আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৪

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৪
Raiha Zubair Ripte

-“ কি ব্যাপার বিয়েতে রাজি হচ্ছো না কেনো?
চিত্রা ভার্সিটি থেকে ফিরতেই কথাটা বলে উঠে সাহেল আহমেদ। চিত্রা একবার বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁধের ব্যাগ টা সোফায় রেখে বাবার থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে বসে বলে-

-“ আমি কেনো বিয়েতে রাজি নই তার কারন টা তো তোমার জানার কথা আব্বু।
সাহেল আহমেদের কপালে দু ভাজ পড়লো। চক্ষুশূল দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ রাজনীতি?
-“ হ্যাঁ।
মেয়ের হ্যাঁ জবাব পেয়ে কপাল মসৃন হলো। নড়েচড়ে বসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ তুমি নিজের ভালো কেনো বুঝতে চাইছো না চিত্রা? তুষারের থেকে ভালো কেউ তোমায় রাখতে পারবে না। আল্লাহ না করুক আমার বিরোধী দলের লোকেরা যদি আমার কিছু করে বসে তখন তোমাদের কি হবে ভেবে দেখেছো? তুষার তোমায় তাদের থেকে প্রটেক্ট করতে পারবে। আমি মা-রা গেলেও এটা ভেবে শান্তি পাবো যে আমার মেয়ের মাথার উপর একজন আছে। যে আমার মেয়েকে সব রকমের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।

-“ সে কি সুপারম্যান যে আমাকে সব রকমের বিপদ থেকে রক্ষা করবে? উল্টো তোমাদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি হার্ট অ্যাটাক করে মা-রা যাবো। তাই বলছি আমি তাকে বিয়ে করবো না মানে করবো না।
কথাটা বলে ব্যাগটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায় চিত্রা। সাহেল আহমেদ তপ্ত শ্বাস ফেলেন। মেয়েকে কি করে রাজি করাবে ভেবে পাচ্ছেন না।

চিত্রা রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে তৃষ্ণা কে ফোন দেয়।
তৃষ্ণা সোফায় বসে স্টার জলসা চ্যানেলে নাটক দেখছে। পাশেই বসে আছে তৃষ্ণার মা তানিয়া বেগম। সোফার সামনে থাকা টি-টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠায় বিরক্তিবোধ করলো তৃষ্ণা। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো বেটার হাফ লেখা। তানিয়া বেগম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে আড়চোখে তাকালো। তৃষ্ণা ফোনটা কানে নিয়ে সাইডে চলে যায়।

-“ কিরে কোনো সমস্যা হয়েছে?
চিত্রা বেলকনিতে থাকা চেয়ারে বসে বলে-
-“ সমস্যা তো সেই একটাই। তোকে বললাম তোর ভাইকে আমায় দে তা না হলে সাহায্য করতে বল।
তৃষ্ণা ভ্রু কুঁচকে বলল-

-“ কি সাহায্য?
-“ তোর ভাইকে বল আমার বয়ফ্রেন্ড হতে। মানে আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তাকে তোর ভাইকে দেখিয়ে বলবো এটা আমার বয়ফ্রেন্ড আমরা একে ওপরকে ভালোবাসি। দুজন দুজনকে না পেলে ম’রেই যাব।

-“ এতে লাভ কি?
-“ আশ্চর্য এতেই তো লাভ। একটা ছেলে তো আর জেনেশুনে এমন মেয়েকে বিয়ে করবে না। তো ছেলেটা বিয়ে ভেঙে দিবে আর আমি তোর ভাইকে থ্যাংকস বলে দিব। আর এরমধ্যে যদি তোর ভাইয়ের সাথে আমার ক্যামিস্ট্রি জমে যায় তাহলে তোর ভাইয়ের হানি হয়ে যাব। তোর ভাইকে বল না আমায় হেল্প করতে।

-“ পাগল নাকি! আমার ভাইয়ের কি ঠেকা পড়ছে তোমারে সাহায্য করার।
-“ এমন করিস কেনো। বলেই দেখ না,একটা মেয়েকে হেল্প করলে তেমন ক্ষতি তো হবে না তোর ভাইয়ের।
-“ ক্ষতি হবে না মানে তোর সাথে সাথে আমার ভাইয়ের ও বিয়ে ভাঙবে।
-“ আরে ভাঙবে না। তুই তোর ভাইয়ের নম্বর টা দে আমায় আমি হেল্প চাইবো।
-“ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া ভাই তার নম্বর কাউকে দিতে না করছে।

-“ তো আহাম্মকের মতো ফোন কানে নিয়ে আছিস কেনো যা অনুমতি নিয়ে আয়।
-“ ভাই বাসায় নেই ঐ পার্টি অফিসে..
তৃষ্ণা পুরো কথা শেষ করলো। এখনই তো সব বলে দিচ্ছিলো।
-“ বাসায় নেই পার্টি অফিস মানে কি?
-“ ঐ আসলে আজকে অফিসে ছোটখাটো পার্টি সেখানেই। আমি রাখি এখন ভাই ফিরলে অনুমতি নিয়ে নম্বর দিব নি।

