প্রেম পরিণয় পর্ব ১৩

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৩
রাজশ্রী মজুমদার রাই

শান্তি দেবী আর দিয়া বসে গল্প করছে, অভি বাইরে গেছে আর অগ্নি অফিসে। দিয়া তার শাশুড়ির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, উনি দিয়ার মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কথা বলছে, এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো, দিয়া বিরক্ত নিয়ে গেলো দরজা খোলে, সুপ্তি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিকর সুরে বলে
দিয়া- আমার সুখ কি তোর সহ্য হয় না, এখন আসতে হলো তোকে??
সুপ্তি মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

সুপ্তি- অগ্নি দার সাথে রোমান্স করছিলি নাকি? এ সময় তো বাসায় থাকার কথা না তাহলে,,
দিয়াকে ভালো একে একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলে,,
সুপ্তি- চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না রোমান্স করে আসছিস, সব তো ঠিকঠাকই আছে। তাহলে তোর কি সুখে ব্যাঘাত ঘটালো??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দিয়া- তোর মুখে কি এসব কথা ছাড়া আর ভালো কিছু আসে না। কতো সুন্দর সময় কাটাছিলাম মামনির সাথে।মামনি আদর করে দিচ্ছিলো আমাকে।
সুপ্তি মুখ বাঁকিয়ে বলে,
সুপ্তি- সর সামনে থেকে, জামাই রেখে শাশুড়ী আদর নিচ্ছে। বিয়ের এতো মাস হওয়ার পরও এখনো আনটাচড।
বলেই সোজা শান্তি দেবীর রুমে চলে গেলো, দিয়া নিজের কপাল নিজে চাপড়ায়, কোন কুক্ষণে যে এ মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেছে। যেদিন থেকে জানতে পেরেছে তার আর অগ্নির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হয়নি, সে থেকে কথায় কথায় দিয়ার ইজ্জতের ফেলুদা বানিয়ে দেয়।

শান্তি দেবীর ভীষণ পছন্দ হয়েছে সুপ্তিকে। মনে মনে অভির জন্য এমন একটা মেয়ে চেয়েছিলো উনি। দুই ছেলের বৌ তার সংসার মাতিয়ে রাখবো। তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, অগ্নি দিয়ার ঘর আলো করে তার নাতি নাতনি এলেই, দিয়াকে তার কাছে নিয়ে যাবে। নাতি-নাতনির মুখ দেখে আদিত্য রায় গলে যাবে। দিয়া আর সুপ্তি মিলে তার সংসারটা সুখে ভরিয়ে রাখবে।

এক সপ্তাহ থেকে চলে যায় শান্তি দেবী আর অভি। তবে শান্তি দেবী যাওয়ার আগে সুপ্তির মা-বাবার সাথে কথা বলে যায়। উনারা সম্মতি দিয়েছেন, শুধু বলেছেন অনার্স কমপ্লিট করার পর যাতে বিয়েটা হয়। শান্তি দেবী ও রাজি হয়ে যায়।
আর দুইদিন পর দিয়া আর অগ্নির বিয়ের একবছর পূর্ণ হবে। দিয়া গভীর ভাবনায় ডুবে আছে, কিভাবে অগ্নিকে সারপ্রাইজ দেওয়া যায়। সুপ্তির ডাকে দিয়ার ভাবনার সুতো কাটে,

সুপ্তি- কি রে, ভাবনা চিন্তা শেষ হলো।
দিয়া- হুম।
সুপ্তি- কি ভাবলি?
দিয়া কিছু বললো সুপ্তিকে, ও মন দিয়ে শুনে
দিয়া- কেমন হবে।
সুপ্তি- জাস্ট ফাটাফাটি।তুই যদি বলিস আমি রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিবো, ফুলসজ্জা টা ও হয়ে যাবে তোদের।
দিয়া সুপ্তির মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো

দিয়া- তোর মাথায় এসব ছাড়া আর কিছু আসে না।
সুপ্তি নিজের মাথা হাত বুলিয়ে, মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বলে
সুপ্তি- বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে, তুই এখনো ভার্জিন, এভাবে চলতে থাকলে আমি কাকি কবে হবো। দেখবি আমি কাকি হওয়ার আগে তুই জেষ্ঠী মনি হয়ে যাবি।
দিয়া- গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল, বিষয়টা এমন হয়ে গেলো না। এখনো বিয়ের খবর নাই উনি বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছে।দেখে নিস, তোর আর দাদা ভাইয়ের বিয়ের দিন, আমার মেয়েকে তোদের কাছে দিয়ে আমি পুরো বাড়িময় ছোটাছুটি করবো।

