প্রেয়সী পর্ব ৭২

প্রেয়সী পর্ব ৭২
নন্দিনী নীলা

ঠিক দুই মাস পর নিজের বাসায় এসে একটা শান্তি নিঃশ্বাস ফেলল ফুয়াদ। নিজের বাড়ি মানেই শান্তিময় স্থান। যত ভালো জায়গায় যত ভালোই থাকুক না কেন নিজের পরিবারের সাথে, নিজের বাসায় যে শান্তিটা পাওয়া যায় সেটা পৃথিবীর কোথাও নেই।

ফুয়াদ বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো সবাই আজকে বাসাতে আছে। চা, কফি খাচ্ছে। সদর দরজা খোলা ছিল তাই ঢুকতে কলিং বেল চাপতে হলো না। ওরা যখন বাসার ভেতরে ঢুকলো সবার দৃষ্টি ওদের ওপর স্থির হলো।
তিন্নি দৌড়ে এসে মধুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,” কেমন আছিস?”
মধু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,” আলহামদুলিল্লাহ। তোরা সবাই কেমন আছিস?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিন্নি মধু কে ছেড়ে আগে ওকে ভালো করে দেখল। তারপর ওর পেটে হাত রেখে বলল,,” তুই তো আগের থেকে একটু গুলুমুলু হয়ে গেছিস। পেটটাও এখন একটু বড় বড় লাগছে।”
মধু মুখ কালো করে বলল,,” আমাকে বাজে লাগছে তাই না?”
তিন্নি বলল,,” আরে না সুন্দর লাগছে। অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আয় বস।”

তিন্নি মধুকে নিয়ে সোফায় কাছে গেল। ওকে বসতে বলল কিন্তু মধু বসল না এগিয়ে সবাইকে সালাম দিল আর সবাই কেমন আছে জিজ্ঞেস করল‌। আনিতা বেগম দাঁড়িয়ে ছিল তিনি মধু কে কাছে ডেকে খোঁজখবর নিতে লাগল। নাফিসা বেগম কথা না বললেও সালামের উত্তর নিল। ফুয়াদ কার সাথে কি কথা বলবে বুঝতে পারছে না। সবাই স্বাভাবিক সুন্দরভাবে বসে থাকলেও সবকিছুই ওর কাছে কেমন জানি লাগছে। পরিবেশটা কেমন যেন গুমোট ভাব ধরে আছে।

নাফিসা বেগম ফুয়াদ বা মধু কারো দিকে তাকালেন। নাফিসা বেগম অন্য দিকে তাকিয়ে ফুয়াদকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,” তোমরা তোমাদের রুমে যাও। বিশ্রাম নাও। তোমাদের উপর আমাদের সবার রাগ কিন্তু সে রাগ আমাদের নাতি-নাতনের উপর ফেলব না‌। নাতি-নাতনি আসছে তারা বাসার বাইরে থাকবে তা তো হতে পারে না শুধুমাত্র তাদের কথা ভেবেই তোমাদেরকে আমরা ক্ষমা করেছি।”

ফুয়াদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কথা শেষ হতেই ফুয়াদ আর মধু নিজের রুমে চলে আসলো। ফুয়াদ দেখল ওর রুমটা আগের মতোই গুছানো এই কাজটা মা করেছে বুঝাই যাচ্ছে। ওর পরিবারের কারো প্রতি কোন অভিযোগ নাই। কারণ সমুদ্র ভাইয়া তাদের সন্তান সে বাড়িছাড়া হয়েছে তাদের তো খারাপ লাগবেই। এসব তারা মানতে পারছে না আমি কি মানতে পেরেছি? তারা কিভাবে পারবে! বাবা-মার উপর দিয়েছে কি যাচ্ছে সেটা ফুয়াদ প্রতিমুহূর্তে উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু ওর যে কিছুই করার নাই।

