প্রেম পরিণয় গল্পের লিংক || রাজশ্রী মজুমদার রাই

প্রেম পরিণয় পর্ব ১
রাজশ্রী মজুমদার রাই

শীতের সকাল মানে কুয়াশার চাদরে মোড়া রহস্যে ঘেরা প্রকৃতি। আরামপ্রিয় মানুষের খুব প্রিয় ঋতু। কুয়াশা ঢেকে রেখেছে ব্যস্ত নগরী। কর্ম ব্যস্ত মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য বেরিয়ে পড়েছে যার যার কর্মক্ষেত্রে। ঠাকুর ঘর থেকে শঙ্খ ধ্বনির শব্দ আসছে, শঙ্খ,উলুধ্বনির আওয়াজে দিয়ার ঘুম টা হালকা হয়ে গেছে, তবে পুরোপুরি ভাঙ্গে নি। ব্লাঙ্কেটা ভালো করে জড়িয়ে নিলো শরীরের, ঘুম আবারও চোখে এসে ভীড় করলো। হঠাৎ কেউ টান দিয়ে শরীরের উপর থেকে ব্লাঙ্কেটা সরিয়ে ফেললো। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো, বিরক্তির মাএা একধাপ বাড়িয়ে গালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ দিতে লাগলো। সাধের ঘুম বিসর্জন দিয়ে ওঠে বসলো দিয়া। রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়া মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলো

হিয়া – শুভ সকাল দিদিয়া
বোনের মুখের মিষ্টি হাসি দেখে দিয়ার সব রাগ উবে গেছে, সেও বোনকে জড়িয়ে ধরে বললো
দিয়া- শুভ সকাল আমার হিয়াপাখি।
হিয়া- রাগ করছো দিদিয়া??
দিয়া- একটুও নাা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওদের কথায় মাঝেই তনুশ্রী দেবী দিয়ার রুমে ঢুকলো, হাতে প্রসাদের থালা নিয়ে। মেয়েদের কপালে আর্শীবাদী ফুল ছুয়ে দিলেন, হিয়ার হাতে একটু প্রসাদ দিয়ে দিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
তনুশ্রী দেবী – কয়টা বাজে দেখছো তুমি??
দিয়া- ৭:৩০ বাজে মা।
তনুশ্রী দেবী – তোমার S.S.C পরীক্ষা আর কয় মাস বাকি??
দিয়া- দুই মাস বাকি মা।

তনুশ্রী দেবী – পরীক্ষার দুই মাস বাকি আর তুমি বেলা ৭:৩০ ঘুম থেকে উঠেছো, ভাগ্য ভালো আজকে তোমার বাবা বাড়িতে নেই। থাকলে কি হতো?
দিয়া- বাবাই বাড়িতে নেই দেখেই তো এতোখন ঘুমিয়েছি মা, বাড়িতে থাকলে তো আরো আগেই উঠে যেতাম।
বলেই মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
দিয়া- বাবাই এতো কঠোর কেন??এতো নিয়ম কানুন আমার ভালো লাগে না মা,,,, আমার ইচ্ছে করে পাখির মতো খোলা আকাশে উড়তে।

তনুশ্রী দেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, দীপক সাহার কঠোরতা আজকাল তাকেও ভীষণ কষ্ট দেয়। বিয়ের আগের দীপক আর বিয়ের পরের দীপকে তিনি মিলাতে পারে না,, মেয়েকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন
তনুশ্রী দেবী – বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না, তোমাদের ভালোর জন্যই এমন আচারণ করেন। আর কখনো এভাবে বলবে না, বাবা শুনলে কষ্ট পাবে।
দিয়া- ঠিক আছে মা,

