প্রেম পরিণয় পর্ব ৯

প্রেম পরিণয় পর্ব ৯
রাজশ্রী মজুমদার রাই

আদিত্য রায় ছেলের গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসালো, অগ্নির বলা কথাটা শুনে তার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছে, তার এমন বুঝদার শান্ত শিষ্ট ছেলে কিভাবে এমন অন্যায় আবদার করতে পারে, রাগে তার শরীর কাঁপছে,
আদিত্য রায় – তোমার সাহস কিভাবে হয়, এমন কথা বলার, তুমি কি ভুলে গেছো সম্পর্কে ও তোমার কি হয়???
অভি দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছে, অগ্নি ওকে দিব্যি দিয়ে রেখেছে, যাতে সে একটা শব্দও না করে। এভাবে বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তোলাতে রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ওর।

অগ্নি- আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি,,,
শান্তি দেবী – অগ্নি তুই কেন অবুঝের মতো কথা বলিছিস, তুই অন্য যেকোনো মেয়ে কে নিয়ে আয় আমরা মেনে নিবি, কিন্তু দিয়া নাাা।
অগ্নি – দিয়া ছাড়া আমার জীবনে কেউ আসবে না,,,,
আদিত্য রায় – আর একবার ও দিয়ার নাম মুখে আনবে না তুমি।
শান্তি দেবী- দিয়া কি জানে এসব।
অগ্নি অপকটে মিথ্যা বলে দিলো,,,
অগ্নি- নাহ্,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদিত্য রায়- এ কথা দীপকের কানে গেলে কি হবে, সেটা বুঝতে পারছো তুমি? সমাজ- সামাজিকতা বলে ও একটা বিষয় আছে, তোমার জন্য যদি আমার সম্মানে এক বিন্দু দাগ লাগে তাহলে আমার খারাপ রুপ দেখবে। আর কালকেই তুমি ঢাকা ফিরে যাবে।
বলেই নিজের রুমে চলে গেছে, শান্তি দেবী ও স্বামীর পিছনে ছুটলো। অগ্নি জানতো এমন কিছুই হবে। অগ্নি একটা হতাশার নিশ্বাস ফেললো।

হিয়া পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে আর দিয়া বেডে শুয়ে অগ্নির ডায়েরি পড়ছে, সেখানে লেখা আছে
অগ্নি- তোকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি, তোকে ছাড়তে গিয়ে আরো বেশি গভীরে জড়াই, যতোই তোকে ছেড়ে যেতে চাই দূরে, ততোই তোর মায়াতে বন্দি হয়ে পড়ি। ভালোবাসি পিচ্চি, ভীষণ ভালোবাসি।
এমন সময় তনুশ্রী দেবী ওদের রুমে আসলো, দিয়া মাকে দেখেও ডায়েরি সরালো না,শুধু বন্ধ করে রাখলো।
তনুশ্রী দেবী – হিয়া, আমার রুমে কয়েক টা কাপড় রেখে এসেছি, একটু ভাঁজ করে দিয়ে আয়।

হিয়া মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে চলে গেলো, দিয়া নড়েচড়ে বসলো। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে, কারণ ডায়েরি টা যেখানে রেখে গিয়েছিলো, সেখানে পায় নি। মায়ের হাতেই যে পড়ছে সে নিশ্চিত।
দিয়া- কিছু বলবে মা,
তনুশ্রী দেবী সরাসরি প্রশ্ন করলো
তনুশ্রী দেবী – তুই অগ্নিকে ভালোবাসিস???
দিয়া- হ্যাঁ, ভীষণ ভালোবাসি ওনাকে।

কি সহজ স্বীকারোক্তি, তনুশ্রী দেবী চকমালো, তিনি ভাবতে পারে নি, দিয়া এভাবে বলবে। তিনি মেয়ের পাশে বসে বললো,
তনুশ্রী দেবী – এ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ কি??
দিয়া – জানি না।
তনুশ্রী দেবী – তোর বাবাই কে তুই ছিনিস না, মেরে ফেলবে তোকে। তারপর ও মেনে নিবে না।
দিয়া- ওনাকে ছাড়া আমি বাঁচতে ও চাই না।

