কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৬

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৬
নুজাইফা নূন

-” আমি কি তোমাকে চুমু দিয়েছি?”
-” না।”
-” জড়িয়ে ধরেছি?”
-” না।”
-” তাহলে মৃগী রোগীর মতো এমন কাঁপা কাঁপি করছো কেন?”

-” আপনি ধমকাচ্ছেন কেন হ্যাঁ? আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে সবসময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।আমাকে ধমক দেন। আমার পাপা মম এমনকি আমার রিলেটিভদের মধ্যে ও কেউ কখনো আমাকে ধমক দেয় না। আপনি খুব খারাপ একটা লোক।এটিটিউড এর দোকানদার আপনি।”
-“তোমাকে ধমক দেই না।ধমক দেই তোমার স্বভাব কে , তোমার কাজ কে। লুক অ্যাট দিস।”
-” কি এটা?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“গত সপ্তাহে তোমাদের তৃতীয় বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে।এটা নিরীক্ষা ও নিশ্চয়তা পরীক্ষার খাতা। তুমি তো আমার মুখ দেখে বিরক্ত হচ্ছিলে।তাই বাধ্য হয়ে আমার মুখ বাদে অন্য কিছু দেখাতে হলো ।নাও খাতা খুলে দেখো কতো মার্কস পেয়েছো?”
-” স্রোত আবদ্ধের হাত থেকে খাতা টা খুলে দেখার পর তার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।যা দেখে আবদ্ধ বললো কতো পেয়েছো?”

-” পনেরো।”
-” ওয়াও গ্ৰেট। নিরীক্ষা ও নিশ্চয়তা থিওরির একটা সাবজেক্ট। সামান্য একটা থিওরি সাবজেক্টে ও তুমি ফেল করেছো। শুধু শুধু কি আর তোমাকে টু পাশ মহিলা বলি?আমি বুঝতে পারছি না থিওরির সাবজেক্টে মানুষ কিভাবে ফেল করতে পারে?”

-” পরীক্ষায় প্রশ্নে এসেছিলো‌ নিরীক্ষক রক্ষী কুকুর কিন্তু গোয়েন্দা কুকুর নয়। ব্যাখ্যা করো।এই প্রশ্নের উত্তর টা জানতাম আমি। মূলত নিরীক্ষক রক্ষী কুকুর কিন্তু গোয়েন্দা কুকুর নয় এর অর্থ দ্বারা বোঝানো হয়েছে রক্ষী কুকুর তার মালিক বা প্রভুর সম্পত্তি রক্ষার জন্য সদা সর্বদা সর্তক থাকে। কিন্তু গোয়েন্দা কুকুরের কাজ গোয়েন্দাগিরি করা। অর্থাৎ কাউকে বিশ্বাস না করে দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা।এখানে একজন নিরক্ষর কে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে।যেটা আমি মানতে পারি নি।তাই আমি উত্তরে লিখে দিয়েছিলাম ‘

-“নিরক্ষর একজন সম্মানিত ব্যক্তি।তাকে আমি কিছুতেই কুকুরের সাথে তুলনা করতে পারবো না। নিরক্ষর কে ছোট করে আরো অনেক প্রশ্ন এসেছিলো।আমি তাদের প্রতি সম্মান বজায় রেখে কোনো প্রশ্নের উত্তর করি নি।আসলে সৎ লোকের ভাত নেই।তাই তো আমার সততার জন্য আমাকে থিওরি সাবজেক্টে ও ফেল করতে হয়েছে।এটা কি আমার দোষ বলুন?”

-“না ।এটা আমার কপালের দোষ। তোমার মতো একটা টু পাশ মহিলা আমার কপালে জুটেছে। ভার্সিটি তে সবাই যদি জানতে পারে একটা টু পাশ মহিলা মুনফাসিল আবদ্ধের ওয়াইফ তাহলে আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশে যাবে। তুমি যতো দিন না পড়াশোনায় ভালো করতে পারবে ততোদিন নিজেকে মুনফাসিল আবদ্ধ স্যারের ওয়াইফ বলে পরিচয় দিতে পারবে না।”

-” শোনেন মিস্টার এটিটিউড এর দোকানদার! আমি নায়িকা শাবানা নয় যে নায়ক আলমগীরের জন্য সব করতে পারবো। নিজের শাড়ি কে’টে আপনাকে পাঞ্জাবি বানিয়ে দিবো।নিজে না খেয়ে আপনাকে খাইয়ে দিবো।দিন রাত পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করবো। কেনো রে ভাই ভালো রেজাল্ট ধুয়ে কি আমি পানি খাবো?আপনার ওয়াইফের পরিচয় না পেলে আমি মনে হয় মারা যাচ্ছি। আমার এতো ঠ্যাকা পড়ে নি আপনার ওয়াইফের পরিচয় পাওয়ার জন্য আমার ব্রেইন ক্ষয় করে পড়াশোনা করার।

আর সবচেয়ে বড় কথা টু পাশ মহিলা কে স্ত্রীর পরিচয় দিতে যখন আপনার এতোই সমস্যা তখন নাচতে নাচতে আমাকে বিয়ে করতে এসেছিলেন কেন?এমন টা তো নয় যে আমার পাপা আমার বিয়ে দিতে পারছিলো না তাই আপনার হাতে পায়ে ধরেছিলো আমাকে বিয়ে করার জন্য।”