তনুশ্রী দেবীর মলিন মুখ দেখে দিয়া মজা করে হেসে বললো
দিয়া- তুমি দেখো মা, আমি আর হিয়া একদিন বাবাইয়ের এই বন্দি খাঁচা থেকে উড়াল দিবো। সাথে তোমাকেও নিয়ে যাবো, তখন তোমার পতিদেবতা কেঁদেও কূল পাবে না।।।
তনুশ্রী দেবী মেয়ের কান মলে দিয়ে হেসে বললো
তনুশ্রী দেবী – তবে রে পাঁজি মেয়ে।
দিয়া- লাগছে মা,, ছাড়ো

ততোখনে হিয়া এসে মায়ের হাত থেকে বোনকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
হিয়া- আমার দিদিয়ার ব্যাথা লাগবে তো।
দু-বোনের এতো ভালোবাসা দেখলে তনুশ্রী দেবীর মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। স্বামীর কঠোর ব্যবহারে পাওয়া কষ্ট, মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে থাকে। তিনি মেকি রাগ দেখিয়ে বললো
তনুশ্রী দেবী – আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে এবার যাও দুজনেই জলখাবার খেয়ে পড়তে বসো।

কোচিং, প্রাইভেট নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে দিয়ার, বাড়িতে থাকলেও সারাদিন বই সামনে নিয়ে বসে থাকতে হয়। লেখাপড়া করতে ওর একদম ভালো লাগে না৷ রাত নয়টা দিয়া পড়ছে, এমন সময় হাতে একটা গিফট বক্স নিয়ে হিয়া এলো, হিয়ার হাতে গিফট বক্স দেখেই দিয়া মুখ বাঁকালো।
হিয়া- দিদিয়া দেখো কতো বড় বক্স পাঠিয়েছে।
দিয়া- তো আমি কি করবো? তোর বক্স তুই দেখ।

হিয়া- এমন করো কেন, দেখবে কাল সকালেই তোমার বক্স ও চলে আসবে।
দিয়া- জানি আমি, তোর টা থেকেও বড় গিফট পাঠাবে আমার দাদাভাই।
হিয়া দিয়াকে ক্ষেপাতে বললো,,
হিয়া- হুম সেটা ঠিক কিন্তু তোমার জন্য আমার একটু দুঃখ হয় দিদিয়া
দিয়া- কেন?

হিয়া- তোমার একটা দাদাভাই কিন্তু আমার দুই টা দাভাই। অগ্নি দা, অভি দা দুজন আর তোমার শুধু অভি দাদা।
দিয়া- ওনার মতো গোমড়ামুখে কে আমি দাদা বলে মানি ও না। লাগবে না আমার ওই রকম ভাইয়ে।
হিয়া- অগ্নি দাদাও তোমাকে বোন বলে মানে না।
বলেই হিয়া গিফট বক্স খুলতে মনোযোগ দিলো,,,

দিয়া- হিয়ার মামার দুই ছেলে বড় ছেলে অগ্নি রায় আর ছোট ছেলে অভি রায়। অগ্নি(গল্পের নায়ক) দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি শান্ত চুপচাপ স্বভাবের। যেকোন মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ। অগ্নি নাম টা ওর স্বাভাবের বিপরীত। চাকরির সূত্রে ঢাকায় থাকে৷ মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসে।কোন এক আজান কারণে দিয়ার সাথে কথা বলে না। তবে হিয়াকে খুব ভালোবাসে, মাঝে মাঝে গিফটও পাঠায় হিয়ার জন্য৷

আর অভি সে ও দেখতে ভীষণ সুন্দর দেখতে, তবে খুবই রাগী স্বভাবের, আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ। দিয়া-হিয়াকে ভীষণ ভালোবাসে, নিজের বোন না থাকায় ওদেরকে বোনের মতোই দেখে।। দিয়ার দাদুভাই দুই সন্তানের মধ্যে মেয়েকে একটু বেশি ভালোবাসতেন, তনুশ্রী দেবী ছিলেন ওনার একমাত্র মেয়ে। তাই পাশের সাহা পাড়ায় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, যদিও দীপক সাহার পাগলামি দেখেই রাজি হয়েছিলো, ভেবেছে মেয়েকে কাছেও রাখা যাবে আর দীপকও খুব ভালো রাখবে।

