কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৭

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৭
নুজাইফা নূন

-” আবদ্ধ ভেতরে প্রবেশ করবে কিনা ভেবে দরজা ধরে ভেতরে উঁকি দিতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার।আবদ্ধ অনেক টা অস্ফুট স্বরে বললো, ও মাই গড! মেয়েটা ওয়াশরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আর কি কি দেখার বাকি আছে একমাত্র আল্লাহ জানে।আবদ্ধ এগিয়ে গিয়ে স্রোতের চোখে মুখে হালকা পানি ছিটা দিতেই স্রোত‌‌ চোখ খুলে তাকালো। স্রোত কে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবদ্ধ ধমকের স্বরে বললো,

-” আর ইউ ক্রেজি? আমার রুমে কি জায়গার অভাব পড়েছে যে তুমি ওয়াশরুমে এসে ঘুমিয়েছে?”
-” ঐ চোখ টা একটু লেগে এসেছিলো স্যার ।সরি।”
-” নেক্সট টাইম এমন ঘুম যেন আর না আসে।রুমে আসো ।ডিনার করে ম্যাথ করতে হবে তো।দু সেকেন্ডে রুমে আসো বলে আবদ্ধ রুমে চলে আসে। স্রোতের তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আবদ্ধের সামনে টপস প্লাজু পরে যেতে পারছে না। এদিকে থ্রি পিস, চুড়িদার পরে রাতে ঘুমোতেও পারে না স্রোত।স্রোত কি করবে বুঝতে পেরে ওয়াশরুমে থাকা আবদ্ধের একটা লুঙ্গি গায়ে চাদরের মতো জড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে রুমে প্রবেশ করলো। আবদ্ধ স্রোত কে দেখে বুঝতে পারলো স্রোত তার সামনে বেটার ফিল করছে না।আবদ্ধ স্রোত কে ইজি করতে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” বিয়ে টা যেভাবেই হোক তুমি আমার স্ত্রী। সেটা বাইরের লোকেরা না জানলেও আমার পরিবার জানে , আমি জানি।আইনত এবং ধর্মীয় মতে তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমার সামনে লজ্জা পেয়ে নিজেকে কখনো কষ্ট দিবে না। তুমি যেভাবে , যে পোশাকে কমফোর্ট ফিল করো সেই পোশাক ই পরবে।ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”
-” ইয়েস স্যার।”

-” গুড। টেবিলের উপর খাবার রাখা আছে খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ো। তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা এক বিছানায় রাত্রি যাপন করবো না। তুমি এই রুমে থাকবে।আর আমি পাশের রুমে থাকবো।”
-” স্রোত খাবার না খেয়ে চুপচাপ বসে র‌ইলো।যা দেখে আবদ্ধের কয়েক মাস আগে সাইফুল ভূঁইয়ার বলা কথাটা মনে পড়ে গেল।আবদ্ধ তৎক্ষণাৎ হাত ধুয়ে এসে প্লেটের খাবার মেখে স্রোতের মুখের সামনে ধরে বললো,নাও হাঁ করো। শরীরের যা অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তোমার বাবা কোন দিন তোমাকে ভালো মন্দ কিছু খেতে দেয় নি।”

-” বিয়ের পরে মোটা হবো এই আশায় বেঁচে ছিলাম স্যার।এখন যদি আল্লাহ তায়ালা দয়া করে একটু মোটা করে দিতেন তাহলে আমি খুশি হয়ে আপনাকে দশ টাকা বকশিস দিতাম।”
-” নো মোর ওয়ার্ডস্। বাড়তি কথা না বলে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করো।”
-” স্রোত ও বাধ্য মেয়ের মতো কয়েক লোকমা খাবার খাওয়ার পর বললো, আমি আর খেতে পারবো না স্যার।মোর প্যাট ভরে গেছে স্যার।মুই আর ভাত লমু না।”

-” চুপচাপ প্লেটে থাকা সম্পূর্ণ খাবার শেষ করবে।”
-” স্রোত কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্রোতের ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে পাপা নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে স্রোত কল রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে সাইফুল ভূঁইয়া বললো,
-” আপনি ঠিক আছেন আম্মা? ঐ বাড়িতে আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”
-“সাইফুল ভূঁইয়ার কণ্ঠস্বর শুনে স্রোত আবেগি হয়ে উঠলো।গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। স্রোত কোনো কথা বলতে পারলো না। শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো।যা দেখে আবদ্ধ স্রোতের থেকে ফোন নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বললো,

-“আসসালামুয়ালাইকুম বাবা।
-” ওয়ালাইকুমুস সালাম আব্বা।সব ঠিকঠাক আছে তো? আম্মা কি খুব বেশি জ্বালাচ্ছে আপনাকে?”
-” না বাবা।”
-“আমি আম্মার দূর্বলতা কারো সাথেই শেয়ার করি নি। আমার আম্মা কে সবাই ছোট নজরে দেখবে বলে। কিন্তু এখন আপনি আম্মার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। আমার আম্মার সবচেয়ে আপন লোক। আপনি সবটা জানার পর আম্মা কে বিয়ে করেছেন।আম্মা আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয়। মেয়েটা আমার মরতে মরতে বেঁচেছে। বয়স হলেও ওর বুদ্ধি সেরকম পরিপক্ব হয় নি। আমার আম্মার খেয়াল রাখবেন আব্বা।”

