প্রেম পরিণয় পর্ব ১১

প্রেম পরিণয় পর্ব ১১
রাজশ্রী মজুমদার রাই

তনুশ্রী দেবী সামনে বসে আছে অভি, পিসিমনির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছে। তবে মুখে কিছু বলছে না, নিরবতা ভেঙে তনুশ্রী দেবী বলে
তনুশ্রী দেবী- কি হয়েছে বাবা?? কিছু বলবি তুই?
অভি মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ায়,
তনুশ্রী দেবী – বল না বাবা, কি বলবি।

অভি- তোমাকে না জানিয়ে আমি একটা কাজ করে ফেলেছি পিসিমনি। কাজ টা করার আগে তোমার অনুমতি নেওয়া উচিৎ ছিলো আমার। পিসিমনি তুমি কি জানার পর খুব রাগ করবে আমার সাথে??
তনুশ্রী দেবী সামান্য হেসে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তনুশ্রী দেবী – আমি কখনো তোর উপর রাগ করতে পারি, তুই তো আমার বাবা, তোর মধ্যে আমি আমার বাবাকে দেখতে পায়। বাবা যে দিন আমাদের ছেড়ে চলে গেলো, সেদিন আমার এই ছোট বাবা আমাকে বুকে আগলে নিয়েছিলো। সেদিন টার কথা কখনো ভুলবো না বাবা।
তনুশ্রী দেবী অতীতে স্মৃতি মনে করে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিলো, অভি চোখের জল মুছে দিয়ে বললো।
অভি- কেঁদো না পিসিমনি৷ তুমি কাঁদলে যে আমার খুব কষ্ট হয়।
তনুশ্রী দেবী – আচ্ছা, বল কি বলবি।

অভি- আমি কালকে ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করে এসেছি৷ আমার বোনকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। দাদাই আর দিয়া কিছুই জানতো না। আর তোমাকেও জানানো হয় নি।
তনুশ্রী দেবী খুশি হলেন,
তনুশ্রী দেবী – খুব ভালো করেছিস বাবা।

অভি নিজের ফোন থেকে অগ্নি দিয়ার বিয়ের ছবি বের করে দেখলাে তনুশ্রী দেবী কে। আবারও কয়েক ফোঁটা জল পড়লো ফোনের স্কিনে। মেয়ের প্রতি সুক্ষ রাগ দেখিয়ে বললো
তনুশ্রী দেবী – দিয়া যাওয়ার আগে যদি একবার বলে যেতে তাহলে কি আমি না করতাম।
অভি- ও নিজে জানতো নাকি।

তনুশ্রী দেবী অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো, অভি হেসে বলে
অভি- আমি ওকে নিয়ে গিয়েছিলো, ও জানতো না, আর দাদাইও জানতো না ওকে আমি কোথায় রেখেছি। তাই রাগ করলে তোমার বাবা উপরে করো।
তনুশ্রী দেবী একটু খারাপ লাগলো,শুধু শুধু মেয়েকে ভুল বুঝেছে।
তনুশ্রী দেবী – বাবা একবার কথা বলিয়ে দিবে, দিয়ার আছে।
অভি- ওর কাছে তো ফোন নেই, দাদাইকে কল দিয়ে দেখি।

দুপুরের খাওয়া শেষ করে অগ্নি ল্যাপটপে কাজ করে আর দিয়া কিছুটা দূরে বসে গল্পের বই পড়ছে। বলতে গেলে পুরো ডুবে আছে বইয়ের মধ্যে। অগ্নি অনেক গুলো বই নিয়ে এসেছে, জানে দিয়া গল্পের বই পড়তে অনেক পছন্দ করে। এমন সময় অগ্নির ফোন বেজে ওঠে,

অগ্নি – হ্যালো
অভি- কেমন আছো দাদাই?
অগ্নি – ভালো, তুই কেমন আছিস?
অভি- ভালো আছি। দিয়া কই? পিসিমনি কথা বলতে চাইছে।
অগ্নি – ফোনটা পিসিমনিকে দে, আমি কথা বলে ওকে দিচ্ছি।
অভি- হুম, কথা বলো।

