পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১০

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১০
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল,
গায়ে শাল জড়িয়ে ব্যালকনিতে বসে বসে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী, কখনো বা রাস্তা দিয়ে ব্যস্ত পায় হেঁটে যাওয়া মানুষ দেখছে।
শীতকে উপেক্ষা করে কতো মানুষজন হেঁটে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে, আবার অনেকে আছে লেপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে।

অবশ্য সেও বা কম কি, প্রতিদিন তো এই ঘুমানোর কাজটা ছোঁয়া নিজেও করে। আজ তার মা তাকে টেনে তুলেছে নয়তো কি আর সে উঠতো অবশ্য ভালোই হয়েছে মা তারাতারি ডেকে তোলাতেই তো এই সুন্দর শীতের সকাল উপভোগ করতে পারছে।
ছোঁয়ার এইসব ভাবনা-চিন্তার মাঝেই আনিতা বেগম আসলেন,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিরে ছোঁয়া বেলকনিতে বসে বসে কি করছিস তুই?
একটু পরেই তো বেরোবো আমরা রেডি হোসনি এখনো। তোর রেডি হতে দেরি হয় তাইতো তোরে আগে আগে ডেকে তুল্লাম আর তুই এখানে বসে আছিস এখনো।
মায়ের কথা শুনে ছোঁয়া বসা থেকে উঠে বললো,
আম্মু শীত করছিল তো তাই বসে ছিলাম চুপ করে আমার বেশি সময় লাগবে না এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।
বলেই রুমে চলে গেলো।

আনিতা বেগমও চলে গেলেন ডাইনিং রুমে। সকালে হালকা খেয়ে বেরোবেন তারা।
গারিতে বসে আছে ছোঁয়া সাথে আনিতা বেগম সাফি, সুফিও আছে। তারা ছোঁয়ার দাদা বাড়ি গ্রামে যাবে বেড়াতে।
ডিসেম্বরের ১ তারিখ, শিত ভালোই পরেছে। ছোঁয়ার বরাবরই শিত বেশি। হুডি মুজা জুতা পরেও নাকি ওর শিত করছে। একটু পর পর মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে,
আম্মু আমার শিত করছে।

ছোঁয়ার কথায় বেশ বিরক্ত আনিতা বেগম। এতো কিছু পরেও নাকি ওর শিত করছে। কি দিয়ে তৈরি মেয়েটা।
সাহেদ চৌধুরী এসে গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলা সুরু করলো।
অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়েছেন উনি। ছোঁয়ার পরিক্ষা তো অনেক অনেক আগেই শেষ। সুফি কিন্ডারগার্টেনে পরে তাই ডিসেম্বর মাসের আগে ওর পরিক্ষাও শেষ। তাই পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছে বেড়াতে।

আনিতা বেগমের দুই পাশে দুই মেয়ে বসেছে কোলে সাফি ঘুমিয়ে আছে আর সামনে ড্রাইভারের সাথে বসেছেন সাহেদ চৌধুরী।
ওদের গাড়ি বাজারে আসতেই সাহেদ চৌধুরী ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন। ছেলে মেয়েদের জন্য শুকনো খাবার কিনে আনতে যাবে।

ছোঁয়া বাবাকে বললো,
বাবা আমিও যাবো তোমার সাথে।
সাহেদ চৌধুরী ছোঁয়াকে নিয়ে গেলেন দোকানে।
খাবার কিনে গাড়ির দিকে আসতে যাবে তখনি কেও একজন ছোঁয়ার নাম ধরে ডাকলো পেছন থেকে।
সাহেদ চৌধুরী আর ছোঁয়া পেছনে ঘুরে দেখলো তামিম ডাকছে।

সাহেদ চৌধুরীকে দেখে তামিম একটা সালাম দিলো। তিনি সালাম এর উত্তর দিলেন। কুশল বিনিময় করে তারপর জিজ্ঞেস করলো,
আঙ্কেল এত সকালে আপনারা এইখানে?
সাহেদ চৌধুরী বললেন, গ্রামে যাচ্ছি সবাইকে নিয়ে। গারিতে তোমার আন্টি সুফি আর সাফিও আছে আমি ছোঁয়াকে নিয়ে ওদের জন্যে সুকনো খাবার কিনতে এসেছি।