তনুশ্রী দেবী – আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই,,,
পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে দিয়া বললে,
দিয়া- তুমি আমার মৃত্যু চেয়ে মা, হাসি মুখে দিয়ে দিবো, তবুও ওনাকে ছাড়তে বলো না।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে, তনুশ্রী দেবী হতবাক,, ঠিক বাবার মতোই জেদি এ মেয়ে, ভালোবাসা পাওয়া জন্য বাপ যেমন করছে, এ মেয়ে তার চেয়ে এক ঘাঁটি উপরে যাবে।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি, দৃষ্টি তার দূর আকাশে,, অভি এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায়, নিরবতা কেটে যায় অনেকটা সময়,,, নিরবতা ভেঙে অভি বললো
অভি- কালকে যাওয়ার আগে একবার পিসিমনির সাথে দেখা করে যেও।
অগ্নি – কেন??
অভি- পিসিমনি সবটা জেনে গেছে।
অগ্নি বুঝতে পারলো না অভির কথা তাই প্রশ্ন করলো
অগ্নি – কি জেনে গেছে?

অভি- তোমার আর দিয়ার ব্যাপার টা কোনভাবে জেনে গেছে।
অগ্নি অভির দিকে তাকালো, অভি চোখে ইশারায় আশ্বস্ত করলো,
অগ্নি – ভাবছি এবার ঢাকা গিয়ে বাসাটা চেঞ্জ করবো,, নতুন সংসারের জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিনবো। কি বলিস,
অভি- সেটাই করো, রায় বাবু যখন জেনেছে, তিনি থেমে থাকবে না। তুমি ওইদিক টা দেখো, এদিক টা আমি দেখছি,,

বলেই চোখ টিপ দিলো, মৃদু স্বরে হাসলো অগ্নি।
সকালে, দীপক সাহা কাজে চলে যায়, দিয়া কলেজে আর হিয়া ও স্কুলে চলে যায়। বাসায় তনুশ্রী দেবী একাই ছিলো, তখনি অগ্নি আসলো। অগ্নিকে দেখে তনুশ্রী দেবী খুব খুশি হয়। সবভুল জড়িয়ে ধরলো ওকে তনুশ্রী দেবী।
তনুশ্রী দেবী – বাবু কতো বছর পর এ বাসায় এসেছিস, কেমন আছিস বাবু।
অগ্নি – ভালো আছি পিসিমনি, তুমি কেমন আছো??
তনুশ্রী দেবী – আমিও ভালো আছি, চল বাবু, খেতে চল, আজকে আমি আর তুই একসাথে সকালের জলখাবার খাবো।

অগ্নি – পিসিমনি আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে, ছোটবেলার মতো।
তনুশ্রী দেবী – হুম।
তনুশ্রী দেবী অগ্নিকে পাশে বসিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছে, আর নিজেও খাচ্ছে। অগ্নি যখন ছোট ছিলো তখন এভাবেই এক প্লেটে খাবার নিয়ে নিজেও খেতো আবার অগ্নিকে খাইয়ে দিতো। আজ অনেক বছর পর এভাবে খেয়ে খুব তৃপ্তি পাচ্ছে উনি। খাওয়া শেষ অগ্নি হাঁটু গেঁড়ে ফ্লোরে বসে তনুশ্রী দেবীর কোলে মাথা রাখলো, তনুশ্রী দেবী ও সযত্নে অগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

অগ্নি – পিসিমনি আমি তোমার কাছে যদি কিছু চাই, সেটা দিবে আমাকে।
তনুশ্রী দেবী – কি চাই তোর, আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দিবো।
অগ্নি – দিয়াকে চাই।
হাত থেমে গেলো তনুশ্রী দেবীর, হঠাৎ করে মস্তিষ্ক সজাগ হলো, অগ্নিও কোল থেকে মাথা তুলে চেয়ে আছে,
তনুশ্রী দেবী – বাবু,,,,

