আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৫

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৫
Raiha Zubair Ripte

-“ আসসালামু আলাইকুম, আপনি তৃষ্ণার ভাই?
তুষার চিত্রার ফোন কলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে যখন ঘুমের ঘোরে চলে যাচ্ছিল প্রায় তখন হুট করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। তুষার তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নেয়। মনে হচ্ছিল এক সেকেন্ড দেরি হলেই ফোন কল আর ওপাশ থেকে আসবে না।

ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করে উঠলো ব্লাক হার্ট সাথে লেখা গাধা। গাধা নাম টা একটু আগেই লিখেছে,তার কান্ডকারখানা এখন গাধার মতোই লাগছে তুষারের কাছে। চিত্রার ফোন নম্বর আগে থেকেই তুষারে কাছে ছিলো। চিত্রার নম্বর টা পেয়েছে তৃষ্ণার বদৌলতে তুষার মাস চারেক আগেই। তখন নম্বর টা সেভ করেছিলো প্রেয়সী দিয়ে। আর এখন সেটা বদলে গাধা। নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখে গম্ভীর্যতা এনে বলল-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। জ্বি আমি তৃষ্ণার ভাই। আপনি কে বলছেন?
তৃষ্ণা মুখে হাসি ঝুলিয়ে জবাব দিলো-
-“ ভাইয়া আমি তৃষ্ণার ফ্রেন্ড।
চিত্রার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে তুষারের কপালে দু ভাজ পড়লো। ডাকটা বড্ড বেমানান লাগছে চিত্রার মুখে শুনতে।
-“ কোনো দরকার?
-“ জ্বি ভাইয়া। আপনার সাথে কি একটু দেখা করা যাবে?
-“ সময় হবে না। কিছু বলার থাকলে বলুন না হলে ফোন কেটে দিলাম।
-“ আচ্ছা ভাইয়া তাহলে রেখে দেন ফোন।

তুষার ভেবেছিলো চিত্রা বলবে কথা। কিন্তু না মেয়েটা উল্টো বলছে রেখে দিতে। কিছুটা রাগ হলো। রাগান্বিত চেহারা নিয়েই টুকুস করে ফোন কেটে দিলো তুষার। চিত্রা ফোন টা মুখের সামনে এনে নম্বর টার দিকে চেয়ে রইলো। এ ছেলের কথার ধরন শুনে মনে হলো প্রচুর রাগী। একে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করবে কি করে ভেবেই চিন্তামগ্ন হলো।
তুষার মিনিট কয়েক ফোনটার দিকে চেয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করলো। এক সময় রাগ টা শীতল হয়ে গেলো। মন মেজাজ স্বাভাবিক মাত্রায় এনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

-“ কি ব্যাপার রাফি ভাই হুটহাট এভাবে সামনে এসে পড়েন কেনো?
তৃষ্ণা বাগানে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছিলো। মুখের থুথু ফেলতে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে রাফি এসে দাঁড়িয়েছে। আর একটু হলেই মুখের থুথু তার শরীরে ফেলতো। মুখের থুথু সাইডে ফালায়। রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ সাইডে কেনো ফেললে আমার শরীরে ফেলতে। বাগানে দাঁড়িয়ে কেউ ব্রাশ করে? ওয়াশরুম নেই তোমার রুমে?
তৃষ্ণা বাগানে থাকা দোলনায় বসে। দাঁড়িয়ে থেকে কোমড় ধরে এসেছে,না বসলেই নয়।

-“ ওয়াশরুম আছে রাফি ভাই কিন্তু..
-“ কিন্তু কি?
-“ বাগানে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করলে যেই শান্তি পাওয়া যায় ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করলে সেই শান্তি পাওয়া যায় না।
রাফির ইচ্ছে করলো ঠাটিয়ে এক রাম ধমক দিতে। ইচ্ছে টাকে মনের মধ্যে রেখেই আস্তে করে বলে-

-“ বাসার ভেতরে যাও,বাহির থেকে লোকজন আসবে যখন তখন।
-“ তাতে আমার কি?
-“ ঠেটামি করছো কেনো? কথা বললে শুনো না কেনো?
-“ আপনি কি আমার কথা শুনেন? আমি কেনো আপনার কথা শুনবো?
-“ তুমি বড় না আমি বড়?
-“ আপনি বড়।
-“ তাহলে কথা কার শোনা উচিত?
-“ আপনার।
-“ একটা থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো। আবার মুখে মুখে তর্ক করে।

তৃষ্ণা দোলনা থেকে লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাফির দিকে আগ্নেয়গিরি ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ এই আপনি আমাকে ধমকাচ্ছেন কেনো? আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো আপনি বলার কে?৷ নেক্সট টাইম এভাবে কথা বলবেন না আমার সাথে।

