আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৬

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৬
Raiha Zubair Ripte

-“ দেখ তৃষ্ণা তুই তোর ভাইকে বলবি আমায় যেনো হেল্প করে। একটু হেল্প করলে তেমন আহামরি ক্ষতি হবে না।
তৃষ্ণা এবার বিরক্ত হলো চিত্রার কথা শুনে। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-
-“ এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে চিত্রা। আমার ভাইয়ের সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া নেই। সে জীবনেও তোকে সাহায্য করবে না,তার অতো সময়ই নেই। তার চেয়ে বরং তুই তোর ফ্যামিলি বা ঐ ছেলেকে বুঝা। আর তোর বাবা তো তোর ভালো ছাড়া মন্দ হতে দিবে না,বিষয় টা বুঝ বোন।

চিত্রা তৃষ্ণার বিপরীতে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। মেয়েটা রেগে আছে কথার ধরন দেখেই বুঝলো। আপাততঃ নিজের প্যারা টাকে সাইডে রেখে মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কি হয়েছে তোর রেগে আছিস কেনো?
তৃষ্ণা নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চেষ্টা করলো। আস্তে করে জাবাব দিলো-
-“ না কিছু হয় নি।
চিত্রার বিশ্বাস হলো না। কিছুতো হয়েছেই যার জন্য রেগে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ কি হয়েছে কুইকলি সেটা বল। মিথ্যা বলবি না।
তৃষ্ণার এবার ভীষণ কান্না পেলো। চোখ দিয়ে টুপ করে দু ফোঁটা অশ্রু ও গড়িয়ে। নাক টা টেনে নিলো। ফোনের ওপাশে থাকা চিত্রা বুঝে গেলো মেয়েটা কাঁদছে।
-“ তৃষ্ণা কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে বল না।
তৃষ্ণা চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু টুকু সন্তপর্ণে মুছে নিয়ে বলে-

-“ দোস্ত ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
-“ কিসের জন্য?
-“ ভালোবাসার মানুষ টিকে অন্য নারীর পাশে দেখে।
-“ মানে?
তৃষ্ণা এবার ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে আসলো। বেলকনি থেকে স্পষ্ট রাফিকে বাগানে দেখা যাচ্ছে। রাফির পাশে রয়েছে অতি সুন্দরী এক রমণী। চোখ সরানো দুষ্কর। বাগানে থাকা দুই যুগল মানব-মানবীর দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ তুই তো জানিস আমি একজন কে ভালোবাসি।
-“ হ্যাঁ তোর কাজিন কে তাই তো?
-“ হ্যাঁ, জানিস লোকটা বুঝেই না আমি যে তাকে এতো ভালোবাসি। বুঝলে কি আর আমার সামনে অন্য নারীর সাথে এতো হাহা হিহি করতে পারতো বল? ভীষণ পীড়া দিচ্ছে ইয়ার,দম বন্ধ লাগছে।
-“ এক কাজ কর আমার বাসায় চলে আয়।
-“ ইচ্ছে করছে না।
-“ তাহলে এড্রেস দে আমি চলে আসি।

তৃষ্ণার টনকনড়া দিলো। চিত্রা কে তো তাদের বাসায় আনাই যাবে না। আর মুখের উপর না ও করতে পারবে না। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে বলল-
-“ ভার্সিটির পাশে থাকা পার্কে আয়। মনটা ফ্রেশ করবো।
চিত্রা ঠিক আছে বলে ফোনটা কেটে দেয়। আলমারি থেকে জিন্স প্যান্ট আর নেভি ব্লু কালারের টপস বের করে গলায় ওড়না নিয়ে মুখে মাক্স পড়ে বেরিয়ে যায়।
তৃষ্ণা মিষ্টি কালারে একটা কুর্তি পড়ে,চোখে গাড়ো কাজল দিয়ে চুল গুলো কে খোলা রেখে হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়। অধরা রুমে আসছিলো হঠাৎ তৃষ্ণা কে এভাবে বের হতে দেখে প্রশ্ন করে-

-“ কোথায় যাচ্ছিস?
তৃষ্ণা একপলক অধরার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ মানসিক শান্তি খুঁজতে।
অধরা বুঝলো না তৃষ্ণার কথার মানে। ফের কিছু বলতে নিবে তৃষ্ণা সেই সময় টুকু না দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। বাগানে এসে আড়চোখে একবার রাফি আর রিয়া নামের রমণীর দিকে তাকায়। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠতেছে বারংবার। রিয়া রাফির ফ্রেড। ওরা একসাথে একই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করেছে। রিয়ার সাথে কথা বলার একপর্যায়ে পাশে ফিরে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা যাচ্ছে। রাফি ভ্রু কুঁচকালো এই সময়ে কোথায় যাচ্ছে মেয়েটা? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন টা করে কিছুটা তাড়াতাড়ি করে হেঁটে তৃষ্ণার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ কোথায় যাচ্ছো?
তৃষ্ণা তাকালো না। দৃষ্টি সামনে থাকা গাড়ির দিকে রেখেই বলে-
-“ শান্তি খুঁজতে যাচ্ছি।
রাফি ভ্রু কুঁচকালো –
-“ কিসের শান্তি?
-“ মানসিক শান্তি।
-“ মানসিক শান্তি খুজতে বাহিরে যেতে হয়?
-“ আমার যেতে হয়। কারন বাসার মধ্যে আজকাল অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে আর কার্বনডাইঅক্সাইড বিপুল পরিমানে দেখা যাচ্ছে। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।

