প্রেম পরিণয় পর্ব ৮

প্রেম পরিণয় পর্ব ৮
রাজশ্রী মজুমদার রাই

কেটে গেলো আরো একটা সপ্তাহ, প্রত্যেকদিনই কিছু না কিছু নিয়ে দীপক সাহার বকা শুনতে হয়। উনি বোনেদের কথা শুনেই কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়াই স্ত্রী মেয়েদের সাথে খারাপ আচারণ করেন৷ তনুশ্রী দেবী আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গেছেন, বলতে গেলে স্বামীর সাথে কথা বলায় বন্ধ করে দিয়েছেন,, দিয়ার দিন কাটছে চিনি ছাড়া শরবতের মতো,,দিয়ার চারপাশে প্রজাপতি মতো উড়ে উড়ে প্রেম করছে ওর বান্ধবীরা। এসব দেখে বেচারি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। তীব্র মন খারাপ হলে অগ্নি সে ডায়েরি নিয়ে বসে, যার পাতায় পাতায় দিয়াকে নিয়ে সীমাহীন ভালোবাসা প্রকাশ করেছে অগ্নি।

রাত দশটা, দিয়া মায়ের হাতে হাতে কাজ করছে, খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখে, সবাইকে খেতে ডাকলো। খাওয়ার এক পর্যায়ে বিভা দেবী বললেন
বিভা দেবী – দীপক তোকে একটা কথা বলার ছিলো,
দীপক সাহা – বলো দিদি, কি বলবে।
বিভা দেবী – দিয়ার জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে৷ ছেলে অনেক টাকা পয়সা ওয়ালা।
দীপক সাহা – আসলে এখনো,
বলতে না দিয়েই আভা দেবী বললেন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আভা দেবী – আরে কি আসলে নকলে করছিস,, মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে তো দিতে হবে, লেখাপড়া করাই কি লাভ।
বিভা দেবী – শুধু শুধু টাকা নষ্ট ছাড়া আর কোন লাভ হবে না, তুই তো আর মেয়েকে দিয়ে চাকরি করাবি না।
দিয়া জেনো কিছুই শুনছে না, মনযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে, এ মুহূর্তে খাবার টা শেষ না করলে মনে হয় অনেক বড় কোন পাপ হয়ে যাবে। হিয়া বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আভা দেবী – তাহলে ছেলেকে কবে আসতে বলবো বল?

এতোক্ষণ তনুশ্রী দেবী ও সব চুপ করে শুনছিলো, এবার তিনি মুখ খুললেন।
তনুশ্রী দেবী – কেউ আসবে না।
আভা দেবী – মানে কি বলতে চাও তুমি??
তনুশ্রী দেবী – দিয়ার এখনো বিয়ের বয়স হয় নি। এতো তাড়াতাড়ি কিসের বিয়ে??
বিভা দেবী – এসব কথা বলার তুমি কে??
তনুশ্রী দেবী – আমার মেয়ে বিয়ের বিষয়ে আমি কথা না বললে কে বলবে।

আভা দেবী – আমার ভাইয়ের ঘাড়ে আর কতো বছর থাকবে তোমার মেয়েরা। পারলে না তো আমার ভাই টাকে একটা ছেলে দিতে, দুই দুইটা মেয়ের বোঝা ঘাড়ে তুলে দিলে। এখন এ বোঝা ঘাড় থেকে নামানোর চেষ্টা করছি আমরা সেটাও তোমার সহ্য হচ্ছে না। আমার ভাইয়ের জীবন টা একদম ধ্বংস করে দিলে।
তনুশ্রী দেবী স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন, হয়তো ভেবেছে আজ অন্তত তিনি কিছু বলবেন বোনদের,, কিন্তু তাকে ভুল প্রামাণ করে দীপক সাহা চুপচাপ রইলো।কিন্তু তনুশ্রী দেবী আজকে চুপ থাকবেন না, তার মেয়েদের জীবন নিয়ে এসব তামাশা তিনি সহ্য করবেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো

তনুশ্রী দেবী – আমার মেয়েরা যদি আপনাদের ভাইয়ের ঘাড়ের বোঝা হয়ে থাকে, তাহলে আজ থেকে আমি আমার মেয়েদের খাওয়া পড়ার দায়িত্ব নিবো। ভুলে যাবেন না আমার বাবা আমার নামে যা রেখে গেছেন তা দিয়েই আমার মেয়েদের চলে যাবে৷ আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন,, আমার মেয়েদের ব্যাপারে আপনারা সিদ্ধান্ত নেওয়া কে?বাইরে কারো ভাবার প্রয়োজন নেই আমার মেয়েদের বিষয়ে৷
বলেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন, দিয়া ও খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো, হিয়া ও বোনের পিছনে চলে গেলো নিজেদের রুমে। আভা দেবী ন্যাকামির স্বরে বললো,

আভা দেবী – দেখেছিস দীপক তোর বউ আমাদের বাইরের লোক বললো, কিভাবে অপমান করলো আমাদের?
দীপক সাহা চারদিকে চোখ বুলিয়ে কিছুটা শক্ত কন্ঠে বোনদের উদ্দেশ্য বললো
দীপক সাহা – এতোক্ষণ আমি সবটাই শুনছি, ওদের সামনে কিছু বলে তোমাদের ছোট করতে চাই নি। আমার মেয়েরা আমার বোঝা না,, আমি কখনো ছেলের জন্য আফসোসও করি নি। তাহলে কোন যুক্তিতে তনুকে এসব কথা শুনালে?

ভাইয়ের মুখে এমন কথা ওনারা আশা করে নি, এতে জেনো তাদের রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলো,,, দীপক সাহা আবারও বললো
দীপক সাহা – দিয়ার বিয়ে বয়স হলে ভেবে দেখবো তখন তোমাদের জানাবো। এসব বিষয় নিয়ে এখন আর কোন কথা বলবে না তোমরা।

আভা দেবী আর বিভা দেবী খুব রেগে গেলেন, মনে মনে ঠিক করলেন এর জন্য উচিৎ শিক্ষা দিবেন তনুশ্রী দেবী কে।
হিয়া অনেকখন পর্যন্ত দিয়ার গতিবিধি লক্ষ্য করছে, দিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে, দেখেই মনে হচ্ছে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে, হিয়া আস্তে করে ধাক্কা দিলো, দিয়ার ভাবনায় বিঘ্ন ঘটায় নাক মুখ কুঁচকে তাকালো হিয়ার দিকে,,, চোখের ইশারা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি?
হিয়া- চিন্তা করো না দিদিয়া, মা আছে তো, এতো তাড়াতাড়ি তোমার বিয়ে হতেই দিবে না।
দিয়া- তোকে কে বললো আমি এসব ফালতু বিষয় নিয়ে চিন্তা করছি?
হিয়া- তাহলে কি ভাবছো।

দিয়া- কি ভাবছি সেটা তোকে এখন বলা যাবে না, পরে বলবো।
হিয়া আর কিছু বললো না, মুখ টা কালো করে রেখেছে তা দেখে দিয়া বললো,
দিয়া- কি হয়েছে, মুখ এমন বাংলা পাঁচ বানিয়ে রেখেছিস কেন??
হিয়া- বাবাই যদি পিসিদের কথায় রাজি হয়ে যায়, পিসিদের পছন্দের ছেলে জীবনেও ভালো হবে না।
দিয়া- চিন্তা করিস না,জীবন থাকতে আমি কখনোই বাবাই কিংবা পিসিদের পছন্দের ছেলে কে বিয়ে করবো না। হয়তো পালিয়ে যাবো নয়তো আত্মহত্যা করবো।

হিয়া- দিদিয়া কি বলছো এসব তুমি?
দিয়া- ঠিকই বলছি, বাবাই নিজের মতো কাউকেই খুঁজে নিয়ে আসবে আমার জন্য , আমি চাই না আমার জীবনে বাবাইয়ের মতো কেউ আসুক। মায়ের মতো জীবন আমার হোক সেটা আমি চাই না।
হিয়া- বাবাই তো মাকে ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলো তাহলে কেন এমন করে দিদিয়া??

