পূর্ণতায় অপূর্ণতা গল্পের লিংক || সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

সাল 2024
অন্ধকার রুম টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছে ছোঁয়া হাতে তার কলম সামনে ডায়েরি নিয়ে সে অতিতের ভাবনায় ব্যস্ত।

অতিত…
সাল ২০১৮
বাচ্ছাদের সাথে কানামাছি খেলছে ছোঁয়া,,তার মা একটু আগে তাকে ডেকে পাঠিয়েছে তবুও খেলা ছেড়ে যাওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই,, একটু পরে স্কুলে যাওয়ার সময় হতেই ছোঁয়ার মা আবারো এসে তাকে বকতে বকতে নিয়ে যায়।
পরিচয় পর্ব টা দিয়ে নেই
ছোঁয়া হলো আমাদের গল্পের নায়িকা, কিছুদিন হলো অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে, ২ বোন এক ভাই তাদের মধ্যে ছোঁয়ায় বড় বাকিটা গল্প পড়তে পড়তে জেনে যাবেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

স্কুলে এসে একা একা বসে আছে।
স্কুলে আসতে একদমই ভালো লাগেনা ছোঁয়ার, নতুন স্কুল কোন বান্ধবী নেই, হঠাৎই তার পাশে এসে বসে একটা মেয়ে। ছোয়াকে বলে,
তোমার নাম কি?
ছোঁয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো
আমার নাম ছোঁয়া।
মেয়েটি নিজে থেকে বলল আমি মাইশা।
অতঃপর তাদের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা হবার মাঝে ক্লাস রুমে স্যার প্রবেশ করল।
দুইজনেই তাদের কথা রেখে ক্লাসে মনোনিবেশ করলো।

স্কুল ছুটির পরে মাইসার সাথে বাড়ি ফিরলো ছোঁয়া। মাইসাদের বাড়ি তাদের এলাকাতেই।

বাড়িতে এসেই সাওয়ার নিয়ে ধপাস করে বিছানাতে সুয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জামালো ছোয়া।
ছোয়ার মা এসে মেয়েকে ঘুমুতে দেখে প্লেটে করে ভাত নিয়ে এসে ছোয়াকে ঘুম থেকে তুলে ভাত মাখিয়ে খাইয়িয়ে দিতে লাগলো।
বরো আদরের মেয়ে তার ছোয়া।
চাচা চাচি দাদা দাদি সবার খুব আদরের সে, তাই বেশি আদর পেয়ে বুদ্ধি হাটুর নিচে 🥹

মেয়েকে খাওয়ানো শেষ হলে পরতে বসতে বলে গেলেন।

ছোয়া টেবিলে বসলো পড়া শেষ করে ভাই বোন এর সাথে খুনসুটিতে করতে লাগলো তারপরে মায়ের ধমক খেয়ে নিজের রুমে গেলো ঘুমুতে।

পরের দিন সকালে ছোয়ার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে স্কুলের উদ্দেশ্য ছুটলো সে। খুলে গিয়ে দেখে মাইশা তার জন্য বেঞ্চে জায়গা রেখেছে। সে গিয়ে মাইসার সাথে বসে পড়লো।

সময় বহমান, এভাবে বেশ কিছু দিন চলে গেলো।
ছোঁয়াদের ২য় সাময়িক পরিক্ষা চলে এসেছে।
প্রথম পরিক্ষা বাংলা, স্কুলে গিয়ে ছোঁয়া নিজের সিট খুজতে লাহলো। মাইসা এসে বল্লো, কিরে ছোঁয়া পেলি সিট।
ছোঁয়া মাইসার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো নারে খুজতেছি। তারা একসাথে সিট খুজতে লাগলো। তাদের কক্ষেই ছোঁয়ার সিট পরেছে আর মাইসারটা ৩ তলায়।

