আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৮

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৮
Raiha Zubair Ripte

-“ শুনো চিত্রা আমি চাইছি তোমার সাথে তুষারের বিয়ে টা খুব শীগ্রই দিতে। আরহাম কে দিয়ে ভরসা নেই যখন খুশি তোমার ক্ষতি করতে পারে। তুষারের কাছে থাকলে অন্তত তোমার ক্ষতি হবে না। আর আমি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবো।

কথাটা বলে লম্বা একটা শ্বাস ফেললো সাহেল আহমেদ। তুষারের সাথে কথা বলেই তিনি বিয়ের ব্যাপারে এগিয়েছেন। তুষার জানিয়েছেন দিন কয়েকের মধ্যে সে চিত্রা কে বিয়ে করতে চান। এর জন্য চিত্রার সাথে আলাদা করে কথাও বলতে চান। সন্ধ্যার দিকে তুষার আসবে।
সাহেল আহমেদ মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়েকে যে একটা কথা বললো সেটা মনে হয় মেয়ের কানে ঢুকে নি আর ঢুকলেও কথাটা কে গ্রাহ্য করে নি। চিত্রার এমন খামখেয়ালি ভাবসাব দেখে কিছুটা রুষ্ট হলেন সাহেল আহমেদ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ আমি কি বলেছি কথাটা কি কানে ঢুকেছে?
চিত্রা টিভির রিমোট দিয়ে টিভিটা বন্ধ করে বলে-
-“ আচ্ছা বেশ বিয়ে দিতে চাইছো আমি করবো। তবে আমার শর্ত আছে।
সাহেল আহমেদ ভ্রু কুঁচকালো মেয়ের কথা শুনে।

-“ কি শর্ত?
-“ তুষার কে রাজনীতি ছাড়তে হবে।
-“ তুমি ভালো করেই জানো তুষার রাজনীতি ছাড়বে না। সামনে ওর কাঁধে কতবড় দায়িত্ব একবার ভেবে দেখেছো? সমাজের দুরস্ত মানুষের জন্য এখনও কত কিছু করা বাকি।

-“ সমাজের মানুষের ভালো করতে গিয়ে যে তোমাদের সাথে খারাপ ঘটে তার দায়ভার কি সমাজের লোকেরা নেয়? তোমরা সমাজের ভালোর জন্য এতো কিছু করো জাস্ট একটা ভুল করে দেখো সেই সমাজই তোমাদের টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে আনবে। ভুলে যাবে তারা তাদের জন্য কি কি করেছো তোমরা।
-“ আহা নেগেটিভ চিন্তা করছো কেনো? পজিটিভ ভাবো। বাংলাদেশে আরো কতো চেয়ারম্যান এমপি আছে তারাও তো সমাজের দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। রাজনীতি মানেই খারাপ না মা,বুঝার চেষ্টা করো।

-“ কিন্তু বাবা…
-“ আর কোনো কিন্তু করো না মা তোমার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাবা হিসেবে তো আমি তোমার খারাপ হবে এমন কিছু করবো না। বিশ্বাস রাখো আমার উপর। রিকুয়েষ্ট করছে তোমার বাবা ফিরিও না।
-“ আচ্ছা ভেবে দেখবো।
কথাটা বলেই চিত্রা বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সাহেল আহমেদ হতাশ হন। চয়নিকা বেগম চায়ের কাপ এনে সাহেল আহমেদের সামনে রেখে বলে-

-“ বেশি চিন্তা করো না। ঠিক রাজি হয়ে যাবে চিত্রা।
সাহেল আহমেদ ভাবান্তর হয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়। চয়নিকা বেগম স্বামীর দিকে চেয়ে থাকেন।
চিত্রা রুমে এসে পায়চারি করছে। তার বাবা অনেক টা হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলেছে। এবার না করা মানে বাবা কে অপমানের সাথে সাথে কষ্ট ও দেওয়া। কিন্তু বিয়ে টাও তো করতে ইচ্ছে করছে না। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
এরমধ্যে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে পেছন ফিরে বলে-

