দেখ তো,
অগ্নি একপলক তাঁকিয়ে, আবার মায়ের দিকে তাকালো, শান্তি দেবী ছবি টা ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
শান্তি দেবী- এবার ভালো করে দেখ,
অগ্নি ছবিটা দিকে তাকিয়ে বললো
অগ্নি – হুম দেখলাম
শান্তি দেবী – কেমন দেখতে মেয়েটা??
অগ্নি- সুন্দর

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথা টা শুনতেই ছলছলে চোখে অগ্নির দিকে একপলক তাকিয়ে, দিয়া উঠেই নিজের রুমে চলে গেলো, অভি দিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, আবারও মা আর দাদাইয়ের কথায় মন দিলে,, সেই একটা সিন হবে এখন,,,
শান্তি দেবী- আমি জানতাম তোর পছন্দ হবে, কালকেই দত্ত গিন্নীর সাথে কথা বলবো। উনার বোনের মেয়ে।
অগ্নি – আমার পছন্দ হয়েছে, তোমাকে কে বললো।
শান্তি দেবী- কেন তুই তো বললি সুন্দর,

অগ্নি- তুমি জিজ্ঞেস করেছো দেখতে কেমন তাই বললাম সুন্দর, তাই বলে এটা বলি নি আমার পছন্দ হয়েছে।
শান্তি দেবী- এটা আবার কেমন কথা,, মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী, পছন্দ না করার তো কোন কারণ দেখছি না।
এতোখনে পরে অভি মুখ খুললো
অভি- সুন্দরী হলেই যে পছন্দ হতে হবে এটা কেমন কথা??
অগ্নি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো কিন্তু পরের কথা টা শুনেই রাগি চোখে অভির দিকে তাকালো,

অভি- দেশে কি মেয়ের অভাব আছে নাকি, এটা পছন্দ হয় নি যখন অন্য মেয়ে দেখবে।
শান্তি দেবী- আচ্ছা, ঠিক আছে।
অভি অগ্নির চােখ রাঙ্গানোকে পাত্তা না দিয়ে আবারও বললো
অভি- মা, তুমি মেয়ে দেখতে থাকো। পছন্দ হলেই এ বছরই দাদাই কে বিয়ে করাবো।
অগ্নি হাতের ছবি টা ছুড়ে রাখলো সামনের টেবিলের উপর, বললো

অগ্নি- আমার জন্য মেয়ে দেখা লাগবে না??
অভি- কেন দাদাই??
অগ্নি – আমি বিয়ে করবো না।
অভি- সন্ন্যাস নিবে নাকি??
অগ্নি পারলে চোখ দিয়ে অভিকে ভষ্ম করে দেয়, অভি মিটমিট করে হাসছে, শান্তি দেবী বললেন
শান্তি দেবী- সন্ন্যাস নিতে যাবে কেন?? আমার ছেলে বিয়ে করে ,সংসার ধর্ম করবে। তোর কোন পছন্দের মেয়ে থাকলে বল আমাদের, আমারা তাকেই বাড়ির বৌ করে নিয়ে আসবো।

অভি যেন এতোক্ষণ এ কথার অপেক্ষায় ছিলো,মা সাথে তাল মিলিয়ে সেও বললো,,,
অভি- তোমার পছন্দের কেউ থাকলে বলো, আমাদের কোন আপত্তি নেই। তারপরও বিয়ে তোমাকে করতেই হবে।
অগ্নি- আমি যখন একবার বলেছি, বিয়ে করবো না, তখন এতো কথা কিসের, এই বিষয় টা এখানেই শেষ, আর যদিও একবার আমার বিয়ে নিয়ে কোন কথা উঠে, তাহলে আমি আর বাসায় আসবো না, বলে দিলাম।
ছেলের কথায় শান্তি দেবী একটু দমে গেলেন, কিন্তু অভি থামলো না