তামিম একবার ছোঁয়ার দিকে তাকালো। তারপর বললো,
ওহ আচ্ছা,, সাবধানে যাবেন আঙ্কেল।
তারপর আবার ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ওকে বললো,
কিছু দিন পরেই তো রেজাল্ট দিবে। টেনশন করো না। সাবধানে থেকো, দুষ্টুমি কমায় কইরো।

ছোঁয়া বিনিময়ে মুচকি হাসলো। তারপর বললো, আচ্ছা স্যার।
সাহেদ চৌধুরী তামিমের কথাগুলো স্বাভাবিক ভাবেই নিলেন। যেহেতু ও ছোঁয়াকে পড়ায় এইটুক তো বলতেই পারে। ছোঁয়া যা দুষ্টুমি করে তাই ওকে সবাই এমন কথা বলে।

সাহেদ চৌধুরী বললেন, আচ্ছা থাকো তাহলে আসছি।
আচ্ছা আঙ্কেল।
তারপর ছোঁয়া তার বাবার হাত ধরে গাড়ির দিকে চলে গেলো।
তামিম ছোঁয়ার যাওয়ার পনে তাকিয়ে রইলো। সেদিনের পরে ছোঁয়াকে আর দেখতে পায়নি তামিম।

কতো দিন গিয়েছে ছোঁয়ার বাসার সামনে কিন্তু ভিতরে যায়নি। যাবেই বা কি করে ছোঁয়ার পরিক্ষা তো শেষ, এখন আর ওকে পড়ায় না। এভাবে কোনো কারন ছাড়া যাওয়াটা ভালো দেখায় না। তাই সে ছোঁয়ার ব্যালকনির সামনে দারিয়ে থাকতো একটা বার তার প্রেয়সীকে দেখার আসায়। আজ কতো দিন পরে দেখতে পেলো।
কিন্তু সে এতো দূরে যাচ্ছে ভেবে আবারও মনে মেঘ যমলো তামিমের। তারপর আবার মনকে সান্তনা দিলো,

এইতো আর কিছু দিন তারপরে তো আবারো প্রতিদিন পড়াতে গেলে দেখতে পারবে সে ছোঁয়াকে।
এই ভেবে পিঁছু ঘুরে হাটতে লাগলো।
সাহেদ চৌধুরী আর ছোঁয়া গারিতে এসে বসতেই আনিতা বেগম বলে উঠলেন,
এতোখন লাগে সামান্য কয়েকটা চিপস বিস্কিট কিনতে।

সাহেদ চৌধুরী বললেন,
তামিমের সাথে দেখা হয়েছিলো ওর সাথে কথা বললাম তাই একটু দেরি হলো।
আনিতা বেগম বললেন,
ওহ।
ছোঁয়া আর সুফি দুই বোন দুটো চিপস নিয়ে খেতে সুরু করে দিয়েছে।

আনিতা বেগম বললেন,
কতো দিন পরে গ্রামে যাচ্ছি কটা দিন খুব ভালো কাটবে।
সাহেদ চৌধুরী বললেন,
হ্যাঁ তা তো বটেই।

তখনি সাফি ঘুম থেকে উঠে বাবা মায়ের কথা সুনে আধো আধো বুলিতে বলে উঠলো, কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগছে না ওইখানে অনেক শিত, আর ভুত আছে।
আমায় যদি ভুতে নিয়ে যায়।

ওর কথা সুনে সবাই হেসে উঠলো।
ছোঁয়া বললো তবে দিয়ে দিবো তোকে ভালো হবে না বল তো।
বলেই হাসতে লাগলো।

সাফি ওর কথা সুনে কেঁদে দিয়েছে।
আনিতা বেগম ওকে এক ধমক দিয়ে বললো, দিলি তো আমার ছেলেটা কে কাঁদিয়ে।
ছোঁয়া মায়ের ধমক খেয়ে চুপ করে মুখটিপে হাসছে।
সাফি আবার কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার কারনে সুফিও ঘুমিয়ে গেছে।