দিয়া- মুখে ভালোবাসি বললেই হয় না, ভালোবাসলে তো ভালো রাখতো মাকে। উনার এ ভালোবাসা মূল্যহীন।
পরের দিন সকালেই আভা দেবী আর বিভা দেবী ভাইয়ের উপর রাগ দেখিয়ে চলো গেলো ঠিকই কিন্তু যাওয়ার আগে তনুশ্রী দেবীর সংসারের ভিত্ত নাড়িয়ে দিয়ে গেলেন। বাবা সাথে মেয়েদের আরো বেশি দুরত্ব তৈরি করে দিয়েছেন। বোনেরা চলে যাওয়ার পরই দীপক সাহা ঘরে ঢুকে তনুশ্রী দেবীকে রেগে বললো

দীপক সাহা – তোমার সাহস কি করে হয় তোমার বাবার টাকার গরম দেখাও। এতোবছর যখন ওই টাকায় দরকার হয় নি আমার মেয়েদের এখনও হবে না। যেভাবে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছো ঠিক সেভাবেই রেখে আসবে।
তনুশ্রী দেবী – আমার মেয়েদের ভরণপোষণের জন্য ওই টাকা দরকার।
দীপক সাহা – ওরা আমার মেয়ে। আমি অক্ষম না যে তোমার বাবার টাকায় আমার মেয়েদের ভরণপোষণ চালাতে হবে।

তনুশ্রী দেবী – ওরা আপনার বোঝা।
দীপক সাহা – তুমি বাড়াবাড়ি করছো তনু।
তনুশ্রী দেবী তাচ্ছিল্য হাসলো, দীপক বাবু আরো বেশি রেগে গেলেন,,
দীপক সাহা – ওই টাকা যেখান থেকে আনেছো সেখানেই রেখে আসো, না হলে কিন্তু খারাপ হবে।
তনুশ্রী দেবী – আর কি খারাপ হবে, বের করে দিবেন আপনার বাড়ি থেকে??
দীপক সাহা- সেটা তুমি চাও তা জানি আমি, কিন্তু আমার থেকে তোমার মুক্তি নেয়। আমার খারাপ রুপ না দেখতে চাইলে, টাকা গুলো ব্যাংকে রেখে আসো,

তনুশ্রী দেবী – আরো কতো রুপ আছে আপনার সেটা আমিও দেখতে চায়?
দীপক সাহা রেগে তনুশ্রী দেবীর হাত পিছনে মুচড়ে ধরলো ব্যাথা পেলেও তনুশ্রী দেবী কোন আওয়াজ করলো না, দীপক সাহা হিসহিসিয়ে বললো
দীপক সাহা – আমাকে বাধ্য করো না, খারাপ হতে। যা বলেছি তাই করো, তোমার বাবা টাকা কোন প্রয়োজন নেই আমার মেয়েদের।

চোখে জল টলমল করছে, সেই টলমলে চোখেই স্বামীর দিকে চাইলো, ধক করে উঠলো দীপক সাহার বুকের ভিতর। ছেড়ে দিলেন হাত, রাগের মাথায় যে ব্যাথা দিয়ে ফেলবেন, সেটা তিনি বুঝতে পারে নি। দ্রুত বেরিয়ে গেলো রুম থেকে, ফ্লোরে বসে পড়লো তনুশ্রী দেবী,,, হাতের ব্যাথার থেকেও বুকের ব্যাথা টা তীব্র।
জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত তনুশ্রী দেবী, আপনি থেকে তুমি হওয়ার সম্পর্কটা ছিলো স্বপ্নের মতো সুন্দর। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুমি থেকে আপনি হওয়ার সম্পর্কে কতোটা তিক্ততা, আর পাহাড় সমান অভিমান রয়েছে তা বুঝলো না দীপক সাহা।

