মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৯

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৯
অনামিকা রহমান

❝তোমাকে চেয়েছি অন্ধকারের মতো,
একাকী, ভীষণ গভীর এবং গাঢ়।
তোমাকে চেয়েছি প্রার্থনা ও প্রেমে,
যতটা রয়েছে তার চেয়ে বেশি আরও। ❞।
আবির ছন্দখানা শেষ করা মাত্রই তৃনা মুচকি হেসে বলে উঠল, তাই বুঝি!
আবির মুচকি হেসে বলল,হুম।
তৃনা নিজের পার্স টেনে নিকটে আনলো, তার মধ্যে থেকে একটা গিফট বক্স বের করে হাতে দিলো তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের।

আবির তার পুতুলকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো, কি আছে এতে, তৃনা জবাব দিলো, খুলে দেখুন মশাই।
প্যাকিং কৃত বক্সটা খুলল আবির। তার মাঝে রয়েছে একটা নামি দামি ব্যান্ডের ঘড়ি। ঘড়িটা বের করে আবির হাতে দিলো, বেশ মানানসই হয়েছে।
তৃনা শুধালো, পছন্দ হয়েছে?
~হুম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আবির বসা থেকে উঠে দাড়ালো, আলমেরির নিকিটে গিয়ে দার খুললো। প্যাকেট করা একটা বক্স বের করে তার পুতুলের হাতে দিল,
হাস্যউজ্জ্বল মুখশ্রীতে বলে উঠল, তোমার রিটার্ন গিফট।
তৃনা খুলল,একটা ডায়মন্ডের নাকফুল সাথে এক জোড়া চুড়ি। তৃনার বড্ড পছন্দ হয়েছে।
তৃনা উঠে দাড়ালো, গা-ভরা গয়না, বারি বেনারসি পরে আর থাকা যাচ্ছে না।
তাই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষন বাদেই ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো আবির রুমে নেই।
বিছানায় বসলো তৃনা।

দরজার পানে চাইতেন দেখতে পেলো কাক্ষিত মানুষটাকে। দেখে মনে হয়ে ফ্রেশ হয়েছে। গলায় এখনও টাওয়াল জড়ানো। চুল গুলো হালকা ভিজে আছে। কিন্তু তার হাতে দুটো কফির কাপ দেখা যাচ্ছে। এই মানুষটা সব সময় বুঝতে পারে তৃনার ক্লান্তি কাটে কফির চুমুকে। এগিয়ে দিলো তার বিজ্ঞানী মশাই কফির মগটা তার পুতুলের নিকট। বিভিন্ন গল্প গুজবের শেষে শুয়ে পড়লো বিছানায়। তৃনার দেহ ঠাই পেলো, তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের তনুতে। আবিরের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে শায় দিলো তৃনা,পূর্নিমার রাত খানা রুপ নিলো মধুচন্দ্রিমায়।

৩বছর পর।
চানাচুর ও জন্মদিনের কেক তৈরি করার কারখানার লাইসেন্স না থাকার কারণে, ভক্তা অধিকার আইনের ৪৩ ধারায় আপনাকে,আমি ম্যাজিস্ট্রেট আরমান সানি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা সহ, ১মাসের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠান সিল করে দেওয়ার আদেশ জারি করলাম। আর অতি শীঘ্রই কোটে কাগজ পত্র তৈরী করার জন্য অনুমতি দেওয়া হলো, এর পর থেকে আপনি সুষ্ঠুভাবে কারখানা চালু করতে পারবেন।

রায় দেওয়ার কয়েক সেকেন্ড পড়েই মোবাইলে মেসেজ বেজে উঠল সানির।
গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, ❝আজকের মধ্যে যদি বাসায় বিয়ের কথা না বলতে আসেন, আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে অনেক দূরে চলে যাবো। ❞
তুলির এমন মেসেজ দেখে বুঝতে পারলো, তার প্রেয়সীর রাগ করেছে। দুপুর ১২ টা , সানি গাড়ি নিয়ে ছুটলো সাভার কলেজে।

কলেজে আসা মাত্রই প্রফেসররা হিমশিম খেতে লাগলো, এই ভেবেই যে, হঠাৎ ম্যাজিস্ট্রট সাহেব আসলেন কেন?
গাড়ি থেকে সানি নামার সাথে সাথে, তন্ময়ের চিনতে বাকি রইলো না। তন্ময় হেন্ড সেইক করে বলে উঠল, তা কি ব্যাপার ছোট ভাই তুমি এখানে কেনো?