কিছু একটা ভেবে হিয়া বোনের উদ্দেশ্য বলে,
হিয়া- আচ্ছা দিদিয়া, অগ্নি দাদা, ছোট বেলায় নাকি তোমাকে অনেক ভালোবাসতো, এমনকি তোমার নামও উনি রেখেছে। তাহলে এখন কেন তোমার সাথে কথা বলে না???
দিয়া- আমি কি করে বলবো, কোন এখন এমন করে। বদ লোক একটা।
হিয়া আফসোস করে বললো
হিয়া- থাক মন খারাপ করো না,চকলেট খাও।

দিয়া বোনের হাত থেকে চকলেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলো, চকলেট তার ভীষণ প্রিয়। গিফট যার নামেই আসে দুজনে ভাগাভাগি করে নেয়।
রাতে খাবার টেবিলে বসে মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করছে দীপক সাহা। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পর মেয়েদের আসতে না দেখে, জোরে ডেকে উঠলো
দীপক সাহা- দিয়া-হিয়া আর কতোখন অপেক্ষা করবো আমি।
বাবার ডাকে দু-বোন এক প্রকার দৌড়ে এসে দাড়ালো বাবার সামনে। যমের মতো পায় ওরা বাবাকে। দুই মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি আবারও বললো

দীপক সাহা- খেতে বসার জন্য কি নিমন্ত্রণ দিতে হবে?
দুজনেই চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তনুশ্রী দেবী খাবার পরিবেশন করছে৷ করলা ভাজা দেখে দুজনে মুখ কালো করে ফেললো। কিন্তু বাবার ভয়ে কিছু বললো না। দিয়া খাবার মুখে দিয়েই মুখ কুঁচকে ফেললো,মুখ থেকে ফেলে দিবে এমন সময় দীপক সাহা ধমকে বললো

দীপক সাহা- খবরদার ফেলবে না, গিলো তাড়াতাড়ি।
দিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো, পুরো মুখ তিতো হয়ে গেছে, জল দিয়ে মুখের খাবার টা গিললো৷ হিয়ার ও একই অবস্থা । তনুশ্রী দেবী কিছু বলতে নিবে,কিন্তু স্বামীর চোখ রাঙ্গিয়ে তাকানো দেখে থেমে গেলো। দিয়া- হিয়া করলা ভাজা দিয়েই খাওয়া শেষ করলো,বলতে গেলে জল দিয়ে পেট ভরালো।
সকাল বেলা প্রাইভেট পড়ে বাসায় আসতেই অভির সাথে দেখা হলো দিয়ার। দিয়া হাসি দিয়ে দাদাভাইকে কাছে এসেই বললো

দিয়া- দাদাভাই তুমি এখানে, চলো আমাদের বাসায় চলো।
অভি- তোদের বাসা থেকেই আসছি। পিসিমনির হাতের লুচি তরকারি ও খেয়ে এসেছি।
দিয়া- এখন যেও না দাদাভাই, কতোদিন তোমার সাথে কথা হয় না, চলো আবার একটু আড্ডা দিবো।
বোনের এমন আবদার শুনে, অভি আদুরে স্বরে বললো
অভি- না রে বোনু, আমার দরকারি একটা কাজ আছে,এক্ষুনি যেতে হবে। আমি তো তোর গিফট দিতে আসছি। আর এখন বাসায় তোর হিটলার বাপ আছে। গেলেও আড্ডা দিতে দিবে না।
দিয়া- তুমি আবার বাবাইকে ভয় পাও কবে থেকে??
অভি হাসলো,,, হেসেই বললো