অগ্নি – আমি জানি পিসিমনি তুমি সবটা জানো।
তনুশ্রী দেবী – দিয়া না হয় ছোট কিন্তু আমার বাবু তো বুঝদার,,,
অগ্নি- সব বুঝে শুনেই বলছি পিসিমনি। প্লিজ পিসিমনি দিয়ে দাও না তোমার মেয়েটাকে আমায়। কথা দিচ্ছে, খুব যত্নে রাখবো। তোমার মনে আছে পিসিমনি দিয়া যেদিন পৃথিবীতে আসলো, সেদিন তুমি আমাকে বলেছিলো, এই পিচ্চি টা তোকে দিয়ে দিলাম বাবু, তোর খেলার সাথী হবে। আজ আমি সে পিচ্চি টাকে নিজের জীবন সঙ্গী করতে চাই, তুমি দিবে পিসিমনি???

অগ্নির এমন আকুতি ভরা কন্ঠে শুনে বুকের ভেতর টা হুহু করে উঠলো, অগ্নি এখনো করুণ চোখে তাকিয়ে আছে,
তনুশ্রী দেবী – তোর পিসেমশাই কখনো মানবে না বাবু।
অগ্নি – সে তো তোমার ভাই ও মানছে না পিসিমনি।
তনুশ্রী দেবী চমকে তাকালো, অগ্নি আবারও বললো
অগ্নি – আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি কালকে। মানবে না তোমার ভাই।
তনুশ্রী দেবী – তাহলে,

অগ্নি – জীবন সবসময় সরল রেখায় চলে না পিসিমনি। চলার পথে ঝড়ঝাপটা আসবেই, থেমে গেলে তো হেরে যাবো, আমি হারতে চাই না।
তনুশ্রী দেবী পড়লেন অকূল সাগরে, কি বলবেন উনি, খুব কি ক্ষতি হবে সমাজ আর পরিবারের কথা না ভেবে শুরু ছেলেমেয়ে দুটোর কথা ভাবলে। অগ্নির কাছে থাকলে দীপক সাহার বোনেদের প্রতিহিংসার থেকে বেঁচে যাবে মেয়েটা। তিনি ডায়েরি কয়েক পৃষ্ঠা পড়েই বুঝতে পেরেছে, কতোটা ভালোবাসে অগ্নি দিয়াকে।

তনুশ্রী দেবী – বাবু, তুই নিয়ে যা দিয়াকে তোর সাথে।
অগ্নি মুখে বিশ্বজয়ের হাসি, খুশিতে চোখ দিয়ে জল পড়ছে, জড়িয়ে ধরলো তনুশ্রী দেবী কে
অগ্নি – নিয়ো যাবো তোমার রাজকন্যাকে, একটু সময় দাও।
তনুশ্রী দেবী – একটা সত্যি কথা বলবি বাবু??
অগ্নি – বলো,
তনুশ্রী দেবী – দিয়া তোকে ব্ল্যাকমেইল করেছে?
অগ্নি মিষ্টি হেসে বললো

অগ্নি – না পিসিমনি, ব্লাকমেইল করে নি বুঝিয়েছে। তোমার পিচ্চি মেয়েটা অনেক বেশি বুঝদার হয়ে গেছে।
তনুশ্রী দেবী – তুই তো এমনটাই বলবি বাবু, ও যদি কাউকে খুন করেও আসে তাও তুই বলবি ওর কোন দোষ নেই।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো ছয় মাস, এ ছয় মাসে, অগ্নি দিয়ার না দেখা হয়েছে, না কথা হয়েছে। আজ দিয়াকে দেখতে আসছে, এ নিয়ে দিয়ার কোন মাথা ব্যাথা নেই, ও নিজের মতোই আছে।

ছেলে আদিত্য রায় দেখছে, সব তদারকি উনি করছে। দীপক বাবু ও কিছু বলে নি, কারণ ছেলে ডাঃ, আর উচ্চবিত্ত পরিবারের। পছন্দ হলে আর্শিবাদ (এনগেজমেন্ট) করে রাখবে। বিয়েটা হবে দিয়ার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে। সকাল থেকেই সব কিছু তোরজোর করা হচ্ছে৷ আদিত্য বাবু, শান্তি দেবী, আর অভি ও এসেছে। ছেলে পক্ষের আদর অপ্যায়নে কোন কমতি রাখছে না কেউ। অভির ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো, বোনের বিয়ে বলে কথা। দিয়াকে সাজাছে শান্তি দেবী, সাজানো শেষে সামনে দাঁড় করিয়ে, চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে কানের পিছনে লাগিয়ে দিলো,

শান্তি দেবী- খুব সুন্দর লাগছে, আমারই না নজর লেগে যায়, তাই কালি ফোটা দিয়ে দিলাম।
দিয়া হাসলো, শান্তি দেবী অপলক দৃষ্টিতে দেখছে,, একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মনে মনে বললো,
শান্তি দেবী – এ মেয়েটা যদি আমার ছেলের বৌ হতো তাহলে কি খুব ক্ষতি হতো।
দিয়া- কি দেখছো মামি,

নিজের ভাবনার উপর নিজেই বিরক্ত উনি, যা হওয়ার নই তা নিজেই ভাবছে উনি।
শান্তি দেবী – কিছু না, তুই থাক৷ আমি হিয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
দিয়া- মামি দাদাভাইকে একটু আসতে বলো, আসার পর থেকে একবারও দেখা হয় নি।
শান্তি দেবী – আচ্ছা।
শান্তি দেবী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, দিয়া চুপ করে বসে আছে।কিছুখন পর অভি আসলে, দিয়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অভি বললো

অভি- কি রে, বিয়ের কনে কি ভাবছিস।
দিয়া- কিছু না।
অভি- টেনশন করছিস?
দিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো
দিয়া- আমি কেন টেনশন করতে যাবো। টেনশন করার মতো কিছু হচ্ছে নাকি। টেনশন তো করবে তোমারা।
অভি বুঝতে পারলো, দিয়া হাসি মুখে থাকলেও ভিতরে রাগে ফেটে পড়ছে।
অভি- আমরা কেন টেনশন করবো ।

দিয়া- আমার বিয়ে তাই,,,,
অভি -আচ্ছা, তো আমাকে কেন ডেকেছিস।
দিয়া- কেন আবার, এতো সুন্দর করে সাজগোজ করেছি। ছবি তুলে দাও তোমার ফোনে।
অভি- তোর ফোন কই, আর বাইরে আমার কতো কাজ, সেগুলো রেখে এখন তোর ছবি তুলবো।
দিয়া- আমার ফোন আছে কোথাও একটা, এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি ছবি তুলে দাও।

দিয়া সুন্দর করে বসে, দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে পোজ দিতে লাগলো, আর অভি ছবি তুলে দিচ্ছে।
অভি- অনেক ছবি তুলেছি, আবার আমি যাই। অনেক কাজ আছে।
দিয়া- হুম যাও তবে তোমার ফোন টা আমাকে দিয়ে যাও।
অভি- কেন??
দিয়া- ও মা, কেমন ছবি তুললে সেটা দেখবো না।

অভি দিয়ার হাত ফোন টা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, ও জানে দিয়া কি করবে এখন।
অগ্নি অফিসে, কিছু দরকারি ফাইল চেক করছে, এমন সময় ফোনে নোটিফিকেশন আসছে। বারবার টোন বাজছে, অগ্নি একপলক ফোন দিকে চোখ রাখলো, অভির হোয়াটসঅ্যাপে থেকে পিক এসেছে, কিন্তু কিসের ছবি পাঠিয়েছে তা বুঝতে পারছে না, তাই আবার নিজের কাজে মন দিলো। এদিকে দিয়া ফোন নিয়ে বসে আছে, এক হাত দিয়ে শাড়িটা খামছে ধরে রেখেছে, রাগে ইচ্ছে করছে সব তছনছ করে দিতে, অগ্নিকে সামনে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দুই ভাগ করে দিতো। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এমন সময় রুমে এলো তনুশ্রী দেবী। মাকে দেখেই দিয়া মুখে হাসি দিয়ে তাকালো।

দিয়া- আমাকে কেমন লাগছে মা??
তনুশ্রী দেবী – খুব সুন্দর লাগছে।
মেয়েকে কিছুখণ তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
তনুশ্রী দেবী -খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে??
দিয়া- আমি ঠিক আছি মা।

তনুশ্রী দেবী – সবাইকে বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারবি না। তোর মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখ। ধের্য্য ধরে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
দিয়া মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো,,, তবে একফোঁটা ও চোখের জল ফেললো না।

দিয়াকে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। কিছু প্রশ্ন করা হলো, দিয়া স্বাভাবিক ভাবেই উওর দিলো, পাত্রের বোন খুশিতে গদগদ হয়ে একদম পাত্রের পাশে বসিয়ে দিলো দিয়াকে। হিয়া নিজের ফোন একসাথে কাপল পিক তুলে নিয়েছে। তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে মেয়েকে, এখানেই জানিয়ে দিয়াছে। সবাই ভীষণ খুশি এ কথা শুনে। আর্শীবাদের দিন ঠিক করছে সবাই মিলে। অভির মুখ থেকে জেনো হাসি সরছে না, মনে হয় সে এদিনের অপেক্ষায় ছিলো। শান্তি দেবী দিয়া আর পাত্রের দিকে চেয়ে আছে, নিজে মনে বললেন,

শান্তি দেবী- এ ছেলের থেকেও আমার অগ্নির সাথে বেশি মানাতো দিয়াকে।
তনুশ্রী দেবী সবটা নিবিড় ভাবে দেখছে, তার দাদা নিজের ছেলের ভালোবাসা শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, একবার ও চিন্তা করছে না, ছেলেটা যে ধ্বংস হয়ে যাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো। অভির দিকে তাকিয়ে আরো বেশি অবাক হলো, এ ছেলে কয়দিন আগেই না বড় বড় ভাষণ দিয়ে গেলো, আজ নিজেই সামিল হয়েছে ভাইয়ের ভালোবাসাকে অন্য একজনকে দিয়ে দিতে। পিসিমনি চোখে চোখ পড়তেই অভি এগিয়ে এসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মৃদুস্বরে বললো

অভি- মেয়ের বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হও পিসিমনি। আর মাত্র কয়েকটা দিন সময় আছে ভালো মতো আদর যত্ন করে নিও।
তনুশ্রী দেবী অবাক হয়ে চেয়ে রইলো অভির দিকে,
তনুশ্রী দেবী – কি বলছিস বাবা, বিয়ে তো এক বছর পর হবে। আর্শীবাদের কথা বলছিস,,,
অভি একগাল হেসে, আগের চেয়ে আস্তে বললো

অভি- একজনের বাগদত্তার সাথে অন্য জনের আর্শীবাদ হয় নাকি, এতোটুক করে যে, তোমার ভাই এখনো হাসছে সেটাই তার সাতপুরুষের ভাগ্য। তোমার ভাই আর আমাদের বাপ বলেই ছাড় পেয়ে গেছে, না হলে আমার ভাইয়ের প্রাণভোমরা কে এভাবে অন্য একজনের পাশে বসিয়ে রাখার মতো দুঃসাহস দেখানো শাস্তি খুব ভয়াবহ হতো।
তনুশ্রী দেবী ফাঁকা ঢোক গিললো, অভির দ্বারা অসম্ভব কিছুই না। রাগ উঠলে রণমুর্তি ধারন করে।
অগ্নি কাজের চাপে আর ফোন দেখার সময় পেলো না, অফিস থেকে বেরিয়ে ফোন চেক করতেই দেখলো হিয়ার ফোন থেকেও নোটিফিকেশন এসেছে। অগ্নি ঝটপট চেক করতে লাগলো,,, অভির দেওয়া ছবি দেখেই মুখে হাসি ফুটলো, অগ্নি বুঝতে পারে নি ছবি গুলো যে দিয়া পাঠিয়েছে। হঠাৎ করে এতো সাজগোজ করে শাড়ি পড়ে ছবি কেন তুললো সেটা অগ্নি ধরতে পারলো না৷

অগ্নি নিজে নিজেই বলছে,
অগ্নি- খুব সুন্দর লাগছে,, শাড়িতে তো আমার পিচ্চি টাকে অনেক বড় বড় লাগছে। সপ্তাহে একদিন তোকে দুচোখ ভরে দেখবো।
ভাবতেই কেমন সুখ সুখ লাগছে অগ্নি। মনে মনে ভেবে নিলো, আজই কয়েকটা শাড়ি কিনবে, ভাবনা মতোই সামনের মার্কেট চলে গেলো, কিন্তু হিয়ার পিক গুলো আর চেক করলো না।
দিয়া- কি রে হিয়া তোর দাদাই কে ছবি পাঠিয়েছিস??

হিয়া- হুম, বিকালে তো পাঠিয়েছি, এখনো সিন করে নি, মনে হয় ব্যস্ত আছে দাদাই।
দিয়া- কচুর ব্যস্ত। একটা কল দে না হিয়াপাখি।
হিয়া- আচ্ছা দিচ্ছি।
হিয়া কল দিলো অগ্নির ফোনে, অগ্নি বাসায় এসে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে। অনেক দোকান ঘুরে পাঁচটা শাড়ি আর চার সেট থ্রি-পিস কিনে এনেছে। বেডে বসতেই অগ্নির ফোন বেজে উঠলো, স্কিনে হিয়াপাখি নাম ভেসে ওঠে,
অগ্নি – হ্যালো, কেমন আছিস।

হিয়া- ভালো আছি দাদাই। তুমি কেমন আছো?
অগ্নি – আমিও ভালো আছি, তো কি মনে করে হিয়াপাখি আমাকে স্মরণ করেছে?
হিয়া- দিদিয়া বলেছে কল দিতে, কেন সেটা তো বলে নি।
মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বলে দিলো হিয়া।দিয়া চোখ রাঙ্গিয়ে এক ঘাঁ লাগিয়ে দিলো, হিয়া মৃদু স্বরে আহ্ করে উঠলো। ফোনের এপাশে অগ্নি মুচকি হাসলো। হিয়া এবার বললো
হিয়া- না দাদাই, আমি কল দিয়েছি। তোমাকে কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছি সিন করো নি তাই কল দিয়েছি। ছবি গুলো দেখো দাদাই।

অগ্নি – আচ্ছা দেখছি।
ছবিগুলো দেখেই অগ্নির হাসি মুখ টা চুপসে গেলো, দিয়ার পাশে অন্য কাউকে দেখেই বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে হলে কেউ বুকের মধ্যে ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। হিয়া কলেই ছিলো
হিয়া- হ্যালো দাদাই, দেখছো??
অগ্নি নিজেকে সামলে খুব কষ্ট করে উওর দিলো,

প্রেম পরিণয় পর্ব ৮

অগ্নি – হ্যাঁ দেখেছি,
আহ, দিয়ার কাছে এবার শান্তি লাগছে, আজকে সারাদিন যে কষ্ট ও সহ্য করেছে, এবার সে কষ্ট অগ্নির হবে। অগ্নির কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারছে ওর মনের অবস্থা।

প্রেম পরিণয় পর্ব ১০