কথাটা বলে তৃষ্ণা চলে যায়। তানিয়া বেগম বাগানে আসছিলেন বেগুন গাছ থেকে বেগুন নিতে। মেয়েকে রেগেমেগে যেতে দেখে দুশ্চিন্তা হয়। আবার হাতে ফোন দেখে কিছুটা আন্দাজ করে রাফির পাশে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ রে রাফি আমার মেয়েটা এমন রেগেমেগে গেলো কেনো? ফোনে কারো সাথে ঝগড়া করেছে?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো চাচির কথা শুনে।

-“ না ফোনে কার সাথে ঝগড়া করবে?
-“ তাহলে রেগেমেগে গেলো কেনো?
-“ মাথার তাড় ছিঁড়ে গেছে তোমার মেয়ের তাই।
-“ দেখছো, আমার মেয়ের মাথার তাড় ছিঁড়ে ফেলার জন্য কি তাহলে বেটার হাফ দায়ী?
-“ কিসের বেটার হাফের কথা বলছো চাচি?
-“ ও তেমন কিছু না তুই থাক আর ঐ বেগুন গুলো নিয়ে আয় বাবা আমি চললাম।

তানিয়া বেগমের যাওয়ার পানে তাকালো রাফি। কি বললো কিছুই বুঝলো না।
চিত্রা রাস্তার পাশ ঘেঁষে আনমনে হাঁটছে। আর মনে মনে কিছু একটা ভেবে চলছে। হঠাৎ জলতেষ্টা পাওয়ায় রাস্তার ধারে থাকা একটা দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে। দোকানদার কে পানির দাম দিয়ে পানির বোতলের মুখ খুলে ঢকঢক করে পানি খায়। পানি খাওয়ার মাঝে হঠাৎ পানি মুখের ভেতর না পড়ে মুখসহ নাকের মধ্যে ঢুকে যায়।

গলায় পানি আটকে নাক মুখ থেকে পানি ছিটকে পড়ে যায়। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিলো। সমান তালে কাশতে থাকে চিত্রা। হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পায়। আর মৃদু স্বরে বলছে -আস্তে। আওয়াজ টা কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায় আর দেখতে পায় চোখের সামনে রুমাল নিয়ে বাড়ানো হাত। চিত্রা রুমাল টা হাতে নেয়। নাকের পানি সহ মুখে থাকা পানি মুছে নেয়। শেষে নাক টাকে জোরে টেনে নাক পরিষ্কার করে রুমাল টা বাড়িয়ে দেয়।
তুষার একবার রুমালের দিকে তো আর একবার চিত্রার দিকে তাকায়। চিত্রা এখনো তুষারের দিকে তাকায় নি। রুমাল টা এখনও না নিতে দেখে চিত্রা পাশ ঘুরে বলে-

-“ আরে রুমাল টা নিন।
কথাটা বলে মুখের দিকে তাকাতেই দেখে তুষার ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার কে নিজের সামনে দেখে ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ চেয়ে রয় চিত্রা। পরক্ষণে রুমালের দিকে চেয়ে বলে-
-“ রুমাল টা নিন। আর আপনি এখানে কেনো?
তুষার রুমাল টার দিকে চেয়ে বলল-

-“ রুমালের কাজ শেষ রুমাল আর আমার লাগবে না।
চিত্রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুমালের দিকে ভালো করে তাকাতেই দেখে রুমালে কিছুক্ষণ আগে নাক পরিষ্কার করার ইয়েটা লেগে আছে। লোকটা এর জন্য ই রুমাল টা নিতে চাইছে না। এই ছেলেকে তো বিয়ে না করার আরেকটা রিজন পেলো। যে ছেলে সামান্য সর্দি দিয়ে জড়ানো রুমাল নিতে চাইছে না সে ছেলে কে বিয়ে কোনো মতেই করা যাবে না।

তুষার যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নোংরা জিনিস সে একদমই সহ্য করতে পারে না। ভালোবাসলেই তার সব কিছু সে টলারেট করবে এমন শুদ্ধ পুরুষ সে নয়। তুষার কে চুপ থাকতে দেখে চিত্রা ফের বলে উঠে –
-“ আহাম্মকের মতো চেয়ে থাকবেন না। সামান্য তো সর্দি ই লেগেছে রুমালে তাই বলে রুমাল টা নিবেন না। বাসায় গিয়ে না হয় হুইল পাউডার দিয়ে ধুয়ে নিতেন।

-“ হুইল পাউডার দিয়ে না হয় আপনিই ধুয়ে রুমাল টা ব্যাক করবেন মিস চিত্রা।
-“ সেটা বললেই তো হতো।
-“ সামান্য পানি খেতে গিয়েই এতো কান্ড করে বসলেন!
-“ আপনি এখানে কেনো?
-“ শ্বশুরের মেয়েটাকে দেখতে আসছি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-

-“ আপনার রাজনীতি নাই নাকি?
-“ আশ্চর্য রাজনীতি করলে বলেন তারা সময় দিতে পারে না। আবার সময় দিলে বলেন রাজনীতি নেই নাকি।
-“ আমার তো মনে হচ্ছে আপনি আমাকে পাম টাম দিয়ে বিয়ে করার চেষ্টা করছেন।
-“ বাহ মাথায় বুদ্ধি বলে তাহলে কিছু আছে দেখছি।
-“ মানে?
-“ মানে টানে কিছু না। আপনার গাড়ি কোথায়?
-“ আনি নি আজ।
-“ কেনো?
-“ এমনি।