অগ্নি – সরি পিসিমনি, তোমাকে না জানিয়ে আমরা বিয়ে করে নিয়েছি। ক্ষমা করে দাও।
তনুশ্রী দেবী – আমি রাগ করি নি বাবু, তোরা পবিত্র সম্পর্কে অবদ্ধ হয়েছিস। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তোরা সুখী হও।
অগ্নি – আর্শীবাদ করো পিসিমনি। ধরো দিয়ার সাথে কথা বলো।
দিয়া এখনো বইয়ের মধ্যে ডুবে আছে, আর অগ্নি যে ফোনে কথা বলছে সেদিকে ওর কোন খেয়াল নেই। অগ্নি দিয়ার দিকে কিছুটা কাছে গিয়ে বসে, বাহুতে মৃদু ধাক্কা দেয়, দিয়া বই সরিয়ে অগ্নির দিকে তাকাই, ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে

অগ্নি – কথা বলো পিসিমনির সাথে।
দিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে নিলো ফোন টা,
দিয়া- মা,,,
তনুশ্রী দেবী – কেমন আছিস??
দিয়া- ভালো, তুমি কেমন আছো?? হিয়াপাখি কেমন আছে?? আর বাবাই।

তনুশ্রী দেবী – আমরা সবাই ভালো আছি। হিয়া তোকে খুব মিস করে।
দিয়া- আমিও তোমাদের ভীষণ মিস করি মা, তোমাদের ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে। আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলো না মা, আমি যে ওনাকে ছাড়া অন্য কাউকে,,,,,,
বলেই কান্না করে দিলো,
তনুশ্রী দেবী – কান্না করিস না মা। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই মন দিয়ে সংসার কর মা, বাবুকে একদম জ্বালাবি না।

দিয়া- মোটেও জ্বালায় না আমি তোমার বাবুকে।
আরো কিছুখন কথা বলে রেখে দিলো, দিয়া এখনো নাক টেনে কাঁদছে। অগ্নির দিকে চোখ যেতেই দেখলো চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
দিয়া- এভাবে তাকাছেন কেন? আমি আপনাকে ভয় পায় না।
অগ্নি – আমি কি আপনাকে ভয় দেখেছি নাকি??

দিয়া- তুই থেকে তুমি টা তো ঠিক ছিলো, আবার আপনি করে কেন বলছেন।
অগ্নি – তো কি করবো। এভাবে কান্না করার জন্যই তো আপনাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। এক্ষুনি অভিকে কল দিয়ে বলছি নিয়ে যাওয়ার জন্য।
দিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো
দিয়া- আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন আপনি??
অগ্নি – হুম।
দিয়া- সত্যি
অগ্নি- মিথ্যা।

দিয়া- তাহলে বারবার বলছেন কেন, আমার বুঝি কষ্ট হয় না।
অগ্নি দিয়াকে একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,
অগ্নি – তোমার চোখের জল যে আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয় লক্ষ্মী।
দিয়া- তাই বলে এভাবে বলবেন।
অগ্নি- সরি, আর কখনো বলবো না। আর তুমি তো আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। অনেক কষ্টে তোমাকে পেয়েছি, কখনোই আমার কাজ থেকে দূরে যেতে দিবো না

দিয়া চুপ করে অগ্নির বুকের সাথে মিশে রইলো, ভালোবাসা পবিত্র স্পর্শ,ভীষণ শান্তি লাগে দিয়ার। অগ্নি দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ফলস্বরূপ কিছুখনের মধ্যেই দিয়া ঘুমিয়ে গেলো।
অগ্নি – ঘুম পাগলি।

অগ্নি দিয়াকে বুকে নিয়েই আস্তে করে শুয়ে পড়লো। বিকাল পাঁচটায় ঘুম ভাঙ্গলো দিয়ার, বুঝতে পারলো অগ্নির বুকের উপর আছে। মাথা তুলে আস্তে করে উঠে বসলো, অগ্নি এখনো ঘুমাছে। দিয়া হাত বাড়িয়ে একটু ছুয়ে দিলো ওর প্রিয় পুরুষকে। তারপর আস্তে করে উঠে গেলে, অগ্নির আনা জিনিস গুলো সব গুছানো হয় নি, কিছু প্যাকেট খুলেও নি। সেগুলো গুছাতে চলে গেলো দিয়া। কিছুখন পর অগ্নির ও ঘুম ভেঙ্গে গেলো, পাশে ফিরে ফেলো না দিয়াকে৷ অগ্নি উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এলো, দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে দিয়ার কাজ দেখছে,,, ছোট ছোট হাতে সব গুছিয়ে রাখছে, চঞ্চল পিচ্চি মেয়েটা ও একদিনে কেমন সংসারী হয়ে গেলো। অগ্নির দিকে চোখ পড়ে দিয়ার,,,