-“ কে?
-“ আমি চিত্রা দরজা খুল।
চিত্রা তার মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দেয়। চয়নিকা বেগম হুড়মুড়িয়ে চিত্রার রুমে ঢুকে চিত্রা কে তাড়া দিয়ে বলে-
-“ ওড়না টা নিয়ে চটজলদি ছাঁদে যা।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো মায়ের কথা শুনে।

-“ ছাঁদে যাব মানে!
-“ হ্যাঁ তুষার এসেছে,তাড়াতাড়ি যা, ছেলেটা অপেক্ষা করছে।
চিত্রা ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। ছাঁদে পা রাখতেই ছাঁদে থাকা কৃত্রিম আলোয় দেখতে পেলো, ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ, পকেটে হাত দিয়ে।
চিত্রা সেদিকটায় তাকিয়ে এগিয়ে গেলো। তুষারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তুষার আড়চোখে একবার তাকালো চিত্রার দিকে।

আকাশে আজ থালার মতো ইয়া বড় রূপালী চাঁদ টা তার সকল আলো পৃথিবীর মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে। কৃত্রিম আলো না থাকলেও এই ঘুটঘুটে আঁধারে তা আলোর ন্যায় কাজ করবে।
-“ আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত নই। তাই যা বলার ডিরেক্টলি বলছি। বিয়ে তে রাজি হয়ে যান।
চিত্রা দৃষ্টি সামনে রেখেই জবাব দিলো-

-“ এটা বলার জন্য এখানে এসেছেন?
তুষার অকপটে বলে দিলো-
-“ না।
-“ তাহলে?
-“ যদি বলি আপনাকে একনজর দেখার জন্য এসেছি,বিশ্বাস করবেন মিস চিত্রা?
কথাটা চিত্রার সর্বাঙ্গ দেহের মাঝে যেনো বিচরণ করলো। কথাটার মধ্যে যেনো নেশা মেশানো ছিলো।

-“ আ আমাকে দেখার জন্য এসেছেন? কিন্তু কেনো?
-“ শুনলাম আজ কেউ আপনায় বিরক্ত করেছিলো।
-“ কে বললো আপনায়?
-“ বাতাসে চলে এসেছে। বাহিরে এতো ঘুরাঘুরি করেন কেনো একা একা?
-“ আমি একা ছিলাম না তো।
-“ সাথে কেউ ছিলো?
-“ হ্যাঁ।

তুষার ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কে ছিলো সাথে?
-“ ফ্রেন্ড তৃষ্ণা। ও আজ ভীষণ কেঁদেছে।
তুষারের ভ্রু মসৃণ হয়। তার বোন কেঁদেছে বাট হোয়াই?
-“ কেঁদেছে কেনো আপনার ফ্রেন্ড?
-“ ঐ যে জেলাস হয়ে।
-“ কিসের জন্য জেলাস?
-“ ওর ভালোবাসার মানুষ টিকে অন্য রমণীর পাশে দেখে ওর কলিজা ফাডি যাচ্ছিলো। আপনিই বলুন কাউকে ভালোবাসলে কি সেটা চেপে রাখতে হয়? হয় না তো বলে দিতে হয়। তৃষ্ণা ওর কাজিন কে ভালোবাসে। কিন্তু ওর কাজিন জানে না।

তুষার বিষয় টা বুঝলো। তার বোন রাফিকে ভালোবাসে। কাজিন বলতে একমাত্র রাফিই।
-“ আপনি কাউকে ভালোবাসেন মিস চিত্রা?
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ না বাসি না…. আরে হ্যাঁ ভালোবাসি। তৃষ্ণার ভাই কে বললাম না সেদিন।
চিত্রা সত্যি বলতে গিয়ে পরক্ষণে মনে পড়লো সেদিন বলেছিলো তৃষ্ণার ভাই কে ভালোবাসে। তুষার চিত্রার কথা শুনে নৈঃশব্দ্যে হাসে।

