প্রেম পরিণয় পর্ব ৭

প্রেম পরিণয় পর্ব ৭
রাজশ্রী মজুমদার রাই

কেটে গেলো আরো দুই মাস, আর কথা হয় নি অগ্নি আর দিয়ার। এর মধ্যে আর বাসায়ও আসে নি অগ্নি।মাত্রই কলেজ থেকে বাসায় এসেছে দিয়া, বাসায় এসেই দিয়ার মেজাজ টা চটে গেছে, ওর বড় পিসি(আভা দেবী), ছোট পিসি (বিভা দেবী) এসেছেন। উনাদের একদম পছন্দ করে না দিয়া, উনারা আসলেই অশান্তি শুরু হয়, দীপক সাহা ব্যবহারও অনেক বেশি খারাপ হয়, দিয়া পিসিদের কাছে গিয়ে প্রণাম করে বললো

দিয়া- কেমন আছেন??
বিভা দেবী মুখ মুচড়ে উওর দিলেন
বিভা দেবী – ভালো আছি,
দিয়া রুমে দিকে যেতেই নিলেই, আভা দেবী বলে উঠলো
আভা দেবী – শুনলাম গোল্ডেন A+ পেয়েছি, কিভাবে সম্ভব, তুই তো ঠিক মতো পড়ালেখায় করিস না,, নকল করে পাস করেছিস নাকি??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উনার কথা শুনে দিয়া রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়া মিনমিন করে বললো
হিয়া-নকল করতে যাবে কেন? দিদিয়া পরীক্ষার আগে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছে, তাই ভালো ফল পেয়েছে।
বিভা দেবী – অনেক বেশি কথা বলতে শিখে গেছিস মনে হয়। মুখে মুখে তর্ক করছিস।
হিয়া- তর্ক কখন করলাম পিসি?

তনুশ্রী দেবী সবটাই শুনছে, এখন এক কথায়,দুই কথা বাড়বে।তাই তিনি তাড়াতাড়ি মেয়েদের কাছে গিয়ে বললো,,
তনুশ্রী দেবী – দুজনেই রুমে যাও,,, হিয়া তোমার না শরীর খারাপ,, স্কুলে পর্যন্ত যাও নি। এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে গিয়ে রেস্ট করো।
মায়ের কথা শুনে দুইজনেই রুমে চলে গেছে, দিয়া রুমে ঢুকেই কাঁধের ব্যাগ টা ছুড়ে ফেলে, প্রচুর রাগ হচ্ছে তার, কতো কষ্ট করে দিন-রাত এক করে পড়াশুনা করলো আর ওর পিসি কি বললো, নকল করে পাস করেছে, এটা কেমন কথা।

দীপক সাহা বাসায় আসতেই, দুই বোন ভাইয়ের কাছে নালিশের ঝুড়ি খুলে বসেছে। দীপক সাহা রেগে দুই মেয়েকই ডাকলেন, বাবার ডাকে দুজনেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
দীপক সাহা – কি শুনছি এসব, তোমাদের কি আমি এ শিক্ষা দিয়েছি, বড়দের সাথে এ কেমন ব্যবহার।
দিয়া হিয়া বুঝলোই না, ওরা কি করেছে,

দিয়া- কি করেছি আমরা বাবাই?
আভা দেবী তেঁতে উঠে বললেন
আভা দেবী – দেখেছিস দীপক, আবার জিজ্ঞেস করছে??
দিয়া- জিজ্ঞেস না করলে জানবো কিভাবে কি দোষ করেছি।
দীপক সাহা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো, মেয়ের দিকে,
বিভা দেবী – দেখছো, কতো বেয়াদব হয়েছে এ মেয়ে, মুখে মুখে তর্ক করছে।
দিয়া আবারও কিছু বলতে যাবে, তার আগেই দীপক সাহা ধমক দিয়ে বললো