দিয়া- উঠে পড়েছেন?
অগ্নি – হুম।
দিয়ার পাশে বসলো অগ্নি,
দিয়া- চা খাবেন।
অগ্নি – নাহ্।
দিয়া নিজের কাজে ব্যস্ত, আর অগ্নি ব্যস্ত তার প্রেয়সীকে দেখতে।

দিয়া- কি দেখছেন এভাবে??
অগ্নি- আমার পিচ্চি বউকে দেখছি।
দিয়া- আমি মোটেও পিচ্চি না, ১৭+
অগ্নি – তুমি আমার কাছে সারাজীবন পিচ্চি থাকবে।
দিয়া- আচ্ছা শুনুন না।
অগ্নি – হুম, বলুন না।
দিয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকালো, অগ্নি হেসে বললো
অগ্নি – বলো না,
দিয়া- আমাকে ফুল গাছ এনে দিবেন, বারান্দায় লাগবো। বারান্দা টা কেমন খালি খালি লাগে।
অগ্নি – আচ্ছা এনে দিবো।

সকালে অগ্নি অফিসে চলে গেছে, দিয়ার দিনটা কাটছে না, ঘড়ির কাঁটা গুলো মনে হয় ঘুরছে না,, শুয়ে বসে সময় পার করছে, কিছুখন বই পড়ছে, কিন্তু ভালো লাগছে না দেখে রেখে দিয়েছে। নিজ মনেই বলে,
দিয়া- ভালোবাসা কি অদ্ভুত তাই না প্রিয়,,, আপনি চোখের সামনে থাকলে কখন জানি সময় শেষ হয়ে যায় বলতেও পারি না। এখন আপনি কাছে নেই তাই সময়ও যাচ্ছে না।

দিয়া উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়, আশেপাশে তাকিয়ে ও কোন গাছপালা দেখতে ফেলো না, চারপাশে বড় বড় বিল্ডিং। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, এই নীল আকাশ দিয়ার বরাবরই ভালো লাগে। দিয়া যখন আকাশ দেখায় মগ্ন তখনি পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ শুনা যায়,কন্ঠের মালিক কে খোঁজার জন্য তাকাতেই দেখলো পাশের বারান্দায় একটা মেয়ে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে,

সুপ্তি – Hi,
দিয়া- hlw
সুপ্তি – আমি সুপ্তি পাল, তোমার নাম কি??
দিয়া- আমি দিয়া।
সুপ্তি- আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে আমার সমবয়সী কেউ আছে আমি তো জানতাম না। জানো এ বিল্ডিংয়ে আমার সমবয়সী কেউ নেই। আচ্ছা তোমাকে তুমি করে বলছি, মাইন্ড করছো না তো, আমি আবার এতো ফর্মালিটি করতে পারি না।

দিয়া বুঝতে পারলো মেয়েটি মিশুক আর একটু বাচাল প্রকৃতির।
দিয়া- না, মাইন্ড করি নি, বরং তুমি করে বলায় খুশি হয়েছি
সুপ্তি- সত্যি, তাহলে আজকে থেকে আমরা ফেন্ড।
বলেই দিয়া দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, কয়েক মিনিটে এভাবে ফেন্ড বানানো যায়, এ মেয়েকে না দেখলে দিয়া জানতো না। সৌজন্যতা বজায় রাখতে দিয়াও হাত বাড়িয়ে দিলো। সুপ্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও খুব খুশি হয়েছে। হাত ধরে রেখেই কথা বলছে,