অভি- বিয়ে না করার কারণ টা কি?? সেটা তো বলবে।
অগ্নি- তোকে বলতে বাধ্য না আমি।
অভির মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে ইচ্ছে করছে,শান্তশিষ্ট ভাইয়ের এমন রাগ দেখে। অভি আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি বললো
অগ্নি – কালকে সকালে আমি চলে যাবো।

অভি- কেন?
অগ্নি- ছুটি শেষ।
অভি- নাকি বিয়ে কথায় বলাই চলে যাচ্ছো??
অগ্নি – বাজে বকবি না, এক সপ্তাহের ছুটিতে এসেছি, কালকে গিয়েই অফিসে জয়েন করতে হবে।
কথা বলার মাঝেই অগ্নি খেয়াল করলো দিয়া নেই এখানে, কখন গেলে খেয়াল করে নি, অগ্নি জানতেও পারলো না, তার প্রেয়সী এক আকাশ অভিমান নিয়েই পুরো কথা না শুনেই চলে গেছে। রাতে খাবার টেবিলে ও দিয়ার দেখা পায় নি অগ্নি।মন খারাপ করেই রুমে এসে নিজের জামা-কাপড় গুছানো শুরু করলো, আবার কবে সে প্রিয় মুখটা দেখতে পাবে সেটা জানা নেই, এসব ভাবনায় যখন ব্যস্ত অগ্নি, তখনি দিয়া এসে ওর সামনে দাঁড়ালো।

আজকে সারাদিন অনেক বেশি কাজের চাপ ছিলো অগ্নির, এক সপ্তাহ ছুটিতে থাকার ফলেই এতোটা প্রেশার নিতে হয়েছে, অফিস শেষ করে বাসায় আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে,, শাওয়ার নেওয়া টা অনেক বেশি প্রয়োজন, একে তো ৩-৪ ঘন্টার জানিং তারপর সারাদিন অফিস। টাওয়েল আর টাউজার নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো, শরীরে ঠান্ডা জল লাগতেই গলা, ঘাড়, আর বুকের বিভিন্ন জায়গা জ্বলে উঠলো, এমন অসহ্য জ্বালাময় অবস্থায় ও অগ্নির ঠোঁটে হাসি। স্নান করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে, বুকের আঁচড় আর খামচির দাগ গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো, কিছু কিছু জায়গা কিল- ঘুসি দেওয়া জন্য কালসিটে দাগ পড়ে গেছে৷ অগ্নির শরীরে ফুটে থাকা দাগ গুলো যে তার প্রেয়সীর দেওয়া চিহ্ন।

ফ্ল্যাশব্যাক,,,,,
দিয়াকে হঠাৎ সামনে দেখেই অগ্নি আবাক হলো নিজের আবাকতা সামলে উঠার আগেই দিয়া অগ্নির ট্রি-শার্টের কলার চেপে ধরে বলতে লাগলো
দিয়া- সুন্দর না, খুব সুন্দর লেগেছে মেয়েটাকে, এতোদিন তো জানতাম আপনি একটা মিচকে শয়তান, কিন্তু আপনার যে চরিত্রেও সমস্যা আছে সেটা তো বুঝতে পারি নি। যেই সুন্দরী মেয়ে দেখলেন নাচতে নাচতে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলেন।

অগ্নি তো আবাকতার সপ্তম আকাশে, দিয়ার মুখের সাথে সাথে হাতও চালাছে, অগ্নির বাঁধা দিচ্ছে না, দিয়া ইচ্ছা মতো কিল,ঘুসি দিচ্ছে সাথে তো খামচি আর আঁচড় আছে, অগ্নি শুধু দেখছে তার পিচ্চি পরীটার ক্ষেপা বাঘিনী রুপ। দিয়া আবার ও বলছে
দিয়া- খুন করে ফেলবো, অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা মাথায় আনলেও, অন্য কোন মেয়ের দিকে তাঁকালে একদম চোখগুলো তুলে সরকারি হাসপাতালে দান করে দিবো । এতো বড় সাহস হয় কি করে আপনার, অন্য একটা মেয়েকে সুন্দর বলার?? জ্যান্ত ফুঁতে দিবো আপনাকে তারপর ও অন্য কারো হতে দিবো না।।।।।
অগ্নি খুব মৃদুস্বরে বললো