-” তোমার যেমন আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো না তেমনি তোমাকে ও বিয়ে করার কোনো ইচ্ছায় আমার ছিলো না। শুধু মাত্র আমার দাদুর জন্য তুমি এই বাড়ির ব‌উ হয়ে আসতে পেরেছো।মা মারা যাওয়ার পর দাদুই আমাদের দুই ভাই বোন কে মায়ের আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে।কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি। দাদু প্রথম যেদিন তোমাকে আমাদের বাড়িতে দেখেছিলো সেদিনই তোমাকে তার মনে ধরেছিলো।তোমাকে সে নাত‌ব‌উ রুপে দেখতে চেয়েছিলো।তার অপূর্ণ ইচ্ছা কে পূর্ণ করতেই তোমাকে বিয়ে করা।ভেবো না তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।যাই হোক আগামী কাল আমার ক্লাস টাইমে এ্যাডভান্স একাউন্টিং ইনকোর্স পরীক্ষা আছে ।ফ্রেশ হয়ে এসে ম্যাথ করতে বসো।আজ সারারাত ম্যাথ শিখবে তুমি।”

-” স্রোত কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কড়া ঘাত শোনা যায়।আবদ্ধ গিয়ে দরজা খুলে দেখে আরফা আর তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগম প্লেটে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তাকে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে আবদ্ধের।যা দেখে সালমা বেগম ইতস্তত করে বললো,
-” বিশ্বাস করো বাবা আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাই নি। কিন্তু মেয়েটা তো তখন কিছু খায় নি।হয়তো মেহমানদের সামনে লজ্জায় খেতে পারে নি।তাই আম্মা বললো মেয়েটা কে খাবার দিয়ে যেতে।”

-” ঠিক আছে টি টেবিলের উপর রেখে যান।সালমা বেগম টেবিলের উপর খাবার রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তিনি যেতেই আরফা বললো ভাইয়া তুমি সবসময় আম্মুর সাথে এমন ব্যবহার করো কেন?আম্মু কতো ভালোবেসে আমাদের। আমাদের কথা চিন্তা করে সে নিজে একটা বাচ্চা নেয় নি।অথচ তুমি আজ পর্যন্ত তাকে মা বলে একটা ডাক পর্যন্ত দিলে না।তাকে বুকে টেনে নিলে না।তোমার মুখে একটা বার মা ডাক শোনার জন্য সে চাতক পাখির মতো বসে আছে।কবে তাকে তুমি বুকে‌ জড়িয়ে নিয়ে মা বলে ডাক দিবে?”

-” সে তোর আম্মু হতে পারে কিন্তু আমার নয়।আমার আম্মু একজন ছিলো আর একজন ই থাকবে। তুই বেশি লেকচার না দিয়ে বের হ রুম থেকে।”
-” যাচ্ছি রে বাবা। তোমাদের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে আসি নি বলতেই বিছানায় উপর রাখা ব‌ই খাতার উপর নজর পড়ে আরফার।আরফা বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে এডভান্স অ্যাকাউন্টিং ব‌ই রাখা।যা দেখে আরফা বললো,

-” এটা মুনসাফিল আবদ্ধ স্যারের কেবিন নয় ভাইয়া।এটা মুনফাসিল আবদ্ধ আর মিসেস আবদ্ধের বেড রুম। সুতরাং বাবুই এর সাথে এখন তোমার টিচার স্টুডেন্ট এর সম্পর্ক নয়। হাজবেন্ড ওয়াইফ এর সম্পর্ক। বাবুই তোমার বিয়ে করা স্ত্রী।আজ তোমাদের বাসর রাত।আর তুমি কিনা বাসর রাতে ব‌উ কে ম্যাথ শেখাচ্ছো?হাউ আনরোমান্টিক ইউ আর ?”

-” তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর বড়ো ভাই।দিন দিন অনেক অধঃপতন হয়েছে তোর। অবশ্য যার সঙ্গ দিস অধঃপতন হ‌ওয়ার ই কথা।”
-“তুমি কিন্তু বাবুই কে ইনসাল্ট করছো ভাইয়া।”
-” তোকে আমি যেতে বলেছি আরু।এক কথা বার বার রিপিট করতে পছন্দ করি না আমি‌।”

-” আবদ্ধের তেতো কথা শুনে আরফা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আরফার যাওয়ার পানে তাকিয়ে স্রোত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার লাগেজ থেকে একটা টপস আর প্লাজু নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিন্তু টপস পরে আবদ্ধের সামনে আসতে কেমন যেন লজ্জা লাগে স্রোতের।স্রোত রুমে এসে না ওয়াশরুমে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে।”

-” প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে যাওয়ার পরেও স্রোত রুমে আসছে না দেখে আবদ্ধের টেনশন হতে লাগলো।আবদ্ধ ভাবলো স্রোত হয়তো শাওয়ার নিচ্ছে। কিন্তু পানির পড়ার কোনো আওয়াজ না পেয়ে আবদ্ধ ওয়াশরুমের সামনে এসে দাড়িয়ে দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে যায়।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৫

স্রোত ওয়াশরুমের দরজা না লাগিয়ে শুধু মাত্র চাপিয়ে রেখেছিলো।আবদ্ধ ভেতরে প্রবেশ করবে কিনা ভেবে দরজা ধরে ভেতরে উঁকি দিতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার।আবদ্ধ অনেক টা অস্ফুট স্বরে বললো, ও মাই গড!”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৭