সুপ্তি – কে কে আছে তোমার পরিবারে??
দিয়া- আমি আর আমার হাসবেন্ড।
দিয়ার উল্টো সিঁথিকাটাতে ওর সিঁদুর দেখা যাচ্ছে না, ফুলহাতার জমার কারণে শাঁখা পলাও খেয়াল করে নি সুপ্তি। হাসবেন্ডের কথা শুনে অবাক হয়ে বলে
সুপ্তি- তোমার ও বিয়ে হয়ে গেছে, আমার বয়সী সবার বিয়ে করে ফেলছে শুধু আমার মা, বাবা আমার বিয়ে দিচ্ছে না, ঘরে রেখে রেখে বুড়ি বানায় ফেলছে।

সুপ্তির এমন কথা শুনে দিয়া মিটমিট করে হাসছে, তা দেখে সুপ্তি রেগে বলে
সুপ্তি- আমার দুঃখের কথা শুনে তোমার হাসি আসছে। কেমন ফেন্ড তুমি??
দিয়া কোন রকম হাসি চেপে বললো,
দিয়া- সরি।
সুপ্তি- ইট’স ওকে, আচ্ছা তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ।
দিয়া- হুম,
সুপ্তি- তাহলে তো তোমার প্রেমকাহিনী শুনতে হবে।

এভাবেই অনেকখন চলো ওদের কথোপকথন, সুপ্তির ডাক আসাতে ও চলে গেলো, দিয়াও রুমে চলে এলো। সন্ধ্যা ৬:৩০, কলিং বেলের শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো দিয়া, ক্লান্ত ঘর্মাক্ত শরীরে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি মুখে তার অমায়িক হাসি, আহ্ প্রাণ জুড়িয়ে যায় দিয়ার, অগ্নি ফুলগাছ গুলো নিয়ে ভিতরে ঢুকলো, দরজা আটকিয়ে দিয়া পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো অগ্নিকে। অগ্নি হাত টেনে সামনে এনে বুকে জরিয়ে ধরে,

অগ্নি – কি হয়েছে?
দিয়া- আপনাকে খুব মিস করছি।
অগ্নি – আমিও মিস করেছি পিচ্চি। তোমার জন্য ফোন নিয়ে এসেছি, কালকে থেকে মন পড়লেই কল দিতে পারবে। আচ্ছা এখন ছাড়ো ঘামে ভিজে আছি, শরীর থেকে বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে।
দিয়া- তো কি হয়েছে,,,

বলেই আরো শক্ত করে ধরে,, অগ্নি মুখে প্রাপ্তির হাসি।
রাতে অগ্নির বুকে মাথা রেখে বই পড়ছে দিয়া, অগ্নি তার প্রেয়সী সঙ্গ অনুভব করছে, এ মেয়ের সান্নিধ্যে থাকলে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।

অগ্নি – দিয়া,,,
দিয়া- হুম বলুন,
অগ্নি – তুমি সত্যি আর লেখাপড়া করবে না।
দিয়া- নাহ্, আমার লেখাপড়া করতে ভালো লাগে না।
অগ্নি – তুমি সিরিয়াস।
দিয়া- হুম।
অগ্নি- যদি কখনো লেখাপড়া করতে চাও, তাহলে বলো, আমি কলেজে ভর্তি করে দিবে।
দিয়া- আপনি জোর করবেন না।
অগ্নি – নাহ্
দিয়া- কেন??

অগ্নি- আমি কখনো তোমার উপর নিজের ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দিবো না। আমার পিচ্চির যা মন থেকে চাইবে সেটাই হবে।
দিয়া ভীষণ খুশি হলো,অগ্নি ওর ইচ্ছার মূল্য দিয়েছে, অগ্নি যদি জোর করতো তাহলে হয়তো দিয়া লেখাপড়া করতো, কিন্তু ও মন থেকে চাই না। তাই আহ্লাদী হয়ে বললো
দিয়া- ভালোবাসি প্রিয়।
অগ্নি – ভালোবাসি পিচ্চি।

দিয়া চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো অগ্নি। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো দিয়া।
প্রতিদিনের মতো অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে অগ্নি, আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে। রুমে আসতেই থমকে গেলো দিয়া, লোকটাকে সবসময় সুন্দর লাগে, ফর্মাল লুকে অসাধারণ লাগছে। আয়নায় দিয়াকে দেখে মুচকি হাসলো অগ্নি। হঠাৎ খেয়াল করলো দিয়া পড়ে যাচ্ছে, অগ্নি দৌড়ে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরলো, ততোক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে দিয়া। অস্থির হয়ে গেলো অগ্নি,, একহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে গাল রেখে ডাকছে,
অগ্নি – দিয়া, এ দিয়া, কি হয়েছে, চোখ খুলো লক্ষ্মী। তোমার শরীর খারাপ লাগছে বলো নি কেন??