সুপ্তি- সমস্যা নাই, আমি তোর ছোট পুতুল টাকে কোলে নিয়েই বসবো বিয়ের পিঁড়িতে।
বলেই দুই বান্ধবী খিলখিল করে হেসে উঠলো, সুপ্তি খুব কৌতুহল হয়, দিয়া আর অগ্নির ব্যাপারে তাই হঠাৎ করে বলে,
সুপ্তি- শোন না, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো রাগ করবি না তো, আসলে আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয়।
দিয়া- রাগ করবো না, বল।
সুপ্তি- মানে, তুই আর অগ্নি দা তোরা কিভাবে থাকিস রে,, দুজন দুজনকে এতো ভালোবাসিস তারপর শারিরীক ,,,,
আর বলতে না দিয়েই দিয়া বললো,

দিয়া- ভালোবাসা তো আত্মার সাথে হয়, দেহের সাথে না। যা দেহের সাথে থাকে তা কেবল আকর্ষণ। উনি তো আমার আত্মার শান্তি। জনিস একটা মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে তার স্বামীকে ঘিরে। আমার ও ছিলো, আমি বলার আগেই উনি সেগুলো পূরণ করে দিয়েছে। আমার চুলে তেল লাগিয়ে দেয়, কখনো খোঁপা করে ফুল গুঁজে দেয়, আমাকে খাইয়ে দেয়, আমাদের বিয়ের পর থেকে প্রত্যেকটা রাতে আমাকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। অফিস যাওয়ার আগে বাহুডোরে আগলে নেই। ঘরের প্রত্যেকটা কাজে হেল্প করে, জানিস যখন পিরিয়ড চলে আমার, তীব্র ব্যাথা হয় তখন আমার থেকেও উনি বেশি ছটপট করে,বুকে আগলে রাখে। অফিস থেকে আসার সময় চকলেট, আইসক্রিম, ফুল, একদিন একটা নিয়ে আসে। সীমাহীন ভালোবাসা দিচ্ছে, আর ভালোবাসা থাকলে সেখানে শারীরিক ব্যাপার টা ম্যাটার করে না।

সুপ্তি অবাক হয়ে শুনছে, এতোটাও প্রখর ওদের ভালোবাসা, যেখানে কোন চাওয়া পাওয়া নেই, শুধু আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
সুপ্তি- খুব শান্তি লাগে আমার, তোদের ভালোবাসা দেখে। এমন ভালোবাসা যে দুর্লভ।
দিয়া হাসলো ওর এ হাসিতে ছিলো ভালোবাসার আভিজাত্য,,, সুপ্তি আবারও দুষ্টুমি করে বললো,
সুপ্তি- তারপরও একটু দুঃখ হয়,,, এতো আগুন সুন্দরী এখনো ভার্জিন। অগ্নি দা কেমন্নে কন্টোল করে নিজেকে।
দিয়া হতাশার শ্বাস ফেললো, কাকে বোঝালো এতোখন, খোঁটা ওকে সবসময় দিবে এ মেয়ে। দিয়ার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে শব্দ করে হেসে দিলো সুপ্তি।

দিয়া- হাসি বন্ধ কর না হলে, তোর দাঁতগুলো খুলে ইঁদুরের গর্তে দিয়ে আসবো।
সুপ্তি – আচ্ছা বন্ধ করলাম।
দিয়া- শুন, একটা নীল পাঞ্জাবি নিবো উনার জন্য। পাঞ্জাবি পড়া দেখি নি আমি ওনাকে।
সুপ্তি- তাহলে চল, মার্কেট থেকে ঘুরে আসি। পাঞ্জাবি আর যা যা প্রয়োজন সব নিয়ে আসবো।
দিয়া- আগে উনাকে বলে দেখি, যদি বলে তাহলে যাবো। না হলে তুই পছন্দ করে এনে দিস।
সুপ্তি-অগ্নি দা, তোকে কখনো বারণ করবে না। তুই কল দিয়ে বল, আমার সাথে বাইরে যাবি।
দিয়া- আচ্ছা।