-” আপনি কি বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি বাবা।আমি একটা মানুষ ‌। কোনো হিংস্র জন্তু জা’নো’য়া’র ন‌ই যে বিয়ে করেছি বলেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো। স্রোত যেমন আপনার মেয়ে । তেমনি আমার ও স্ত্রী।ও আপনার কাছে যেরকম নিরাপদ ছিলো।আমার কাছেও সেরকম নিরাপদ থাকবে বাবা।”
-” আমি আপনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আব্বা।”

-” এভাবে বলবেন না বাবা।”
-” ঠিক আছে আব্বা।রাখছি তাহলে।ভালো থাকবেন।আম্মার খেয়াল রাখবেন।আম্মা একদম ই ঔষধ খেতে চায় না। ঠিক টাইমে ঔষধ গুলো খেতে বলবেন। আসসালামুয়ালাইকুম।”
-” ওয়ালাইকুমুস সালাম বলে আবদ্ধ ফোন রেখে হাত ধুয়ে এসে দেখে স্রোত ব‌ইখাতা নিয়ে বিছানায় বসে আছে।আবদ্ধ ব‌ই খাতা গুছিয়ে টেবিলের উপর রেখে স্রোত কে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বললো, আজ আর পড়া লাগবে না। তুমি ঘুমিয়ে পড়।”

-” থ্যাংক ইউ স্যার। থ্যাংক ইউ সো মাচ। পড়াশোনা করতে একদম ই ভালো লাগে না। ভেবেছিলাম বিয়ে করলে পড়াশোনা থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায়।পাপা ধরে বেঁধে আমাকে বাঘের খাঁচায় বন্দী করে দিয়ে গেলো। বলেছিলাম বেকার ছেলে দেখে বিয়ে দাও।শুনলো না আমার কথা।আসলে কি জানেন? আমার কোনো লাভ লস নেই।আমার জীবনডাই লস।”

-” বেশি কথা বললে ম্যাথ করতে দিবো কিন্তু।”
-” স্রোত ঠোঁটের উপর নিজের একটা আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো, নো মোর ওয়ার্ডস্।আ’ম স্লিপিং নাউ বলে স্রোত শুয়ে পড়লো।
-” আবদ্ধ স্রোতের গায়ের উপর চাদর টেনে দিয়ে রুমের দরজা চাপিয়ে স্টাডি রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ ব‌ইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।”

-” স্রোতের কিছুতেই ঘুম আসছে না।স্রোত বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই তার চোখে ঘুম ধরা দিলো না।হুট করে তার মধ্যে ভয় জেঁকে বসলো।তার মস্তিষ্ক আবিস্কার কররো বিছানার পাশ দিয়ে একটা কালো ছায়া হেঁটে যাচ্ছে আবার আসছে।স্রোত এটা দেখা মাত্রই চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।বিছানার পাশে সোফা আর টি টেবিল রাখা ছিলো ।

স্রোতের মনে হলো সোফা, টি টেবিল কেউ টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।আবার সেগুলো ভেতরে নিয়ে আসছে। অনেক জোরে জোরে সেগুলো টেনে নিয়ে যাওয়ার আওয়াজ হতে লাগলো। স্রোতের ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর সেই আওয়াজ থেমে গিয়ে ওয়াশরুমে কল থেকে বালতিতে পানি পড়লে যেমন আওয়াজ হয় সেরকম একটা আওয়াজ শোনা গেল।

স্রোত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে পাশে আবদ্ধের রুমে গিয়ে আবদ্ধের পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আবদ্ধের সবে মাত্র চোখ লেগে আসছিলো।তার বুকের উপর নরম হাতের ছোঁয়া পেতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল তার।আবদ্ধ তড়িঘড়ি করে উঠে বেড সুইচ অন করে দিয়ে দেখলো স্রোত তাকে জড়িয়ে ধরে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।আবদ্ধ স্রোতের কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

-“কি হয়েছে স্রোত? তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন?”
-” আবদ্ধের কথা শুনে স্রোত আরো শক্ত করে আবদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে তোতলাতে তোতলাতে বললো, ঐ রু রুমে ভূত আছে স্যার।আমি দেখেছি স্যার।আমি ঐ রুমে যাবো না।আমি আপনার সাথে থাকবো।”
-” আবদ্ধ স্রোতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
ভূত বলে কিছু নেই।এটা সম্পূর্ণ তোমার মনের ভুল।”

-” ভুল নয় স্যার।আমি কালো ছায়া হেঁটে যেতে দেখেছি। অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ শুনেছি।”
-” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ভূত দেখেছো।ভূত দেখে এভারেস্ট জয় করে ফেলেছো।এখন চুপচাপ নিজে ঘুমোও আর আমাকে ঘুমোতে দাও।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৬

-” স্রোত ও বাধ্য মেয়ের মতো আবদ্ধের বুকের উপর ‌বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে পড়ে থাকলো।যেন এটাই তার শেষ আশ্রয়স্থল।তার পরম শান্তির জায়গা।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৮