দিয়া সবগুলো ক্লাস শেষ করে মাত্র বের হয়েছে, মন ভালো নেই ওর, একাই একাই সব গুলো ক্লাস করেছে, বান্ধবী গুলো সব ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেম করছে, এসব দেখে আরো বেশি ডিপ্রোশনে চলে যাচ্ছে। প্রেম ট্রেম না করেই একজনকে ঠুস করে ভালোবেসে ফেললো,, এখন তার বিরহে পুড়ছে দিয়া। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতেই হাঁটছে দিয়া। হঠাৎ অপ্রত্যাশিত কাউকে চোখ পড়তেই পা জোড়া থেমে গেলো। চোখগুলো হাত দিয়ে কচলে নিলো, না ঠিকই দেখছে। নিজ মনেই বললো

দিয়া- এই বজ্জাত ব্যাটা আমার কলেজে সামনে কি করে, আমার সাথে দেখা করতে আসছে। আরে ধুর কি ভাবছি আমি, এই কলেজে তো এই ব্যাটা ও পড়ছে তাই হয়তো কোন দরকারে আসছে। আমার প্রতি এতো ভালোবাসা আছে নাকি, সব ভালোবাসা তো ওই ডায়েরির পাতায় পাতায় সীমাবদ্ধ।

বলেই আবার ও অগ্নির দিকে তাকালো, অগ্নিও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, প্রায় ছয় মাস পর দেখছে পিচ্চি টা কে। দিয়া একটা ভেঙচি দিয়েই হাঁটা দিলো,, আর বিরবির করে অগ্নির গুষ্ঠির ষষ্ঠী পূজা করছে।
দিয়া- আজকে যদি ওই শয়তানের সামনে পা তোরা থেমেছিস, তাহলে সত্যি সত্যি বাসায় যাওয়ার সময় সরকারি হাসপাতালে দিয়ে যাবে, আমার সাথে থাকবি আবার আমার সাথেই মীরজাফরি করবি সেটা তো মানবো না।
এসব আজাইরা বকবক করতে করতে অগ্নির পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ডাকলো অগ্নি,

অগ্নি- দিয়া।
হায় কি লাভ হলো এতো শাসন করে এক ডাকেই তো পা থেমে গেছে, বুকের ভেতর ড্রাম ঢোল পেটানো শুরু হয়েছে। এই অঙ্গ পতঙ্গগুলো আবার ও মীরজাফরি শুরু করলো দিয়ার সাথে।
দিয়া দাড়িয়ে রইলো কিন্তু অগ্নি দিকে ফিরলো না, অগ্নি এগিয়ে এসে বললো
অগ্নি- তোর সাথে একটু কথা ছিলো আমার।

দিয়া- বলুন।
অগ্নি – এখানে বলা যাবে না, আমার সাথে একটা জায়গায় যাবি। পিসিমনি কে বলা হয়েছে চিন্তা করবে না।
দিয়া এবার অগ্নির দিকে তাকালো, সময় ব্যয় না করেই বললো
দিয়া- চলুন।

যেখানে এসেছে ওরা জায়গা টা দিয়ার পরিচিত, ওদের এলাকায় মধ্যেই খুব নিরিবিলি পরিবেশে একটা রেষ্টুরেন্ট,, দুজনেই গিয়ে বসলো, অগ্নি খাবার অর্ডার করলো, কারণ লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। অগ্নি নিজের মনে কথা গুলো সাজিয়ে নিচ্ছে, আজ দিয়াকে বোঝানোর জন্য এখানে আসা। নিজের সাথে যুদ্ধ করে প্রেয়সীকে বুঝাবে এ সম্পর্ক কখনোই সম্ভব না। দিয়া অগ্নির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছে কি চলছে ওর মনে।
দিয়া- খেতে এসেছি এখানে আমরা??