দীপক সাহা- তোমার মুখ থেকে আর একটা শব্দ বের হলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে,এক্ষুনি ক্ষমা চাও।
দিয়ার ও আজকে ভীষণ রাগ হলো, তাই ও আবারও বললো
দিয়া- যখন কোন দোষ করি নি তখন ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
দীপক সাহা যা কখনোই করে নি তাই আজ করলো,প্রথম বারের মতো মেয়ে গায়ে হাত তুললেন, থাপ্পরটা এতো জোরে দিয়েছে, দিয়া হুমড়ি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেছে, তনুশ্রী দেবী দৌড়ে এসে মেয়েকে তুলে বুকে জরিয়ে ধরলো। স্বামীর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো, হিয়া তো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো,,

দীপক সাহা – মেয়েদের এ শিক্ষা দিচ্ছো তুমি, আমার মুখে মুখে তর্ক করছে।
তনুশ্রী দেবী – কি এমন করেছে ও, যে গায়ে হাত তুললেন।
আভা দেবী – তুমি কি আমার ভাইয়ের থেকে কৈফিয়ত চাইছে, মেয়ে বেয়াদবি করেছে তাই শাসন করেছে৷ তুমিই মেয়ে দুটো কে এমন বেয়দব বানিয়েছো।
তনুশ্রী দেবী – কৈফিয়ত চাই নি, শুধু জানতে চেয়েছি, আমার মেয়ে কি এমন দোষ করেছে, যার জন্য হাত তুলতে হলো।

বিভা দেবী – এবার বুঝেছিস দীপক মেয়েরা কোথা থেকে এমন শিক্ষা পাচ্ছে৷ তোর বউ সব নষ্টের মূল।
দীপক সাহা চোখ রাঙ্গিয়ে স্ত্রী দিকে তাকালো, তনুশ্রী দেবীর রাগ জেনো আজকে সপ্তম আকাশ ছুলো, স্বামী চোখ রাঙ্গানোতে তিনি দমে গেলেন না উল্টো বললেন
তনুশ্রী দেবী – ভাগ্যিস মেয়েরা আমার শিক্ষায় বড় হয়েছে, আপনাদের শিক্ষা পেলে তো আপনাদের মতোই ব্যবহার করতো,

আভা দেবী ন্যাকা কান্না করতে করতে ভাইকে বললো
আভা দেবী – দেখিস দীপক তোর বউ কিভাবে আমাদের অপমান করছে, ও কি বললো ভাই, আমাদের মরা মা,বাবার শিক্ষা নিয়ে কথা বললো।
দীপক সাহা – কি বললে তুমি, এতো বড় সাহস কিভাবে হলো যে আমার মৃত মা,বাবাকে নিয়ে কথা বললে তাদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলছো, এখন মনে হচ্ছে থাপ্পড় টা মেয়েকে না দিয়ে তোমাকে দেওয়া উচিৎ ছিল।
তনুশ্রী দেবী চমকে তাকালো স্বামীর দিকে, এত বছরে এটাই কি তার পাওনা ছিলো, দিয়া মায়ের বুক থেকে মাথা তুলে বাবা দিকে তাকালো,,

তনুশ্রী দেবী – এটাই তো বাকি আছে, মারুন থাপ্পড়। এতো গুলো বছর আপনার সংসার আগলে রেখেছি, আপনাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার জন্য এটাই তো পাওনা ছিল আমার।
বলেই চোখ থেকে বকয়েক ফোঁটা জল গরিয়ে পড়লো, মায়ের চোখের জল দেখে দিয়া এবার বললো,
দিয়া- বাবাই,,,

মেয়ের ডাকে,ওর দিকে তাকাতেই কোথাও একটা সুক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলো দীপক সাহা, মেয়ের ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের চাপ বসে গেছে,
দিয়া- একদিন তুমি খুব আফসোস করবে বাবাই। তোমার এ ব্যবহার জন্যই আপনজনদের হারাবে। সময় থাকতে মূল্য দিতে শিখো, ঠিক ভুল যাচাই করে শাসন করো,,

বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেছে, হিয়াও বোনের পিছনে ছুটলো, তনুশ্রী দেবী এখনো কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে রইলো,, সেদিকে চোখ পড়তেই দীপক সাহার বুক টা ধক করে উঠলো, বেশিখন তাঁকাতে পারলো না, স্ত্রীর কান্নারত মুখশ্রী তে। বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আর যাই হোক তনুশ্রী দেবী কে তিনি ভীষণ ভালোবাসে, যদি তার ব্যবহারে তা প্রকাশ করে না। বোনেদের কথায় প্রভাবিত হয়ে, স্ত্রী সন্তানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করেন। যেকোন সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশ কখনো সুখকর হয় না।

হঠাৎ করেই অগ্নির মনটা আনচান করছে, শান্ত মানুষটার মনটা অশান্ত হয়ে উঠছে, আজ সারাদিনে দিয়ার খবর নেওয়া হয় নি, প্রতিদিন অভি বা হিয়াকে কল দিয়ে খুব কৌশলে খবর নেই দিয়ার, মাঝে মাঝে হিয়ার সাথে কথা বলার সময় প্রেয়সীর কন্ঠ স্বর শুনতে পায়, অগ্নি অফিস থেকে বের হয়ে কল দিলো হিয়াকে,, বার কয়েক রিং হওয়ার পরই রিসিভ করলো

অগ্নি – হ্যালো,,, হিয়াপাখি কেমন আছিস
হিয়া- এইতো আছি দাদাই।
হিয়ার কন্ঠ স্বর টা ঠিক লাগলো না অগ্নির কাছে
অগ্নি – কি হয়েছে হিয়া?
হিয়া- কিছু হয় নি দাদাই,
অগ্নি – তাহলে আমার হিয়াপাখি কান্না করেছে কেন? বলবি না দাদাইকে??

দাদাইয়ের এমন আহ্লাদী কথা শুনে, হিয়া শব্দ করেই কেঁদে দেয়,,, কিছু সময় নিয়ে অগ্নিকে সবটা খুলে বলে। দিয়াকে মারার কথা শুনে অগ্নি চোখ বন্ধ করে নেয়, পিসিমনির সাথে এমন ব্যবহার ও খুব কষ্ট পায়, কতোই আদরের দুলারি ছিলো তার পিসিমনি। নিজেকে সামলে বলে
অগ্নি- – কান্না করিস না পাগলি, আমি অভিকে ফোন দিয়ে বললো, তোদের আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে। আচ্ছা পিসিমনি কই এখন??

হিয়া- মা, নিজের রুমে আছে দাদাই??
অগ্নি – দুপুরে খেয়েছিস তোরা??
হিয়া- না।
অগ্নি – কেন??
হিয়া- দিদিয়া কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে, মা ও আর রুম থেকে বের হয় নি,, তাই,,,,
অগ্নি – তুই গিয়ে পিসিমনিকে ডাক দেয়, বলবি তোর খিদে লাগছে, ওরা না খেলে তুইও খাবি না, এটা বল।আর দিয়াকে ডেকে তুল,তোর খিদে লাগছে শুনতে ওরা ও খেতে রাজি হয়ে যাবে।

হিয়া- আচ্ছা।
অগ্নি – মন খারাপ করিস না,বোন আমার, সব ঠিক হয়ে যাবে৷ খাওয়া শেষ করে দাদাই কে কল দিস।
হিয়া- ঠিক আছে দাদাই।
অগ্নি কথা মতোই হিয়া কাজ করলো, এতেই কাজও হয়েছে, মা আর দিয়া ওকে ভীষণ ভালোবাসে, তাদের ছেড়ে হিয়া কখনোই খেতো না,,, তাই ওনারা তিনজন খেতে বসলো, দীপক বাবু ও তার বোনরা আগেই খেয়ে নিয়েছে। বোনেদের পাল্লায় পড়ে তিনি স্ত্রী কিংবা মেয়েদের খেতে ডাকেন নি। তনুশ্রী দেবী নাম মাত্রই খাবার খেলো,, খাবার জেনো তার গলা দিয়ে নামছে না, দিয়া মায়ের অবস্থা বুঝতে পেরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