-“ যাচ্ছো কোথায় সেটা বলো।
-“ আপাতত জানি না কোথায় যাচ্ছি। দু চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই যাব।
-“ কথা গুলো এমন বাঁকা বাঁকা কেনো? সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারো না? বাড়ির মেয়ে তুমি, তুমি কোথায় যাচ্ছো না যাচ্ছো জানতে হবে তো নাকি।
তৃষ্ণার এবার রাগ হলো ইচ্ছে করলো রাফির চুল গুলো টেনে দিতে। রাগের জন্য চোখে জলের কারনে ঝাপসা দেখতে লাগলো। একটু দূরে থাকা রিয়া নামের মেয়ে টা এসে রাফির পাশে দাঁড়ালো। দু’জনকে পাশাপাশি দেখে রাফির দিকে ছলছল নয়নে একবার তাকালো। তারপর বিনা বাক্যে চলে গেলো। রাফি স্পষ্ট দেখলো তৃষ্ণার চোখ পানিতে টইটম্বুর করছে। কিন্তু কেনো? কি হয়েছে ওর?

পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে চিত্রা আর তৃষ্ণা। তৃষ্ণা একটার পর একটা টিস্যু দিয়ে চোখ নাকের পানি মুছছে আর হেঁচকি তুলে কান্না রোধ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। চিত্রা এই প্রথম তৃষ্ণা কে কান্না করতে দেখছে,ওর নিজের ও খারাপ লাগছে তৃষ্ণার জন্য। আর মনে মনে খুব রাগ হলো তৃষ্ণার কাজিনের উপর। বেশ খানিকটা সময় কান্না করার দরুন চোখ ফুলে গেছে তৃষ্ণার। চিত্রা তৃষ্ণার মাথায় হাত রেখে বলে-
-“ অনেক তো হলো কান্না করা এবার শান্ত হ। দেখ চোখ মুখ ফুলে গেছে।
তৃষ্ণার চিত্রার হাত চেপে বলে-

-“ আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না নিজেকে। যতোবার ওদের এক সাথে দেখার কথা মনে পড়ছে ততবারই আমার ঠেলে কান্না পাচ্ছে। ঐ লোকটা বুঝে না কেনো আমি যে তাকে ভালোবাসি। সব ছেলে বুঝে কেউ তাদের কে ভালোবাসলে ঐ গাধা কেনো বুঝে না। সবসময় শুধু শাসন আর জ্ঞান। আমি কি ওর কাছে জ্ঞান চাইছি নাকি শাসন চাইছি? আমি তো একটু খানি ভালোবাসা চাইছি।
-“ চেয়েছিস?

চিত্রার কথায় তৃষ্ণা চুপ হয়ে যায়। সে তো রাফিকে বলেই নি যে সে তাকে ভালোবাসে। পরক্ষণে তৃষ্ণার মন বলে উঠলো কেনো সে বলবে?রাফির কি উচিত না নিজে থেকে বুঝে নেওয়ার?
-“ ভালোবাসা চাইতে হবে কেনো? ও সব বুঝে এটা বুঝে না কেনো?
-“ সবাই সব বুঝে না। তাদের বলে বুঝাতে হয়,বলে দেখ,জানা তাকে নিজের অনুভূতি সম্পর্কে।
-“ যদি রিজেক্ট করে তখন? আমি ম-রেই যাব।
-“ ধূর পাগলি কি বলিস এসব। পজিটিভ ভাব নেগেটিভ না ভেবে।
-“ তাহলে কি বলে দিব?

-“ বলে দেওয়াই শ্রেয় আমার মতে। নাহলে অবসরে আফসোস হবে দ্বিধায় ভুগতে হবে।
-“ আচ্ছা তাহলে খুব শীগ্রই জানাবো আমি তাকে।
-“ হু।
-“ আচ্ছা তাহলে বাড়ি যা আমিও বাড়ি যাই।
-“ আচ্ছা যা তাহলে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৫

তৃষ্ণা চিত্রা কে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। চিত্রা ঠাই বসে রয় বেঞ্চে। ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা খুব পোড়ায়। ভাগ্যিস এই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হয় নি। কথাগুলো ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হ্যান্ড ব্যাগটা বেঞ্চ থেকে হাতে নিয়ে সামনে এগোতেই আকস্মিক ভাবে কেউ একজন তার সামনে দাঁড়ালো। হঠাৎ এভাবে সামনে দাঁড়ানোর জন্য কিছুটা ভয় পেয়ে যায় চিত্রা। চোখ তুলে তাকাতেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে। কপালে দু ভাজ পড়ে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৭