মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৮

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৮
অনামিকা রহমান

ব্লুটুথ অন করে কর্ণে বসিয়ে দিলো তৃনা। মোবাইলের স্ক্রিনে ভাসমান রিংকৃত নাম্বার রিসিভ করলো তৃনা।
মোবাইলের অপর প্রান্তে চাতকের ন্যায় তাকিয়ে আছে আবির। হলুদ সাজে তার পুতুলকে, হলুদ পরীর ন্যায় লাগছে। দীঘল কেশ বেনুনি করা হয়েছে কাচা ফুল মুড়িয়ে দিয়ে।

~তোমায় খুব দারুন লাগছে, পুতুল।
তৃনা মুচকি হাসলো। অপর প্রান্তে যে আবিরকেও হলুদ সাজে বেশ লাগছে।
তৃনা শান্ত গলায় বলল, আপনাকেও দারুন লাগছে।
কিছুক্ষন চোখের ভাষায় কথা হলো দুজনের। তৃনা বিদায় জানালো, বাড়ি জুড়ে হৈ চৈ পরিবেশ।
শুরু হলো হলুদ অনুষ্ঠান।একে একে সকলে তৃনাকে হলুদ ছুয়ে দিচ্ছে। হলুদ অনুষ্ঠান আরও জাকজমকপূর্ন হলো তৃনার বন্ধুমহলের সাথে নাচের সাথে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
এখন তো চান্দের চিনে না
আমারে সূর্যও চিনে না
চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
এখন তো চান্দের চিনে না
আমারে সূর্য ও চিনে না
চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
ইট বালি আর সিমেন্ট দিয়া ঘর বানানো যায়
সেই ঘরেতে যায় না থাকা মিল যদি না হয
চান্দের বাতি দিয়া আমার যে ঘর সাজাইলি
সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া সে ঘর ভাঙ্গিলি
এখন তো চান্দের চিনে না
আমারে সূর্যও চিনে না
চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
এখন তো চান্দের চিনে না।

নাচ শেষে তৃনা তার আসনে বসলো, এর মধ্যেই সফিউল আহমেদ আসলেন তৃনার নিকট। হাতে হলুদ ছুয়ে, লাগিয়ে দিলেন তার পুতুলের অবয়বে। উপহার হিসেবে দিলো এক জোড়া কানের ঝুমকো।
সাহেলা খানম ও তার পাশে উপস্থিত। সেও ছুয়ে দিলো হলুদ। কপলে হাত ভুলিয়ে বলল, আমি রেগে ছিলাম। কিন্তু আমার জায়গায় আমি ঠিক ছিলাম। নাহলে যে তুই একটা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতি নারে মা।

রাজনীতি বড়ই খারাপ। আমি চাই তুই ভালো ভাবে জীবন কাটা। মায়ের উপর অভিমান করে থাকিস না পুতুল।
তৃনা কপল হতে সাহেলা খানমের হাত খানা নিয়ে চুমু খেলো।
বলল,মা আমি তোমার উপর সত্যিই অভিমান করে নেই।
আমার খুব কষ্ট হবে তোমাদের ছাড়া থাকতে।
চোখের পানি মুছলো সাহেলা খানম। সফিউল আহমেদকে নিয়ে সাহেলা খানম স্থান ত্যাগ করলো।
কিছুক্ষন বাদেই তুলি এসে তৃনার পাশে বসলো, তৃনার হাত খানা টেনে একখানা চিরকুট দিলো। কিছু না বলেই চলে গেলো।

তুলি যাওয়া মাত্রই তৃনা চিরকুটটা খুলল,
❝মেজো আপা,
তোর সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম। তোর সাথে আমার জীবন টা ঝগড়া-ঝামেলায় পাড় হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে বুঝলাম, কাল থেকে আমি সারাজীবনের জন্য একা হয়ে যাবো। কেমন করে থাকবো রে বল আপা। খিচুড়ি নিয়ে কার সাথে ঝামেলা করবো।

আমি যে আমার ঝগড়া করার সঙ্গি হারাবো আপা। আমায় কি তুই, মনে করবি?❞
তৃনার চোখ চিকচিক করে উঠল। টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছলো। স্টেজ থেকে নেমে খুজতে লাগলো তুলিকে।
ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে কাদছে তুলি।তৃনা তুলিকে পাশ ফিরিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।বলে উঠল, আমি প্রতি সপ্তাহে তোর সাথে ঝগড়া করতে আসবো রে ছোটি।তুলি হু হু করে কেদে উঠল।

দূর থেকে সানি দেখে চলেছে ২ বোনের কান্না।
সে বুঝতে পারলো দু বোনের সময় দেওয়া উচিত। সানি স্থান ত্যাগ করলো।
পুরো রাত উৎসবে, হৈ হুল্লোড়ে
পাড়া প্রতিবেশীদের নাচ, গানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শেষ হলো হলুদের অনুষ্ঠান।