অভি- আমি ভয় পাবো ওই দীপক সাহাকে, আমি অভি রায়, তোর বাপকে গোনার সময় আছে নাকি, শুধু পিসিমনির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলি না, না হলে এতোদিনে বুঝিয়ে দিতাম আমি কি জিনিস।
অভির কথা শুনে দিয়ার মুখ কালো করে ফেললো তা দেখে অভি আবার বললো
অভি- কি হলো, মুখ কালো করলি কেন?? এতো খারাপ ব্যবহার করে তোদের সাথে তারপর ও এতো টান কিসের?
দিয়া- যতকিছু হোক বাবাই আমাদের।
অভি দিয়ার মতেই ব্যাঙ্গ করে বললো
অভি- যতোকিছুই হোক বাবাই আমাদের, যতোসব।
দিয়া অভির কথা শুনে ওকে কয়েক ঘাঁ লাগিয়ে দিলো, যদিও দিয়ার মার অভির শরীরে লাগে নি। অভি হাসি দিয়ে বললো,

অভি- আচ্ছা যা এবার বাসায়, গিফট বক্স খুলে দেখ। আর আমি তোর বাপকে বলে এসেছি, বিকালে তোরা আমাদের বাসায় যাবি৷ তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
দিয়া- সত্যি বলছো দাদাভাই, বাবাই রাজি হয়েছে।
অভি- না হয়ে যাবে কোথায়, চলে আসিস তাড়াতাড়ি পিসিমনিকে নিয়ে। পিসিমনির আদরের বাবু (অগ্নি) তাকে দেখতে চাইছে।

দিয়া- তোমার শয়তান দাদা কবে আসলো বাসায়?
অভি- কালকে এসেছে।
দিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো
দিয়া- তাহলে আমি যাবো না।
অভি – কেন??
দিয়া- তুমি দেখো না, উনি আমার সাথে কেমন করে, কথাও বলে না। আমাকে তো চিনেই না মনে হয়।
অভি- তো কি হয়েছে, এটা তো নতুন না, অনেক বছর থেকেই এমন করছে।
দিয়া- কেন করে এমন বলো তো, কি করেছি আমি উনাকে যে আমাকে একটুও দেখতে পারে না। হিয়াকে কতো ভালোবাসে।

অভি- আমি তো সেজন্য তোকে দ্বিগুণ ভালোবাসা দিচ্ছি। এতেও খুশি না তুই, যা দুঃখ পেলাম।
দিয়া তাড়াতাড়ি অভির এক হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
অভি- প্লিজ দাদাভাই দুঃখ পেয়ো না, আমি তো এমনি বললাম। আমার শুধু তুমি হলেই চলবে। ওনাকে তো আমিও ভাই বলে মানি না।
অভি- ঠিক আছে এবার বাসায় যা, নাহলে তোর হিটলার বাপ বকবে। আর বিকালে তাড়াতাড়ি চলে আসবি।
আচ্ছা বলেই দিয়া, বাসার দিকে হাঁটা দিলো। অভি দিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো

অভি- অপ্রকাশিত ভালোবাসা যদি তুই বুঝতি।
অভি বাসায় এসেই অগ্নির রুমে গিয়ে সোজা ওর বেডে শুয়ে পড়লো। অগ্নি তাকালো ভাইয়ের দিকে, তবে মুখে কিছুই বললো ন। অভি নিজে থেকেই বললো।
অভি- তোমার কাজ করে এসেছি দাদাই।
অগ্নি- আমার কি কাজ??
অভি- তোমার দেওয়া গিফট পৌঁছে দিয়ে এলাম।

অগ্নি- ভুল করছিস, ওটা আমার না তোর দেওয়া গিফট।
অভি- তাই নাকি? সেজন্যই তো আজ পর্যন্ত জানলাম না ওই গিফট বক্স গুলোতে কি থাকে।
অগ্নি- তা জেনে তোর কাজ নেই।
অভি- হুম সেটাই।
অগ্নি- আলমারিতে তোর গিফট টাও আছে নিয়ে নে।
অভি- ওটা গিফট নাকি ঘুষ দাদাই??