ফুয়াদের বাবা গিয়েছিল সমুদ্রের মিসিং ডায়েরি করাতে। তখন পুলিশ বলে দিয়েছে আপনার ছেলে একটা ক্রিমিনাল। তার মিসিং ডায়েরি করানোর প্রয়োজন নাই। তাকে আমরা আসামি হিসেবে তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছি সারা বাংলাদেশ।

ফুয়াদ আর মধু বাসায় ফিরে আসার পর নাফিসা বেগম ও রাজিব খান ওদের সাথে কথা বলা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। তিন্নি সারাদিন মধুর সাথেই থাকে। আনিতা বেগম মধুর সমস্ত দেখাশোনা করে। নাফিসা বেগম সরাসরি কথা না বললেও মধু কখন কি খাবে। কিভাবে চলবে সব ঠিক করে তিনিই দিয়েছে। বাসায় আসার পর থেকে ফুয়াদ আবার কাজে যাচ্ছে একটু একটু। বাসার সবার কাছে মধু কে রেখে গিয়ে ওর ওতো ভয় করে না।

বাসায় আসার প্রায় দেড় মাস চলে গেল চোখের পলকে। মধুর বাবা মা এর মধ্যে একবার এসেছিল ওদের দেখতে ফল মিষ্টি নিয়ে। মধুর খালামনি আবার বিদেশ চলে গিয়েছে তিনি মধুর খোঁজখবর ফোন করে নিচ্ছে।
ফুয়াদ অনেক দিন পর থানায় এসেছে এখন ও পুলিশ কমিশনার সাথে বসে কথা বলছে। এতদিন হয়ে গেল সমুদ্র কে কোথাও পুলিশ পায়নি মেসেজে সমুদ্র বলেছিল ও দেশের বাইরে যাবে কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে দেশের বাইরে যাওয়ার কোন ক্লো পাওয়া যায়নি।

এই নিয়ে ফুয়াদ নিজেও চিন্তিত ভাইয়া আসলে আছে কোথায়?
ও থানা থেকে বেরিয়ে সোজা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় আজকে মধু নাফিসা বেগমের সাথে হসপিটালে গিয়েছে। ও এসে দেখে নাফিসা বেগম আর মধু কডিটরে বসে আছে। মধুর হাতে ফোন ও গেইমস খেলছে। ফুয়াদ গিয়ে বসল মধুর পাশে।
নাফিসা বেগম চুপ করে বসে আছে। মধু ফোন অফ করে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,,” কখন আসলেন?”

” এইমাত্র, ডক্টর দেখিয়েছ?”
মধু বলল,,” হ্যাঁ আম্মুর সাথে গিয়েছিলাম। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।”
” কিছু খাবে?”
” হ্যাঁ খিদে পেয়েছে।”
“আচ্ছা বসো আমি দেখে আসি রিপোর্ট দিতে কতক্ষন লাগবে।”

ফুয়াদ গিয়ে চেক করে আসলো ভীড় অনেক আরও ১৫/২০ মিনিট লাগবে। তিনজনে হসপিটালের সামনের রেস্টুরেন্টে এসে বসল। রেস্টুরেন্টে বসার পরে সবার দিকে তাকাচ্ছে মধু। সবাই ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে ওর দিকে। ও চোখ মুখ শুকনো করে ফুয়াদ শার্ট টানতে লাগল। ফুয়াদ অর্ডার দিয়ে ফোনে কিছু করছিল। মধুর টানাটানিতে ওর দিকে তাকালো কপাল কুঁচকে।

মধু ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,” আমি এখানে বসে খাব না।”
ফুয়াদ অবাক স্বরে বলল,,” কেন কি হয়েছে? এখানকার খাবার ভালো খেয়ে দেখো।”
মধু বলল,,” ওই টেবিলের মেয়েটা কেমন করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখেন। আমাকে খুব বাজে দেখা যাচ্ছে আমি জানি। তাই ওমন করে তাকিয়ে আছে। আমি এখানে থাকব না বাসায় চলে যাব।”

বলেই মধু বসা থেকে উঠে দাড়াল। ফুয়াদ মধুর হাত ধরে টেনে আবার বসিয়ে বলল,,”উফফ মধু বসো কোথায় যাচ্ছ? খাবার অর্ডার দিয়ে ফেলছি। কই কে তাকিয়ে আছে দেখি তো! কে বলেছে তোমাকে বাজে দেখা যাচ্ছে। চুপচাপ বসো আমি তোমাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি তোমার নিজের হাতে খেতে হবে না।”

তিনজনে খাবারই চলে আসলো। ফুয়াদ মধুকে খাইয়ে দিচ্ছে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দিচ্ছে খাবার ঠোঁটের বাইরে লাগলে। মধু খাবার চিবোচ্ছে আর আশেপাশে তাকিয়ে আছে। সেই বেয়াদব মেয়েটা এখনো কেমন করে আড়চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে। এবার মধু তার তাকানোর আসল রহস্য বুঝতে পারল। সে আসলে মধুকে বিদ্রুপ চোখে তাকিয়ে দেখ ছিল আর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ কে পটানোর চেষ্টা করছিল দূর থেকে। মেয়েটা দূর থেকে ওকে বুঝানোর চেষ্টা করছে ফুয়াদ এর সাথে ওকে মানাচ্ছে না। রাগে মধুর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল।
ফুয়াদ বলল,,”কি হয়েছে এতো রেগে আছো কেন?”

” আমার সামনে বসে ওই মেয়েটা আপনার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে আর আমি রাগ করবো না?”
ফুয়াদ মধুর কথা শুনে বলল,,” মানে কি সব বলছো? কোন মেয়ে।”
ফুয়াদ তাকাতে যাবে মধু ওর চোখের উপর হাত দিয়ে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,”কোনো মেয়ের দিকে তাকালে চোখ দুটো উপরে ফেলবো।আমার সামনে বসে অন্য মেয়ে কে দেখতে চান আপনি?”
“আরে আমি তো জাস্ট!”

” চুপ একটা কথা ও না। মাথা নিচু করে থাকবেন। মাথা নিচু করে এখান থেকে বের হবেন। মেয়েগুলো লুচুর দল।”
মেয়ে গুলো ফুয়াদের থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে মুখ কালো করে চলে গেল। আল্ট্রা রুমে মধু কাউকে ঢুকতে দেয় না ও একাই থাকে আর ডাক্তার আন্টি থাকে। এজন্য মধু ছাড়া কেউ জানে না মধুর কি বেবি হবে! বাসায় ফেরার পর সবাই ওকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু বলেনি‌। আজকেও সবাই জিজ্ঞেস করছে শুধুমাত্র ফুয়াদ জিজ্ঞেস করেনি।

ফুয়াদ জিজ্ঞেস করলে মধু বলে দিতো কিন্তু ফুয়াদ নিজে থেকে জানতে চায় না এজন্য মধু আর আগ বাড়িয়ে জানায়নি‌।
রুমে এসে মধু ফুয়াদ কে বলল,,” আপনি কি জানতে চান না?”
ফুয়াদ বলল,,” নাহ
“কেন আপনি কি এখনো অখুশি?”

প্রেয়সী পর্ব ৭১

ফুয়াদ মধুর গাল স্পর্শ করে বলল,” পাগলি। আগে থেকে জানলে মজা নাই। অনুভূতি নষ্ট হয়ে যাবে। এখন আমি ওর জন্য এক্সাইটেড হয়ে আছি আমি সেই মুহূর্তে জানতে চাই যখন আমি ছুঁতে পারবো আদর করতে পারব।”
“শুধুমাত্র আপনি জানতে চান না বলে আমি কাউকে বলিনি।”
” সবার জন্য ও সারপ্রাইজ থাক।”

প্রেয়সী পর্ব ৭৩