-“ আচ্ছা আমার গাড়িতে চলুন বাসা অব্দি ড্রপ করে দেই।
-“ না না আপনার গাড়িতে আমি যাবো না।
-“ হুয়াই?
-“ আমার ইচ্ছে তাই।
-“ কথা না বাড়ালেই কি চলছ না? এখান থেকে বাসায় যেতে তো অনেক্ক্ষণ লেগে যাবে চলুন।
চিত্রা মনে মনে ভাবলো আসলেই বাসায় যেতে কিছুটা দেরি হবে যেতে। আর লোকটা সাথে এখন গেলে বিয়ে ভাঙা নিয়ে কিছু একটা ফন্দি আটা যাবে। চিত্রা রাজি হয়ে গেলো। তুষার গাড়িতে গিয়ে বসতেই তুষার রাস্তার ওপাশে থাকা তার ছেলেপেলে দের ইশারায় কিছু বলে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতেই চিত্রা বলে উঠে –

-“ শুনুন না একটা কথা বলার আছে।
তুষার গাড়ি চালাতে চালাতে বলে-
-“ হুম বলুন শুনছি।
-“ বলছি কি জানেন আমি না একটা ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসি। ছেলেটাও আমায় ভালোবাসে। আমরা কেউ কাউকে ছাড়া নিজেদের ভাবতেই পারি না। বুঝতে পারছেন বিষয় টা?
তুষার আড় চোখে গম্ভীর মুখে চিত্রার দিকে তাকালো।

-“ ছেলেটা কে?
চিত্রা ভাবলো হয়তো তুষার সব জানলে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবে। কথাটা ভেবেই মনে মনে লুঙ্গি ড্যান্স করে ফেললো।
-“ আমার ফ্রেন্ডের ভাই।
-“ নাম কি ফ্রেন্ডের?
-“ তৃষ্ণা।

নাম টা শুনেই তুষারের ভ্রু কুঁচকানো কপাল মসৃণ হয়। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবে। ফের প্রশ্ন করে-
-“ কতদিনের রিলেশন আপনাদের?
-“ ফাইভ ইয়ার্স।
তুষার বিষম খেলো। মুখের সামনে হাত নিয়ে বলে-
-“ নাম কি ছেলেটার?
চিত্রা থেমে যায়। কি নাম বলবে এবার? সে তো তৃষ্ণার ভাইয়ের নাম টা জানে না। চিত্রা কে নাম বলতে না দেখে বলে-

-“ কি হলো বলুন নাম কি ছেলেটার?
তুষার ফের করা প্রশ্নে এবার চমকে উঠলো চিত্রা। তৃষ্ণার নামের সাথে নাম মিলিয়ে বলল-
-“ তাসকিন,তাসকিন আহমেদ তৃষ্ণার ভাইয়ের নাম।
তুষারের হো হো করে হাসতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু ইচ্ছে টা বহুত কষ্টে আটকে রাখলো।
-“ ওহ্ আচ্ছা বুঝলাম। তা ছেলেটা কে আপনি বিয়ে করতে চান?
-“ হ্যাঁ আমরা দু’জন দুজন কে বিয়ে করতে চাই।

-“ আচ্ছা বেশ। তা আমাকে এসব শুনিয়ে কি করাতে চান?
-“ ঐ তো চাইছি বিয়েটা আপনি ভেঙে দিবেন।
-“ আপনাদের দুজনের ভালেবাসার জন্য আমি কেনো বিয়ে ভাঙবো?
-“ কারন আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। একজনের সম্মতিতে কখনও বিয়ে টিকে থাকে না।
কথাটা চিত্রা যতোটা সহজে বলেছে ততটাই ভারী লাগলো কথাটা তুষারের কাছে। মনে বিষন্নতারা এসে হানা দিলো।
-“ আচ্ছা আমি আপনার কথা রাখবো। বিয়ে ভাঙবো তবে শর্ত আছে।
-“ কি শর্ত?আপনি যা বলবেন আমি তাই মানবো।

-“ আপনার প্রেমিক কে আমার সামনে এনে দাঁড় করাবেন। তার মুখ থেকে সব শুনে আমি বিয়েটা ভেঙে দিবো।
চিত্রার মুখ বেলুনের মতো চুপসে গেলো।যখনই একটু আশার আলো দেখে তখনই কিছু না কিছু অন্ধকার এসে সেই আলো কে ডুবিয়ে দেয়।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৪

চিত্রা কে চিন্তামগ্ন দেখ তুষার ডেভিল মার্কা হাসি দেয়। চিত্রা জীবনেও পারবে না তৃষ্ণার ভাই তাসকিন কে তার সামনে আনতে। আর না সে বিয়ে ভাঙবে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৬