অগ্নি – কেন??
এটা শুনে দিয়া আরো বেশি তেঁতে উঠে, ধুমধাম আরো কয়েক টা লাগিয়ে দিলো। ইচ্ছা মতো মেরে দু- পা পিছিয়ে গেলো, দুই হাতে মুখ ডেকে ডুকরে কেঁদে উঠলো দিয়া। এতোক্ষণ অগ্নি স্থির হয়ে থাকলেও দিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখেই অস্থির হয়ে দিয়ার কাছে এগিয়ে গেলো,
অগ্নি- কি হয়েছে দিয়া,, কাঁদছিস কেন পিচ্চি??

হঠাৎ করেই দিয়া এক ভয়ঙ্কর কান্ড ঘটিয়ে ফেললো, অগ্নি সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলো গেলো, বুকের ধুকপুকানি কয়েকশো গুণ বেড়ে গেলো, দিয়া অগ্নিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো, এতোটা শক্ত করে ধরেছে, পারলে অগ্নি বুকের মধ্যে ঢুকে যাবে। অগ্নি বিস্ময় কাটিয়ে, এক হাত আলতো করে দিয়ার পিঠে রাখলে অন্য হাত মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে খুব আদুরে স্বরে বললো
অগ্নি- কি হয়েছে লক্ষ্মী, না বললে বুঝবো কিভাবে??

অগ্নির আদুরে কথা শুনে দিয়া আরো বেশি আহ্লাদী হয়ে উঠলো, কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে দিলো, দিয়ার কান্না অগ্নির ব্যাকুলতা বেড়ে গেলো,
অগ্নি- প্লিজ লক্ষ্মী, এভাবে কাঁদে না, তুই কাঁদলে যে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। বল না,কি হইছে?? কে কষ্ট দিয়েছে আমার তোতাপাখি কে??
দিয়া নাক টেনে টেনে বললো

দিয়া- আপনি।
অগ্নি- তাহলে আমাকে শাস্তি দে, আরো মার। তারপর ও কাঁদিস না।
দিয়া অগ্নিকে জড়িয়ে ধরেই বললো
দিয়া- শাস্তি দিবো না,,,
অগ্নি- তাহলে।
দিয়া- আমার আপনাকে লাগবে, আপনি শুধু আমার হবেন অন্য কারো না,,,,,

দিয়ার এমন কথায় অগ্নি চমকালো, দিয়াকে আস্তে করে নিজের থেকে সরিয়ে সামনে দাঁড় করালো, নিজের হাতে দিয়ার চোখের জল মুছে দিলো, অল্প কিছুখনের মধ্যেই দিয়ার চোখ, মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে,, অগ্নি মনে মনে যে আশংকা করছে, তা যেন সত্যি না হয় সে আশায় দিয়াকে প্রশ্ন করলো

অগ্নি- দিয়া কি বলছিস তুই, আমি বুঝতে পারছি না??
দিয়া এবার নিজেদের মাঝের দুরত্ব ঘুচিয়ে,অগ্নির বরাবর দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ রেখে বললো
দিয়া- বুঝতে পারছেন না আপনি, ভালোবাসি,,, ভালোবাসি আমি আপনাকে। আপনার উপর যখন আমার প্রচন্ড রাগ হয়, আমি তখনও আপনাকে ভালোবাসি, আপনার উপর অভিমান হলেও আমি আপনাকে ভালোবাসি, ১০০ টা অভিযোগ নিয়েও আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে ভালোবাসি বলেই আপনার উপর আমার রাগ হয়,