অগ্নি চোখ গরম করে তাকালো,, অভি বোকার মতো হাসি দিয়ে বললো
অভি- এমন ভাবে তাকানো কি আছে, ঘুষ বা গিফট একটা হলেই হলো।
বলেই আলমারি থেকে নিজের গিফট বক্সটা বের করলো, খুলে দেখে খুব সুন্দর একটা বেন্ডের ঘড়ি, অভি খুশি হয়ে ভাইকে বললো
অভি- thanks দাদাই।

অগ্নি- ঠিক আছে, এবার রুম থেকে বের হও।
অভি রুম থেকে বের হওয়ার আগে একটু দুষ্টুমি করে, মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
অভি- মা, বিকালে পিসিমনিরা আসবে, (আর খুব আস্তে করে বললো) কিন্তু দিয়া আসবে না। ( যেটা শুধু অগ্নি শুনতে পেলো)
সাথেসাথেই অগ্নি বললো,

অগ্নি- অভি দাঁড়া। কি বললি তুই??
অভি- কি বললাম আমি,,
অগ্নি – পিসিমনিরা আসবে তারপর কি বললি,
অভি- তারপর কি বললাম??
অগ্নি – দিয়ার কথা কি বললি??
অভি- ওহ্ দিয়ার কথা,,, ও আসবে না।
অগ্নি – কেন?
অভি- তোমার জন্য।।।
অগ্নি – আমি কি করলাম।

অভি- তুমি ওর সাথে কথা বলো না, এতে বেচারি ভীষণ কষ্ট পায় বললো আমাকে। তাই আসবে না।
অগ্নি – ওহ।
অভি – আরো কি বললো জানো??
অগ্নি – কি??
অভি- তোমাকে নাকি ভাই বলে মানে না।
অভির কথা শুনে না চাইতেও অগ্নির মুখে হাসি ফুটে উঠলো, মনে মনে বললো,,
অগ্নি – আমি ওর ভাই হতেও চাই না,,, আর ও আমার বোন নাাা, আমার বোন শুধু হিয়া।

দিয়া রুমে এসেই গিফট বক্স খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, বক্স খুলতেই অনেক গুলো চকলেট, কলম, গল্পের বই পেলো,আর প্রতিবারের মতো একটা চিরকুট। চিরকুটে লেখা আছে।
(অগ্নি)- বই গুলো পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পড়বি, এই কলম গুলো দিয়েই পরীক্ষা দিবি। সব সময় হাসি খুশি থাকবি, আমার পিচ্চি পরী।।।

প্রত্যেক টা চিরকুটে ” পিচ্চি পরী ” বলেই সম্বোধন করা থাকে, কিন্তু অভি সরাসরি কখনোই পিচ্চি পরী বলে ডাকে না। এ বিষয় টা ভাবনায় ফেলে দিয়াকে, জিজ্ঞেস করবে করবে ভেবেও করা হয় নি। বাবার ডাকে দিয়া সব বিছানার উপর রেখেই ছুট লাগালো ড্রয়িং রুমের দিকে। মেয়ে দেখে দীপক সাহা বললো
দীপক সাহা – বিকালে তোমার প্রাইভেট আছে না??
দিয়া- হুম বাবাই।

দীপক সাহা – প্রাইভেট শেষ করে, তুমি সাইকেল নিয়ে চলে যেতে পারবে না তোমার মামার বাড়িতে।
দিয়া- পারবো বাবাই।
দীপক সাহা স্ত্রী উদ্দেশ্য বললো,
দীপক সাহা -তোমরা আগে চলে যেও,দিয়া প্রাইভেট শেষ করে যাবে। আর আমি রাতে গিয়ে নিয়ে আসবো। আবার বাবার বাড়িতে থাকার বায়না করো না।
স্বামীর কথায় তনুশ্রী দেবী কষ্ট পেল, বাবার বাড়ি কাছে হওয়ার শর্তে ও তিনি খুব বেশি যেতে পারে না। আজকে অভি না বলে গেলে কখনোই যেত দিতো না।

