পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৯

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৯
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার দিন সকাল সকাল স্কুলে এসে বসে আছে ছোঁয়া। সাথে অবশ্য মাইশাও রয়েছে। আজকে যেনো একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে ওরা। এখনো পর্যন্ত তেমন কেউই আসেনি। তাই ওরা স্কুলের ভিতরে না ঢুকে বাহিরের মাঠে বসে আছে।
ওদের স্কুলে দুটো মাঠ একটা স্কুলের বাহিরে আরেকটা স্কুলের গেইটের ভিতরে।
ছোঁয়া বসে বসে আশেপাশে দেখছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। মাইশা চিপ্স চিবুচ্ছে।
ছোঁয়া বিরক্ত হয়ে মাইশাকে বলে উঠলো,,

চল তো উঠি আর ভালো লাগছে না।
মাইশা বললো,
তা তুই যাবি কোথায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গেটের ভিতরে বকুল গাছের সামনে গিয়ে ফুল কুরাবো এখন অল্প অল্প ফুল ফুটেছে হাল্কা শিত পড়েছে তো তাই।
হ্যাঁ আর সেই শীতে তুই বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছিস।
ছোঁয়া বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো, উফ এত কথা না বলে চলতো।
হুদাই আমার উপর বিরক্তি দেখাচ্ছিস কেনো,, সে আসে না সেই দোষ কি আমার।

ছোঁয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
আরেহ কে আসে না আমি তো
রাদিফের জন্য বসে নাই এখানে।

মাইশা শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো, তো আমি কি বলেছি নাকি যে তুই রাদিফের জন্য বসে আছিস।
ছোঁয়া থতমত খেয়ে গেলো। কথা এড়াতে মাইশার হাত ধরে টানতে টানতে স্কুলের ভিতরে যেতে যেতে বললো, বেশি কথা বলিস তুই চল তাড়াতাড়ি।

গেটের সামনে একটা বকুল গাছ আছে। খুব বেশি বড় না মোটামুটি। ছোঁয়া বসে বসে ফুল কুড়াচ্ছে আর স্কুল ড্রেসের জামার মধ্যে নিচ্ছে। খুব মনোযোগ সহকারে সে ফুল কুড়ানো তে ব্যস্ত। মাইশা কপাল কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, মানে কি একটা অবস্থা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে এসে এই মেয়ে বকুল ফুল কুড়াচ্ছে।

এমন সময় প্রেয়সী, সোহেল, সাব্বির, রাদিফ সহ আরো কয়েকজন ছেলে মেয়ে গেইট দিয়ে ঢুকলো।
মূলত তারা প্রাইভেট পড়ে স্কুলে আসছে। সকালে তাদের হিসাববিজ্ঞান প্রাইভেট ব্যাচ রয়েছে।
রাদিফের নজর গেলো পাশে থাকা বকুল গাছ তলায় এক কিশোরীর বসে বসে ফুল কুড়ানোর দৃশ্য।

এর মধ্যে প্রেয়সী মাইশাকে দেখে ডেকে উঠলো,
কিরে মাইশা তুই এখানে কি করিস।
প্রেয়সীর গলা শুনে ছোঁয়া তাকালো ওদের দিকে, এতগুলো মানুষ দেখে চমকে তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে গেলো, ফলস্বরূপ কোলের উপর জামার মধ্যে রাখা সমস্ত ফুল পুনরায় মাটিতে পড়ে গেলো।

ফুলগুলো মাটিতে পড়ার সাথে সাথে ছোঁয়া নিচের তাকালো, দেখলো এতক্ষণ কষ্ট করে কুড়ানো ফুলগুলো মাটিতে পড়ে আছে।
সে একবার নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকালো, আরেকবার মাইশার দিকে তাকালো, আর একবার প্রেয়সী দের দিকে তাকিয়ে তারপরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।

হঠাৎ কারো কান্নায় সবাই তাকালো ছোঁয়ার দিকে। সবাই হকচকিয়ে গিয়েছে ওর এমন হঠাৎ কান্নায়।
মাইশা আর প্রেয়সী এগিয়ে এসে ছোঁয়া কে জিজ্ঞেস করছে ওর কি হয়েছে কি জন্য কাঁদছে, কিন্তু ছোঁয়া কোন উত্তর দিচ্ছে না কেঁদেই চলেছে। সবাই অবাক হয়ে সুধু ওর কান্না দেখছে। মাইশা আর প্রেয়সী বারবার জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে ওর কান্নার কারণ। ছোঁয়া প্রায় ৫ মিনিট কান্না করার পরে ওদের কথার উত্তর দিলো। বললো,

আপু এতক্ষণ এত কষ্ট করে কতগুলো ফুল কুড়ালাম ভেবেছি মালা গাথবো কিন্তু সবগুলো পড়ে গেলো। বলেই আবারো কান্না শুরু করে দিয়েছে।
আর ওইখানে থাকার ওরা সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। মানে সামান্য ফুলের জন্য এভাবে কান্না। মাইশা যদিও জানে ছোঁয়া কেমন বাচ্ছামো করে তবুও এই মুহূর্তে সেও ভ্যাবাচেকা খেয়েছে।

রাদিফ খুব অবাক হয়ে ওকে প্রশ্ন করল,
তুমি এই সামান্য ফুলের জন্য এভাবে কাঁদছো।
রাদিফের গলা শুনে সাথে সাথেই ওর কান্না অফ হয়ে গেলো।
সে সামনে তাকিয়ে রাদিফ সহ এতগুলো ছেলে মেয়েকে দেখে লজ্জায় চোখ খিচে বন্ধ করে রইলো।
সোহেল আর সাব্বির হাসতে হাসতে বললো, আরে তুমি তো দেখি একেবারে পিচ্চি।

মাইশা বললো, আরে ওর কথা বলে লাভ নাই ওর চেয়ে তো ক্লাস ফাইভের বাচ্চা ও ভালো। ওর জন্যে আংকেল চকলেট আইসক্রিম না আনলেও ও কান্না করে হাহাহা।
ওদের কথা শুনে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই হাসছে।
ছোঁয়া চোখ খুলে মাইশার দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো পারলে এক্ষুনি খেয়ে ফেলবে।
মাইশা ওর দৃষ্টি দেখে চুপসে গেলো।
ওদের হাসির শব্দ শুনে আবারো লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।

প্রেয়সী ছোঁয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
আরেহ কি সুরু করেছিস এখানে দাঁড়িয়ে যা তোরা ক্লাসে যা।
প্রেয়সীর কথায় একে একে সবাই ওখান থেকে চলে গেলো। সবার শেষে সাব্বির আর সোহেল যেতে যেতে ছোঁয়াকে বললো, আরে পিচ্ছি কাঁদে না চকলেট দিবোনি।
প্রেয়সী চোখ পাকিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা তাড়াতাড়ি করে কেটে পড়লো।

রাদিফ এতোখন দারিয়ে সবটা দেখছিলো। তারপরে সেও কিছু না বলে ক্লাসরুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো
তারপর প্রেয়সী ছোঁয়াকে বললো চলো তোমাকে ফুল কুড়িয়ে দেই।
ছোঁয়া কিছু বলবে তার আগেই মাইশা বললো,
কিন্তু আপু এখন তো সময় নেই একটু পরেই পরীক্ষা।
ছোঁয়া ওর কথা শুনে প্রিয়সীকে বললো, আরেক দিন দিও আপু আজকে যাই।
এই বলে কোনরকম ওখান থেকে ছুটে পালালো।

রুমে আসতেই মাইশার পিঠে ধামধুম করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো ছোঁয়া।
আর বললো,
কি দরকার ছিলো তোর অতগুলো মানুষের সামনে এইগুলা বলার।
বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
মাইশা বললো,
আরে ইয়ার ইচ্ছে করে বলিনি রে মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিলো, সরি আর বললো না রাগ করিস না।
বলেই করুন চোখে তাকালো।

ছোঁয়া ওর কথা শুনে আর ওর তাকানো দেখে আর রাগ করতে পাড়লো নাহ।
বললো,
পাক্কা প্রমিস।
হ্যাঁ হ্যাঁ পাক্কা প্রমিস।
তারপর দুজনে একসাথে বেঞ্চে বসে পড়লো।

পরীক্ষা শেষে ওরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যাচ্ছিলো। ছোঁয়া আর মাইশা সবার শেষে আস্তে আস্তে এগোচ্ছে।
ছোঁয়া মনে মনে ভাবছে কতগুলো দিন আর দেখতে পাবে না রাদিফকে তাই একটা বার দেখতে ইচ্ছে করছে। খুব করে চাইছে রাদিফ যেনো তার সামনে আসুক কিন্তু আবার সকালের ঘটনার জন্য লজ্জাও পাচ্ছে।
এমন সময় হুট করেই রাদিফ স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে তাদের ক্লাস রুমের দরজা দিয়ে বেরুচ্ছে। হয়তো কোন দরকারে স্যারের সাথে যাচ্ছে।

রাদিফও সামনে তাকাতে ওদের দেখতে পায়। এক পলক তাকিয়ে স্যারের সাথে নিচে চলে যায়।
ছোঁয়া আর মাইশাও দারিয়ে না থেকে নিচে চলে যায়।
মাইশার হাত ধরে মন খারাপ করে স্কুল গেইটের দিকে যায় ছোঁয়া।

রাদিফ অফিস কক্ষের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের যাওয়া দেখছিলো।
স্যার ওকে অফিস কক্ষে নিয়ে এসেছিল কিছু দরকারে।
রাদিফ আর দাঁড়ালো না উপরে ক্লাসরুমে চলে গেলো।

স্কুল থেকে ফিরে নিজের রুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে না খেয়েই এক ঘুম দিয়েছে ছোঁয়া এখনো ওঠার নাম নেই। আনিতা বেগম ডেকে ডেকে হয়রান। অবশেষে বিরক্ত হয়ে আর ডাকতেই আসেনি।
আর ওই দিকে বিকেলে ছাদে বসে আছে রাদিফ। স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়ায় ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে বিকেলে ছাদে বসেছে সে একটু পরেই খেলতে বের হবে। তাই ভাবলো এখন একটু ছাদে আসা যাক।

হঠাৎ রাদিফের সকালের ঘটনাটি মনে পড়লো। মুচকি হাসলো রাদিফ ছোঁয়ার কাণ্ডকারখানা মনে করে।
মনে মনে বললো,
মেয়েটাকে দেখে মনে হয় অনেক ম্যাচুয়ের কিন্তু তার মধ্যে তো ম্যাচুরিটির ম ও নেই একেবারে বাচ্চা। দেখতেও বাচ্চা আর সভাবও অথচ দেখলে মনে হয় অনক ম্যাচুয়ের।
ভাবতে ভাবতেই হাত ঘরিতে তাকিয়ে দেখলো বিকাল ৪ টা বাজে আর দেরি না করে নিচে নামতে লাগলো খেলার সময় হয়ে যাচ্ছে।

রাদিফ একটা প্রাণবন্ত ছেলে। বন্ধুবান্ধবদের সাথে সবসময় হাসি ঠাট্টা নিয়ে থাকে। অথচ অন্য মানুষের সামনে এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে খুব গম্ভীর।
কিন্তু কিছুদিন ওর সাথে মিশলেই বোঝা যায় সে মোটেও গম্ভীর নয় বরং সবার সামনে গম্ভীর ভাব ধরে থাকে স্যাররা তাকে খুব ভালো বলে কিনা তাই।

সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে থম মেরে বসে আছে ছোঁয়া। সকালের ঘটনাটি মনে করে এখনো লজ্জা পাচ্ছি সে।
আসলে সে এত লজ্জা পেতো না এগুলা তো তার নিত্যদিনের কাহিনী সেই লজ্জা পাচ্ছে মূলত রাদিফ ওইখানে থাকায়। ও প্রথমে খেয়াল করেনি রাদিফকে।
ওর ভাবনার মাঝে আনিতা বেগম ওকে ফ্রেশ হয়ে খেতে ডাকলে ও বললো,
আব্বু আসলে খাবো আম্মু এখন আমাকে নুডুলস দাও করে দাও প্লিজ।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৮

আনিতা বেগম বললেন,
তোর আব্বু বিজনেসের কাজে বাহিরে গেছে ২ দিন পরে ফিরবে।
সকালে তুই স্কুলে গিয়েছিলি তাই বলতে পারিনি আর্জেন্ট কাজ পরেছে এবার বাহানা না করে আয় খেয়ে নে দুপুরে খাসনি।
ছোঁয়া মুখ ফুলিয়ে মায়ের পিঁছু পিঁছু গেলো।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১০