কথাটা বলে ফোন কেটে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা। কথার তালে তালে বলেই ফেলছিলো। ফোন টা আবার আগের জায়গায় রেখে টিভিতে মনোযোগ দিতেই পাশ থেকে তানিয়া বেগম বলে উঠে –
-“ তা তোর বেটার হাফের বাসা কোথায়? পরিবারে কে কে আছে?
তৃষ্ণা দৃষ্টি টিভিতে রেখেই বলে-
-“ হেমায়েতপুর বাসা। বাবা মা আর ও।
-“ আর ভাই বা বোন নেই?
-“ না।

-“ মাশা-আল্লাহ। তা দেখতে শুনতে কেমন?
-“ সুন্দর।
-” কতদিন ধরে চিনিস?
-“ মাস চারেক হবে।
-“ পছন্দ করিস?
-“ হ্যাঁ।
তানিয়া বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলে-

-“ ভেবে চিন্তে সামনে আগাস তোর মা সবসময় তোর পাশে আছে।৷ আর সব কথা আমার সাথে শেয়ার করবি। কিচ্ছু লুকাবি না। পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনিস না।
তৃষ্ণা মায়ের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। হা করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। পালিয়ে যাবে কেনো সে? মায়ের হাত মাথা থেকে সরিয়ে বলে-

-“ কি বলো? চুপচাপ টিভি দেখতে দাও।
তানিয়া বেগম মেয়ের থুতনিতে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে চলে যায়। মনে তার অনেক কল্পনা জল্পনারা ঘুরপাক খাচ্ছে।
রাত আটটার দিকে তুষার তার বাবার সাথে বাসায় ফিরে। সোজা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়। ব্লাক টি-শার্ট পড়ে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। সারাদিন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করার দরুন দুপুরে খাবার সময় হয়ে উঠে নি। তানিয়া বেগম ছেলে আর স্বামী কে খেতে দেন।তুষার খাবার টা খেয়ে নিজের রুমে যেতেই তৃষ্ণা পেছন থেকে ডেকে উঠে। তুষার দাঁড়িয়ে যায়। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে -কি?
তৃষ্ণা তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ ভাই একটা অনুমতি চাই।
তুষার ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলে-
-“ কিসের জন্য?
-“ আসলে আমার ফ্রেন্ড চিত্রা তোমার ফোন নম্বর চাচ্ছে তাকে কি দিব তোমার ফোন নম্বর?
তুষারের দৃষ্টি ফোন থেকে এবার তৃষ্ণার উপর পড়লো। ফোনটা হাতে রেখে দু হাত বুকে গুঁজে বলে-
-“ আমার ফোন নম্বর দিয়ে তোর ফ্রেন্ড কি করবে?
-“ সেটা তো জানি না। বললো ইমার্জেন্সি দরকার। দিব?
তুষার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
-“ আচ্ছা দে।

কথাটা বলে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় তুষার। তৃষ্ণার অনেক টা অবাক হয়। ভেবেছিলো ভাই তার ডিরেক্ট মানা করে দিবে। কিন্তু অনুমতি দেওয়াতে মাথা চক্কর খেয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
তৃষ্ণা নিজের রুমে এসে চিত্রা কে মেসেজে তুষারের নম্বর সেন্ড করে পাঠিয়ে দেয়।
চিত্রা তৃষ্ণার পাঠানো নম্বর টার দিকে একবার চেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। যে করেই হোক তৃষ্ণার ভাইকে সে পটিয়ে হলেও বিয়ে ভাঙার জন্য রাজি করাবে।
অধরা তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে ফের বই পড়ার দিকে মনযোগ দিয়ে বলে-

-“ কি চলছে?
তৃষ্ণা ফোনটা বিছানায় রেখে অধরার পাশে থাকা চেয়ার টা টেনে বসে বলে-
-“ কি চলবে?
-“ এই যে ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিস।
-“ ওহ্ আর বলো না। তোমায় সেদিন বললাম না আমার ভার্সিটিতে একটা মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে।
-“ কার কথা বলছিস?
-“ আরে ঐ যে কিউট মেয়ে টা শ্যামলা চেহারার। নাম টা গেস করো তো?

-“ উমমম চিত্রা?
-“ হ্যাঁ। মেয়েটা বিয়ে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
অধরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কার?
-“ ওর নিজের।
-“ ওহ্ তা বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছে কেনো?
-“ আর বলো না। ছেলে পছন্দ না ওর।
-“ পরিবার কে বুঝিয়ে বললেই হয়।
-“ সেটারই চেষ্টা চালাচ্ছি।
-“ আচ্ছা যা ঘুমিয়ে পড়।
-“ আচ্ছা গুড নাইট।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩

তুষার বারবার নিজের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে একটা ফোন কল আসবে সে আশায়। কিন্তু এতো আশা রেখেও কোনো লাভ হলো না। চিত্রার নম্বর থেকে তার ফোনে কোনো কলই আসছে না। অধৈর্য হয়ে তার ইচ্ছে করলো চিত্রার ফোনে গিয়ে নিজের ফোন নম্বরে কল দিতে। কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়। আজকের জন্য রূপকথার সেই আলাদীনের চেরাগের দৈত্যকে খুব মনে পড়ছে। চেরাগ টা তার কাছে থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো? দৈত্যেকে বলতো চিত্রার ফোনে ঢুকে একটা ফোনকল না হোক মিসড কলই দিতে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৫