প্রেম পরিণয় পর্ব ১০

প্রেম পরিণয় পর্ব ১০
রাজশ্রী মজুমদার রাই

শান্তি দেবী মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে বড় ছেলের জন্য, ছেলেটা নাকি অসুস্থ। তাই স্বামীর কাছে গিয়ে অনুনয় করে বললো
শান্তি দেবী – ছেলেটা ভীষণ অসুস্থ, একবার আসতে বলবেন।
আদিত্য রায় – নাহ্।
শান্তি দেবী – কেন??

আদিত্য রায় – কেন সেটা তুমি ভালো করেই জানো। দিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরই তোমার ছেলে এখানে আসবে।
শান্তি দেবী- ছেলেটা অসুস্থ, আর অগ্নি তো আপনার সব সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। আপনার এক কথায় বাসা থেকে চলে গিয়েছে, আপনি বারণ করেছেন বলে বাসায়ও আসছে না। তাহলে কিসের জন্য ছেলে বাসায় আসবে না।
আদিত্য রায় – তুমি বুঝতে পারছো না শান্তি৷
শান্তি দেবী – আমি কিছু বুঝতে ও চাই না, আপনি এক্ষুনি কল দিয়ে ওকে বাসায় আসতে বলবেন। আমার অসুস্থ ছেলেটা সেখানে একা একা পড়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

স্ত্রীর কথায় রাজি হয়ে তিনি অগ্নিকে কল দিয়ে আসতে বলেন। আড়াল থেকে সবটা শুনে বাঁকা হাসে অভি। মাকে উস্কে সেই দিয়েছে। দুই দিন পর অগ্নি এলো বাসায়। সেই রাতে অভি চাকরি ইন্টারভিউ দেওয়া জন্য চট্টগ্রামে উদ্দেশ্য রওনা দিলো। অগ্নি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শান্ত। আদিত্য রায় তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেকে দেখছে, অগ্নি চুপচাপ খাচ্ছে। সকালে অগ্নি ঘুমে ছিলো বিধায় তার সাথে দেখা হয় নি, এখন দুপুরের খাবার খাচ্ছে একসাথে,
আদিত্য রায় – শরীর এখন কেমন তোমার?

অগ্নি – ভালো।
আদিত্য রায় – বিকালে কি বের হবে।
অগ্নি – না।
আদিত্য রায় – কয়দিন থাকবে।
অগ্নি – পরশুদিন চলে যাবো।
আর কোন কথা হয়নি তাদের, শান্তি দেবী ছেলের মুখ পানে তাকিয়ে রইলো, তার ছেলে আগের চেয়েও অতিমাত্রায় শান্ত হয়ে গেছে। ভীষণ খারাপ লাগলো তার।
বিকাল সাড়ে চারটায় হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসলো আদিত্য রায়, বাসায় এসেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে,

শান্তি দেবী – কি হইছে আপনি এমন চিৎকার করছেন কেন??
আদিত্য রায় – তোমাকে আমি বারণ করেছিলাম, কিন্তু আমার কোন কথা শুনো নি। এখন মুখে চুনকালি দিলো তো তোমার ছেলে, যখন সবাই জানতে পারবে তখন আমি কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবো।।।
শান্তি দেবী- আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আদিত্য রায় – দিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সকালে কলেজে গিয়েছে, এখনো ফিরে নি। দীপক পাগলের মতো খুঁজছে। নিশ্চয় এ কাজের পিছনে তোমার ছেলের হাত রয়েছে।

শান্তি দেবী – না জেনে কথা বলবেন না, অগ্নি রুমে ঘুমাচ্ছে।
কথাটা জেনো বিশ্বাস হলো না আদিত্য রায়ের, তিনি গলার স্বর উঁচু করে অগ্নিকে ডাকলো,, অগ্নি এলোমেলো পায়ে ঠুলতে ঠুলতে বাবার সামনে এসে দাড়ালো, কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে চরম বিরক্ত ও। আদিত্য রায় কন্ঠে কঠোরতা এনে বললো
আদিত্য রায় – দিয়া কোথায়??
অগ্নি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো

অগ্নি – মানে??
শান্তি দেবী তেঁতে উঠে বললেন
শান্তি দেবী – ও কিভাবে জানবে দিয়া কোথায়, ও আসার পর থেকেই একবারও বাসা থেকে বের হয়নি তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে জিজ্ঞেস করছেন।
অগ্নি – কি হয়েছে দিয়ার? সেটা তো বলবে??
আদিত্য রায় – সত্যি তুমি কিছু জানো না??
অগ্নি – আশ্চর্য,, না বললে জানবো কিভাবে।
আদিত্য রায় – দিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অগ্নি সেভাবেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো,পিছনে আদিত্য বাবু আর শান্তি দেবী ও যাচ্ছে।
তনুশ্রী দেবী ঠাকুরঘরে বসে চোখের জল ফেলছে, পাশে বসে হিয়াও কাঁদছে। ড্রয়িংরুম থেকে দীপক সাহার চিৎকার করে বললো

দীপক সাহা – এখন কেন ঠাকুরঘরে বসে আছো? বাসায় থেকে সারাদিন করো টা কি, মেয়েদের খেয়াল রাখতে পারো না?? সাহস কি করে হয় এমন কাজ করার। একবার খুঁজে পাই কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।
দীপক সাহার এসব কথার মধ্যেই অগ্নিরা প্রবেশ করলো।
আদিত্য রায় – শান্ত হও দীপক, আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি।
দীপক সাহা – গিয়েছি আমি, ২৪ ঘন্টার আগে কিছুই করবে না।
আদিত্য রায় – আমি কথা বলছি, থানার নতুন অফিসারের সাথে আমার ভালো সখ্যতা আছে। যেখানে থাকুক খুঁজে বের করবো।

অগ্নি দিকে তাকিয়ে বললো, তবে ওনার এসব কথায় অগ্নির মধ্যে কোন বিশেষ ভাবান্তর হলো না।
দীপক সাহা – কয়েকদিন পর এ মেয়ের আর্শীবাদ আর তার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আপনার বোনের প্রশ্রয়ের জন্য আজ এদিন দেখতে হচ্ছে।
দীপক সাহা কথাটি আদিত্য বাবুর মোটেও পছন্দ হয় নি, তবুও কিছুই বলে নি।
অগ্নি ধীর পায়ে গিয়ে তনুশ্রী দেবীর পাশে বসলো, তিনি নিঃশব্দে কাঁদছে।
অগ্নি – পিসিমনি।

অগ্নিকে দেখতেই তিনি চমকে তাকালো, অগ্নি এখানে হলে দিয়া কোথায়,,, তিনি বিচলিত হয়ে বললো
তনুশ্রী দেবী – বাবু, দিয়াা
অগ্নি চোখে ইশারা দিলো, শান্ত হলো তনুশ্রী দেবী। অগ্নি ওনার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
অগ্নি – আমাকে ভরসা করো তো পিসিমনি।
তনুশ্রী দেবী মাথা নাড়ালো,,,,

অগ্নি – তাহলে কেন কাঁদছো, আমি কথা দিচ্ছি পিসিমনি, ওকে সবসময় আগলে রাখবো।
তনুশ্রী দেবী আশ্বস্ত হলো,হিয়া অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে, সেদিকে চোখ পড়তেই হিয়ার উদ্দেশ্য অগ্নি বললো
অগ্নি – আমার জীবনে আমার বোনের স্থান শুধু তোকেই দিয়েছি হিয়াপাখি। আমি তোকে ছাড়া কাউকে কখনো বোন হিসাবে মানতে পারি নি। আমি কি করবো বল, ও যে আমার জীবনে অন্য স্থান দখল করে রেখেছে। দাদাইকে কি ক্ষমা করা যায় না হিয়াপাখি???

