আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৭

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৭
Raiha Zubair Ripte

-“ আপনি এখানে কেনো? কি চাই?কোন মতলবে এখানে এসেছেন?
চিত্রার সামনে থাকা লোকটা মুচকি হাসলো। চুলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে বলে-
-“ একসাথে একই প্রশ্ন এতো ভাবে ঘুরিয়ে বলছো কেনো?দম নাও আগে।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। সাইড কাটিয়ে চলে যেতে নিলে লোকটা আবার চিত্রার সামনে এসে দাঁড়ালো।
-“ আরে চলে যাচ্ছো কেনো হৃদয়হরণী।
চিত্রা এবার রেগে গেলো কিছুটা। হাতে থাকা হ্যান্ড ব্যাগ টা দেখিয়ে বলে-

-“ এই ব্যাডা হৃদয়হরণী মানে কি হ্যাঁ, এই যে মেয়েদের হ্যান্ড ব্যাগ চিনেন এটা দিয়ে বারি মে-রে গাল লাল করে দিব,ফালতু লোক কোথাকার।
লোকটা চিত্রার হ্যান্ড ব্যাগ টা চিত্রার হাত থেকে এক ঝটকায় টেনে নেয়। ব্যাগটার দিকে ভালো করে চেয়ে থেকে বলে-
-“ ব্রেন্ডের ব্যাগ।
চিত্রা ব্যাগ টা টান দিয়ে নিয়ে বলে-
-“ ইয়েস ব্যান্ডের ব্যাগ এটা ৫০০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। বুঝুন তাহলে এটা দিয়ে আপনার মুখে একটা বারি দিলে কতোটা জোরে লাগবে।
লোকটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ তাই তো বিষয় টা তো একদম ভেবে দেখি নি। হৃদয়হরণী হৃদয় নিয়ে ফেলার চিন্তা ভাবনা করছে নট ব্যাড।
লোকটার কথা শুনে চিত্রার গা জ্বলে উঠলো। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলে-
-“ দেখুন আরহাম একদম আমাকে রাগাবেন না। বলেছি না আপনাকে আমার চোখের সামনে না আসতে। আসছেন কেনো?

-“ তোমাকে দেখতে।
-“ লজ্জা করে না অন্যের বউকে দেখতে আসতে? বেলেহাজ লোক কোথাকার।
-“ অন্যের বউ মানে?
চিত্রা বাম হাতের অনামিকা আঙুলে থাকা ডায়মন্ডের রিং টা দেখিয়ে বলে-
-“ দেখুন সি এটা কি?
আরহাম রিং টার দিকে তাকিয়ে বললো-
-“ আংটি।

-“ রাইট, এটা আংটি তবে ডায়মন্ডের। এমপি তামিম খান কে নিশ্চয়ই চিনেন? তার একমাত্র ছেলে তুষার খাঁনের হবু বউ আমি। সো নেক্সট টাইম আমাকে দেখতে আসতে হলে আমার হাসবেন্ডের থেকে পারমিশন নিয়ে আসবেন।
কথাটা বলে চিত্রা চলে আসতে নিলে পেছন থেকে আরহাম বলে উঠে –
-“ কবে এই অকাজ টা হলো? খবর টা কানে আসলো না কেনো?
চিত্রা পেছন ফিরে বলে-

-“ আপনার কান থাকলে তো আপনার কানে যাবে কথাটা। আর এটা অকাজ নয় এটা হচ্ছে শুভ কাজ মানে ফরজ কাজের একটা অংশ। বিয়েতে দাওয়াত দিব দামি গিফট নিয়ে এসে রোস্ট পোলাও খেয়ে যাবেন সাথে আমাকে আর আমার হাসবেন্ড কে দোয়া করে যাবেন যাতে কোনো আধপাগল এসে আমাদের চোখের সামনে না জুটে।
কথাটা বলে চিত্রা হাঁটা শুরু করে। মনে মনে ভাবলো-

-“ ভাগ্যিস আজ আসার পথে আংটি টা পড়েছিলাম। না হলে এতো সুন্দর মিথ্যা বানোয়াট কথা বলতাম কি করে? লোকটার চামড়া তো গন্ডারের মতো দেখছি। একে তো আমার বাবার শত্রু তার উপর আমার বাবা কে মারার প্ল্যান করে আর আমার সামনে ছ্যাচড়ামি করে। হৃদয়হরণী হৃদয়হরণী করিস না? তোর হৃদয় টা কে”টে কালা ভুনা করে খাবো।