ছোঁয়া বাহিরে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। শহর থেকে একটু ভিতোরে গ্রামের দিকে চলে এসেছে তাদের গাড়িটা।
সে বসে বসে বাহিরের দৃশ্য উপভোগ করছে।
সকাল থেকে একটানা পড়ছে রাদিফ। কাল থেকেই তার বার্ষিক পরীক্ষা। তাই কোন দিক না তাকিয়ে পড়ে যাচ্ছে সে। পড়তে পড়তে ঘরির দিকে তাকালো ৪:৪৫ বাজে। বই বন্ধ করে উঠে দাড়ালো। বেগে বই খাতা ঢুকিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো প্রাইভেট পড়তে যওয়ার জন্যে।

প্রেয়সী আগে আগে এসে বসে আছে কেও আসছে নাহ।
উফ কেনো যে আগে আগে আসতে গেলাম।
তখনি রাদিফ আসলো।
প্রেয়সী বললো অবশেষে আসলি তুই আমি একা সেই কখন থেকে বসে আছি।

রাদিফ বললো, আসলি কেনো আগে আগে। কাল পরিক্ষা এতো তারাতারি না এসে বাসায় পড়তে পারলি নাহ।
প্রেয়সী বললো,
তা তুই যে এতো জ্ঞান দিচ্ছি তুই কোন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হইছিস তুই কেনো আসলি আগে আগে।
আমি আগে আসি নাই ৪:৪৫ বের হইছি বাসা সামনে ৫ মিনিট লাগছে চলে আসছি। তোর মতো ১ ঘন্টা আগে আসি নাই।

প্রেয়সী কিছু বলবে তখনি স্যার চলে এসেছে। স্যারের পিঁছু পিঁছু বাকি সবাই আছে।
প্রেয়সী আর কিছু বলতে না পেরে মুখ ফুলিয়ে সামনে তাকালো।
প্রাইভেট শেষে যে যার যার বাসায় চলে যেতে লাগলো।
আজ স্কুল বন্ধ। কাল থেকে পরীক্ষা তাই আজকে বন্ধ দিয়েছে। ওরা সবাই প্রাইভেটের জন্য এসেছিলো।

রাদিফ, সোহেল, সাব্বির পড়ার বিষয়ে কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলো।
তখনি সাব্বির বলে উঠলো,
ভাই ছোঁয়া মেয়েটা কে কেমন লাগে রে।

রাদিফ কপাল কুঁচকে তাকালো ওর দিকে । বললো, কি সব বলছিস আবোল তাবোল। আমরা এইখানে কি বলছি আর তুই কি নিয়ে এসেছিস।
সাব্বির বললো,
আরে রাখ তোর পড়া আগে বল মেয়েটা কেমন।

রাদিফ বললো, কোন মেয়ে।
আরে ওই যে ছোঁয়া,,,
আমাদের সামনে পড়ে গেছিলো যে মেয়েটা।
কি মায়াবী মুখ দেখছিস।
দেখলে লাগে যে চুপচাপ কিন্তু দুষ্টু আছে। সেদিন যে কান্না করলো চোখের পানিতে আরো মায়াবী লাগছিলো।
আমার তো খুব ভালো লাগে ওরে।

রাদিফ ওর কথা সুনে বললো,
আন্টির কাছে বলবো তার ছেলে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কি সব বলছে যদি চাস যে কিছু না বলি তাহলে চুপচাপ ভদ্র ছেলের মতো পড়াশোনা করবি। আর ওই মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাবি নাহ ভাববি ও তোর বোন। সুধু ও কেনো কারো দিকে তাকাবি না বলদ।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ৯

বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেলো।
সাব্বির সোহেল বোকার মতো তাকিয়ে রইলো ওর চলে যাওয়ার দিকে। কি হলো হঠাৎ ওর কিছুই বুঝলো নাহ ওরা।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১১