-“ বিবাহিত ছেলেকে কেনো ভালোবাসতে গেলেন?
চিত্রা ভরকে যায়। নিজেকে ঠিক করে বলে-
-“ মানে?
-“ মানে এই যে তৃষ্ণার ভাইয়ের তো হবু বউ আছে। যাকে সে প্রচন্ড লেভেলের ভালোবাসে। সে তো আপনাকে পাত্তাই দিবে না।
চিত্রা সরু চোখে তাকিয়ে বলে-

-“ জানলেন কি করে?
-“ তুষার খাঁনের হবু বউ কাউকে ভালোবাসবে আর তার সম্পর্কে তুষার জানবে না এটা হয় নাকি।
-“ কিন্তু আপনাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না।
-“ কেনো আমি কি দেখতে খারাপ?
-“ না না আপনি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। কিন্তু রাজনীতি করছেন যে।
-“ ট্রাস্ট মি আমার রাজনীতির জন্য আপনাকে কোনো সাফার করতে হবে না।
-“ আমি আমার জন্য চিন্তা করি না।
-“ তাহলে?
-“ আপনাদের জন্য।

-“ আমাদের জন্য চিন্তা করে আপনার প্রেশার লো করতে হবে না মিস চিত্রা। আমরা পাকাপোক্ত ভাবেই রাজনীতির মাঠে নেমেছি। চোখ কান সব সময় খোলা থাকে। আপনি বরং আমার রাতে বাড়ি ফেরার সঙ্গী হয়ে যান। যার কাছে বাহিরের যানজট পেড়িয়ে একটু মুক্ত ভাবে শ্বাস ফেলা যাবে।
-“ তাহলে আমাকে পটানোর চেষ্টা করুন। সময় এক সপ্তাহ আপনার আগামী হবু এমপি সাহেব। যদি পারেন তাহলে আমি রাজি।
তুষার মুচকি হাসলো। চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল-

-“ তুষার কে পটানোর জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর আপনি বলছেন আপনাকে পটাতে?
-“ কারন আমি স্পেশাল।
-“ জ্বি সাথে দামী ও।
চিত্রা হেঁসে ফেলে। চিত্রার হাসি দেখে তুষার চিত্রার দিকে চেয়ে থাকে। মেয়েটার হাসির প্রেমে পড়েছিল প্রথম দেখেই। হাসলে সুন্দর গালে টোল পড়ে। চিত্রা নিজের হাসি থামিয়ে তুষারের দিকে তাকায়। তুষার কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পুরো দৃষ্টি তুষারের দিকে দেয়। আজও পড়নে ব্লাক কালারের শার্ট। বড্ড কৌতূহল হলো জানার জন্য। এমপি সাহেব কি ফকির নাকি। শার্ট কেনার টাকা নেই নাকি।

-“ আচ্ছা এমপি সাহেব আপনার কি টাকা নেই?
চিত্রার মুখে হঠাৎ করে এমন কথা শুনে বিভ্রান্ত হলো।
-“ কেনো?
-“ না মানে আপনি সবসময় একই শার্ট কেনো পড়েন? আপনার সাথে যতবার দেখা হলো ততবারই এই কালো শার্টই পড়নে দেখেছি।

-“ আমার সব শার্ট টি-শার্ট ব্লাক কালারের সেজন্য এমনটা মনে হচ্ছে।
-“ তাই বলে সব?
-“ হুমম।
-“ আপনি ব্লাক লাভার?
-“ জ্বি হ্যাঁ। আপনার ব্লাক পছন্দ না?
-“ হাল্কা পছন্দ।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৭

-“ তাতেই চলবে।
-“ বাসায় যাবেন না?
-“ হুমম। বিয়েতে রাজি আপনি?
-“ বললাম না আগে পটাতে,আমাকে সময় দিতে তারপর রাজি হবো। জীবন একটাই, জীবনসঙ্গী কে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৯