অগ্নি অনেক ডাকার পরও দিয়ার কোন সাড়াশব্দ নেই, দিয়ার মাথা টা বুকের সাথে চেপে ধরলো, বুকের ধুকপুকানি কয়েকশো গুণ বেড়ে গেছে, হঠাৎ করেই দিয়া হাত রাখলো অগ্নির বুকের বাঁ পাশে।
দিয়া- শান্ত হোন, আমি ঠিক আছি।
অগ্নি কিছুখন ওইভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখে, হঠাৎ করেই দিয়াকে কোলে তুলে নেয়, আকষ্মিক কোলে নেওয়াতে দিয়া অগ্নির গলা জরিয়ে ধরে,

দিয়া- কি করছেন আপনি, নামান বলছি।
অগ্নি দিয়ার কথা না শুনে ওকে বেডের উপর বসিয়ে দিলো, চিন্তিত স্বরে বললো
অগ্নি – শরীর বেশি খারাপ লাগছে, মাথা ঘুরছে? আমাকে বলো নি কেন?? চলো ডাঃ কাছে নিয়ে যাবো।
দিয়া চোখ মেরে বলে
দিয়া- আপনার এমন হট লুক দেখেই তো আমার মাথা ঘুরছে, হায়,, আমি মনে হয় আবার জ্ঞান হারাবো, কে বলেছে আপনাকে এতো হ্যান্ডসাম হতে??
বলেই অগ্নির চুলগুলো সব এলোমেলো করে দিলো, অগ্নিকে আবাক হলো, আর একটু হলে ওর প্রাণপাখি উড়ে যেতো, আর এ মেয়ে মজা করছে।

অগ্নি – পড়ে গিয়ে যদি ব্যাথা পেতে তখন কি হতো। এমন মজা আর করবে না লক্ষ্মী।
দিয়া- আপনি সামনে থাকতে আমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবো, সেটা কি আদৌও সম্ভব নাকি। আর এমন মজা আমি একশোবার করবো। বুঝেছেন ডিয়ার জামাই,,,,
অগ্নি – আচ্ছা একশোবার মজা করো, সমস্যা নাই। কিন্তু খেয়াল রাখবে আমার বৌ পাখি যাতে কোন ব্যাথা না পায়।
দিয়া- শুনুন আজকে এভাবেই অফিস যাবেন, চুলগুলো এলোমেলো থাক, এতো সেজেগুজে অফিস যাওয়া লাগবে না।

অগ্নি একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো,
অগ্নি – ঠিক আছে মহারানী,
দিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে, অগ্নিকে ফটাফট কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো। যখন বুঝতে পারলো কি করছে, তখন অগ্নির বুকেই মুখ লুকালো,,,,

অগ্নি – লজ্জা পাওয়ার শেষ হলে এবার মুখ টা তুলো,,
দিয়া- উঁহু।
অগ্নি – অফিস যাবো না, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
দিয়া অগ্নির বুক থেকে মুখ তুলে, মাথা নিচু করে রেখেছে,
দিয়া- সাবধানে যাবেন, তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।
অগ্নি- ঠিক আছে, আসি তাহলে আমি।
অগ্নি উঠে দাঁড়াতেই, দিয়া চিল্লিয়ে বলে

দিয়া- একমিনিট, একমিনিট
অগ্নি – কিহ্
দিয়া- আপনি এভাবে যাবেন?
অগ্নি – হুম।
দিয়া- নাহ্, চুলটা আঁচড়ে নিন, এলোমেলো চুলে আপনাকে আরো বেশি কিউট লাগছে, এভাবে বাইরে যেতে পারবেন না।
অগ্নি- পাগলি একটা,

