কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৫

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৫
নুজাইফা নূন

-“বাসর ঘরে ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে স্রোত।মুনফাসিল আবদ্ধের সাথে সে না চাইতেও বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।স্রোত বিয়ের আসরে আবদ্ধ কে দেখে সবার সামনে চিৎকার করে বলে দেয় সে এটিটিউড এর দোকানদার কে বিয়ে করতে পারবে না।স্রোতের কথা শুনে আবদ্ধের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় তার। আবদ্ধের অবস্থা বুঝতে পেরে সাইফুল ভূঁইয়া স্রোতের কাছে হাত জোড় করে বললো,

-” এ পর্যন্ত আপনার কাছে কখনো কিছু চাই নি আম্মা।আপনি যখন যা চেয়েছেন সবটা দিয়েছি আপনাকে।এই প্রথম আমি আপনার কাছে কিছু চাইছি।আপনি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না আম্মা।”
-” তুমি যা চাও আমি সব দিবো পাপা। কিন্তু তুমি ভুলেও ঐ এটিটিউড এর দোকানদার কে বিয়ে করতে বলো না পাপা। মানুষ টা খুব খারাপ পাপা।সে আমার সাথে কি কি করেছিলো তুমি ভুলে গিয়েছো পাপা?”
-” কিছু ভুলি নি আম্মা। তবু ও বলবো আপনি আব্বা কে বিয়ে করে নিন আম্মা।আব্বা আপনাকে অনেক সুখে রাখবে।ভালো রাখবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“স্রোত মনে মনে বললো, আমি কিছুতেই বাঘের খাঁচায় হাত দিবো না পাপা।তাকে বিয়ে করা মানে আমার জীবন বাঁশ পাতা হয়ে যাওয়া। কিন্তু কি করবো আমি? কিভাবে বিয়েটা আটকাবো?পাপা এই প্রথম বার আমার কাছে কিছু চেয়েছে।আমি তাকে নিরাশ করতে পারবো না।আমাকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে সাপ ও মরে আর লাঠি ও না ভাঙ্গে। স্রোত তৎক্ষণাৎ কিছু একটা ভেবে ন্যাকা কান্না করে বললো,

-” তুমি দাদুর কথাও রাখবে না পাপা?দাদুর কতো ইচ্ছা ছিলো তার স‌ইয়ের নাতির সাথে আমার বিয়ে দিবে।সে নাকি একদম রাজপুত্রের মতো দেখতে।দাদুর মুখে আমি সেই রাজপুত্রের গল্প শুনতে শুনতে কখন যে সেই রাজপুত্র কে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি আমি নিজেও বুঝতে পারি নি পাপা।সেই অদেখা মানুষ টা সবসময় আমার মস্তিষ্কে জুড়ে বিচরণ করে। তাকে ভেবে আমার সকাল শুরু হয়।আমার শান্তিতে ঘুম হবার কারণ সেই মানুষটা।যাকে আমি কখনো দেখিনি, তার কণ্ঠস্বর শুনি নি। তবু ও সেই মানুষটা কে আমি কলিজার ভেতর গেঁথে রেখেছি।”

-“আপনার দাদুর শেষ ইচ্ছা রাখার চেষ্টা করেছি আমি আম্মা। আম্মি মারা যাওয়ার সময় হুট করে আমাকে বলেছিলো আমি যেন তার স‌ইয়ের নাতির সাথে আপনার বিয়ে দেয়। কিন্তু আম্মির স‌ইয়ের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।আর না আম্মি আমাকে কখনো তার স‌ইয়ের ব্যাপারে কিছু বলেছে। শুধু বলেছিলো তার নাম আলেয়া।এই শহরে আলেয়া নামে অনেকের খোঁজ পেয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে পাই নি।”

-” আমি দাদু কে অনেক বেশি ভালোবাসতাম এবং এখনো বাসি। আমি তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চাই।আমি তার‌ই পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবো পাপা।”
-” জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না আম্মা।আমি আপনাকে জোর করবো না।আমার মানসম্মান আপনার হাতে।এখন আপনিই দেখুন কি করবেন?আমার মানসম্মান রক্ষা করবেন নাকি সবার সামনে আমার মাথা নিচু করবেন?”