অভিমান হয়, অভিযোগ করি,,,, আমার রাগ, অভিমান, অভিযোগ প্রমাণ করে আমি আপনাকে কতেটা ভালোবাসি।
দিয়ার কথা শুনে অগ্নি পুরোই হতবাক, এ পিচ্চি টা কবে ওকে এতোটা ভালোবেসে ফেললো,, চোখ বন্ধ করে অগ্নি জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো, নিজেকে কিছুটা সামলে দিয়াকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো
অগ্নি – ভুল করছিস দিয়া, এটা কখনোই সম্ভব না, আর আমি তোকে ভাল,,,,,,,
পুরো কথাটা শেষ করতে না দিয়েই দিয়া বললো

দিয়া- ভালোবাসায় ঠিক-ভুল বলে কিছু হয় না, আর একটা কথা জানেন, মেয়েদের অনুমান শক্তি খুব প্রখর হয়,কোন ছেলে যদি তাকে ভালোবাসে তাহলে সে তা খুব সহজেই বুঝতে পারে, কোন ছেলে যদি মিথ্যা বলে সেটাও অনেক টাই অনুমান করে নিতে পারে, আর সত্যি যদি আপনি আমাকে ভালো না বাসেন, তাহলে আমার একার ভালোবাসায় যথেষ্ট আমাদের দুজনের জন্য।
অগ্নি – দিয়া,,,

শেষ করতে না দিয়েই দিয়া আবার শক্ত কন্ঠে বললো
দিয়া- একটা কথা মনে রাখবেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপনি শুধু আমার,, আপনার উপর অন্য কারো দৃষ্টি ও আমি সহ্য করবো না। আর বারবার যেটা সম্ভব না, সম্ভব না বলছেন, সেটাই সম্ভব হবে, আর আপনি আমারই হবেন। মহাভারত সম্পর্কে জানেন তো মনে হয়, তারপরও সময় সুযোগ করে আরেকবার মহাভারত টা ভালো করে জেনে নিবেন।

বলেই দিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,, অগ্নি এখনো দিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো,, দিয়া যেতেই অভি রুমে প্রবেশ করলো, প্রথম থেকে সবটাই শুনছে আর দেখেছে ও, দিয়ার কথার আওয়াজ শুনেই রুম থেকে বের হয়ে এসেছে, ভাগ্য ভালো শান্তি দেবী আর আদিত্য রায় দুজনেই ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে না হলে এতোখনে তারা চলে আসতো। অভি অগ্নির বেডে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে, অগ্নি খুব বিরক্ত হয়ে বললো

অগ্নি – এভাবে হাসছিস কেন
অভি হাসতে হাসতে বললো
অভি- কি মার টাই না মারলো তোমাকে দাদাই।
অগ্নি – বের হও বলছি আমার রুম থেকে,,
অভি- আরে থাকার জন্য এসেছি নাকি তোমার রুমে, আচ্ছা দাদাই, বিয়ের জন্য না করে দেওয়ার পর ও এতো মারলো তোমাকে, যদি হ্যাঁ বলতে তাহলে তো খুন করে ফেলতো তোমাকে।
বলেই আবার হাসতে লাগলো অভি, অগ্নি কটমট করে তাঁকালো,

অগ্নি – এখনো ছোট ও, না বুঝেই,,,,,
অভি- দিয়ার আজকে করা কাজেই প্রমাণ করে ও কতোটা সিরিয়াস তোমাকে নিয়ে, বলেছিলাম না আমি, ও তোমাকে ছাড়বে না। এবার কি করবে দাদাই।
অগ্নি অসহায় চোখে তাকালে অভির দিকে, অভি সেদিকে পাত্তা না দিয়েই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো, পিছনে না ফিরেই বললো

অভি- আমার বোন কিন্তু আমার মতোই সাহসী,, এতো বছরের রাগ ক্ষোভ টা ঠিক জায়গায় ঝেড়ে দিয়েছে। একটু উল্টা- পাল্টা করলে কিন্তু আপনাকে জ্যান্ত ফুঁতে ফেলবে অগ্নি রায়। তাই সাবধান,, এবার একটু সিরিয়াসলি ভাবুন।।।।।।
বর্তমান,,