চুল ঠিক করে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হওয়ার আগে প্রতিদিনের মতো দিয়াকে জড়িয়ে ধরে রাখে কিছুখন, কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে তারপর বাসা থেকে বের হয়।
দিয়া আর সুপ্তি ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে গল্প করছে, দুজনের মধ্যে ভালো ভাব হয়েছে, ওদের সম্পর্ক টা তুমি থেকে তুই হয়েছে। আজ টপিক হচ্ছে, স্বামী স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া হলে ভালোবাসা বাড়ে, সুপ্তি তুলছে এ টপিক , অভিজ্ঞদের মতো দুজনের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে,,,

সুপ্তি- আমার কাকাতো ভাই আর বৌদির মধ্যে তুমুলঝগড়া হয়, সবাই তো ভাবে আর বুঝি কারো মুখ কেউ দেখবে না, কিন্তু হয় তার উল্টো।
দিয়া- কি হয়??
সুপ্তি- ঝগড়ার আগে যতোটা মাখোমাখো প্রেম থাকতো, ঝগড়ার পরে পুরোটা মাখন হয়ে যায়। জামাই বৌ সারাদিন চিপকে থাকে, আহ্ দেখো ও শান্তি লাগে। তাদের প্রেম আরো বেড়ে যায়।
দিয়া- তাই

সুপ্তি – হুম, আচ্ছা দিয়া তুই তোর জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করিস না।
দিয়া মুখটা কালো করে বললো
দিয়া- নাহ,

সুপ্তি- কেন,, মাঝে মাঝে ঝগড়া করা ভালো। সম্পর্কে টক,মিষ্টি, টক সবকিছুর প্রয়োজন।
দিয়া- কিভাবে ঝগড়া করবো, উনি তো তেমন কিছু করেই না, উল্টো আমি করতে চাইলেও উনি সব পন্ড করে দেয়, আমি তো কতো আগ থেকে ঝগড়া করার বাহানা খুঁজছি, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। তুই জানিস আমার কতো দিনের ইচ্ছা উনার সাথে ঝগড়া করবো।

সুপ্তি- দাঁড়া আজকে তোর ইচ্ছা পূরণ হবে,,
দিয়া- কিভাবে??
সুপ্তি কিছুখন ভেবে বাঁকা হেসে দিয়াকে কিছু একটা বললো,
দিয়া- তুই শিওর,কাজ হবে
সুপ্তি- কাজ হবে না দৌড়াবে, বাহির থেকে আসলে এমনিতেও পুরুষ মানুষের মাথা গরম থাকে,তারপর রুমে এসে যখন এ অবস্থা দেখবে,তখনি দেখবি রাগ উঠে যাবে। আর তুই সেটাকেই কাজ লাগিয়ে দিবি। ছোটখাটো একটা যুদ্ধ হয়ে যাবে।

প্রত্যেকদিন একবার ডোরবেল বাজতেই দিয়া এসে দরজা খুলে দেয়, সেখানে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত অগ্নি ডোরবেল বাজাছে, কিছুখন পর দিয়া হেলেদুলে এসে দরজা খুলে দিলো, ভাবটা এমন ঘুম থেকে উঠে এসেছে। অগ্নি কিছু বলার আগেই দিয়া বললো
দিয়া- এতোবার বেল বাজাছেন কেন, আপনার জন্য আমার কাঁচা ঘুম টা ভেঙে গেলো।
দিয়া মনে মনে হাসছে, আবার মনে হয় অগ্নি রেগে যাবে, এতোখন দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকলে রাগ করাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু হলো কি,,,

অগ্নি- সরি বউপাখি, আমি তো জানতাম না তুমি ঘুমাচ্ছো, জানলে একবার ও বেল বাজাতাম না, আমার বউয়ের ঘুম না ভাঙ্গা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতাম।
অগ্নির এমন কথা শুনে দিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে ভিতরে চলে গেলো। অগ্নি মনে হয় তার বউয়ের মনোভাব কিছুটা বুঝতে পেরেছে। রুমে গিয়ে দেখে দিয়ার আলমারির সামনে দাড়িয়ে আছে, অগ্নি গেঞ্জি আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেছে। মিনিট দশেক পর বেরিয়ে এলো, রুমে আসতেই দেখলো পুরো ফ্লোর জুড়ে তার জামা কাপড় পড়ে আছে, দিয়া আলমারি থেকে সব ফেলে দিয়েছে।