অগ্নি – নাহ্ মানে হ্যাঁ, খেতে,,,,
বলতে না দিয়েই ধমকে উঠলো দিয়া
দিয়া- কিহ্, আমি খাবার খাওয়ার জন্য এসেছি আপনার সাথে এখানে?? ওই আমি কি না খেতে পেয়ে মরে যাচ্ছি, যে আপনার সাথে খেতে আসবো??
এমন কথা শুনে অগ্নি ভড়কে গেলো, কি বলতে চাইলো আর কি বুঝলো,
অগ্নি – বলতে চেয়েছি, খেতে খেতে কথা বলবো, খিদে লাগছে আমার, আর লাঞ্চ করার সময় ও হয়ে গেছে তাই।
দিয়া- ও আচ্ছা।

অগ্নি বিড়বিড় করে বললো,,
অগ্নি- এই শুটকি মার্কা চেহারা নিয়ে কি ধমকটাই না দিলো বাপরে,যা বলতে এসেছি তা বললে জানি কি করে।
দিয়া- কিছু বললেন,
অগ্নি – নাহ্।
অগ্নি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দিয়াকে দেখছে, কিভাবে শুরু করবে সেটাই চিন্তা করছে, দিয়া মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে, ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ তার প্রিয় খাবার,,অগ্নি নিজেকে প্রস্তুত করে বললো,

অগ্নি – দিয়া শোন।
দিয়া- বলতে থাকুন, শুনছি আমি।
না তাকিয়ে জবাব দিলো,,,
অগ্নি- দিয়া তোর বয়স টা কম, টিনএজ,এ বয়সে ছেলেমেয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল করে। তখন সবার মনের রঙিন প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়, প্রেম পড়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই, কিন্তু সবকিছু একটা সময় আছে। এটা সে বয়স না তোর। আমার প্রতি তোর আবেগটাও একটা বয়সে এসে আর থাকবে না। তুই এখনো অনেক ছোট, এরকম ভুল হতেই পারে, আমি জানি তুই বোঝালে বুঝবি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের হিন্দু সমাজে এ সম্পর্ক কেউ কখনোই মানবে না। তাছাড়া আমি একজনকে ভালোবাসি।

অগ্নির গলা কাঁপছে, দিয়া স্পষ্ট বুঝতে পারছে,, এবার অগ্নির দিকে তাকালো, নিজের মনেই বললো
দিয়া- বল দেখি, সত্যি বলতে পারিস কিনা, আজকে তোর তিরিং বিরিং বন্ধ করবো আমি।
দিয়ে ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে নিলো, জিনিস টা আছে কি না, কিছুদিন আগেই কিনে রেখেছে। অগ্নি একটু থেমে আবার বলতে লাগলো

অগ্নি – সেও আমাকে খুব ভালোবাসে। অনেক বছর আগ থেকেই আমরা রিলেশনে আছি।
থেমে আবার দিয়ার দিকে তাঁকায়, তীক্ষ্ণ চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, অগ্নি একটা ফাঁকা ঢোক গিলে, অগ্নিকে চুপ থাকতে দেখেই দিয়া বললো
দিয়া- তারপর।
অগ্নি- তারপর আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দিয়া- ও আচ্ছা, তো কবে বিয়ে করছেন??
অগ্নি – কিছুদিনের মধ্যেই।

দিয়া- তাই, তো মেয়ের নাম কি?কোথায় পরিচয় আপনাদের?
অগ্নি পড়ছে বিপদে একটা মিথ্যা বলতে গিয়ে, এখন অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলতে হবে, আবারও দিয়ার দিকে তাঁকায়, রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে ওর দিকে,,,
অগ্নি – ঢাকায় পরিচয় হয়েছে আমাদের, আর নাম,,
দিয়া- ভুলে গেছেন??

অগ্নি – ভুলবো কেন,, নাম,,
অগ্নি আর বলতে না দিয়েই হাতের কাঁটা চামচ টা ওর দিকে তাঁক করে বললো,,
দিয়া- চুপ, আর একটা মিথ্যা কথা বললে,এ চামচ টা একদম বুকে গেঁথে দিবো। বানানো লাভ স্টোরি শুনাতে আনছেন আমাকে???

বলেই চোখ বন্ধ করে কয়েক টা শ্বাস নিলো,,, তারপর কিছু টা শান্ত হয়ে অগ্নিকে বললো,
দিয়া- আমার বয়স কম মানছি, টিনএজ। তবে আমি কি আপনার সাথে ট্রিনেজারদের মতো ব্যবহার করি?ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করি আপনাকে?? আপনার সাথে প্রেম করছি আমি? প্রজাপতি মতো ঘুরে বেড়াছি আপনার সাথে??

উওর দিন
অগ্নি – নাহ্।
দিয়া- শুনুন আপনি আমার প্রেম না, আপনি আমার মায়ায় জরানো ভালোবাসা। আপনাকে ঘিরেই আমার পৃথিবী। আপনি ছাড়া আমার কল্পনা জুড়ে কারো অস্তিত্ব নেই। আপনাকে পাওয়ার জন্য আমি সমাজ-সামাজিকতা, পরিবার পরিজনের বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধ করতে পারবো, আমার চেয়ে বেশি আপনাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। আর আপনি কোন সাহসে আমার ভালোবাসাকে আবেগ বললেন।

অগ্নি চুপ করে দিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,,, দিয়ার বলা প্রত্যেকটা কথায় সত্যি, সেটা অগ্নি জানে।
দিয়া- কি হলো চুপ করে আছেন কেন, আমার অনুভূতি কে আবেগের নাম দিলেন কেন??
অগ্নি – সরি।
দিয়া- কিসের জন্য???
অগ্নি – আমি সেভাবে বলতে চাই নি, কিন্তু তোর অনুভূতির পরিণাম ভয়াবহ।
দিয়া- তো।

অগ্নি – প্লিজ দিয়া, এসব ভুলে, মন দিয়ে পড়ালেখা কর।
দিয়া- মন দিয়ে কিভাবে পড়বো, আমার মন তো আপনার কাছে, দিয়ে দেন আমার মন, নিয়ে চলে যায়।
দিয়ার এমন কথায় অগ্নি ভ্যাবাচ্যাকা খেলো,,,,
দিয়া- আপনার এসব আজাইরা কথা বাদ দিয়ে আমার কথা শুনুন। পালিয়ে বিয়ে করার জন্য প্রিপারেশন নিন,, কারণ আমাদের পালিয়ে বিয়ে করতে হবে।

অগ্নি – কিহ্!! পালিয়ে বিয়ে।
দিয়া- পারবেন না, সমস্যা নাই আমার কাছে দ্বিতীয় অপশন আছে।
অগ্নি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দিয়া ব্যাগ থেকে একটা কাচের ছোট একটা শিশি বের করে অগ্নি সামনে রাখলো,,,

অগ্নি – কি এটা।
দিয়া- বিষ।
অগ্নি – মানে?
দিয়া- এটাও বুঝলেন না, মানে খুব সহজ, এখান যেভাবে আছি আমরা সেভাবে তো সারাজীবন থাকতে পারবো না,,, বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করবে, তখন এটা কাজে লাগবে, আপনাকে ভালোবেসে তো আমি অন্য কারো সাথে থাকবো নাকি, তখন বিষ খেয়ে মরে যাবো

অগ্নি – দিয়াাাা
দিয়া কানে হাত দিয়ে বললো,
দিয়া- আরে আস্তে চিল্লান, আপনার জন্য ও সু- ব্যবস্থা আছে, এ রকম আরো একটা শিশি বাসায় আছে,, আমার আগে আপনার বিয়ে ঠিক হলে তখন আপনাকে ও এটা খাওয়ানো হবে। আমার ভালোবাসা কি আমি অন্য কারো হতে দিবো নাকি।