অগ্নি হাতের ফাইল টা চেক করেই,ফোন হাতে নিয়েছে দিয়াকে কল করার জন্য, এমন সময় দিয়ার নাম্বার থেকে কল আসলো,,,
দিয়া- হ্যালো।
অগ্নি – হুম।
দিয়া- ফ্রী আছেন।
অগ্নি – মাত্রই ফ্রী হলাম, তোমাকে কল দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিতেই দেখি তুমি কল দিয়েছো।
দিয়া- তাই।
অগ্নি – হুম ম্যাডাম।

দিয়া- শুনুন না?
অগ্নি – বলুন না মহারানী।
দিয়া – আমি কি একটু সুপ্তির সাথে বাইরে যাবো। বেশি দূরে যাবো না, পাশেই,,,
অগ্নি – যাও,
দিয়া- তাড়াতাড়ি চলে আসবো,
অগ্নি – তাড়াতাড়ি আসতে হবে না পাগলি। সুপ্তি সহ মার্কেট থেকে ঘুরে এসো। দেরি হলে আমি আসার সময় নিয়ে আসবো দুজনকে।

দিয়া- সত্যি।
অগ্নি – হুম। আচ্ছা টাকা আছে তোমার কাছে??
দিয়া- হুম, মামনি দিয়ে গেছে যাওয়ার সময়।
অগ্নি – ওগুলো রেখে দাও, আলমারি বাম সাইটের ড্রয়ারে একটা খাম আছে ওটা নাও। ওখানে ১০০০০ হাজার টাকা আছে। সেটা নিয়ে যাও
দিয়া- আরে আমার এতো টাকা লাগবে না।

অগ্নি – নিয়ে যাও, লাগলে খরচ করো, না হলে রেখে দিবে।
দিয়া- আচ্ছা
অগ্নি – সাবধানে যাবে।
দিয়া- হুম।
অগ্নি – ভালোবাসি তোতাপাখি।
দিয়া মুচকি হেসে আড় চোখে সুপ্তিকে দেখে নেয়, তারপর আস্তে করে বলে
দিয়া- ভালোবাসি প্রিয়।

দিয়া আর সুপ্তি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো, দুজনেই প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে তারপর জেন্টস শো-রুমে ঢুকে, নীল পাঞ্জাবি কিনতে গেলেও দিয়ার চোখ আঁটকায় ডার্ক মেরুন কালার পাঞ্জাবিতে। ওর মনে হয় ডার্ক মেরুন কালার অগ্নিকে বেশি মানাবে৷ দুইটা শার্ট আর একটা পাঞ্জাবি নিলো। সুপ্তি বলে
সুপ্তি- তোর জন্য কিছু নিবি না। একটা শাড়ি নে।
দিয়া- নাহ্, আমার আলমারিতে এখনো চার-পাঁচ টা নতুন শাড়ি আছে।
কিনাকাটা শেষ করে বের হয়েছে মাত্র, এমন সময় অগ্নি কল দিলো,

দিয়া- হ্যালো
অগ্নি- কোথায় তোমারা??
দিয়া- এইতো মার্কেট থেকে বের হচ্ছি, আপনি কোথায়??
অগ্নি – আমিও মার্কেটে, সেকেন্ড ফ্লোরে আছি। তোমরা কই।
দিয়া- নিচে আছি।
অগ্নি – দাঁড়াও, আমি আসছি।
দিয়া- আচ্ছা,

সুপ্তি আর দিয়া দুজনেই দাঁড়িয়ে রইলো কিছুখন পর অগ্নি দেখা পেলো, হাতে দুটো শপিং ব্যাগ নিয়ে ওদের দিকেই আসছে। অগ্নিকে দেখেই দিয়ার চোখ জুড়িয়ে গেলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ওরা অগ্নির কাছে।
দিয়া- আপনি কখন আসলেন??
অগ্নি- অনেকক্ষণ হলো, আমি তো ভেবেছি দুজনকে সেকেন্ড ফ্লোরে পাবো৷ কিন্তু পেলাম না।
দিয়া- আমার নিচে ছিলাম।

সুপ্তি- আসলে দাদা আমাদের কাজ নিচে ছিলো,তাই সেকেন্ড ফ্লোরে যাই নি। তো আপনি কি কিনলেন??
অগ্নি হাতের একটা শপিং ব্যাগ সুপ্তির দিকে এগিয়ে দিলো,
অগ্নি – এটা আমার বোনের জন্য। দেখো তো পছন্দ হয় কিনা??
সুপ্তি হাতে নিয়ে দেখলো ব্যাগে কালো আর গোন্ডেন মধ্যে একটা জামদানি শাড়ি।
সুপ্তি- ধন্যবাদ দাদা, ভীষণ সুন্দর।