সানি হাসলো, প্রতিউত্তরে বলল, আপনার শালিকার সাথে একটু কথা আছে!
তন্ময় ভ্রু কুচকালো, শুধালো, আমার শালী আবার তোমার কোন ক্ষেতে মুলা ধরলো ভাই।
ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছ,তাই বলে ছেড়ে দিবো না কিন্তু আমি। আমার শালি কি করেছে?
সানি বলে উঠল, ব্যাক্তিগত!

তন্ময় কিছুটা আঁচ করলো, এই তুমি আমার শালির সাথে প্রেম ট্রেম করছ নাকি?
সানি কিছু বলল না, নিরবতা বোঝায় রেখে হাসলো। তন্ময় এবার সবটা বুঝে গেছে।
দেখিয়ে দিলো কাক্ষিত কক্ষ।

পাঠদান চলছে। ক্লাশ ভরা শিক্ষার্থীরা চেয়ে আছে সানির পানে। প্রফেসর এগিয়ে আসলেন। সানির কথা খানা শুনে আবার কক্ষএ প্রবেশ করলেন, গলায় স্বর উচু করে বলে উঠল, তন্দ্রা মুসলিমা তুলি কে?
তুলি দাড়ালো।
তুলির নিকটে এসে প্রফেসর বলল, আপনাকে পাশের কক্ষে যেতে বলা হয়েছে।
তুলি কিছু বলল না, হিজাব ঠিক করে চলে গেলো সে।

~কি হয়েছে দুষ্ট পাখি।
তুলি অন্য দিকে ফিরে বেংচি কাটলো,
সানি পকেটে হাত গুযে গম্ভির কন্ঠে বলে উঠল, কথা বলবে না, এটাই কি ঠিক করেছ?
তুলি জবাবে বলল, বাসায় পাত্রের বাবা এসেছে, বাবা কিছু বলে নি। ওই পেটুক লোক যে হারে লেগে আছে, মনে হচ্ছে,ওনার ছেলের সাথে না বিয়ে দিয়ে নিজে বিয়ে করবে।

আপনি যদি এরকম টা না চান, আজকের মধ্যে বাসায় আসবেন, আমার আর এই প্যারা ভালো লাগছে না।
সানি তুলির নিকটে আসলো, হাত দ্বারা তুলিকে গুরিয়ে সামনে ফেরালো, তুলির থুতনিতে হাত রেখে নরম গলায় শুধালো, আমার চোখের দিকে তাকাও প্রান পাখি।
তুলি তাকালো।

সানি হেসে আবারো বলল, আজই যাবো তোমাদের বাসায় মাকে নিয়ে। এখন ক্লাসে যাও। আমায় অফিস ফিরতে হবে।
অনেক কাজ বাকি আছে।
কথাখানা বলে বেড়িয়ে গেলো, সানি। তুলিও চলে গেলো ক্লাসে।

দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। সফিউল আহমেদ দরজা খুলতে দেখতে পেলো সানিকে। সানিকে দেখা মাত্রই বলে উঠল, কই গো দেখে যাও, ম্যাজিস্ট্রট সাহেব এসেছে।
সানি সফিউল আহমেদকে জবাবে বলল, আংকেল আপনার মুখে সানি নামটাই সুন্দর শুনতে লাগে। প্লিজ এভাবে ডাকবেন না।