হিয়া চোখের জল মুছতে মুছতে বললো
হিয়া- ক্ষমা করে দিয়েছি, তবে খুব রাগে আছি। তোমারা আমাকে,,,,
শেষ করতে না দিয়েই, তনুশ্রী দেবী চোখে ইশারায় চুপ করতে বললো। হিয়াও চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু আড়াল থেকে ওদের কথা কেউ একজন শুনে ফেলেছে।

আজ দুই দিন হলো দিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না, হঠাৎ করেই কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে কিছুই বুঝতে পারছে না দীপক সাহা। পুরো মফস্বল শহর তন্নতন্ন করেও কোন খোঁজ মিলে নি। ৪৮ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর ও পুলিশ একটা সূত্র ও পায় নি। দিয়ার কললিস্ট চেক করে ও কিছু পাওয়া নি, এমনকি খোঁজখবর নিয়েও কোন প্রেম গঠিত বিষয় ও সামনে আসে নি। অভিও সেদিন রাতেই ফিরে আসে, বোনকে খোঁজ কাজ ভীষণ ব্যস্ত সে।অগ্নিও দুদিন পরে ফিরে গেছে ঢাকা।

দেখতে দেখতে একটা মাস কেটে গেলো, কিন্তু দিয়ার কোন হদিস পাওয়া যায় নি। অনেকগুলো ফাইলের মধ্যে দিয়ার মিসিং ফাইলটা ধামাচাপা পড়ে গেছে৷ দীপক সাহা ও হাল ছেড়ে দিয়েছে, তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, খুঁজে পেলে উচিৎ শিক্ষা দিবে মেয়েকে।

এই এক মাসে দিয়া কোথায় কিভাবে আছে কিছুই জানতে পারে নি অগ্নি, কারণ অভি সব প্ল্যান করেছে, অগ্নি যে বাসায় আসবে দিন যে চাকরির ইন্টারভিউ কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যাবে আর পরের দিন সকালেই কলেজে যাওয়ার সময় দিয়াকে নিয়ে যাবে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ অভি খুব সুন্দর করে সবটা সাজিয়েছে, যাতে অগ্নিকে কোনভাবে সন্দেহ না করে আদিত্য বাবু। অগ্নি চরম বিরক্ত অভির উপর, যতোবারই কল দিয়েছে দিয়ার খবর জানার জন্য তখনি অভি ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

অভি- আমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আমি ব্যস্ত আছি,তোমার সাথে কথা বলার সময় নেই।
বলেই কল কেটে দেয়, অগ্নিকে কিছু বলার সুযোগ দেয় না। আবার কল দিলেও রিসিভ করে না। আজকে অভিকে কিছু কড়া কথা শুনাবে তাই অফিস থেকে বের হয়ে যে কল দিতে যাবে, এমন সময় অভির নাম্বার থেকে কল আসে।
অগ্নি – হ্যালো।
অভি- কই তুমি??

অগ্নি – এইতো অফিস থেকে মাত্র বের হলাম, শুন দিয়া,,,,
অভি- তুমি আমার কথা শুনো, এক্ষুনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসো। আমি সেখানেই আছি।
অগ্নি – তুই ঢাকা আসলি কবে??
অভি- তুমি আসো আগে তারপর বলছি।

বলেই কেটে দিলো অভি। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে মন্দিরে পৌঁছালো অগ্নি। অগ্নির অফিস থেকে উল্টো পথে আসতে হয়েছে তারপর উপর জ্যাম তো আছেই। ভেতরে যেতেই মন্দির প্রাঙ্গনে অভিকে দেখতে ফেলো, হাতে দুটো মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অগ্নি ওর দিকেই এগিয়ে গেলো।
অগ্নি- অভি,,,,