তারা ২ জন কতোখন গল্প শেষ করে যে জার ক্লাসরুমে চলে গেলো।
ছোয়া এক্সাম শেষ করে মাইসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো মাইসা আসতেই জিজ্ঞেস করলো
তোর এক্সাম কেমন হয়েছে
মাইসা বাচ্চা বাচ্চা মুখ করে বল্লো ভালো তোর ছোয়া খুশিতে উৎফুল্লর হয়ে বল্লো অনেক ভালো দোস্ত।
কথা বলতে বলতে তারা বাসায় যেতে লাগলো।
বাসায় পৌঁছতেই ছোয়ার মা মিসেস আনিতা বেগম জিজ্ঞেস করলেন
তোর পরীক্ষা কেমন হয়েছে

ছোঁয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল
অনেক ভালো আম্মু।
মিসের আনিতা বেগম ছোয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললেন তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ আমি খাবার নিয়ে আসছি।
ঝড় ও মেয়েকে ফ্রেশ হতে তার মাথাকে খাইয়ে দিলো।
খাওয়া শেষে বলল কাল গনিত পরিক্ষা মন দিয়ে পড়তে।

আজ ছোঁয়ার গনিত পরিক্ষা।
সে বরাবরই গনিতে দুর্বল। এই যে স্কুলে এসে এক মিনিট শান্তিতে থাকতে পারছে না পরিক্ষার কথা চিন্তা করে।
এভাবে থাকলে সে লিখবে কি করে তাই নিজের মাইন্ড ফ্রেস করার জন্য ভাবলো মাইসার সাথে কথা বলা জাক।
যেই ভাবা সেই কাজ ক্লাসরুম থেকে বের হলো ৩ তলায় জাওয়ার উদ্দেশ্যে।
মাইসার কাছে গিয়ে করুন সুরে বল্লো দোস্ত ওনেক টেনসন হচ্ছে কি করবো।

মাইসা বল্লো রিলেক্স দোস্ত এতো পেরা নিচ্ছিস কেনো একটা পরিক্ষাইতো ফেইল করলে এমন কি আবার পরবি আবার দিবি নয়তো পরা বাদ দিয়ে আন্টিকে বলবি তোরে বিয়ে দিয়ে দিবে।
মাইসা ছোয়ার দিকে না তাকিয়ে কথা গুলো বলতে লাগলো হঠাৎ ছোঁয়ার দিকে চোখ পরতে দেখলো ছোঁয়া কটমট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

ছোঁয়া রেগেমেগে মাইসাকে দুম করে একটা থাপ্পড় মেরে ক্লাস রুম থেকে বের হলো উদ্দেশ্য নিজের ক্লাসে যাওয়া। কই আসলো মনটা শান্ত করতে আরও রাগ উঠিয়ে দিলো ভাবতে ভাবতে সামনে না তাকিয়ে ছোঁয়া ধুপ ধাপ পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো তখনি হঠাৎ পা স্লিপ করে ধপাস করে পড়ে গেলো।
বেচারি তিন/চার সিড়ি উপর থেকে পরায় অনেক বেথা পেয়েছে।
কাদোকাদো মুখ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো তিনটি ছেলে অবাক হয়ে তাকে দেখছে।
কিয়তক্ষণ পরেই দুটি ছেলে হুোহুো করে হেসে উঠলো।
ছোয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।

সে বেথায় উঠে দৌড় দিতে পারছে না চোখ মুখে খিচে বসে আছে।
হঠাৎ কারো গলার সড়ে চোখ খুলে সামনে তাকালো দেখলো তৃতীয় ছেলেটি প্রথম ছেলে দুটোকে হাসার জন্য ধমক দিচ্ছে।
ছেলে দুটোকে ঝাড়া শেষে তার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে হেটে চলে গেলো সাথে দুটো বাদকে নিয়েও গেলো।
তার সত্য কিশোরী মনে একরাশ ভালোলাগা জন্ম নিলো ছেলেদের জন্যে।
তার পরে যাওয়াতে হাসার ফলে ছেলেটির প্রতিবাদ হয়তো ছোঁয়ার কিশোরী মনে ভালো লাগার জন্ম দিয়েছে।