অগ্নি দিয়ার হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিতে চাইলে দিয়া সুপ্তিকে চোখে ইশারা দিলো, সাথে সাথে সুপ্তি একপ্রকার টেনেই ব্যাগ গুলো নিজের হাতে নিয়ে নিলো।
সুপ্তি- এগুলো আমার দাদা, আমি নিতে পারবো। আপনার হাতের টা আমাকে দিন।
অগ্নি – নাহ্ থাক লাগবে না।
সুপ্তি- আরে সমস্যা নেই, দেন আমাকে।

জোর করেই, ওই ব্যাগ টা নিয়ে নিলো অগ্নির থেকে। অগ্নি সুপ্তির অগোচরে দিয়ার হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। বিনিময়ে অগ্নি দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো দিয়া।
অগ্নির আনা শপিং ব্যাগ টা খুলে বিষ্ময়ে মুখ টা হা হয়ে গেলো সুপ্তির, দিয়া হেসে বললো
দিয়া- মুখ টা বন্ধ কর, না হলে মাছি ঢুকে যাবে।
সুপ্তি- কেমন্নে কি?? অগ্নি দাদা এ কালার শাড়ি নিলো কিভাবে?? উনি কি আগে থেকেই জানতো নাকি।
কাকতালীয় ভাবে অগ্নি ও দিয়ার জন্য ডার্ক মেরুন কালারের একটা জামদানি শাড়ি নিয়েছে। গোল্ডেন জরি সুতার কাজ করা, ভীষণ সুন্দর শাড়িটা।

সুপ্তি- বাহ্ কাপল সেট হয়ে গেছে। তবে অগ্নি দাদার পছন্দ আছে বলতে হবে।
দিয়া কিছুটা ভাব নিয়ে বললো
দিয়া- সেটা তো আমি নিজেকে আয়নায় দেখলেই বুঝতে পারি। পছন্দ ভালো বলেই তো আমাকে পছন্দ করেছে।
সুপ্তি ভ্রু কুঁচকে দিয়াকে ভালো মতো দেখে বলে

সুপ্তি- তোর ক্ষেত্রে উনাকে একশো তে একশো দিতে পারলাম না, তবে খারাপ না মোটামুটি মার্কেটে চলে।
দিয়া রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, সেটা দেখে ভেঙচি দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
অগ্নি আজকে একটু দেরি করে অফিস থেকে বাসায় আসলো, এতে অবশ্যই দিয়ার সুবিধা হয়েছে। দিয়ার নাকি ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া শেষ করতে হলো। রুমের লাইট অফ করে অগ্নিকে নিয়ে শুয়ে পড়লো, অভ্যাস বশত অগ্নি দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,

দিয়া- হাত সরান তো মাথা থেকে।
অগ্নি – কেন??
দিয়া- এমনিতেই ঘুম আসছে। হাত বুলিয়ে দিতে হবে না।
অগ্নি – আচ্ছা।

প্রায় ঘন্টা খানিক পর দিয়া বুঝতে পারলো অগ্নি ঘুমিয়ে গেছে, তাই আস্তে করে উঠে গেলো। অগ্নির পাশে একটা প্যাকেট রেখে, নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে বিড়াল পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। পাশের রুমে গিয়ে একবার ভালো করে সবটা দেখে নিলো, সবই ঠিকঠাক আছে। দিয়া খুব যত্ন করে নিজেকে সাজালো, ফর্সা ত্বকে ডার্ক মেরুন শাড়িটা ভালো মানিয়েছে।

ঘড়িতে ১১:৫০, এমন সময় অগ্নির ফোনটা বেজে উঠলো, ঘুমের মধ্যেই হাতড়ে ফোন টা কানে ধরলো।
দিয়া- শুনুন,
দিয়ার কণ্ঠ শুনে অগ্নির ঘুম ছুটে গেলো, পাশে দিয়ার নেই বুঝতে পেরেই তাড়াতাড়ি উঠে বসে। অস্থির হয়ে গেলো অগ্নি,,