পাশের রুম থেকে হাসি আর কথার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো অগ্নির। প্রথমে একটু বিরক্ত হলো, এতো সুন্দর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে তারপর কিছু একটা মনে পড়তেই তাড়াহুড়ো করে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে পাশের রুমে গেলো, মা আর পিসিমনি কোন বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে। অগ্নি গিয়ে পিসিমনিকে প্রণাম করে জড়িয়ে ধরলো।
অগ্নি – কেমন আছো পিসিমনি।

তনুশ্রী দেবী- ভালো আছি বাবু, তুই কেমন আছিস??
অগ্নি – আমি ও ভালো আছি পিসিমনি।
তনুশ্রী দেবী – এতো শুকিয়ে গেছিস কেন বাবু??
অগ্নি হেসে বললো,,
অগ্নি- আমি মোটেও শুকায় নি, আগের মতোই আছি।

তনুশ্রী দেবী আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো অগ্নি মুখে। অগ্নি আর অভি পিঠাপিঠি হওয়াতে ছোটবেলায় অগ্নি তার পিসিমনি কাছেই বেশি থাকতো। উনি একবছরে অগ্নিকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে। অভি অগ্নি দু’জনকে অনেক বেশি ভালোবাসেন।অগ্নির যখন নয় বছরের ছিলো,তখন তনুশ্রী দেবীর বিয়ে হয়।
অগ্নি চোখ যে অন্য কাউকে খুঁজছে, তাই সে বললো
অগ্নি- পিসিমনি হিয়া কোথায়??
তনুশ্রী দেবী – ড্রয়িং রুমে, টিভি দেখছে৷ তোর পিসা তো ওদের টিভি দেখতে দেয় না, তাই এসেই টিভির সামনে বসে পড়েছে।

অগ্নি- আচ্ছা তুমি গল্প করো, আমি যাচ্ছি ওর কাছে।
ড্রয়িংরুমে যেতেই অগ্নির হাসি মুখ কালো হয়ে গেলো,ও ভেবেছে দিয়াও হয়তো টিভি দেখছে, কিন্তু হিয়া একা বসেই টিভি দেখছে, আর হাসছে। অগ্নিকে দেখেই হিয়া দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
হিয়া- দাদাই কেমন আছো??
অগ্নি মুখে হাসি রেখেই বললো,
অগ্নি – ভালো আছি, তুই কেমন আছিস??
হিয়া- আমিও ভালো আছি।
অগ্নি- কি দেখছিস টিভিতে??

হিয়া- কাটুন।
অগ্নি- তুই কাটুন দেখে শেষ কর, পরে কথা বলবো।
হিয়া- আচ্ছা দাদাই।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি, ভিতরের তুমুল ঝড় টা বাইরে থেকে কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব না। ওর পিচ্চি পরী টা এতোটা অভিমানী কবে হলো, সত্যি এলো না। তাকেই একবার চোখের দেখার জন্যই তো ঢাকা থেকে ছুটে আসে অগ্নি, তা কি কখনো বুঝবে পিচ্চি টা। বুঝবে কিভাবে অগ্নি তো ওর সাথে কথাই বলে না আজকে অনেক বছর। খুব বেশি অভিমান করেছে পিচ্চি টা, নিজের মনেই এসব ভাবছে অগ্নি। হঠাৎ পকেট থেকে ফোন বের করে অভিকে কল দিলো, দুবার রিং হতেই অভি ফোন তুললো

অভি- হ্যাঁ দাদাই বলো
অগ্নি – তোর বোন কই??
অগ্নি এমন প্রশ্নে অভি বোকা বনে গেলো, একটু সময় লাগলো বুঝতে,
অভি- দিয়ার কথা বলছো
অগ্নি- হুম
অভি- আসে নি??
অগ্নি – না।
অভি- পিসিমনি এসেছে??