লাল বেনারসিতে পুতুল, পুতুলই লাগছে তৃনাকে।
মাত্র তাকে সাজানো সম্পুর্ণ হলো। কিছুক্ষন বাদেই তাকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হবে। ইতোমধ্যে উত্তরা থেকে বর‍যাত্রীরা চলে এসেছে।
মেয়েরা সকলে মিলে তৃনাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলো।

নেতা কর্মীদের দেখা পেয়ে দাড়ালো তৃনা, ইমতিয়াজ এগিয়ে এলো স্টেজে।কুশল বিনিময় হলো, বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিলো ইমতিয়াজের সাথে। তৃনার আরো খুশি হলো দিদারের আগমনে। হাতে থাকা গিফট বক্স টা দিয়ে শুধালো, মেডাম এবার যে আমায় রিটার্ন গিফট দিতে হবে৷
তৃনা হাসলো জবাবে বলল, তোমার রিটার্ন গিফট ওই পাশে লেহেঙ্গা পড়ে দাড়িয়ে আছে। তোমার জন্যই অপেক্ষায় আছে।

দিদার চুল চুলকালো। একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।
তৃনা বসলো কনে আসনে। আবির এখনো গেটে তাদের শালিকাদের সাথে টাকা লেনদেন করছে।
কোনো রকম বোঝাপড়া করে আবির এসে বরের আসনে বসল। তৃনার পানে চেয়ে বলল, মাশাল্লাহ, আমার পুতুল বউ।
আবির বেশি কিছু বলতে পারলো না৷ মেহমানরা একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে। তার সাথে পার্মানেন্ট ক্যামেরা ম্যান সানি তো আছেই।

কাপল পিক তুলতে তুলতে দিশে হারা। যেমন, আবির -তৃনা, রোদেলা-রিয়াদ, তন্নি -তন্ময়,রাইদ-আন্নি,মেহের-মাহতাব। কিন্তু সে বাদ রবে কেনো। সেও তো তার দুষ্ট প্রেয়সীকে নিয়ে কয়েকখানা ছবি তুলেছে । এর মধ্যেই দিদার এসে সানিকে শুধালো, মেডামের কাছ থেকে শুনলাম তুমি নাকি খুব কাপল পিক তুলছ, তা সেহতাজ আমি বাদ রব কেনো। তোলো ছবি। সানি ভ্রু কুচকালো, সেহতাজকে চেচিয়ে বলল,এবার আমি বুঝতে পারছি। তোমরা তলে তলে টেম্পু চালাও, আমি কইলেই হরতাল। সেহতাজ হাসলো, জবাবে বলল, জাল পানি পুড়ি খাওয়াবো তোকে। এবার তোল ছবি।

এভাবেই ঘনিয়ে এলো বিদায়ের সময়। মেহমানদারি শেষে এবার বিদায়ের পর্ব চলছে। তৃনা হাউমাউ করে কেদেই চলেছে তার বাবার বুকে মাথা রেখে।
সফিউল আহমেদ আর সহ্য করতে পারছে না, সেও পুতুল মেয়ের সাথে কেদে চলছে । আবিরের হাতে তুলে দিয়ে দাড়িয়ে পড়লো গাড়ির নিকটে। ললাটে চুমু খেয়ে বসিয়ে দিলো সিটে।
নিস্তব্ধ হয়ে গেলো তৃনা। এইটাই নিয়তি। এইটাই নিয়ম। মেয়েদের কোনো নিজস্ব বাড়ি থাকে না। এক বাড়ি ত্যাগ করে অন্য বাড়ি যেতে হয়। পুরো পথ চুপ রইলো তৃনা।

ঘন্টা খানেক বাদে এসে পৌছলো খান মঞ্জিলে।
সামনে বেহারারা পালকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবির তৃনার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামালো। পালকির কাছে নিয়ে বসিয়ে দিলো তাকে।

ক্যামেরায় বন্দি হলো পালকিতে বসা তার পুতুল বউয়ের ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে হাস্য উজ্জ্বল তার অবয়ব।
বেহারারা পালকি চালাতে শুরু করলো, তাদের গান গাওয়ার ছন্দে পুরাতন যুগের ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।আবির তার পাশে হেটে চলেছে। ৫মিনিট বাদেই সদর দরজায় এসে নামলো তৃনা।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৭

রেহানা খান বরণডালা নিয়ে হাজির। বরণ করা হলো দুজনকে। নিয়মকানুন পালন করে রেখে আসা হলো আবিরের কক্ষে।
অতঃপর।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৯