অগ্নি নিজের শরীরের দাগ গুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর হাসছে ওর কানে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে, দিয়ার বলা, ভালোবাসি, ভালোবাসি আমি আপনাকে। অগ্নি নিজেও বিড়বিড় করে বললো,
অগ্নি – ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, নিজের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসি আমার পিচ্চি পরী।
আজকে সারাদিন দিয়ার মন টা ভীষণ খারাপ, শয়তান লোকটা ওকে না বলেই চলে গেলো, কাল রাতের করা ব্যবহারের জন্য কি আজকে চলে গেছে, এসব আকাশকুসুম ভাবনায় ব্যস্ত দিয়া, অভি কখন থেকে ওর পাশে বসে আছে, সেদিকে ওর কোন খেয়াল নেই, সে তো নিজের ভাবনার জগতে আছে।

অভি- কি রে,, কি নিয়ে এতো ভাবনায় বিভোর??
অভি কথায় দিয়ার তার ভাবনা থেকে বের হলো,
দিয়া – কই না তো, কিছু না দাদাভাই।
অভি- তো কালকে যে দাদাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলি, এসে তো কিছুই বললি না??
দিয়া- কি বলবো,,

অভি- মেয়ে দেখতে কেমন, কথাবার্তা কেমন?? এসব আরকি??
দিয়া চোখ মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো
দিয়া- এসব জেনে তুমি কি করবে??
অভি- নাহ্, মানে দাদাই তো বিয়ের জন্য না করে দিয়েছে, তাই ভাবলাম নিজের জন্য,,,,,
পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই দিয়া চিৎকার করে বললো
দিয়া- কিহ্, সত্যি, কিন্তু কখন না করলো?? আমি তো শুনালাম সুন্দর বলেছে,
অভি- হুম, তবে সুন্দর হলেও ওনার পছন্দ হয় নি,,

অভির কথা শুনে দিয়ার মনে মনে একটু দুঃখ হলে, ও তো উল্টো টা বুঝে কালকে রাতে কি একটু বেশি করে এসেছে, পরক্ষণেই নিজের দুঃখ করা বাদ দিয়েই মনে মনে বললো
দিয়া- যা করেছি বেশ করেছি, অন্য মেয়েকে সুন্দর বলবে কেন, শয়তান একটা।
অভি- জানিস দাদাই কি বলেছে??
দিয়া- কি??

অভি- সন্ন্যাস নিবে, জীবনে নাকি বিয়েই করবে না।।
অভির কথা শুনে দিয়া বিড়বিড় করে বললো
দিয়া- এ্যাহ, সন্ন্যাস নিবে, তাহলে আমার কি হবে,, আমি যে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে একটা ক্রিকেট টিম বানানোর প্ল্যান করেছি তার কি হবে,, নেয়াছি সন্ন্যাস।
অভি দিয়ার কথা কিছুই বুঝতে পারে নি, তাই জিজ্ঞেস করলো,
অভি- কি বললি শুনতে পায় নি।
দিয়া- বললাম, ঢং।
অভি শব্দ করেই হাসলো।

অগ্নি দিয়ার দিনগুলো আগের মতোই কাটছে। দিয়া নিজের বাসায় চলে এসেছে। সে রাতের পর থেকে দুজনের আর কথা হয় নি। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময়ে একজন আরেক জনকে নিয়েই ভাবতে থাকে।
দেখতে দেখতে আজকে দিয়ার রেজাল্ট দিবে, সকাল থেকেই দিয়া এ নিয়ে টেনশনে আছে, তনুশ্রী দেবী ঠাকুরঘরে বসে প্রার্থনা করেছে, দিয়া অভিকে ফোন করে, সে সকালে ওদের বাসায় নিয়ে এসেছে। দুই বোন অভির দুপাশে বসে আছে। অভি অনেকক্ষণ পর্যন্ত চুপ করে দু-বোনের কর্মকাণ্ড দেখছে, হিয়া দাঁত দিয়ে নখ কাটছে, আর দিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে, কিছুখন পর পর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।