সানি পিছনে ফিরে তার মাকে হাত ধরে নিয়ে আসলেন, সফিউল আহমেদ খাতির করে বসতে দিলেন সানি ও তার আম্মা মিসেস সায়েমাকে।
সাহেলা খানমকে ডেকে বললেন নাশতার ব্যবস্থা করতে।
সফিউল আহমেদ সানিকে শুধালো, তা বাবা হঠাৎ আসলে যে, সানি নিরব চোখে তার মায়ের পানে চাইলো।
মিসেস সায়েমা হালকা কেশে জবাবা দিলো, দেখুন আপনার মেয়ে তৃনার সাথে আমার ছেলের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আপনি যদি কিছু না মনে করেন, আপনার ছোট মেয়েকে আমার ছেলে খুব পছন্দ করে,তাই আমি চাইছি তুলি মাকে আমার ঘরে নিয়ে যেতে।

সফিউল আহমেদ ১মিনিট নিরব থেকে বললেন, দেখুন। মেয়ের সম্মতির একটা ব্যপার আছে। আমায় একটু সময় দিন। মেয়ের মায়ের সাথেও তো আলোচনা করা উচিত।
মিসেস সায়েমা হ্যা সূচক মাথা দুলালো।
সফিউল আহমেদ সাহেলা খানমের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলো, সানি খাটি সোনা, এই ছেলেকে সে বহু আগে থেকেই চেনে। তার মেয়েকে কখনও কষ্ট দিবে না। তুলিকেও জিজ্ঞেস করা হলো এই সম্পর্কে তার অমত আছে কিনা। তুলি জানালো বিয়েতে সে রাজি।

মিসেস সায়েমাকে নিরাশ না করে সফিউল আহমেদ জবাব দিলেন, বেয়াইন সাহেবা, আসুন মিষ্টি মুখ করুন। মিসেস সায়েমা শুভ সংবাদ জেনে খুশি হলেন। অতঃপর কিছুক্ষন কথা বলে নাশতা সেরে বিদায় নিলো আহমেদ ভিলা থেকে।

উক্ত কক্ষে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বিশেষ কাজে ব্যস্ত আছেন,তাই দয়া করে কেউ ডিস্টার্ব করবেন না, তাহার কাজ সম্পন্ন হয়ে সে নিজ দায়িত্ব সহিত উক্ত কক্ষ ত্যাগ করিবেন।
কথাটি পড়েই আবির তার মেয়েদের পানে চাইলো। ভার কন্ঠে আরিফা আর আমিরা কে বলল, হুর-পরী। তোমার আম্মু ব্যস্ত। এখন যাওয়া যাবে না।
আরিফা, আর আমিরা কোনো কিছু মানতে চাইলো না,সদ্ব কথা বলতে শেখা দুজনেই বলে উঠল, আম্মু যাবো।
কি করবে এখন আবির।

মেয়েরা তার কথা শুনতে নারাজ। তারা তার আম্মার কাছে যাবেই যাবে।
২মিনিট বাদেই তৃনা দরজা খুলে বের হলো, বাবা ও মেয়েদের দেখে, তাজ্জব বনে গেলো তৃনা। আবিরের কোল থেকে নেমে তৃনার কাছে দৌড়ে গেলো আরিফা আর আমিরা। তৃনা কোলে তুলে নিলো, দুজনকে চুমু খেয়ে বলল, কি হয়েছে তোমাদের আম্মু।

দুই মেয়ে আবিরের দিকে আঙুল দিয়ে বিক্ষিপ্ত শব্দে বলল, বাবা, আইচকিলিম কেটে দেয় না।
তৃনা হাসলো মেয়েদের কথা শুনে, মেয়েদের শুধালো, আইসক্রিম খেতে নেই, ভুতে ধরে নিয়ে যাবে, তখন তোমাদের আমি পাবো কোথায়?

মেয়েরা বুঝতে পারলো তার মায়ের কথা।আবির তৃনাকে বলল, কয়টা বেজেছে দেখেছ?
ওরা তোমাকে ছাড়া ঘুমাবে না। তাই মা তোমায় ডাকতে পাঠিয়েছে।
তৃনা মেয়েদের নিয়ে কক্ষে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৮

কক্ষ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই কল করলেন সফিউল আহমেদ।
~কাল একটু সময় করে বাসায় আসিস, তোর ফুফুকে বলে দিয়েছি, ছোটির বিয়ের আলোচনা করা হবে৷
তৃনা প্রাসঙ্গিক কথা শেষে কল কাটলো।

মেইড ফর ইচ আদার শেষ পর্ব