অভি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, হেসেই বললো
অভি- বাহ্ ঠিক সময়ে পৌঁছে গেছো। আর ১০ মিনিট পরেই বিয়ের লগ্ন।
অভি কথা পুরোটাই অগ্নির মাথা উপর দিয়ে গেলো, আবাকতা কাটিয়ে উঠার আগেই অভি ধরে টেনে নিয়ে গেলো ওই অবস্থাতে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিলো, পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করলো।

অগ্নি এখনো যেন ঘোরের মধ্যে আছে, কিছুখন পর পান পাতা দিয়ে মুখ ঢেকে নতুন বৌয়ের আগমন ঘটলো,,, পান পাতা মুখ থেকে সরাতেই অগ্নির আবাকতা কেটে গিয়ে একরাশ মুগ্ধতায় ছেয়ে গেলো। সিঁদুর লাল জামদানি শাড়িতে দিয়াকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুর দানের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হলো বিয়ে। পরমেশ্বর ভগবান কে স্বাক্ষী রেখে দুই জন ভালোবাসা মানুষ সাতপাঁকে বাধাঁ পড়লো। দিয়া অভিকে বললো,

দিয়া- দাদাভাই তুমি সত্যি ম্যাজিশিয়ান, তুমি না থাকলে কখনো এ দিন টা আসতো না।
অভি- ধুর পাগলি, আমি কোন ম্যাজিশিয়ান না,, আমি শুধু ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছি।
অগ্নি হাতে দিয়ার হাতটা দিয়ে অভি বললো,

অভি- এ হাতটা কখনো ছেড়ো না, আজকে থেকে আমার বোনের সব দায়িত্ব তোমার দাদাই।
অগ্নি কৃতজ্ঞতা চোখে তাকালো ভাইয়ের দিকে। অগ্নি চোখে মুখে খুশির ঝলক, ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই। অগ্নির দিকে তাকিয়ে অভির মনেও শান্তি লাগছে। অভিকে বাসায় যাওয়ার কথা বললে, সে বললো,

অভি- আজকে না, আমি আবার আসবো। এখন আমাকে ফিরতে হবে। তোমারা সাবধানে থেকো।
অগ্নি – এখনি চলে যাবি?
অভি হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বলে
অভি- এখন না, দশটা পনেরোর বাস।
অগ্নি – তাহলে তো হাতে আরো কিছুখন সময় আছে, চল নতুন ফ্ল্যাট টা ও দেখে আসবি, আর রাতের খাবার খেয়ে তারপর যাবি।
অভি- নাহ্ দাদাই।

অভি যেতে রাজি হলো না, অগত্যা তিনজনে বাইরে থেকে খেয়ে নিয়েছে। অভি চলে গেলো নিজের গন্তব্যে। সিএনজি ভাড়া মিটিয়ে অগ্নি দিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ফ্ল্যাটের দিকে অগ্রসর হলো। দুজনের মধ্যে কোন কথায় হয় নি। অগ্নির এতোগুলো বছরের ভালোবাসা আজ পরিণয় পেলো। দিয়াকে ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড় করিয়ে, অগ্নি ভিতরে চলে গেলো,কিছুখন পর কাসার থালায় একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে নিয়ে এসেছে। কোনরকম বরণডালা বলা যায় আরকি। বরণ করে হাত টা বাড়িয়ে দিলো দিয়ার দিকে, দিয়া অগ্নির হাত ধরেই প্রবেশ করলো।

অগ্নি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে, দিয়া একপলক চেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো, ওর কেমন জানি মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে, লজ্জা, ভয়, অস্থিরতা, সব একসাথে ঘিরে ধরেছে। অগ্নি হাসলো,,
অগ্নি – দিয়া।
এই এক ডাকেই দিয়া এলোমেলো হয়ে যায় , ওর বুকের ধুকপুকানি কয়েকশো গুণ বেড়ে যায়, মাথা নিচু করেই ছোট করে বলে
দিয়া- হুম।