-” স্রোত তার বাবার আকুতি মিনতি ফেলতে পারে না।তার সবচেয়ে বড়ো শত্রুর সাথে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।বিয়ে পড়ানো শেষ হলে সবাই হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠে।হাসি খুশির মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত হয়ে যায়‌‌।দেখতে দেখতে বিদায় বেলা ঘনিয়ে আসে। সাইফুল ভূঁইয়া স্রোতের হাত আবদ্ধের হাতের উপর দিয়ে বললো,

-” আপনি আমার শেষ ভরসা আব্বা।আপনি খুব ভালো করে জানেন আমার আম্মা কে আমি কতো ভালোবাসি।এ পর্যন্ত তার গায়ে একটা আঁচড় ও লাগতে দেই নি।আপনি আমার দুষ্টু মেয়েটাকে একটু সামলিয়ে রাখবেন আব্বা।”
-” আপনি চিন্তা করবেন না বাবা। আমার দায়িত্ব আমি খুব ভালো করে পালন করতে জানি। তার দায়িত্ব যখন নিয়েছি তখন আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেটা আমি পালন করবো।”

-” আমি জানি আমি পারবেন।আপনার উপর ভরসা আছে আমার আব্বা। অনেক রাত হয়ে গেছে আব্বা।চলে যখন যেতেই হবে তখন আর দেরি করে লাভ নেই। আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। যাওয়ার কথা শুনে স্রোতের কি হলো কে জানে স্রোত সাইফুল ভূঁইয়া কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিয়ে বললো,
-” আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না পাপা।আমি ঐ খারাপ লোকটার সাথে যাবো না। স্রোতের কান্না দেখে শারমিন ভূঁইয়া এগিয়ে এসে স্রোত কে‌ বুকে টেনে নিয়ে বললো,

-” কান্না করে না আম্মা। একদিন পরেই তো আবার আসবেন।মাত্র একদিনের‌ই ব্যাপার।”
-” স্রোতের কান্না কিছুতেই থামছে না।কান্না করতে করতে নাক মুখ লাল হয়ে উঠেছে।স্রোতর কান্না থামছে না দেখে আবদ্ধ এসে স্রোত কে বুকে জড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

-” এতো বড়ো মেয়ে হয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না করছো কেন? তোমার কান্নার কোয়ালিটি একদম ই ভালো না।”
-” আবদ্ধের স্পর্শে স্রোত যেন জমে বরফ হয়ে গেল। সর্বাঙ্গ শিরশির করে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করলো।তার কান্না অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো।যা দেখে আরফা এগিয়ে এসে বললো,
-” ভাইয়া তোর কানে কানে কি বললো রে বাবুই?”

-” তুই আমার সাথে কথা বলবি না । তুই সবকিছু জানার পরেও আমাকে কিছু বলিস নি।তোকে হাজার বার ফোন করেছি। কিন্তু তোর ফোন বন্ধ পেয়েছি। তুই ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলি। তুই তো ঘরের শত্রু বিভীষণ।”
-” এটা সারপ্রাইজ ছিলো বাবুই।”
-” বা’লে’র সারপ্রাইজ।”

-” ভাইয়ার সামনে ভুলেও বা’ল শব্দটা উচ্চারণ করবি না।”
-” হুঁ ।বললেই হলো।তোর ভাইয়া কে ভয় পাই নাকি আমি।”
-” তৎক্ষণাৎ আবদ্ধ পেছন থেকে বললো, ভয় পাও কি পাও না সেটা তো রাতেই দেখা যাবে।কথাটা মনে পড়তেই কলিজা কেঁপে উঠলো স্রোতের।স্রোত কিছুতেই তখনকার ঘটনা ভুলছে পারছে না।যতো বার আবদ্ধের স্পর্শের কথা মনে পড়ছে ততো বার‌ই সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ বয়ে যাচ্ছে।

নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে সে। স্রোতের ভাবনার মাঝে খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়।স্রোত ঘোমটা সরিয়ে দেখে আবদ্ধ দরজা বন্ধ করছে।আবদ্ধ কে দেখে যেন স্রোতের হা পা কাঁপতে শুরু করে। স্রোতের নানু আবদ্ধ রুমে আসলে তাকে সালাম করতে বললেও স্রোত সেরকম ‌কিছু না করে বিছানার চাদর খামচে ধরে ঠাঁই সেখানে বসে র‌ইলো।”

-” আবদ্ধ দরজা বন্ধ করে এসে তার হাত ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। প্রায় দশ মিনিট পর আবদ্ধ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো স্রোত সেভাবেই বসে রয়েছে।আবদ্ধ স্রোতের দিকে এগিয়ে এসে তার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো, চেঞ্জ করো নি কেন?”

-” স্রোত কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে।যা দেখে আবদ্ধ বললো, কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমাকে।”
-” স্রোত তোতলাতে তোতলাতে বললো, আ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য ন‌ই আমি ।”
-” আবদ্ধ কিছুটা ধমকের স্বরে বললো, কোনো ‌সিনক্রিয়েট করো না মেয়ে।আমি কিন্তু তোমার সিনক্রিয়েট দেখার জন্য এখানে বসে থাকবো না।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৪

-” আবদ্ধের ধমকে কেঁপে উঠলো স্রোত। তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, তো যান না এখান থেকে।আমার সামনে বসে থাকতে কে‌ বলছে আপনাকে?আপনার মুখ দেখতেও বিরক্ত লাগছে আমার।”
-” তাহলে কি মুখ বাদে অন্য কিছু দেখাবো?”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৬