অগ্নি – দিয়া,,
দিয়া- অস্থির হবেন না, আপনার পাশে একটা প্যাকেট রাখা আছে, ওটা খুলুন।
বলেই কল কেটে দিলো, অগ্নি কিছুই বুঝতে পারলো না, লাইট অন করে প্যাকেট টা হাতে নেই। পাঞ্জাবি সাথে একটা চিরকুট পেলো,,
দিয়া- তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন,,, অপেক্ষা করছি আমি।

অগ্নি নিজের ও মনে আছে আজকের দিনের কথা, অফিস থেকে আসার সময় গিফট ও নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার প্রেয়সী যে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য বোকা বানিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে সেটা বুঝতে পারে নি।
অগ্নি রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে গেলো, অবাক হয়ে দেখলো তার পিচ্চি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটা,, হার্ট শেপের বেলুন দিয়ে আর ফেরি লাইট দিয়ে ডেকোরেশন করা, টেবিলে উপর কেক রাখা। অগ্নি এগিয়ে গিয়ে দিয়াকে খুঁজছে, তখনি দুটো হাত অগ্নিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,,

দিয়া- আপনার প্রতি আমার অনুভূতি প্রকাশের কোন ভাষা নেই, শুধু বলবো আমি আপনাকে ভালোবাসি। হাজার বছর এভাবে কাটাতে চাই আপনার সাথে প্রিয়।।।। Happy Anniversary.
অগ্নি দিয়ার হাত টেনে সামনে আনলো,, বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর লাগছে দিয়াকে, মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো অগ্নি। মনে হলো ওর সামনে কোন দেবী প্রমিতা দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে অগ্নি এক হাঁটু গেঁড়ে ফ্লোরে বসে দিয়ার হাত টা ধরলো,,

অগ্নি- আমি চোখ বুজেই স্বপ্নে দেখেছি, সেই স্বপ্নের আলোতে তোমায় খুঁজেছি, না বুঝেই তোমায় ভালোবেসেছি।ভাগ্যক্রমে তোমাকে পেয়ে গেছি। আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি তুমি । ধন্যবাদ দিয়া, গত একটা বছর আমার জীবন সুখময় করার জন্য। তুমি আমার মানসিক শান্তি, তোমার সাথে থাকলে আমি সবসময় শান্তি অনুভব করি৷ এভাবে হাজার বছর তোমার সাথে বেঁচে থাকতে চায়। ভালোবাসি প্রিয়তমা।
বলেই হাতের মুঠো থেকে একটা রিং বের করে দিয়ার আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো। দিয়ার চোখ ছলছল করছে। অগ্নি উঠে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

অগ্নি – প্লিজ লক্ষ্মী চোখের জল ফেলো না, তোমার চোখের জল যে আমার সহ্য হয় না।
দিয়া চোখ মুছে মুখ তুলে তাকায় অগ্নির দিকে,,
দিয়া- দেখুন একটু জল নেই চোখে।
অগ্নি টুপ করে দিয়ার নাকে চুমু খেয়ে বলে,
অগ্নি – আমার ছোট ঘরে পরী নেমে আসলো, এটা কি সত্যি আমার পিচ্চি পরী?? কিন্তু আমার পরী টা তো পিচ্চি, আর সামনের পরী টা কে বড় বড় লাগছে।
দিয়া- শুনুন আমি পিচ্চি না, বড় হয়ে গেছে।

অগ্নি – তাই,
দিয়া- হুম। চলুন কেক কাটবেন।
কেকের ওপর লেখা ছিলো, আমার বেঁচে থাকার প্রার্থনাতে বৃদ্ধ হতে চাই আপনার সাথে। অগ্নি বুঝলো এ কেক দিয়া নিজে বানিয়েছে। দুজন মিলে একসাথে কেক কাটলো। দিয়া প্রথম কেক তুলে দিলো অগ্নির মুখে,,
অগ্নি – ভীষণ মজা তো, এ কেকের স্বাদ আজীবন মুখে লেগে থাকবে আমার। ধন্যবাদ দিয়া।
হাসে দিয়া, এবার অগ্নি ও দিয়াকে খাইয়ে দিলো,,, দুজন মিলে কয়েক টা ছবি তুলে নিলো, দিয়া অগ্নির দিকে চেয়ে আবদারের সুরে বলে

দিয়া- আমাকে একটু উঁচু করে ধরবেন।
অগ্নি দিয়ার কোমড় ধরে ওকে উপরে তুলে ধরলো, দিয়া একহাত দিয়ে অগ্নির গলা জরিয়ে ধরে অন্য হাতে সারা মুখে হাত বুলিয়ে বলে

দিয়া- ভীষণ সুন্দর লাগছে,, আমার ভাবনার চেয়ে ও বেশি সুন্দর লাগছে আপনাকে। আমার প্রিয়, আমি আপনার শহরের প্রতিটা অলিতে-গলিতে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডে লিখে দিবো, আপনি আমার প্রিয় পুরুষ,, সবাই জেনো আমার প্রিয় পুরুষের থেকে শত মাইল দূরে থাকে।
তারপর অগ্নির কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।

অগ্নি- আমি আমার শহর জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে দিবো, এটা আমার দিয়ার শহর, এ শহর থেকে শত মাইল দূরে থাকো সবাই।
অগ্নির এমন কথার বিনিময়ে মিষ্টি হাসলো দিয়া,,
দিয়া- এবার নামান আমাকে।
অগ্নি নামিয়ে দিলো, তবে দিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে
অগ্নি – কাল সারাদিন তোমার দিয়া, কাল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
দিয়া- ছুটি নিয়েছেন?
অগ্নি – হুম।

দিয়া- কোথাও যাবো না, বাসায় থাকবো সারাদিন।
অগ্নি – বিয়ের পর থেকে তো তোমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারি নি। ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে না??
দিয়া- করে, তবে কালকে সারাদিন বাসায় থাকবো আপনার সাথে৷ রাতে নিয়ে যাবেন বাইরে?? রিকশা করে ঘুরবো দুজন, নির্জন রাস্তায় এলোমেলো হাঁটবো।

অগ্নি – ঠিক আছে, তুমি যা বলবে তাই হবে। আমার লক্ষ্মী তো আমার কাছে কিছুই চাই না, আবদারও করে না। আজকে অন্তত কিছু চাও আমার কাছে।
দিয়া- আবদার করার সুযোগ দেন নাকি আপনি, বলার আগেই তো সব বুঝে যান। চাওয়ার আগেই সামনে এনে হাজির করেন।

অগ্নি – এখন তোমার মনে যা আছে তাই চাও, উপহার হিসাবে।
দিয়া কিছুখন ভেবে বলে,,,
দিয়া- ভাগ্যক্রমে আপনাকে পেয়ে গেছি, স্রষ্টার দেয়া সবচেয়ে বড় উপহার আপনি। আমার জীবনের দামি উপহার। তারপর ও আপনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিন, আপনি আমৃত্যু আমার হয়ে থাকবেন।
অগ্নি দুই হাতে দিয়ার মুখটা আলতো করে উঁচু করে ধরে,,

অগ্নি – আমরা আমৃত্যু আমাদের ‘আমরা’ হয়ে থাকবো, প্রতিশ্রুতি দিলাম। খুশি এবার??
দিয়া- ভীষণ।
অগ্নি – চলো এবার, ঘুমাতে হবে না??
দিয়া- নাহ্, আজকে সারারাত গল্প করবো আপনার সাথে। আজকে রাতের জন্য ঘুম নিষিদ্ধ।
অগ্নি – ঠিক আছে মহারানী।

বলেই দিয়াকে কোলে নিয়ে নিজদের রুমে দিকে হাঁটা দিলো, আচমকা কোলে নেওয়ায়, দিয়া অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরে।দিয়াকে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে, বেড সাইট টেবিল থেকে আরো একটি বক্স বের করলো অগ্নি। দিয়ার পায়ের কাছে বসে বক্স থেকে একজোড়া নুপুর বের করলো৷ শাড়ি টা একটু সরিয়ে নিজে হাতে পড়িয়ে দিলো, ফর্সা পায়ে বেশ মানিয়েছে রুপার নুপুর৷

অগ্নি- পছন্দ হয়েছে?
দিয়া- হুম।
সকাল সাড়ে এগারোটা, ঘুম ভাঙ্গলো অগ্নির। ভোর বেলায় ঘুমিয়েছে,সারারাত তার তোতাপাখি বকবক করছে। কথার ঝুলি খুলে বসেছে দিয়া, অগ্নি ও মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনেছে। এখন অগ্নির বুকের উপর বেঘোরে ঘুমাচ্ছে দিয়া। দিয়ার মাথাটা আস্তে করে বালিশে রেখে উঠে গেলে অগ্নি। ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা বানিয়ে রুমে আসে অগ্নি, দিয়া এখনো ঘুমাছে, অগ্নি দিয়ার পাশে বসে কপালে হাত বুলিয়ে ডাকে
অগ্নি – দিয়া, এ লক্ষী উঠো না।