ছোয়া আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে নাহ। বার বার ব্যথার চোখ মুখে খিঁচে রাখছে। সেই সময় ক্লাস নাইনের একটি মেয়ে ছোয়াকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে ছোঁয়ার কাছে আসে ওকে ধরে ওঠায়।
ওকে জিগেস করে
তুমি কোন ক্লাসে পড়ো
অষ্টম শ্রেণী
তোমাকে এর আগে কখনো দেখিনিতো।
আসলে আমি স্কুলে নতুন এসছি।
ওহ, পড়লে কি করে

ছোঁয়া করুন চোখে তাকালো মেয়েটির দিকে।
সে কি আবার পড়ে দেখাবে নাকি।
মেয়েটি বোধ হয় ছোয়ার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।
বলল তুমি তো একা জেতে পারবে নাহ রুমে আমায় বলো কোন রুমে যাবে তোমাকে সাহায্য করছি।
যেহেতু এখন পরীক্ষা চলছে তাই মেয়েটা জানেন ছোয়া কোন রুমে যাবে তাই জিজ্ঞেস করলো।
ছোয়া বল্লো তার ক্লাসরুমে নিয়ে যেতে মেয়েটি ছোয়াকে ধরে তার রুমে নিতে লাগলো।
যেতে যেতে মেয়েটি জিগেস করলো

তোমার নাম কি
ছোঁয়া
বাহ সুন্দর নাম তো
ছোয়া বলল
তোমার নাম কি
প্রেয়সি

বাহ তোমার নামটা বেশ সুন্দর তো
তুমি কোন ক্লাসে পড়ো
মেয়েটি উত্তর দিলো
নবম শ্রেণী।
তারপর মেয়েটির ছোঁয়াকে ক্লাসরুমে তার সিটে বসিয়ে দিয়ে গেলো।
পরিক্ষা শেষে মন খারাপ করে বসে আছে ছোঁয়া। আপাতত তার পায়ের বেথাটা কম।
হঠাৎ মাইসা এসে ছোয়ার পাশে ধপ করে বসে পড়লো।
ছোঁয়া এক পলক মাইসাকে দেখে আবারো মন খারাপ করে সামনে তাকিয়ে রইলো।
মাইসা ব্রু কুচকে বলল

কিরে কি হইছে মুখটা বান্দরের মতন করছোছ কেন
ছোয়া মন খারাপ করে বলল পরিক্ষা তেমন ভালো হয়নি।
মসিসা হামি তুলতে তুলতে বলল পেরা নাই চিল বেবি আমার সেম অবস্থা।
ছোয়া কিছু বলল না। মাইসা বরাবরি এমন লেখাপড়া নিয়ে কনো চিন্তা নেই কিন্তু সে তো কখনো এমন খারাপ পরিক্ষা দেয়নি গনিতে একটু দুর্বল কিন্তু বরাবরি দুর্বলতা কাটি ভালো ফলাফল করে এসেছে।
কিন্তু আজ

সব দোস ওই ছেলে টার অর জন্যই তো এমন হলো।
পুরোটা সময় ছোয়া না চাইতেও ওর কথা ভেবেছে।

শ্যাম বর্ণের লম্বা ছেলেটি গালে হালকা দারি আর তার জন্য প্রতিবাদ করা দেখে সে মুগ্ধ।
আর ওই ছেলের কথা ভাবতে ভাবতেই সে তেমন কিছুই লিখতে পারেনি।
আসে পাসে একবার তাকালো ছোয়া কাওকে খোজার আসায়।

ছেলেটির কথা ভাবতে ভাবতে নিমিষেই ভুলে গেলো পরিক্ষা খারাপ হওয়ার কথা।
ছোয়া মন খারাপ করে মাইসাকে বলল
চল বাড়ি যাই।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ২