প্রেম পরিণয় পর্ব ১২

প্রেম পরিণয় পর্ব ১২
রাজশ্রী মজুমদার রাই

দেখতে দেখতে অগ্নি দিয়ার বিয়ের আট মাস পূর্ণ হলো, স্বপ্নের মতো কাটছে ওদের দিন গুলো। দিয়াকে ভালোবাসা চাদরে মুড়িয়ে রাখে অগ্নি। অফিসে বসে কাজ করছে অগ্নি, এমন সময় ফোন বেজে উঠে , স্কিনে শান্তি দেবীর নাম্বার। অদ্ভুত ভাবে এ কয়েক মাসে একবারও অগ্নিকে বাসায় যেতে বলে নি তিনি। আদিত্য রায় বললেও উনি বলেছে এখন আসতে হবে না, দিয়ার চলে যাওয়াতে ছেলে খুব কষ্ট পেয়েছে। তাই নিজেকে সামলে নেওয়ার সময় দিচ্ছে। ফোনে সবসময় কথা হয় ছেলের সাথে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মায়া মিশ্রিত স্বর এলো

শান্তি দেবী – কেমন আছিস বাবা?
অগ্নি – ভালো আছি মা,, তুমি কেমন আছো?
শান্তি দেবী- আমিও ভালো আছি, দুপুরে খেয়েছিস বাবা??
অগ্নি – হ্যাঁ মা, কিছুখন আগেই খেয়েছি।
শান্তি দেবী – কি রান্না করে দিয়েছে আজকে আমার বৌমা??
অগ্নি- মাছের ঝাল,ভাজা আর ডাল।
শান্তি দেবী – তো কেমন আছে আমার বৌমা??
অগ্নি – ভালো আছে ও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হঠাৎ করে কি বলে ফেললো, সেটা বুঝতে পেরে অগ্নি চুপ করে রইলো, মায়ের পাশে বসে হাসছে অভি। এবার শব্দ করেই হেসে দিলো শান্তি দেবী।
অগ্নি – মা,,
শান্তি দেবী – কি ভেবেছিস, আমি কিছু জানি না।
অগ্নি – মা আসলে,,
শান্তি দেবী – তোর আসলে নকলে সব ঢাকায় এসে শুনছি। তুই তো আর বলছি না, তাই আমি নিজে থেকেই আসবো।

অগ্নি – সত্যি মা, কবে আসবে।
শান্তি দেবী – পরশুদিন আসছি।
দিয়া সুপ্তির পিছনে ছুটছে, ধরতে পারলো আজকে সুপ্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ছাড়বে।
দিয়া- দাঁড়া বলছি, বদমাইশ মাইয়া, আজ তোর চোখ খুলে আমি লুডু খেলবো।
সুপ্তি- দাঁড়াবো কেন?? তুই পারলে ধরে দেখা।

এদের দুজনের ছোটাছুটি মধ্যে অগ্নি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কিছুখনের আগের অফিস থেকে এসেছে সে। তবে আজ দরজা খুলে দিয়েছে সুপ্তি,দিয়ার আগেই রান্নাঘর থেকে ছুটে এসেছে ও। অগ্নি ভেতরে ঢুকতেই দেখে দিয়া রেগে আগুন হয়ে তাঁকিয়ে আছে, রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করতেই সুপ্তি বলে
সুপ্তি – ওয়াও অগ্নি দা, আপনাকে কি কিউট লাগছে। একটা বেডা মানুষ যে এতোটা সুন্দর হয় আপনাকে না দেখলে জানতামই না।

এই কথায় দিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে সেই থেকে সুপ্তির পিছনে ছুটছে,
দিয়া- বেয়াদব মাইয়া, আমার জামাইয়ের দিকে নজর দিস,, আজ তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে।
সুপ্তি- নজর তো অনেক আগেই দিয়েছি,,, অগ্নি দা ঠিকই জানে আমি তাকে কি নজরে দেখি,
বলেই অগ্নির পিছনে গিয়ে দাড়ালো, দিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে সামনে দাড়িয়ে বলে
দিয়া- বের হও বলছি আমার জামাইয়ের পিছন থেকে। একদম টাচ করবি না উনাকে।
সুপ্তি অগ্নির পিছন থেকে মাথা বের করে ভেঙচি দিয়ে বলে
সুপ্তি- করলে কি করবি, এ দেখ টাচ করেছি।

বলেই হালকা করে অগ্নি শার্ট ধরলো। দিয়া পারলে চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দিতে। অগ্নি পরিস্থিতি সামলাতে বলে
অগ্নি- সুপ্তি আমাকে বড় ভাইয়ের নজরে দেখে, তাই না সুপ্তি।
সুপ্তি- সেটা এ শাঁকচুন্নি বুজলে তো।
দিয়া- কোন পাতানো বোনকেও আমি আপনার পাশে সহ্য করবো না। ওর মতলব ভালো না। প্রথমে ভাই বানাবে তারপর অন্য কিছু।
সুপ্তি- সবাইকে নিজের মতো মনে করিস নাকি,,,

এ কথা শুনে দিয়া তেড়ে আসতেই অগ্নি পিছন থেকে ঝাপটে ধরেছে, দিয়া হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে,
দিয়া- ডাইনি, শাঁকচুন্নি তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবে। ছাড়ুন বলছি আমাকে।
সুপ্তি ভীষণ মজা পাচ্ছে দিয়াকে রাগিয়ে, ও মাঝে মাঝেই এমন করে। অগ্নি ভালোই বুঝতে পারছে সুপ্তিকে আজকে হাতে ফেলে একটা চুলও মাথায় রাখবে না, সব ছিঁড়ে দিবে । তাই দিয়াকে শান্ত করার জন্য নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো, দিয়ার পিঠ অগ্নির বুকের সাথে মিশে আছে, দিয়ার কানে ফিসফিস করে বলে
অগ্নি – ভালোবাসি পিচ্চি, অসম্ভব ভালোবাসি।

মুহূর্তে শান্ত হয়ে গেলো দিয়া, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাই অগ্নির দিকে,, দুজন তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। এ সুন্দর মুহূর্ত স্মৃতিতে বন্দী করলো সুপ্তি। ছবি তোলার শব্দে দুজনেই দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাই। সুপ্তি আরো কয়েকটা ছবি তুলে নিলো ওদের। তারপর একগাল হেসে বলে,,
সুপ্তি- কারো নজর না লাগে যেন।

দিয়া- তুই তো নজর দিস আমার জামাইয়ের দিকে।
সুপ্তি- ওই আমাকে কি তোর তাড় ছিঁড়া মনে হয় নাকি,, যে বিবাহিত বেডার দিকে নজর দিবো। শুন হিংসুটে মাইয়া, তোর জামাই কে আমি বড় ভাইয়ের নজরে দেখি।
দিয়া এখনো কোণা চোখে তাকিয়ে আছে সুপ্তির দিকে,, তা দেখে সুপ্তি আবার বলে
সুপ্তি – মেরি মা, আব তেরা জেলাসি কমা,,,,

সুপ্তির এমন হিন্দি বাংলার মিশ্রণ শুনে হেসে দিলো অগ্নি দিয়া।
রুপালি থালার মতো পূর্ণ চাঁদ টাকে আকাশে বুকে বিশালতা এক উপমা মনে হচ্ছে, এই সৌন্দর্যের সাক্ষী হচ্ছে একজোড়া কপোত-কপোতী, বারান্দায় বসে চন্দ্র বিলাস করছে তারা, একজন চাঁদ দেখায় মগ্ন তো অন্যজন মগ্ন তার ব্যক্তিগত চাঁদ দেখায়। অগ্নির মনে হচ্ছে চাঁদের আলো মুখে পড়ায় তার প্রেসয়ীয় সৌন্দর্য দ্বিগুন বেড়ে গেছে। দুচোখ ভরে দেখছে প্রেয়সীকে। হঠাৎ দিয়ার চোখ পড়ে অগ্নির দিকে

দিয়া- কি দেখছেন?
অগ্নি- তোমাকে।
দিয়া- সবসময় কি দেখেন এতো??
অগ্নি- ভালোবাসার মানুষকে দুচোখ ভরে দেখার মতো শান্তি আর কিছুতে নেই।
দিয়া চেয়ে আছে তার প্রিয় পুরুষের দিকে, মাথা রাখলো অগ্নির বুকে, পরম যত্নে আগলে নিলো প্রিয়মতাকে। দিয়া অগ্নির বুক থেকে মুখ তুলে বললো
দিয়া- আপনার দিকে তাকালে আমি আত্নার শান্তি খুঁজে পাই। ভালোবাসি প্রিয়,,,
অগ্নি- ভালোবাসি প্রিয়তমা।

দিয়া- আপনার ছায়ার পাশেও কাউকে সহ্য হয় না আমার। আমি জানি সুপ্তির মনে আপনাকে নিয়ে কিছুই নেই। তারপর ও কেন আমি এমন করি, সহ্য হয় না আমার। আপনার রাগ হয়, আমি এমন করি যে??
অগ্নি- তুমি আমাকে ভালোবাসো বলেই আমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারো না। সেটা যেই হোক বা তার যতই ভালো উদ্দেশ্য থাকুক।আমার রাগ হয় না উল্টো নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আমি তো অবুঝ না, বুঝি আমার পিচ্চির ভালোবাসা।

দিয়া- আমি অবুঝ হবো, আপনি বুঝিয়ে দিবেন, আমি ঠিক বুঝে নিবো। আপনি আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখেন, আমি সারাজীবন আপনাকে ভালোবেসে যাবো।
অগ্নি- আমি যদি পুরানো হয়ে যায়??
দিয়া- আপনি কখনো পুরোনো হবেন না প্রিয়, আমি প্রতিদিন আপনাকে নতুন করে ভালোবাসবো।
অগ্নি- পাগলি একটা।
দিয়া- একটা গান শুনাবেন??
অগ্নি- আমি আর গান,,,,
দিয়া – প্লিজ,,
অগ্নি- আচ্ছা।

অগ্নি- (গান) চলতি সময় থমকে দাঁড়ায়,জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি তাই, তোমারি হাত ধরতে চাই, ফাগুন হওয়াররর,, কি মায়ার কোণ, সে নেশায়, বারেবারে মন ছুঁতে চায়, চেনা মুখ ঘুরপাক খায় চোখের পাতায়, আমি বারবার বহুবার তোমাকে চাই, আমি বারবার হাজার বার তোমাক চাই। আমি বারবার বহুবার তোমাকে চাই, আমি বারবার হাজার বার তোমাকে চাই।

গান শেষ করে দিয়ার দিকে চেয়ে দেখে, ঘুমিয়ে গেছে, অগ্নি হাসলো,, আকাশে দিকে তাকিয়ে আপন মনে বলে
অগ্নি – ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তা, এতোটা সুখ আমার দেওয়ার জন্য।
আজ অফিস থেকে এসে একবার ও দিয়াকে দেখে নি অগ্নি, দরজা অভি খুলে দিয়েছে। লেবুর শরবত বানিয়ে শান্তি দেবীর হাতে পাঠিয়েছে। অগ্নি ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে চারপাশে খুঁজে ও কাঙ্খিত মানুষটিকে পায় না। রান্নাঘরে দিকে যাওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে, অগ্নি দরজার দিকে যেতেই অভি বলে

অভি- আমি দেখছি, তোমাকে মা ডাকছে।
অগ্নি – মা কোথায়?
অভি- পাশের রুমে।
অগ্নি ভাবে হয়তো দিয়াও আছে সেখানে তাই চলে যায় পাশের রুমে। অভি দরজা খুলতেই দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,

সুপ্তি- দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কে,,,,
আর বলতে পারলো না, ওপাশে দাঁড়ানো সুদর্শন যুবকের দিকে চোখ আঁটকে গেলো, সামনে দাঁড়ানো রমণীর এমন চাহনি দেখে ভ্রুঁ কুচঁকে তাকায় অভি।
অভি- কাকে চায়??
সুপ্তি আনমনে বলে,
সুপ্তি- আপনাকে..
অভি- কিহ্

সুপ্তি কি বললো সেটা বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে বলে??
সুপ্তি- দি য়া,,,, মানে দিয়াকে চায়।
অভি দরজা থেকে সেরে গিয়ে, ভেতরে ঢুকার জায়গা করে দিলো, সুপ্তি ভেতরে ঢুকতেই, গম্ভীর কণ্ঠে বলে
অভি- দিয়া কিচেনে আছে।
অগ্নি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে ও দিয়াকে পেলো না, অগ্নি মনোভাব বুঝতে পেরে হাসলেন শান্তি দেবী
শান্তি দেবী – দিয়া কিচেনে।

অগ্নি মায়ের কথা শুনে লজ্জা ফেলো, প্রসঙ্গ বদলে বলে
অগ্নি – মা, তোমার হাটুর সমস্যা বেড়েছে আমাকে আগে বলো নি কেন? আরো আগে ডাঃ দেখানো দরকার ছিলো।
শান্তি দেবী- একটু বেড়েছে তাই তো চলে আসলাম। তবে সত্যি কথা বলতে আমি কিন্তু আমার পুত্রবধূকে দেখতে এসেছি। আমার ছেলে তাে বললো না।
মেকি রাগ দেখিয়ে বলে

অগ্নি – সরি মা, আমি ভেবেছি তুমি রাজি হবে না। বাবার মতো তুমি ও অমত করবে।
শান্তি দেবী – আমার কাছে সবার আগে তোর সুখ। মা যে সন্তানের সুখের জন্য সব নিয়ম ভাঙতে পারে। আর দিয়া বরাবরই আমার পছন্দের ছিলো। এমন একটা মেয়েকে তো আমার ছেলের পাশে দেখতে চেয়েছি।
অগ্নি মাকে জরিয়ে ধরে,, শান্তি দেবী ও ছেলের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দেয়।
শান্তি দেবী – তোরা সুখী হও।

অগ্নি – জানো মা আমি কখনো ভাবি নি পিচ্চি দিয়া টা এতোটা সংসারী হবে। এই আট মাসে কখনো কিছু আবদার করে নি, মুখ ফুটে কিছু চাই না।
শান্তি দেবী – তনুর মেয়ে ও,, তোর পিসিমনির দেওয়া শিক্ষা আছে ওর মধ্যে। দেখ না, আমাকে রান্নাঘরে থাকতেই দিলো না জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
অগ্নি – ঠিকই করেছে তোমার বৌমা।

শান্তি দেবী হাতে মাঝারি সাইজের একটা বক্স খুলতে খুলতে বললো,
শান্তি দেবী – এগুলো দেখ, তোর ঠাম্মি রেখে গেছে তোর বৌয়ের জন্য।
হাতের বালা গুলো দেখাতে দেখাতে বলে
অগ্নি – আমি দেখে কি করবো?? এসব লাগবে না ওর।
শান্তি দেবী – এটা তোর ঠাম্মির আর্শীবাদ। আর ও রায় বাড়ির বড় বউ। এগুলো দিয়ার প্রাপ্য।
অগ্নি – কিন্তু মা,,,

শান্তি দেবী – কোন কথা শুনতে চাই না আমি। তুমি আজ এগুলো পড়িয়ে দিবে।
অগ্নি- তুমি এনেছো যখন তুমি দাও।
শান্তি দেবী- দিয়েছিলাম আমি, কিন্তু বললো তোর
অনুমতি ছাড়া নিতে পারবে না। আমি মুখ দেখে যেটা দিয়েছি, ওটাই রেখেছে।
অগ্নি ভীষণ খুশি হলো, মায়ের মন ও রেখেছে আবার স্বামীর দিকও ভেবেছে, এ মেয়েটা ব্যবহার দিন দিন আরো বেশি মুগ্ধ করে অগ্নিকে।

সুপ্তি রান্নাঘরে আসে দিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,
সুপ্তি- কি রে এমন পেত্নী সেজেছিস কেন।
দিয়া- ইচ্ছা হয়েছে, পেত্নী সেজে তোর ঘাড় মটকাবো।
সুপ্তি- আমার তো মনে অন্য কাউকে হার্ট অ্যাটাক দেওয়ানোর জন্য এমন সাজ। বেচারা আজকে এ রুপের আগুনে না ঝলসে যায়। বল না এমন সাজের কারণ কি, না হওয়া ফুলশয্যা টা আজকে হবে নাকি??
দিয়া- একদম বাজে বকবি না, শাশুড়ি মা সাজিয়ে দিয়েছে।
সুপ্তি- তোর শাশুড়ি তো দেখি খুব পাষাণ, ছেলের দিক টা চিন্তা করলো না, এ সাজ দেখে যে উনার ছেলেই বেহাল দশা হবে।

দিয়া- ওই বাজে কথা বন্ধ করবি,,
এসব কথায় দিয়া ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে,,, তা দেখে সুপ্তি মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,,
সুপ্তি- বাহ্ লজ্জায় তো লাল হয়ে যাচ্ছিস, অগ্নি দা যদি দেখতো এখন, তাহলে কি হতো ইস,,
দিয়া- কিছুই হতো না, যা তো এখান থেকে।
সুপ্তি- আচ্ছা শুন না,,
দিয়া- শুনছি, বল তুই।
সুপ্তি- আজকে দরজা খুলেছে যে হ্যান্ডসাম,,,,,

পুরো কথা শেষ করার আগেই দিয়া হাতের খুন্তি টা সুপ্তির দিকে তাক করতেই সুপ্তি চোখ বড়বড় করে চিল্লিয়ে বলে,,
সুপ্তি- ওই সরা এটা, আগে পুরো কথা শুন।
দিয়া এখনো চোখ গরম করে তাঁকিয়ে আছে,,
সুপ্তি- বিশ্বাস কর, আমি অগ্নি দার কথা বলি নি। অগ্নি দার সাথে আমার দেখায় হয় নি।
দিয়া- তাহলে,,

সুপ্তি- ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটার কথা বলছি,, কি সুন্দর রে, প্রথম দেখায় ক্রাশ খাইছি। লুতুপুতু টাইপের না, মনে হলে খুব রাগি, কন্ঠস্বর গম্ভীর। একদম আমার মনের মতো।
দিয়া এতোখনে বুঝতে পারলো অভির কথা বলছে, তাই বললো
দিয়া- ওইদিকে একদম যাবি, এক থাপ্পড়ে চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দিবে, যে রাগ দাদাভাইয়ের।
সুপ্তি- তোর ভাই??

দিয়া- হুম, আমার দাদাভাই। আমার শাশুড়ির ছোট ছেলে।
সুপ্তি – উনি তোদের বিয়ে দিয়েছে, এটাই তোর ম্যাজিশিয়ান??
দিয়া- হুম।
সুপ্তি- দিয়া, আমার, জানু, সোনা, লক্ষ্মী তুই।
দিয়া- পাম না দিয়ে সরাসরি বল,,,
সুপ্তি- একটু লাইন করিয়ে দে না,তোর ভাইয়ের সাথে।

দিয়া- তোর মতো চুল্লি কে আমি লাইন করিয়ে দিবো, যা ভাগ এখান থেকে।
সুপ্তি মুখ কালো হয়ে গেছে, তা দেখে দিয়ার বেজ লাগছে, এতোদিন তাকে অনেক জ্বালিয়েছে আবার একটু একটু করে শোধ নিবে সে। সুপ্তি চলে যেতে নিলে আবার বলে
দিয়া- ওই পাশের রুমে আমার শাশুড়ি আছে, কেউ যদি তাকে পটাতে পারে, তাহলে তার রাস্তা কিছুটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

এটা শুনেই সুপ্তি আবার দিয়ার কাছে এসে খুশিতে জরিয়ে ধরে,,,
সুপ্তি – লাভ ইউ জানু।
সুপ্তি চলে যেতেই অগ্নি এসে দাঁড়ায়, দিয়াকে দেখেই থমকে গেলো,,বার কয়েক ফাঁকা ঢোক গিললো,, লাল সবুজ মিশ্রণে একটা শাড়ি পড়েছে, সাথে হালকা গহনা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। অগ্নি নিজেকে স্বাভাবিক করে দিয়ার থেকে কিছুটা দূরত্বে দাড়ায়,,
অগ্নি – ম্যাডাম কি বেশি ব্যস্ত, আজ অফিস থেকে আসার পর থেকে একবারও দর্শন পেলাম না,
দিয়া মিষ্টি হেসে বললো

দিয়া- সরি স্যার, একটু ব্যস্ত ছিলাম, তাই আপনাকে দর্শন দিতে পারি নি।
অগ্নি – আপনার কাজে আমি কি হেল্প করতে পারি।
দিয়া- উঁহু,, কাজ শেষ। আপনি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসুন আমি আসছি।
অগ্নি এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, দিয়া জিজ্ঞাসু চোখে তাঁকায়, অগ্নি হাত বাড়িয়ে দেয়, দিয়াও নিজের হাতটা রাখে অগ্নির হাতে। দুরত্ব ঘুচিয়ে কাছে টেনে নেয় দিয়াকে, কপালের লেপ্টে থাকা চুল গুলো কানে গুঁজে দেয়, কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বের হয়ে যায় অগ্নি। মুচকি হাসে দিয়া।

ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছে দুই ভাই, দিয়া আর সুপ্তি চা আর পাকোড়া নিয়ে এলো, দিয়া এক কাপ চা আর পাকোড়া নিয়ে শান্তি দেবী রুমের দিকে গেলো, সুপ্তি কিছু না ভেবেই অগ্নির পাশে বসে পড়লো, হায় সামনে বসা সুদর্শন যুবকে দেখে বুকের ধুকপুকানি আবারও বেড়ে গেলো। দিয়া শাশুড়ির রুম থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলো সামনে তাকিয়ে মিলিয়ে গেলো সে হাসি,,, রাগে গজগজ করতে করতে সুপ্তিকে বলে