অগ্নি- হুম, হিয়া আর পিসিমনি আসছে।
অভি- তাদের জিজ্ঞেস কর দিয়া কোথায়?? কেন আসে নি??
অগ্নি – আমি পারবো না, তুই এক্ষুনি বাসায় আয়।
অভি- জিজ্ঞেস যখন করতেই পারবে না, তখন না আসলেও তোমার কি?? ভালো হয়েছে আসে নি।
অগ্নি – প্লিজ অভি, বাসায় আয় তুই, আর জিজ্ঞেস কর ও কোথায়?? আর না হলে তুই গিয়ে নিয়ে আয়।
অভি- কিভাবে নিয়ে আসবো, কোথায় আছে সেটা কিভাবে জানবো?? বাসায় আছে নাকি প্রাইভেট গেছে তাও তো জানি না, একটা ফোন ও নেই সাথে , যে কল করে জানবো কোথায় আছে ।

অগ্নি- আচ্ছা তুই আগে বাসায় আয়।
অভি- আচ্ছা ফোন রাখো আসছি।
অগ্নি ফোন রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো, হঠাৎ নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো, সাইকেল চালিয়ে দিয়া আসছে। হাসি ফুটলো অগ্নির মুখে। অগ্নি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দিয়া সাইকেল থেকে নেমে, ব্যাগ থেকে জল বের করে খেয়ে নিলে, খুব ক্লান্ত দেখাছে মেয়েটাকে। আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে মেয়েটা, হয়তো পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি চাপ যাচ্ছে। দিয়া সাইকেল নিয়ে গেইট পার করে ভেতরে ঢুকে পড়েছে, এখন আর দেখা যাচ্ছে না। অগ্নি বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিজে নিজেই বললো

অগ্নি- তোকে সামনে দেখেও কথা না বলার যন্ত্রণা যদি আমি কাউকে দেখাতে পারতাম। আমার যে ভেতর টা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। এ অসহ্য ব্যাথা যে আর বয়ে বেড়াতে পারি না।
অগ্নি অনেকখন ছাদে কাটিয়ে নিচে নেমে এলো, আবার চলবে মন- মস্তিষ্কের যুদ্ধ।
দিয়া-হিয়া কাটুন দেখছে আর হাসতে হাসতে একজন আরেক জনের গায়ের উপর পড়ছে৷ অগ্নি গিয়ে হিয়ার পাশে বসলো, ভাব টা এমন যেন দিয়াকে দেখেই নি। অগ্নিকে দেখেই দিয়ার হাসি বন্ধ হয়ে গেছে। আড় চোখে একবার অগ্নিকে দেখে নিলো, আর মনে মনে বললো

দিয়া- মামি কেন এ সুন্দর শয়তান তাকে ডাউনলোড করছে, অন্য কেউ যদি এ শয়তানকে ডাউনলোড করতো তাহলে কি বেশি সমস্যা হতো। এটাকে মামাতো ভাই ভাবতেই কেমন লাগে, ধুর কিসের ভাই?? মানি না এটাকে ভাই বলে।
এসব ভেবেই দিয়া আবার তাকালো অগ্নির দিকে, হেসে হেসে কথা বলছে হিয়ার সাথে। তা দেখে আবারও মনে মনে বললো
দিয়া- আমি তোর কোন পাঁকা ধানে মই দিয়েছি, যে আমার সাথে কথা বলিস না, আর হিয়ার সাথে তো হেসে হেসে কথা বলিস, শয়তান, বদের হাড্ডি।

দিয়া রাগে উঠে চলে গেলো,ভিতরের দিকে, সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো অগ্নি।
রায় বাড়িতে রাতের ভোজের বিশাল আয়োজন করা হয়েছে, বাড়ির একমাত্র জামাই এসেছে। দীপক বেশ খাতির যত্ন পায় শশুড় বাড়িতে। রাতের খাবার না খাইয়ে যেতে দিলো না আদিত্য রায়। একমাত্র ভগ্নিপতি আদর যত্নে কোন কমতি রাখেন না তিনি। একসাথে সবাই খেতে বসলো। অভির পাশে দিয়া আর অগ্নির পাশে বসেছে হিয়া।
আদিত্য রায় আর দীপক টুকটাক কথা বলছে, হঠাৎ করে আদিত্য বড় ভাগনির উদ্দেশ্য বললো
আদিত্য – পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন দিয়া?? A+ চায় কিন্তু।
দিয়া- প্রিপারেশন ভালো মামা, আর্শীবাদ করবেন।
দিয়া মনে মনে বললো