অগ্নি আদুরে ডাকে দিয়া পিটপিট করে চোখ খুলে, কিছুখন তাকিয়ে থেকে আবারও চোখ বন্ধ করে নেয়।
অগ্নি – উঠো না সোনা,, প্লিজ উঠো।
দিয়া উঠে বসলো, বসা অবস্থায় অগ্নির বুকে মাথা এলিয়ে দিলো, অগ্নি দু’হাতে জড়িয়ে নিলো। দিয়া অগ্নির বুকে নাক ঘেসছে। হাসলো অগ্নি
অগ্নি – কি সোনা??
দিয়া- এভাবে একটু থাকি।

অগ্নি – নাস্তা করে নাও, তারপর সারাদিন এভাবে বসে থেকো।
দিয়া- এভাবে থাকতে ভালো লাগছে৷ প্লিজ,,,
অগ্নি আর কিছুই বললো না, বুকের সাথে আগলে রাখলো দিয়াকে। এভাবে কেটে গেলো আরো কিছু দিন৷ দিয়ার পাগলামি, উজাড় করা ভালোবাসা, অগ্নিকে ঘিরে কতো শতো ছেলে মানুষী, যতোখন অগ্নিকে পাশে পায়, চিপকে থাকে ওর কাছে। অগ্নিও ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখে তার প্রেয়সীকে। দুজনের মধ্যে জেনো নিরব প্রতিযোগিতা চলে, কে কাকে কতোটা ভালোবাসতে পারে। কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। এভাবেই কাটছে ওদের দিনগুলো।
হিয়ার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে দিয়া, আজ দীপক সাহা বাড়িতে নেই, তাই দু-বোনের খোশগল্প চলছে, কথার এক পর্যায়ে হিয়া বলে

হিয়া- দিদিয়া তুমি কিন্তু আগের চেয়েও বেশি সুন্দর হয়ে গেছে।
দিয়া- তাই।
হিয়া- হুম, তোমাকে দেখেই বোঝা যায়, দাদাই ভীষণ যত্নে রেখেছে।
দিয়া- হুম,, উনি অনেক বেশি কেয়ারিং। তোকে বলেছিলাম না, শুধু ভালোবাসি বললেই হয় না, ভালোবেসে ভালো রাখতে হয়। উনি খুব ভালো রেখেছে আমাকে। জানিস উনাকে কিছু বলার আগেই উনি সব বুঝে যায়। মুখ ফুটে বলার আগেই এনে হাজির করে।

হিয়া ভীষণ খুশি হলো, বোন তার ভালো আছে, হিয়া কথা শেষ করে, তনুশ্রী দেবীকে দেয় ফোন। তনুশ্রী দেবী মায়ামায়া চোখে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে, সত্যি দিয়াকে আগের চেয়ে ও এখন বেশি সুন্দর লাগছে, তার চিকন মেয়েটার কিছুটা স্বাস্থ্য হয়েছে,
তনুশ্রী দেবী – কেমন আছিস,
দিয়া- খুব ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?
তনুশ্রী দেবী – আমিও ভালো আছি

দিয়া- তোমাকে দেখে তো তা মনে হচ্ছে না, অনেক শুকিয়ে গেছো মা, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।
তনুশ্রী দেবী – ফোনে দেখছিস তো, তাই এমন মনে হচ্ছে তোর, আমি ঠিক আছি। আচ্ছা বাবু কেমন আছে?
দিয়া- ভালো আছে।
তনুশ্রী দেবী – তোকে একটা কথা বলার ছিলো,
দিয়া- বলো মা,

তনুশ্রী দেবী এমন কিছু বললো, যা শুনে দিয়ার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো, কি উওর দিবে কিছুই বুঝতে পারলো না, দিয়াকে চুপ থাকতে দেখে তনুশ্রী দেবী আবার বললো

প্রেম পরিণয় পর্ব ১২

তনুশ্রী দেবী – তোর মামি ও বলেছে, তাই আমি তোকে বললাম। বাবুকে বলিস তুই। বিয়ের তো দেড় বছর হয়ে গেছে, এবার এ বিষয় টা নিয়ে ভেবে দেখ।
দিয়া কোন রকম মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে ভেবে দেখবে।

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৪