দিয়া- সরি মা, আমার জন্যই আজ তোমাকে এতোগুলো কথা শুনতে হলো,, বাবাই ও,,,,,
তনুশ্রী দেবী মেয়ের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই বললো,
তনুশ্রী দেবী – তুই কেন সরি বলছিস, তোর কোন দোষ ছিলো না,,, শুন আজ তোদের একটা কথা বলি, যেটা সব সময় মনে রাখবি, অন্যায় না করে কখনো কারো কাছে ক্ষমা চাইবি না,,, নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করবি। আজকে আমি সরি বলছি তোদের, আমি সব অন্যায় নিরবে সহ্য করেছি বলেই তার ফল এখন তোদের ভোগ করতে হচ্ছে।

দিয়া হিয়া চুপ করে মায়ের কথা শুনলো, এতোগুলো বছরে এ প্রথম এমন কথা বলছে, আগে কিছু বলতে গেলে, তনুশ্রী দেবী সব সময় মেয়েদের চুপ করিয়ে দিতো, আজকে তিনি বলছেন প্রতিবাদ করার জন্য, এসব সহ্য করতে করতে আজ তার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে কি পেয়েছেন তিনি??
ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে এমন ব্যবহার সত্যিই প্রাপ্য ছিল তার ????

অগ্নি অস্থির হয়ে আবারও কল দিলো হিয়ার নাম্বারে,, হিয়া ফোনের কাছে নেই, হিয়ার ফোনটা সামনে নিয়ে বসে আছে দিয়া। তবে কল ধরছে না,,, হিয়া রুমে আসতেই দিয়া বললো
দিয়া- তোর দাদাই কল দিচ্ছে, আমি ফোনটা স্পিকারে দিচ্ছি তুই কথা বল।
হিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই দিয়া ফোন টা স্পিকারে দিলো

অগ্নি -হিয়া
হিয়া- বলো দাদাই,
অগ্নি – খেয়েছিস??
হিয়া- হুম
অগ্নি- সবাই খেয়েছে??
হিয়া- হুম।
অগ্নি – শুন হিয়াপাখি, অভি না এলাকায় নেই, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে কালই চলে আসবে, ও গিয়ে তোদের নিয়ে আসবে আমাদের বাসায়।

হিয়া আচ্ছা বলতে যাবে তখনি দিয়া বললো
দিয়া- কোথাও যাবো না আমরা। ঘনঘন মামার বাড়িতে গেলে আদর কমে যাবে।
দিয়ার কন্ঠ শুনে অগ্নি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,
অগ্নি- হিয়াপাখি কাউকে বলে দে, সারাজীবন থাকলে ও আমাদের বাসায় তার আদর কমবে না, আর যদি একান্ত না যেতে চাই তাহলে যেন মাথা ঠান্ডা রাখে, আর কোন ঝামেলা না করে।
দিয়া- আমি কোন ঝামেলা করি নি, উনারা করে, আর হিয়াপাখি তুই কাউকে বলে দে, যতোদিন এ বাসায় থাকবো ততোদিন এসব ঝামেলা হবেই।

অগ্নি – তাই তো বললাম, আমাদের বাসায়, চলে যেতে।
দিয়া- যাবো না এখন, একবারে বিয়ে করে যাবো।
এমন কথা শুনে হিয়া চোখ বড়বড় করে তাঁকায়,অগ্নি খুকখুক করে কেশে উঠলো, দিয়া পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য বললো

দিয়া- আজব এমন করে তাঁকানো মতো কি হলো, আমি বলতে চেয়েছি, একবারে বিয়ে করে জামাইয়ের বাড়িতে চলে যাবো। কাউকে বলে দে তার বিয়ে বয়স হয়েছে, বিয়ের ব্যবস্থা করতে। বৌ করে নিয়ে গেলে আর এসব ঝামেলা হবে না।
হিয়া আবার ও কেবলার মতো তাকিয়ে বললো,

হিয়া- কি বলছো তুমি দিদিয়া?? তার বিয়ে বয়স হয়েছে মানে??
দিয়া- উপস সরি রে, মানে আমার বিয়ের বয়স হয়েছে, সেটা বলতে চেয়েছি।
দিয়ার কথার ইঙ্গিত অগ্নি ঠিকই বুঝতে পারছে,, তার প্রেয়সী যে ইশারা-ইঙ্গিতে তার কাছে নিয়ে আসার কথা বলছে।

অগ্নি – বিয়ে করার কথা যে বলছে তার কি বিয়ের বয়স হয়েছে, জিজ্ঞেস কর তো হিয়াপাখি?? এখনো তো ইন্টারমিডিয়েট ও শেষ করে নি।
দিয়া- পড়াশুনা করতে আমার ভালো লাগে না,,, আর বিয়ে বয়স হয় নি কে বলেছে, আমার দিদা, ঠাম্মি আরো ছোট বয়সে বিয়ে করছে, তাদের দিক থেকে দেখলে আমও তো বুড়ি হয়ে গেছি।

দিয়ার এমন যুক্তির কাছে, অগ্নি বলার মতো কিছুই ফেলো না, তাই কোন রকমে হিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিলো। অগ্নি একটা সিদ্ধান্ত নিলো এবার বাসায় গেলে দিয়াকে বোঝাবে ও যা চাইছে তা সম্ভব না,, দরকার পড়লে কিছু মিথ্যা গল্প শুনিয়ে দিবে। যে আগুনে অগ্নি প্রতিনিয়ত পুড়ছে তার আঁচ ও দিয়াকে লাগতে দিবে না। কিন্তু অগ্নি তো জানেই না তার প্রেয়সী অনেক আগেই সেই আগুনে নিজেকে সিক্ত করে নিয়েছে।

পরের দিন শুক্রবার থাকায়, হিয়া দিয়া দুজনেই বাসায় ছিলো, সকাল থেকেই আভা দেবী আর বিভা দেবী শুরু করছে নতুন নাটক। আজকে বিষয়বস্তু ছিল ফোন নিয়ে, কেন ফোন দেওয়া হলো ওদের এটা নিয়েই ভাইকে বিভিন্ন কথা শুনাতে লাগলো৷ সবাই একসাথে সকালের নাস্তা করতে বসলো, তনুশ্রী দেবী মলিন মুখে খাবার পরিবেশন করছে। খাবার টেবিলে হিয়া দিয়াও উপস্থিত ছিলো, বিভা দেবী ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো

বিভা দেবী – এখন কি যুগ ভালো নাকি, কোন আক্কেলে তুই দুই মেয়েকে ফোন কিনে দিলি???
দীপক সাহা – আমি কিনে দেয় নি।
আভা দেবী – তাহলে কি তোর বৌ কিনে দিয়েছে?? এজন্যই তো মেয়ে গুলো উচ্ছন্নে যাচ্ছে। সারাদিন ফোন নিয়ে পড়ে থাকে।
দিয়া আর চুপ করে থাকতে পারলো না,

দিয়া- ফোন মা কিনে দেয় নি, দাদাভাই কিনে দিয়েছে। আর যুগ যখন ভালো না, তাহলে আরো কয়েক মাস আগে নিজের মেয়েদের কেন ফোন কিনে দিলেন??
বিভা দেবী – আমাদের মেয়েরা তোদের দু-বোনের মতো সারাদিন ফোন টিপে না,,, কে এতো কল দেয় তোদের।
দিয়া তাচ্ছিল্য হাসলো, হেসেই বললো

দিয়া- আশা করি আপনাদের আজকের এ বিত্তিহীন কথা, আপনাদের ভাইয়ের বিশ্বাস হবে না। কারণ আমার ফোন সারাদিন এখানে সেখানে পড়ে থাকে। ওই যে টেবিলের উপর ফোন রাখা আছে, দুই-চার দিন রেখে দিন আপনাদের কাছে, তাহলে কে এতো কল দেয় বুঝতে পারবেন।

দীপক সাহা নিজেই দেখেছে দিয়ার ফোনের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ নেই, ওর ফোন এখানে সেখানেই পড়ে থাকে, এমনকি ফোনে কোন লক ও দেওয়া নেই। হিয়া ও খুবই কম ফোন টিপে,শুধু কল আসলে কথা বলে, দীপক সাহার জানা মতে অভি আর অগ্নি ছাড়া কেউই তেমন কল দেয় না। তাই দীপক বাবু এ বিষয়ে কোন কথা বললেন না। আভা দেবী ভাইয়ের এ নিরবতা মেনে নিতে পারলেন না
আভা দেবী – কিছু বললি না দীপক?? এ মেয়ে কালকে মার খেয়েও শিক্ষা হয় নি। কিভাবে কথা বলে শুনেছিস??
দীপক সাহা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,

দীপক সাহা – বাদ দাও তো দিদি, ওরা তেমন ফোন ব্যবহার করে না। শুধু শুধু বেশি বলছো তুমি।
ভাইয়ের এমন কথায় বোনদের মন ক্ষুন্ন হলো।
আর কিছু বলতে যাবে তখনি অভির আগমন ঘটলো সেখানে, এমন সময় দিয়া হিয়া ছাড়া কেউই এখানে অভিকে আশা করে নি। তনুশ্রী দেবী বেশি ভয় ফেলেন, তিনি জানেন অভি অনেক বেশি রাগী, উল্টা পাল্টা কিছু হলেই মিনিটের রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে ফেলতেও এ ছেলে দুই বার ভাববে না। তিনি প্রথমে বললেন

তনুশ্রী দেবী – বাবা এতো সকালে তুই এখানে।
অভি একগাল হেসে বললো
অভি- কেন পিসিমনি আসতে পারি না।
তনুশ্রী দেবী – না বাবা, সেটা বলতে চাই নি।
অভি গিয়ে পিসিমনিকে জড়িয়ে ধরলো, আর ফিসফিস করে বললো

অভি- ভয় পেয়ে না পিসিমনি, তোমার স্বামী আর কুটনি ননদের কিছু করবো না এখন,,, যেদিন শুধু তুমি একটা ইশারা দিবে, সেদিন রক্তগঙ্গা বয়ে দিবো। আমার বোনদের আর পিসিমনি চোখ থেকে পড়া প্রত্যেক ফোঁটা জলের হিসাব নিবো সেদিন।
তনুশ্রী দেবী তাকালো অভি দিকে,, হাসলো অভি। দুই ভাইপো তাকে খুব ভালোবাসে তিনি তা জানে।
তনুশ্রী দেবী – বস বাবা, নাস্তা করে নে।

অভি- না পিসিমনি, আমি নাস্তা করেই এসেছি। বোনদের দেখতে আসলাম।
দিয়া- বসো না দাদাভাই, একসাথে অনেক দিন খাওয়া হয় না।
অভি কিছু একটা ভেবে একটা চেয়ার টেনে বসে তনুশ্রী দেবী কে ও পাশে বসিয়ে দিলেন,,
তনুশ্রী দেবী – কি করছিস বাবা,
অভি- নাস্তা করতে বসো,

বিভা দেবী – ও বসলে আমাদের কে পরিবেশন করবো??
অভি- আপনাদের হাত নেই,,,, নিজেদের টা নিজেরা নিয়ে খান। আমার পিসিমনি কে আপনার সেবা করার জন্য এ বিয়ে দেয় নি৷
আভা দেবী আর বিভা দেবী তেঁতে উঠলো, বোনদের কিছু বলতে না দিয়ে দীপক সাহা বললেন
দীপক সাহা – এভাবে কেন কথা বলছো অভি, আমার বোনেরা এ বাড়ির অতিথি, তাদের আদর অপ্যয়ন করা তোমার পিসিমনির দায়িত্ব।