-“ বাবা চিত্রার বিয়ে ঠিক হয়েছে ঐ এমপির ছেলের সাথে আর আমার কানে কথাটা আসতে এতো দেরি হলো কেনো?
আকবর হোসাইন সোফায় বসে তার দলের চ্যালাপেলার সাথে কথা বলছিলো। আকস্মিক ছেলের কথা শুনে কথার মধ্যে ব্যাঘাত ঘটে।
-“ সাহেলের মাইয়ার বিয়ে ঠিক হইছে!
-“ হ্যাঁ। তুমি যে বলছিলা চিত্রার বিয়ে আমার সাথে হবে। এখন কি হচ্ছে এটা?
-“ সত্যি?

-“ আমাকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি?
আকবর ভাবান্তর হলো। ছেলেকে আস্বস্ত করলো সে কিছু একটা করবে।
তুষার সবেই বাড়ি ফিরেছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় সাহেল আহমেদ কে সেদিক টায় এগিয়ে যান। সাহেল আহমেদ কে সালাম দেয়। সাহেল আহমেদ সালামের জবাব দিয়ে বলে-
-“ তা রাজনীতি কেমন লাগছে তুষার?
তুষার স্মিত হেঁসে বলল-

-“ জ্বি আঙ্কেল বেশ ভালোই লাগছে।
-“ সামনের নির্বাচনে আমার বদলে তুষার কে দাঁড় করাবো সাহেল। বয়স হচ্ছে, আমার অবর্তমানে তুষারই হবে আগামী এমপি।
-“ হ্যাঁ কথাটা মন্দ না। তা তুষার এখন থেকেই নিজেকে প্রিপিয়ার করো। সামনে অনেক বড় দায়িত্ব কাঁধে আসতে চলছে।
তুষার বিপরীতে কিছু বললো না। সাহেল আহমেদ টুকটাক আরো কথা বলে তুষারদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
-“ মা বাবা কোথায়?

চিত্রা বাসায় এসে তার মা কে হাক ছেড়ে ডাকে। চয়নিকা বেগম মেয়ের ডাক শুনে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বলে –
-“ কেনো কি হয়েছে? বাবা কে ডাকছিস কেনো হঠাৎ?
-“ জানো আজ কি হয়েছে?
-“ কি হয়েছে না বললে জানবো কি করে?
-“ জানো আজ ঐ ছেলে এসেছিল।
চয়নিকা বেগম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে –

-“ কোন ছেলে?
-“ বেলেহাজ আরহাম।
-“ কিছু বলেছে?
-“ বলার সুযোগ দিলে তো বলবে। তড়িঘড়ি করে চলে আসছি। বাবা আসলে বলবে ঐ ছেলে যেনো আমার সামনে আর না আসতে পারে সেই ব্যাবস্থা করতে।
কথাটা বলে চিত্রা নিজের রুমে ঢুকে যায়। সাহেল আহমেদ বাসায় ফিরতেই চয়নিকা বেগম কথাটা বলেন। সাহেল আহমেদ ভাবনায় পড়ে যায়। ঐ ছেলে মোটেও সুবিধার নয়। ভয় হচ্ছে না জানি কবে মেয়ের সাথে উল্টাপাল্টা আচারণ করে বসে।

কিছুটা ভয় আর সংকোচ নিয়েই তুষার কে ফোন করে। তুষার নিজের রুমে ছিলো। সাহেল আহমেদের ফোন পেয়ে অবাক হয়। ঘন্টা দুয়েক আগেই তো গেলো। ফোনটা রিসিভ করতেই সাহেল আহমেদ বলে উঠে –
-“ তুষার তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও?
হঠাৎ শুরুতে সাহেল আহমেদের এমন কথা শুনে কিছুটা ভরকে যায়। সন্দেহান হয়ে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৬

-“ কি হয়েছে আঙ্কেল? এনি প্রবলেম?
-“ হ্যাঁ। তুমি তো জানো আমি চিত্রা কে নিয়ে কতোটা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি। আজও নাকি আকবরের ছেলে এসে চিত্রা কে বিরক্ত করে গেছে। বিষয় টা এখন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কথাটা কর্ণকুহর হতেই তুষারের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৮