অভি- আমি বুঝলাম না তোরা এমন কেন করছিস, দিয়ার তো সব পরীক্ষা ভালো হয়েছে৷ আর আমাকে কেন বসিয়ে রেখেছিস,, আমাকে যেতে দে আমি তোর রেজাল্ট দেখে আসি।
দিয়া- রেজাল্ট দিতে এখনো দেরি আছে, চুপ করে বসে আমাদের মতো টেনশন করো।
অভি এবার হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
অভি- ওই দাঁত দিয়ে নখ কাঁটা বন্ধ করবি,
হিয়া- বন্ধ করতে পারবো না দাদাভাই,অতিরিক্ত টেনশনে আছি।
অভি- রেজাল্ট কার দিচ্ছে??
হিয়া- দিদিয়ার।।

অভি- তাহলে তুই কেন অতিরিক্ত টেনশন করছিস??
হিয়া- আমার দিদিয়ার রেজাল্ট নিয়ে আমি টেনশনে করবো না এটা হতে পারে, তাছাড়া বাবাই আর পিসিরা তো দিদিয়াকে খুব কথা শুনবে,এটা আমার ভালো লাগবে নাা।
দুই বোনের টেনশন করা দেখে অভির ও এবার টেনশন হচ্ছ, তবে তার টেনশনে কারণ হচ্ছে তার দাদাই তাকে অনেকক্ষণ যাবত কল দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু সে রিসিভ করতে পারছে না। অগ্নি যে কল দিচ্ছে দিয়া আড় চোখে দেখেছে, অভি অনেকক্ষণ কাচুমাচু করে বললো,

অভি- এবার আমি যায়, রেজাল্ট দেখেই, আবার চলে আসবো।
দিয়া একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
দিয়া- আচ্ছা যাও, তবে তোমার ফোনটা আমার কাছে রেখে যাও।
অভি- কেন?

দিয়া- কারণ রেজাল্ট দেখে যাতে ফোনে কাউকে বলতে না পারো, ফোন টা রেখে গেলে যেতে পারবে। না হলে আমাদের সাথেই থাকো।
অভি ফোন টা দিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, বেরিয়ে গেলো, এমনিতেও ফোনে তার পার্সোনাল কিছু নেই, আর দাদাইয়ের প্যারা থেকে বাঁচা যাবে। দিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে, সমানে একটা নাম্বার থেকে কল আসছে,, বিপরীত পাশের মানুষ টা যে তাদের থেকেও বেশি টেনশনে আছে সেটা বুঝায় যাচ্ছে।
পয়তাল্লিশ মিনিটের মাথা অভি আসলো, হাতে মিষ্টি প্যাকেট নিয়ে,,, প্যাকেট গুলো টেবিলের উপরে রেখেই, দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো,

অভি- বোনু আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি, আমি জানতাম তোর রেজাল্ট ভালো হবে।
দিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গ্রেড জানার জন্য,
হিয়া- দাদাভাই জিপিএ বলো, প্লিজ
অভি হঠাৎ মুখ টা কালো করে বললো
অভি- পাস তো করেছে, জিপিএ জেনে কি করবি।
অভির এমন কথা শুনে দিয়ার মুখ টা চুপসে গেলো তাহলে কি ভালো পয়েন্ট আসে নি, কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
দিয়া- প্লিজ দাদাভাই, তুমি জিপিএ ব- লো

অভি- জিপিএ আর কতো,,,
কিছুখন চুপ করে থেকে বললো
অভি- গোল্ডেন A+
সাথে সাথে হিয়া চিৎকার করে উঠলো
হিয়া- ইয়াহু,,,, দিদিয়া গোল্ডেন A+ পেয়েছে।
দিয়া খুশিতে কান্না করে দিলো, হিয়ার চিৎকার শুনে তনুশ্রী দেবী ঠাকুরঘরে থেকে ছুটে এলো,, মেয়ে রেজাল্ট শুনে খুশিতে উনার চোখেও জল চলে এলো, মেয়ে জড়িয়ে ধরলো।
অভি- পিসিমনি কান্নাকাটি বন্ধ করে মিষ্টি মুখ করোও আগে,,,

তিনি চোখের জল মুছে দিয়ার মুখের সামনে মিষ্টি ধরলো, দিয়া একটু খেয়ে বললো
দিয়া- আমি একটু রুমে যাচ্ছি,পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসছি,তোমরা থাকে।
বলেই অভি ফোনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে রুমে দিকে ছুটলো, কেউ বিষয় টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামালো না,,, দিয়া রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিলে, হাতের ফোন টা এখনে বায়োবেট হচ্ছে, দিয়া ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ও পাশ থেকে অগ্নির অস্থির কন্ঠ শুনা গেলো
অগ্নি – কি সমস্যা তোর, ফোন ধরছিস না কেন?? দিয়ার রেজাল্ট নিয়েছিস??

দিয়া-,,,,,,,,
অগ্নি – কথা বলছিস না কেন??
দিয়া-,,,,,,,,,,,,,
অগ্নি – হ্যালো, শুনতে পারছিস তুই
দিয়া- বলুন,
অগ্নি থমকে গেলো, দিয়ার কন্ঠ শুনে। দু- পাশ থেকে দুজনেই নিরব, নিরবতা ভেঙে দিয়া বললো
দিয়া- চুপ করে থাকার জন্য কল দিয়েছেন নাকি??

অগ্নি – অভি ফোন তোর কাছে কেন?? অভি কই?
দিয়া- দাদাভাই বাসায় চলে গেছে, আজ দাদাভাইয়ের ফোন টা আমার কাছে থাকবে।
অগ্নি আবারও চুপ করে রইলো, কি বলবে বুঝতে পারছে না, এভাবে অপ্রত্যাশিত ভাবে দিয়া কল ধরবে ও বুঝতে পারে নি।
দিয়া- আমি রেখে দিবো?
অগ্নি – দিয়া
দিয়া- হুম।
অগ্নি- রেজাল্ট দিয়েছে?
দিয়া- হুম।
অগ্নি – রেজাল্ট কি??
দিয়া- ফেল।
অগ্নি – মিথ্যা বলছিস?
দিয়া- সত্যি বলছি।
অগ্নি- সত্যি।
দিয়া- মিথ্যা।
অগ্নি – তাহলে সত্যি টা বল

দিয়া- সত্যি বললে কি পাবো।
অগ্নি- যা চাস।
দিয়া- প্রমিজ
অগ্নি ভাবনাচিন্তা না করেই বলে দিলো
অগ্নি- প্রমিজ
দিয়া- গোল্ডেন A+
অগ্নি – আমি জানতাম তোর রেজাল্ট খুব ভালো হবে। আমি তো আগেই জানতাম আমার পরী খুব ভালো রেজাল্ট করবে।
অগ্নি খুশিতে আত্মহারা হয়ে কি বলছে, সেদিকে কোন খেয়াল নেই

দিয়া- তাই
অগ্নি – হুম,
দিয়া- এবার আমার গিফট
অগ্নি – কি চাই?
দিয়া অকপটে বলে দিলো,,
দিয়া- আপনাকে চাই।।।।।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৫

অগ্নি স্তব্ধ হয়ে গেলে, কি বলবে পিচ্চি পরী টাকে
তাই কিছু না বলেই কলটা কেটে দিলো অগ্নি।দিয়া কিছুখন ফোনের দিকে চেয়ে থেকে বললো
দিয়া- আমি যখন কিছু চেয়েছি সেটা পূরণ অবশ্যই আপনি করবেন।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৭