অভি- পিসিমনির দায়িত্ব তো পালন করেছে, হরেক রকমের নাস্তা বানিয়ে এনেছে, কিন্তু আপনার বোনেদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পিসিমনি খেতে বসতে পারবে না,এটা কেমন দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?? কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে আপনার। কখন নাস্তা করবে পিসিমনি বেলা বারোটায় আপনি আগে নিজের দায়িত্ব গুলো পালন করতে শিখুন, তারপর অন্যের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে আসবেন।

দীপক সাহার আর কিছু বলার মতো মুখ রইলো না, তিনি চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো, উনার বোনেরা ও আর কিছু বললো না, কারণ অভির রাগ সম্পর্কে সবার কম বেশি ধারণা আছে। অভি একটা প্লেটের খাবার নিয়ে, নিজে হাতে তনুশ্রী দেবী আর দিয়া হিয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলো। বাবার পরে এই ভাইপো তাকে এমন যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে, তার চোখ ছলছল করে উঠলো, দীপক সাহা একপলক তাকালো, অভি চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললো
অভি- খাওয়ার সময় কাঁদতে নেই পিসিমনি। তুমি যে আমাদের খুব আদরের, ঠাকুরদা যদি আজ বেঁচে থাকতো, তাহলে তার আফসোসের শেষ থাকতো না। তার আবেগের বশে করা ভুলের জন্য আজ তোমার চোখের জল দেখতে হচ্ছে।

কথাটা দীপক সাহার দিকে তাকিয়ে বললো, সাথে সাথে দীপক সাহা চোখ নামিয়ে নিলো, কোথাও একটা তীরের মতো বিঁধলো অভির কথা গুলো। তিনি কি তার তনুর চোখের জলের কারণ। সুখে রাখতে পারছেন না, খুব তো তনুর বাবার হাত পা ধরে তাকে নিজের করে পেয়েছিলো। তনুর বাবা বেঁচে থাকলে সত্যি কি আফসোস করতো,,, এসব ভাবনার মাঝেই আবারো তাকালো তনুশ্রী দেবীর দিকে। সে মায়াময় চেহারা, যাকে একপলক দেখার জন্য পাগল হয়ে যেতো। দীপক সাহা নিজ মনেই বললো

দীপক সাহা – যতো খারাপ ব্যবহার করি না কেন, তারপর ও এটাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি তনু।
খাওয়ার শেষ পর্যায়ে অভি আবার বললো,
অভি- দিয়া, হিয়া আমি তোদের নিয়ে যাবো। আমাদের বাসা থেকেই স্কুল কলেজে যেতে পারবি।
দিয়া আমতা আমতা করে বললো,

দিয়া- শুনো না দাদাভাই, মায়ের শরীর টা বেশি একটা ভালো না, মা,কে বাসায় একা রেখে আমি এখন যাবো না। পরে যাবো দাদাভাই
অভি- কি হয়েছে পিসিমনির??
দিয়া- পেসার টা উঠানামা করছে আজকে কয়েক দিন, রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না। পুরানো সে মাথা ব্যথাটাও বেড়েছে।

অভি- আমি কালকেই ডাঃ কাছে নিয়ে যাবো।
দীপক সাহার কিছু রাগ নিয়েই বললো,
দীপক সাহা -তোমাকে নিতে হবে না, ডাঃ দেখানোর মতো সে ক্ষমতা আমার আছে, এসব কথা আমাকে বললেই পারতো।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৬

অভি- আপনাকে বলতে হবে কেন, যার সাথে এতোগুলো বছর এক ছাদের নিচে থাকছেন তার অসুস্থতা আপনার চোখে পড়ে নি, যাকে আপনি ভালোবেসন বলে নিয়ে এসেছেন তার চেহারা দেখে বুঝতে পারেন না সে সুস্থ নাকি অসুস্থ?? এসব বোঝার ক্ষমতা যখন নেই আপনার তখন ডাঃ দেখানোর ক্ষমতা থাকলেও আমি আপনাকে সেটা করতে দিবো না।
আজ অভির কথাগুলো বারবার আঘাত করছে দীপক সাহাকে।।।।।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৮