আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৯

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৯
Raiha Zubair Ripte

-“ তুষার ভাই আপনি কি কেথাও যাবেন?
তুষার সোফায় বসে জুতা পড়ছিলো। অধরার কথা শুনে জুতার ফিতা লাগাতে লাগাতে বলে-
-“ হ্যাঁ যাব,তৃষ্ণাদের ভার্সিটিতে। কেনো?
অধরা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে বলে-

-“ না মানে আমাকে একটু ভার্সিটি তে ড্রপ করে দিতেন।
তুষার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোফা থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে প্যান্টের পকেটে ভরে বলে-
-“ রহিম কে বলে দিচ্ছি পৌঁছে দিয়ে আসবে।
অধরা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়। তুষার নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা আর তৃষ্ণা। তৃষ্ণা মূলত দাঁড়িয়ে আছে চিত্রার হবু হাসবেন্ড কে দেখার জন্য। বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও যখন চিত্রার হবু হাসবেন্ড এর দেখা মিললো না তখন হাত ঘড়ি টায় সময় দেখে নিয়ে চিত্রা কে বলে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ দোস্ত তুই আজ এনজয় কর জিজুর সাথে। আমি অন্য দিন দেখা করবো নি।
চিত্রা একবার সামনের গেটের দিকে তাকায়। লোকটা বলেছিল আসবে। তাহলে আসছে না কেনো?
-“ আচ্ছা সাবধানে যাস।
তৃষ্ণা চিত্রার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। চিত্রা ক্যাম্পাসে থাকা হিজল গাছের নিচে বসে পড়ে। না জানি তার এমপি মহাশয় কখন আসবে। আদতে আসবে নাকি?

প্রায় মিনিট দশেক পর নিজের সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ঘামার্তক শরীর নিয়ে মুখে মাক্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আরে এমন ঘেমে গেছেন কেনো? কার দৌড়ানি খেয়েছেন?
তুষার আশেপাশে তাকিয়ে বলে-

-“ আগে গাড়িতে চলুন। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি না।
চিত্রা আশেপাশে তাকালো।
-“ ওমা কেনো এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে কি হবে?
-“ তেমন কিছুই হবে না আমার, যা হবার আপনারই হবে।
-“ কি হবে?
-“ জ্বলন।
-“ হোয়াই?

-“ দেখছেন না মাক্স পড়ে আছি। যদি মাস্ক খুলি আপনার সতিন হবার জন্য কিছু মেয়ে দৌড়ে চলে আসবে।
-“ ওহ্ আচ্ছা, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি সেলিব্রেটি। আপনার ফ্যান ফলোয়ার গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তা ভাবি এমপি মহাশয়, এমপি হওয়ার আগেই এতো লেট করলেন কেনো আসতে? আমার ফ্রেন্ড যে আপনাকে দেখতে না পেয়ে চলেই গেলো।
-“ আজ দেখা হয় নি তো কি পরের বার হবে দেখা। আর আসার পথে পার্টি অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছিল সেটাই মিটমাট করতে খানিকটা দেরি হলো।

-“ তাহলে এখন কোথায় যাব আমরা?
-“ চলুনই না। তারপর ভাবা যাবে কোথায় যাওয়া যায়।
চিত্রা কোমরে হাত দিয়ে বলে-
-“ মাঝ পথে আবার আমাকে ফেলে ইমার্জেন্সি তে চলে যাবেন না তো?
তুষার হেঁসে ফেলে। যা মাক্সের কারনে চিত্রার নজরে আসে না।
-“ ইমার্জেন্সি আসলেও মিস আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে তারপর যাব।
-“ গুড এবার চলুন।

রাস্তার পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছে আনমনে তৃষ্ণা। দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে,রাফিকে মনের কথা বলাটা ঠিক হবে কি না। যদি রিজেক্ট করে তখন কি হবে? কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই মনটা বিষাদে ভরে গেলো। আকস্মিক ভাবে রাস্তার উল্টোপাশে চোখ যেতেই দেখে রাফি কে। মুহুর্তে চোখ মুখে আনন্দ রা এসে হানা দেয়। রাফি ফুলের দোকানে দাঁড়িয়ে ফুল কিনছে। তৃষ্ণার ইচ্ছে করলো রাফিকে ডাক দিতে।

কিন্তু পরক্ষণে রাফির পাশে রিয়াকে দেখে দু চোখ নোনা পানিতে টইটম্বুর করলো। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হলো। মাথা ভনভন করলো,পা দুটো অবশ হয়ে আসলো।
তড়িঘড়ি করে একটা রিকশা ডাক দিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। আর একটু ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে যে কোনো একটা কান্ড সে করে বসতো। রিকশায় উঠে বসতেই চোখের পানি গুলো বাঁধ ভাঙা নদীর মতো উপচে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। বুকের বা পাশ টায় চিনচিনে ব্যথা করলো৷ ইচ্ছে করলো হৃদপিণ্ডটা টেনে বাহিরে বের এনে টুকরো টুকরো করে কে’টে জিজ্ঞেস করতে, কেনো লোকটাকে ভালোবাসিস এতো।

একহাতের তালু দিয়ে চোখ মুছছে আর অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। চিৎকার করে কান্না করা সম্ভব নয়। রিকশাওয়ালা একটু পর পর তৃষ্ণার দিকে তাকাচ্ছে। তৃষ্ণা বিষয় টা বুঝতে পেরে নিজেকে ঠিক রাখার প্রয়াস চেষ্টা করলো।
রাফি ফুলের দোকান থেকে ফুল গুলো নিয়ে রিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-