দিয়া- ওই তোর সমস্যা কি?? বসার জায়গার কি অভাব পড়ছে নাকি, যে আমার জামাইয়ের পাশে বসতে হবে।
সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো সুপ্তি, মুখটা কালো করে রাখলো,, অভি মুখটিপে হাসছে, দিয়া অগ্নির পাশে বসে বললো,
দিয়া- সিঙ্গেল মানুষ চোখে দেখিস না, ওই যে দেখ আমার দাদাভাই পিওর সিঙ্গেল, তার সাথে বোস।
বলেই চোখ টিপ দিলো, সুপ্তি বুঝতে পারলো, এ মেয়ে বাঁশও দিচ্ছে আবার সুযোগ ও করে দিচ্ছে।

অভির পাশেই বসে পড়লো সুপ্তি, বারবার আড়চোখে দেখছে, ভয় পাচ্ছে পাশে বসে থাকা লোকটি যদি তার হৃদয়ের ধুকপুকানি শুনতে পায়। হার্ট টা যেন লাফ দিয়ে বের হয়ে আসবে, কি সুন্দর করে কথা বলছে, মাঝে মাঝে হাসছে, কিন্তু একবারও তাঁকাছে না সুপ্তির দিকে। সুপ্তি অসহায় চোখে তাঁকায় দিয়ার দিকে,এমন অবস্থা দেখে মিটমিটিয়ে হাসে দিয়া।
কিছুখন আড্ডা দিয়ে, দিয়া আর সুপ্তি উঠে শান্তি দেবী কাছে গেলো। অগ্নি অভিকে নিয়ে ওদের রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়,

অভি- বাহ্ বারান্দা তো খুব সুন্দর করে সাজিয়েছো দাদাই।
অগ্নি – আমি না, দিয়া সাজিয়েছে খুব যত্ন করে। ফুল গাছ গুলো নিজে হাতে লাগিয়েছে। আমি বাইরে থেকে যতোটা পরিপাটি ছিলাম ভিতর থেকে ততোটাই অগোছালো ছিলাম, দিয়া এসে সব টা গুছিয়ে দিয়েছে। এ বারান্দা টার মতো সুন্দর করে সাজিয়েছে আমার জীবন টাকে । আমার এ অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির জন্য তোর অবদান অনেক বেশি ভাই। তোরা কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
অভি- আমি কিছুই করি নি, তোমাদের ভালোবাসার জোরেই তোমরা এক হয়েছে। আমি ভীষণ খুশি দাদাই, তোমার সুখের সংসার দেখে।

অগ্নি – এবার কিন্তু তোর কথা রাখার পালা, আমি নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছি, এবার তোর পালা।
অভি- সামনের মাসেই জয়েন করছি, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে।
অগ্নি খুশি হয়ে ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলো।
রাত বারোটা, ধীর পায়ে রুমে আসলো দিয়া। অনেক বলে ও শান্তি দেবী কাছে ঘুমাতে পারে নি। শেষমেশ অভির রামধমক খেয়ে নিজের রুমে আসতে হলো। অগ্নি বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। দিয়া অগ্নির পাশে বসে ওর কাঁধে মাথা রাখে। অগ্নি আদুরে স্বরে বলে

অগ্নি- ক্লান্ত লাগছে।
দিয়া- উঁহু। আপনার কাজ কখন শেষ হবে??
অগ্নি – এইতো শেষ,,,
বলেই অগ্নি ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রেখে দিলো, একহাতে আগলে নিলো দিয়াকে। দিয়া চুপ করে অগ্নির বুকে পড়ে রইলো।
অগ্নি – কি হয়েছে??
দিয়া- কিছু না,,, ঘুমাবো।
অগ্নি – শাড়িটা চেঞ্জ করে আসো।
দিয়া- উঁহু।

অগ্নি – শাড়ি পড়েই ঘুমাবে?? অসুবিধা হবে না।
দিয়া- না।
অগ্নি – মন খারাপ??
দিয়া- হুম।
অগ্নি – কেন?
দিয়া- মামি ইয়ে মানে মামনির কাছে ঘুমাতে চেয়েছি আজকে। কিন্তু,,
অগ্নি – আমি কি দোষ করলাম??
এমন কথা শুনে অগ্নির বুক থেকে মাথা তুলে, মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
দিয়া- মানে??