অগ্নি – এসব কি পাগলামি করছিস তুই, ফেল এটা এক্ষুনি.
দিয়া- এহহ, নগদ টাকা দিয়ে কিনেছি কি ফেলার জন্য নাকি। আর আপনাকে তো দুটো অপশন বললাম, এবার আপনার যেটা পছন্দ হয়।
অগ্নি – দিয়া একটু বুঝার চেষ্টা কর, আমাদের সমাজ,

দিয়া- কি সমাজ নিয়ে পড়ে আছেন,, সমাজের করা নিয়মে কেন আমি আমার ভালোবাসা বিসর্জন দিবো। মহাভারতে অজুর্ন কেন সুভদ্রাকে বিয়ে করে ছিলো? সুভদ্রা তো অর্জুনের মামাতো বোন ছিলো। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বোনের ভালবাসা স্বীকৃতি দিয়েছিলো, তবে আমি কেন এ গোড়া হিন্দু সমাজের নিয়ম মানবে? আমি আমার ধর্ম কে সম্মান করি, কিন্তু সমাজের বানানো নিয়ম কে না।
অগ্নি আবাক হয়ে বললো,

অগ্নি- কবে এতোটা যুক্তি দিয়ে কথা বলতে শিখলি,
দিয়া খোঁচা মেরে বললো,
দিয়া- একটা গাধাকে ভালোবেসে সব শিখেছি। সেটা আপনি কি করে বুঝবেন, কাউকে ভালোবাসলে তো বুঝতেন।
অগ্নি হাসলো,
তাকে নাকি এ পিচ্চি থেকে ভালোবাসা বুঝতে হবে,,,কবে থেকেই তো এ পিচ্চি কে ভালোবেসে বসে আছে সে।অগ্নি আবারও কিছু বলতে যাবে তখনি দিয়া বললো,

দিয়া- শয়তান বেডা আর উল্টা পাল্টা কিছু বোঝাতে আসলে, ধইরা একটা আছার মারবো।
অগ্নি – ঠিক আছে আর কিছু বোঝাবো না তােকে,, তুই শুধু উল্টা পাল্টা কিছু করিস না, আমি দেখছি কি করা যায়, একটু সময় লাগবে
দিয়া- বেশি সময় নিয়েন না, তাহলে কিন্তু আমার শশ্মানে দুর্বা উঠে যাবে।
অগ্নি আবার ও চিল্লিয়ে উঠলো

অগ্নি – দিয়াাাা
দিয়া- কি হয়েছে, এভাবে চিল্লাছেন কেন।
অগ্নি – বারবার এসব কি ধরনের কথা বলছিস তুই। আর জেনো এসব কথা না শুনি।
দিয়া বিড়বিড় করে বললো,
দিয়া- ঢং,, ভালোবাসা উথলে পড়ছে,, এসেছে তো ঘাড় থেকে নামানোর জন্য। পেটে পেটে এতো শয়তানি, আমাকে বোঝাতে এসেছে। এমন ডোজ দিয়েছি না, একেবারে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। অগ্নি – কি বলছিস?

দিয়া- কিছু না।
অগ্নি – আচ্ছা এবার এ শিশিটা আমাকে দিয়ে দে,
দিয়া- কেন?
অগ্নি চোখ গরম করে বললো
অগ্নি- দিতে বলছি না,,,
দিয়া- ওই এভাবে তাঁকাছেন কেন? ভয় পায় আমি আপনাকে?
অগ্নি অনেক চেষ্টা করে ও নিতে পারলো না, এ পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিলো, দিয়া আইসক্রিম খাচ্ছে, অগ্নি বসে বসে দেখছে,, খাওয়া শেষ করে দিয়া বললো,