-“ আই থিংক ফুল গুলোতে হবে তোর?
রিয়া ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে ফুল গুলো নাড়িয়ে বলে,-
-“ হ্যাঁ হবে। ধন্যবাদ দোস্ত।
-“ শুধু ধন্যবাদে চিঁড়া ভিজবে না। বিয়ের দাওয়াত চাই।
রিয়া লাজুক হেঁসে বলে-
-“ হ্যাঁ দোয়া করিস রায়ানের চাকরি টা হয়ে গেলেই করে ফেলবো।
-“ দোয়া করি সুখী হ। সাবধানে বাড়ি ফিরিস,বাই।

খোলা মাঠ, যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু মাঠ আর মাঠ। এর সীমানা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তার জানা নেই। হয়তো সামনে কিছুটা এগিয়ে গেলে এর সীমানা দেখা যাবে। মাঠের একপাশে রয়েছে ছোট্ট একটা নদী। নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা রঙের রাজহাঁস। নদীর ঠিক পাশেই আছে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর। চিত্রার চোখ মুখ জুড়ে মুগ্ধতা। শহর থেকে খানিকটা দূরে এতো সুন্দর জায়গা থাকতে পারে এ যেন কল্পনাতেও ছিলো না।
তুষার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার প্রিয়তমার মুগ্ধতাকে দেখছে।

এই জায়গা টা ভীষণ পছন্দের তুষারের। মন খারাপ হলেই এখানে এসে একাকী বসে থাকে। মুহূর্তে প্রকৃতি যেনো নিজ দায়িত্বে মন ভালো করে দেয়। চিত্রা কে প্রথমবারের জন্য নিয়ে আসার জন্য মনে হলো এর থেকে সুন্দর জায়গা আর দুটো নেই।
চিত্রা তুষারকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু উঁচু করে জানায়, কি দেখছেন ওভাবে?
তুষার এগিয়ে আসে চিত্রার দিকে। চিত্রার কাছে এসে চিত্রার মাথার বদ্ধ চুল গুলো উন্মুক্ত করে দেয়। মুহুর্তে এক দমকা হাওয়া এসে চিত্রার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। চিত্রা বিরক্ত হয়ে কিছু বলবে এমন সময় তুষার বলে উঠলো-

-“ এবার বেশ লাগছে।
চিত্রা সামনে আসা চুল গুলোকে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ চুল গুলো কেনো খুললেন? দেখুন বিরক্ত করছে তো।
-“ চুলগুলো কে বদ্ধ রেখেও তো আপনি মিস তাদের বিরক্ত করছিলেন। এদের মুক্ত বাতাসে মেলে দেওয়া উচিত। তাদের ও একটা স্বাধীনতা আছে।
চিত্রা আড়চোখে তুষারকে পরখ করে বলে-

-“ আপনার ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না এমপি মহাশয়।
-“ হয়তো।
-“ আচ্ছা এই জায়গাটা কাদের? ভীষণ সুন্দর।
-“ এই জায়গাটা আমার। একটা সময়ে এটা আমার আপনার মিলে আমাদের হবে।
লাস্টের কথা শুনে শরীরে কিছুটা অনুভূতি মিশ্রণ হলো। সেই সাথে কিছুটা লজ্জা। একজন পুরুষের মুখে থেকে কিছু বাক্য শুনলে আপনা-আপনি কিছু অনুভূতি ক্রিয়েট হয় শরীরে যেমনটা চিত্রার ক্ষেত্রে হলো। আমাদের মানে তুষার আর সে মিলেই তো আমাদের নামক স্বত্বা টাকে তৈরি করবে।
চিত্রা কে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকতে দেখে তুষার বলে উঠে –

-“ কোথায় হারিয়ে গেলেন?
চিত্রা ভাবান্তর হয়ে জবাব দিলো-
-“ আমাদের নামক শব্দটায়।
পরক্ষণেই মনে পড়লো কি বলে ফেললো সে। তুষার হাসলো। মেয়েটার মাঝে অনেক রূপ। কখনও বোকাসোকা,কখনও আত্মসম্মান প্রখর, কখনও লাজুকলতা। যাকে বলে পরিস্থিতি মতো নিজেকে চেঞ্জ করা গিরগিটি। গিরগিটি টা নেগেটিভ কিছু বুঝানোর ক্ষেত্রে সচারাচর ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু চিত্রার ক্ষেত্রে এটা নেগেটিভিটির কিছু বহন করছে না।

তুষার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে চিত্রার দিকে তাকাতেই মুখের সকল হাসি মুহুর্তের মধ্যে আকাশে ঢাকা অমাবস্যার রাতের কালো আঁধারের মতো হয়ে যায়। মনে হলো জীবনের দামী জিনিসটাকে সে হারানোর পথে। ধরালো ছুড়ি টা কাছে আসতেই হেঁচকা টানে চিত্রা কে পাশে ফেলে দেয় তুষার। সাথে সাথে ধারালো ছুড়ি টা এসে তুষারের বা হাতে এসে বিঁধে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৮

আকস্মিক ভাবে ধাক্কা খাওয়ায় চিত্রা হুমড়ি খেয়ে সবুজ ঘাসের মধ্যে পড়ে যায়। তুষারের মুখ থেকে মৃদু আহ জাতীয় শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে তুষার বা হাত চেপে ধরে রেখেছে। আর হাত বেয়ে টুপ টুপ করে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১০