অগ্নি- আমাকে ছেড়ে ওখানে ঘুমাতে চেয়েছো, তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হবে নাকি। কেন আমাকে রেখে মায়ের কাছে ঘুমাতে গেছো? আমার কাছে থাকতে ভালো লাগে না। অস্বস্তি হয় আমার কাছে থাকতে??
দিয়া- আমার শান্তি লাগে আপনার কাছে থাকতে।আর আপনি কি বললেন অস্বস্তি হয় আমার,, শয়তান লোক, বজ্জাত লোক। আমি তো শুধু দাদাভাই আর মামনির সুবিধার জন্য বলেছি। আর দাদাভাই ধমক দিয়েছে তাই মন খারাপ ছিলো।
অগ্নি সরি বলার আগেই, দিয়া চিল্লিয়ে বললো,

দিয়া- একদম কথা বলবেন না আমার সাথে।
বলেই উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লো, অগ্নি বুঝতে পারলো, বৌ তার ভীষণ রেগে গেছে। অগ্নি অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে, অনেক সময় পার হওয়ার পর ও দিয়ার ঘুম আসছে না, আর অগ্নির ও কোন সাড়াশব্দ নেই, দিয়া মনে মনে বললো
দিয়া- ঘুমিয়ে গেল নাকি??
দিয়া পাশ ফিরে তাঁকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো, অগ্নি এখনো সেভাবেই বসে আছে,, দিয়া আবারও উল্টো ফিরে বললো,

দিয়া- আলোর জন্য ঘুমতে সমস্যা হচ্ছে আমার।
অগ্নি উঠে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো,,, দিয়া আরো কিছুখন চেষ্টা করলো, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না। হঠাৎ করেই খুব কাছে অগ্নির অস্তিত্ব টের পেলো, আলতো হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কানে কাছে ফিসফিস করে বললো

অগ্নি – সরি লক্ষ্মী,, প্লিজ আর রাগ করে থেকো না। আমার ভুল হয়েছে, আর হবে না এমন ভুল, প্লিজ দূরে থেকো না। আমার বউপাখি ছাড়া যে বুকটা ভীষণ খালি খালি লাগে।
বলেই দিয়ার কানে ঠোঁট ছোঁয়ালো,, ঈষৎ কেঁপে উঠলো দিয়া,
দিয়া- ঢং করবেন না একদম,, আপনি আমাকে একটু দেখতে পারেন না।
অগ্নি- সত্যি??
দিয়া- হুম,,

অগ্নি দিয়াকে নিজের দিকে ফিরায়, চোখে চোখ রেখে বলে?
অগ্নি- এবার বলো,
দিয়া- কি,
অগ্নি- আমি তোমাকে দেখতে পারি না,,
দিয়া দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়,,
অগ্নি- মুখে বলো,
দিয়া- দেখতে পারেন না, আজকে ঠিক মতো দেখেছেন আমাকে??

অগ্নি- হুম দেখেছি,, দেখেই তো থমকে গেছি। ভাবলাম, আমার ঘরে পরী এলে কোথা থেকে, পরে বুঝতে পারলাম এটা আমার পিচ্চি পরী। খুব সুন্দর লাগছিলো তোমাকে।
দিয়া মুখ বাঁকালো,,, মনে মনে বললো
দিয়া- সুন্দর লাগছে যে, বউকে আদর করতে হয় সেটা জানিস না, ব্যাটা নিরামিষ কোথাকার, এই ব্যাটার পাল্লায় পড়ে আমার ক্রিকেট টিম বানানো স্বপ্ন আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে আর পূরণ হবে না।
অগ্নির বুকেই ঘুমিয়ে আছে দিয়া, অগ্নি আপন মনেই বলে,

প্রেম পরিণয় পর্ব ১১

অগ্নি – আমার পিচ্চি কি আমার তীব্র ভালোবাসা সহ্য করতে পারবে। এ পাগল প্রেমিকের পাগলামি সহ্য করার জন্য যে তোমাকে আরো একটু বড় হতে হবে। সময় হোক তোমাকে নিয়ে ভালোবাসার অতল সমুদ্রে পাড়ি দিবো।
বলেই দিয়ার আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৩