দিয়া- (A+ তো গাছের কলা, তোমাদের চায় আর আমি পড়ে এনে দিয়ে দিবো। A+ এর চক্করে আমি দিন দিন শুকিয়ে যে কাঠ হয়ে যাচ্ছি, সেটা কেউ দেখছে না।)
দিয়া আর খেতে পারছে, খাবার প্লেটে জল দিয়ে দিবে, এমন সময় অভি ওর হাতে ধরে ফেললো, আর বললো
অভি- কি করছিস তুই?
দিয়া কাচুমাচু করে বললো,
দিয়া- আমার খাওয়া শেষ দাদাভাই।

অভি- কি খেলি তুই, যে তোর খাওয়া শেষ। সব গুলো তরকারি দিয়ে খাওয়া শেষ করবি।
দিয়া- এতো তরকারি দিয়ে খাওয়া সম্ভব না দাদাভাই। রাতে বেশি খেলে আমার হাঁসফাঁস লাগে।
অভি-আচ্ছা সব খেতে হবে না,তবে শরীরের জন্য যতোটুকু প্রয়োজন ততোটুকু তো খেতে হবে। আর হাঁসফাঁস লাগবে না,খাওয়া শেষ আশ্রম পাড়া থেকে হেঁটে আসবো।
দিয়া- খাওয়া শেষে তো আমরা চলে যাবো দাদাভাই।
অভি- কেউ কোথাও যাবে না।

অভি কথা শুনে দীপক সাহা স্ত্রী দিকে তাকালো, স্বামীর চাহনি দেখে তনুশ্রী দেবী তাড়াতাড়ি বলে উঠলো
তনুশ্রী দেবী – শুন না বাবা, আমার আজকে চলে যাবে, সকালে তোর পিসাকে কাজে যেতে হবে, আর এখন বাড়িতে গিয়েও কিছু কাজ করবে, আমরা না গেলে সমস্যা হয়ে যাবে বাবা।
অভি- ঠিক আছে তাহলে তুমি আর পিসা চলে যাও। দিয়া- হিয়া এ রাতের বেলা কোথাও যাবে না।
তনুশ্রী দেবী আবার কিছু বলতে গেলে, অভি থামিয়ে দিয়ে বললো,

অভি- দিয়াকে সকালে আমি প্রাইভেটে দিয়ে আসবো, ওখান থেকেই কালকে বাড়িতে চলে যাবে।
অভি কথার উপর আর কেউ কিছু বললো না,সারাটা সময়ে অগ্নি ছিলো একদম চুপ। রাত সাড়ে দশটায় দীপক সাহা স্ত্রী নিয়ে চলে গেছেন। তাদের পিছনে অভি- অগ্নি, দিয়া- হিয়া হাঁটতে বের হয়েছে। পুরো আশ্রম পাড়া একবার চক্কর দিয়ে নিয়েছে হিয়া- দিয়া। পিছনে অগ্নি আর অভি ও আছে। হঠাৎ দিয়া অভির কাছে আবদার করে বসলো,
দিয়া- দাদাভাই চলো না, মেইন রোড থেকে হেঁটে আসি।

অভি- মাথা খারাপ তোর? এতো রাতে মেইন রোডে যাওয়ার কথা বলছিস।
দিয়া- তো কি হয়েছে, চলো না দাদাভাই। আমরা কখনো রাতে বেলা বের হতে পারি না, রাতের বেলা মেইন রোড নাকি খুব সুন্দর লাগে, আর তেমন গাড়ি ও থাকবে না।
অভি অগ্নির দিকে তাকালো, অগ্নি চোখে ইশারা দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলো, অভি বললো

প্রেম পরিণয় পর্ব ২