অগ্নি – আমার দিকে তাকাও, মাথা নিচু করে আছো কেন?? ভয় পাচ্ছো তুমি?
হঠাৎ করে তুমি সম্বোধন শুনে দিয়ার আরো বেশি লজ্জা লাগছে, মাথা তুলে আর তাকাতে পারলো না অগ্নির দিকে। অগ্নি কিছুক্ষণ প্রেয়সীর লজ্জা মিশ্রিত মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর দিয়াকে নিয়ে বেডরুমে চলে গেলো, আলমারি থেকে একটা থ্রি- পিস বের করে দিয়ার হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে
অগ্নি – যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো। দিয়াও মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। অগ্নিও নিজের জামা-কাপড় নিয়ে পাশের রুমে চলে, ওই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসবে। ১০ মিনিট পর দিয়া বেরিয়ে এলো, চারদিক চোখ বুলিয়ে অগ্নিকে খোঁজার চেষ্টা করলো, কিন্তু রুম খালি। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে গোন্ড-প্লেডের গহনা গুলো খুলে রাখলো। এবার কিছুটা শান্তি লাগছে।

আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে নিজের সিঁথিতে হাত রাখলো, যেখানে জ্বলজ্বল করছে অগ্নির দেওয়া সিঁদুর, চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা আনন্দঅশ্রু পড়লো, নিজ মনেই বললো
দিয়া- ধন্যবাদ, পরম করুণাময়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুরো রুম টা দেখতেই, পশ্চিম পাশের দেয়ালে চোখ আটকায় দিয়ার, পুরো দেয়াল জুড়েই দিয়ার ছবি। সেদিকে কিছুখন চেয়ে হাসলো দিয়া। মনে মনে অগ্নিকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে।

অগ্নি শাওয়ার নিয়ে বের হলো, চুল গুলো ভালো করে না মুছেই তড়িঘড়ি করে নিজের রুমে এলো, দিয়ার দেয়ালে দিকে তাকিয়ে আছে, অগ্নি ও পাশে এসো দাড়ায়, তার দৃষ্টি ও সামনে। দিয়া অগ্নির দিকে না তাকিয়ে বলে।
দিয়া- অপ্রকাশিত ভালোবাসা চেয়ে প্রকাশিত ভালোবাসা সুন্দর।
অগ্নি – অপ্রকাশিত আর রইলো কই। তোমার তীব্র ভালোবাসা কাছে হার মেনেছি।
দিয়া- উঁহু, সৃষ্টিকর্তা আপনার ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়ে আমাকে আপনার ভাগ্যে লিখে দিয়েছে।
অগ্নি – আমি তো ভাগ্যে নেই বলে হাল ছেড়ে দিয়েছি।

দিয়া- আমি তো দু-হাত জোর করে সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনাকে চেয়েছি।
অগ্নি- তাইতো সমাজ-সামাজিকতার নিয়ম ভেঙে আজ তুমি আমার। আমার সর্বপ্রথম আর সর্বশেষ ভালোবাসা তুমি।
দিয়া- আমার জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি আপনার হয়েই থাকবো।
নিঃশব্দে কাঁদছে দিয়া, অগ্নি দিয়াকে কাঁদতে দেখেই বুকে আগলে নিলো, চোখের জলে ভিজিয়ে দিচ্ছে অগ্নির বুক।
অগ্নি – এভাবে কান্না করলে কিন্তু আমার কাছে রাখবো না। অভিকে বলবো নিয়ে যেতে।
দিয়া বুক থেকে মুখ তুলে তাকায়, বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে

দিয়া- যাবো না আমি।
অগ্নি চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,
অগ্নি – আমার কাছে থাকতে হলে কান্না করা যাবে না। আজকে থেকে কান্না নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো তোমার জন্য।
সকাল সাড়ে পাঁচটা ঘুম ভাঙ্গলো দিয়ার,নড়াচড়া করতেই বুঝতে পারলো ও অগ্নির বাহুডোরে আবদ্ধ। মনে পড়লো রাতের কথা, বিছানায় শুয়ে অস্বস্তিতে যখন এপাশ ওপাশ করছিলো, তখন অগ্নি বুকে টেনে নিয়ে মাথা হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
রাতের কথা মনে করে হাসলো দিয়া, প্রাপ্তির হাসি।উঠতে নিলে অগ্নি আরো শক্ত করে ধরে রাখে, ঘুম ঘুম কন্ঠে অগ্নি বলে

অগ্নি – নড়ছো কেন?
দিয়া নরম স্বর বলে
দিয়া- ছাড়ুন।
অগ্নি – কেন?
দিয়া- উঠবো আমি।
অগ্নি একহাতে দিয়াকে জরিয়ে ধরে আরেক হাতে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে সময় দেখে নিলো।
অগ্নি – ৫:৩৫ বাজে, এতো সকালে উঠতে হবে না। ঘুমাও।
দিয়া- আর ঘুম আসবে না আমার।
অগ্নি – চুপ করে শুয়ে থাকে।

বলেই একহাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো, দিয়াও চুপচাপ অগ্নির বুকের সাথে মিশে রইলো। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আবার ঘুমিয়ে গেলো দিয়া। অগ্নি এখনো দিয়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘন্টা খানিক পর দিয়াকে আস্তে করে বালিশে শুয়ে দিয়ে ওঠে গেলো অগ্নি। ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো, আজ নিজে হাতে রান্না করবে। অনেক কষ্ট করে একদিনের ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে। সাড়ে দশটায় ঘুম ভাঙ্গলো দিয়ার। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো। অগ্নি দিয়াকে ডাকতে এসে দেখে, উঠে বসে আছে

অগ্নি – কখন ঘুম ভাঙ্গলো??
দিয়া- একটু আগেই।
অগ্নি – ফ্রেশ হয়ে আসো।
দিয়া হুম বলে চলে গেলো, সে ফাঁকে অগ্নি বিছানা গুছিয়ে রাখলো। কিছুখন পর দিয়া বেরিয়ে এলো। অগ্নি দিয়াকে টাওয়াল এগিয়ে দিলো,
অগ্নি – এটা আমার, এখন ম্যানেজ করে নাও। আমি তোমার জন্য নতুন একটা এনে দিবো। তোমার কি কি লাগবে একটা লিস্ট করে দিও আমি এনে দিবো।

দিয়া- আচ্ছা।
অগ্নি – চলো নাস্তা করতে।
দুজনে একসাথে খাবার খাচ্ছে, অগ্নি দিয়াকে দেখছে, প্রয়োজনে তুলনায় অনেক কম খায় মেয়েটা।
অগ্নি – খাবার ভালো হয়নি?

দিয়া- ভীষণ ভালো হয়েছে। আপনি তো অনেক ভালো রান্না করতে পারেন।
অগ্নি – তোমার খাওয়ার ধরণ দেখে তো মনে হচ্ছে না খাবার ভালো হয়েছে।
দিয়া- সত্যি অনেক ভালো হয়েছে। আমি আজকে অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছি।
অগ্নি -তাই তো এখনো একটা রুটি শেষ করতে পারো নি।
দিয়া প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে
দিয়া- আজকে অফিস যাবেন না??
অগ্নি – আজকে ছুটি নিয়েছি।

খাওয়া শেষ করে অগ্নি দিয়ার হাতে খাতা আর কলম ধরিয়ে দিলো, লিস্ট করার জন্য, দিয়া লিখছে আর অগ্নির দৃষ্টি দিয়ার দিকে, চিকন হাতের কবজিতে শাঁখা-পলা। এছাড়া আর কোন জুয়েলারি নেই। অগ্নি উঠে গিয়ে আলমারি থেকে ছোট দুটো বক্স বের করে আনলো। এবার দিয়ার সামনে বসলো, দিয়ার ও লিস্ট করা শেষ। দিয়ার হাত থেকে লিস্ট টা নিয়ে বক্স গুলো ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো, ও হাতে নিয়ে দেখলো একটাতে ছোট একজোড়া স্বর্নের কানের দুল, অন্যটাতে একটা চেন।

অগ্নি – পছন্দ হয়েছে??
দিয়া- হুম।
অগ্নি – পড়ো তাহলে।
দিয়া কানের দুল আর চেন টা পড়ে নিলো।
অগ্নি লিস্ট তাকিয়ে আবার দিয়ার দিকে তাকাই, লিস্টে কয়েক টা পূজার সামগ্রী আর একটা সিঁদুর কৌটা ছাড়া আর কিছুই লেখে নি।
অগ্নি- আর কিছু লাগবে না।
দিয়া- না।
অগ্নি- আচ্ছা, তাহলে আমি এগুলো নিয়ে আসি।
দিয়া- সাবধানে যাবেন।

অগ্নি যেতেই দিয়া পুরো ফ্ল্যাট টা ঘুরে দেখলো, অগ্নি এ সাত মাসে খুব ভালোই গুছিয়ে নিয়েছে, আর যতোটা বাকি আছে সেটা দিয়া গুছাবো। ভালোবাসা আর যত্নে সাজাবে ওর স্বপ্নের সংসার। কিচেনে গিয়ে সবটা দেখে নিলো,ঝুড়িতে তাজা সবজি রাখা আছে, দিয়া ঘুমে থাকতেই অগ্নি বাজার করে নিয়ে এসেছে। দিয়া রান্নার কাজে লেগে গেলো। প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেছে অগ্নি এখনো ফিরে নি, এদিকে দিয়ার রান্না প্রায় শেষের দিকে, প্রথম দিন হওয়াতে একটু সমস্যা হয়েছে সব জিনিসপত্র পেতে।

কলিং বেলের আওয়াজে দিয়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো, অগ্নি ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে পুরো মার্কেট তুলে নিয়ে এসেছে। অগ্নি ড্রয়িং রুমের বেতের সোফায় ধপ করে বসে পড়লো, দিয়া ছুটে গিয়ে এক গ্লাস জল এনে অগ্নির সামনে ধরলো। জল টুকু পান করে, গ্লাস টা সামনের টেবিলে রেখে, দিয়ার হাত টা ধরে পাশে বসিয়ে দিলো।
অগ্নি- রান্না করছিলে??
দিয়া- হুম। আপনি কিভাবে বুঝলেন।

অগ্নি- এই যে ওড়না টা দেখে, চুলের খোঁপা টা আর কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখেই বুঝেছি।
দিয়া হাসলো, ওড়নার প্যাঁচ টা খুলে খুব যত্ন করে ওড়নার এক অংশ দিয়ে অগ্নির কপালে ঘাম মুছে দিতে লাগলো। অগ্নি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার প্রেয়সীর দিকে। দিয়ার কথায় ঘোর কাটলো অগ্নির
দিয়া- আপনি তো পুরো বাজার তুলে নিয়ে এসেছে। কতোকিছুর কি দরকার ছিলো।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৯

অগ্নি – দরকার ছিলো, দিয়া হয়তো তোমাকে বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবো না, তবে আমার সাধ্যের মধ্যে সবটা দিবো। আমার জীবনে একছত্র অধিপত্য তোমার, আমার ছোট সাম্রাজ্যের রানী করে রাখবো তোমাকে।
দিয়া- আমি কোন সাম্রাজ্যের রানী হতে চাই না, শুধু আপনার মনের রানী করে রাখুন, আমার বিলাসিতার চাই না, শুধু আপনি পাশে থাকলেই আমি সুখী প্রিয়

প্রেম পরিণয় পর্ব ১১