দিয়া- শুনুন আলমারিতে জায়গা নেই, আপনার শার্ট প্যান্ট অন্য কোথাও রাখুন। আমার জামা কাপড় রাখতে অসুবিধা হচ্ছে তাই সব ফেলে দিয়েছি।
এমন কথা শুনে অগ্নি দিয়ার কাছে এগিয়ে এলো, হাত উঠাইতে দিয়া চোখ বন্ধ করে নেই। মনে মনে বলে
দিয়া- উনি কি খুব রেগে গেছে? মারবে আমাকে?? দিয়ার এসব ভাবনার মধ্যেই গালে শীতল হাতের স্পর্শে চোখ খুলে

অগ্নি – কি হয়েছে দিয়া,,
দিয়া কিছুটা ভয়ে ভয়ে বললো,
দিয়া- আলমারিতে জায়গা নেই তাই ফেলে দিয়েছি আপনার সব জামা কাপড়।
অগ্নি – ভালো করেছো,,, আগে বলো নি কেন, তাহলে আমি নতুন একটা আলমারি নিয়ে আসতাম।
অগ্নি এমন কথা শুনে দিয়ার মাথায় হাত ও কি ভেবেছে আর কি হলো, এবার আর সহ্য করতে না পেরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো,,

অগ্নি – কি হয়েছে, আমি আবার কিছু ভুল করেছি নাকি। তাহলে সরি সোনা, প্লিজ কান্না করে না।
দিয়া- আপনি একটা পঁচা লোক,,,
অগ্নি – আচ্ছা, বলবে তো কি করেছি আমি, না বললে ভুল শুধরে নিবো কিভাবে??
দিয়া- আপনি আমাকে একটুও বকা দেন না, ঝগড়া ও করেন না আমার সাথে।
অগ্নি – শুধু শুধু বকা কেন দিবো আমার লক্ষ্মী বউকে?? আমার বউপাখি কি বকা খাওয়ার মতো কোন কাজ করেছে নাকি??

দিয়া- বকা খাওয়ার মতো দুইটা কাজ করেছি আজকে, আপনাকে ইচ্ছা করে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি, এখন সব জামা কাপড় ও ফেলে দিয়েছি। আপনার উচিৎ ছিলো আমাকে বকা দেওয়া, তারপর ঝগড়া করতাম আমরা দুজন মিলে।
অগ্নি এবার শব্দ করেই হেসে দিলো, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়তমাকে,,
অগ্নি – বউকে শুধু ভালোবাসা যায়, বকা দেওয়া যায় না। আর ঝগড়া তো অনেক দূরের কথা।
দিয়া- ঝগড়া করলে ভালোবাসা বাড়ে, সুপ্তি বলেছে।

এতোখনে অগ্নি বুঝতে পারলো, তার পিচ্চি বউয়ের মাথা এসব বুদ্ধি কে দিয়েছে। অগ্নি দিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বেড গিয়ে বসলো, দিয়াকে ইশারায় সামনে আসতে বললো, দিয়া আসা মাত্র ওকে একটানে কোলের উপর বসিয়ে দিলো, দিয়া টাল সামলাতে না পেরে অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরলো,

অগ্নি- আমি তোমাকে বকতে পারবো না, শুধু ভালোবাসতে পারবো। ঝগড়া করে ভালোবাসা বাড়ানো প্রয়োজন নেই। এমনিতে প্রতিনিয়ত তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়েই যাচ্ছে,, তুমি যে আমার বড্ড আদরের। তোমাকে বকা দিলে তো সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমার লাগবে। বড্ড বেশি ভালোবাসি প্রিয়তমা।।
বলেই দিয়ার নাকে একটা চুমু দিলো,, দিয়া এখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,,

প্রেম পরিণয় পর্ব ১০

অগ্নি – কি হলো??
দিয়া- ভাবছি আপনার নাম অগ্নি কে রাখছে, পুরাই নামের বিপরীত। অন্য কোন নাম রাখা দরকার ছিলো,, যেমন ধরেন, শান্ত, প্রান্ত এমন কিছু।
অগ্নি – উঁহু, এই নামই ঠিক আছে। দিয়ার অগ্নি,,
দিয়া বিড়বিড় করে বলে,
দিয়া- অগ্নির দিয়া,,,,,

প্রেম পরিণয় পর্ব ১২