দিয়া- বাসায় যাবো।
অগ্নি – আচ্ছা।
দুজনে একসাথে হাঁটছে, হঠাৎ করেই অগ্নি দিয়ার হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটতে লাগলো। মুচকি হাসলো দিয়া মুখে কিছু বললো। অগ্নি আজ দিয়াকে বুঝাতে এসে উল্টো নিজের সিদ্ধান্ত বদলানো,, নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়া জন্য চেষ্টা সে করবে। দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে।

অগ্নি- দিয়া
দিয়া- হুম।
অগ্নি- আমি বাসায় জানাতে চাই একবার,, দেখি কি হয়, তবে তোকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবি তুই কিছু জানিস না,ঠিক আছে।
দিয়া- আচ্ছা।
আশানুরূপ যে কিছু হবে না সেটা দুজনেই জানে, দিয়াকে আড়ালে রাখার জন্যই অগ্নি বারণ করলো,খারাপ হলে সবার কাছে ও হবে। অগ্নি আবার বললো,

অগ্নি- তুই কিন্তু ভুলেও কাউকে কিছু বুঝতে দিবি না, আর পরিস্থিতি যাই হোক নিজের কোন ক্ষতি করবি না।
দিয়া- আপনি তাহলে কথা দেন, যে আপনি শুধু আমার হবেন, আমার পুরো পৃথিবীর দরকার নেই শুধু আপনি হলেই হবে, তাহলেই আমি নিজের কোন ক্ষতি করবো না।
অগ্নি – কথা দিলাম, তুই শুধু আমার হবি।

অনেকক্ষণ পর্যন্ত পিসিমনির সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে অভি। তনুশ্রী দেবী সব শুনে হতবাক হয়ে গেলো, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ যে ভয়াবহ। তিনি আজকে দিয়ার আলমারি গুছাতে গিয়ে অগ্নির সে ডায়েরি পেয়েছে, কয়েক পাতা পড়েই যা বুঝার বুঝতে পেরেছে। সাথে সাথে অভিকে কল দিয়ে আসতে বলে, অভির থেকে পুরো ঘটনা শুনে তিনি স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে অভিকে বললো,

তনুশ্রী দেবী – ওরা কি করে এমন ভুল করলো বাবা, দিয়া টা না ছোট কিন্তু বাবু (অগ্নি) কিভাবে এটা করলো।
অভি- দাদাইয়ের চেয়ে দিয়া বেশি সিরিয়াস, দাদাই তো কখনো দিয়ার কাছে প্রকাশ করে নি, এ ভয়ে এতোগুলো বছর কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিলো। আচ্ছা পিসিমনি ভালোবাসা কি ভুল? দাদাই কি দিয়াকে ভালো রাখতে পারবে না?
তনুশ্রী দেবী – তুই বুঝতে পারছিস না বাবা৷ এটা সমাজ কখনো মানবে না।

অভি- দাদাই আর দিয়ার কষ্ট তুমি মানতে পারবে পিসিমনি? তোমার প্রিয় বাবু তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে, কতো যন্ত্রণা নিয়ে সবার সামনে হাসি মুখে থাকে,তা শুধু আমি জানি। কিছু বললে শুধু একটাই কথা বলে, পাপ করছে। তোমার কি মনে হয় পিসিমনি দিয়াকে ভালোবেসে দাদাই সত্যি পাপ করেছে?
তনুশ্রী দেবী কাছে কোন উওর নেই, অভি আবার বললো,

প্রেম পরিণয় পর্ব ৭

অভি- কাউকে ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার, আর আমরা তো মানি আমাদের মনে ঈশ্বরের বাস, যদি পাপ হয় তাহলে ঈশ্বর কেন দাদাইয়ের মনে দিয়ার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করেছে। সমাজের কথা বাদ দিয়ে, নিজেদের আপন জনের কথা ভাবলে কি খুব ক্ষতি হবে, একটু ভেবে দেখো পিসিমনি।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৯