আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৩

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৩
Raiha Zubair Ripte

-“ তুই সব জানতি আগে থেকেই তৃষ্ণা তাই না যে তোর ভাইয়ের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে? এর জন্য ই বলি তুই কেনো তোর ভাইয়ের পিক নম্বর আমায় কখনও দিস নি আর পরিচয়ই করিয়ে দেওয়ার কথা বললে সবসময় বিভিন্ন বাহানা দেখাতি। এবার বুঝলাম আসল বিষয় টা। কিন্তু তোর থেকে মোটেও এমন মিথ্যা ব্যাবহার আশা করি নি আমি।
চিত্রার বলা কথার প্রতিত্তোরে তৃষ্ণা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। সে তো নিজেই এসব জানতো না। এখন চিত্রা কে বললেও বিশ্বাস করবে না। তার ভাই ও তাকে এভাবে ঘোল খাওয়ালো!

-“ চিত্রা আমি তো তোকে সারপ্রাইজড দিতে চেয়েছিলাম। তুই তো আমার ভাইয়ের হবু বউ এটা আগে থেকেই জানতাম। ভাইয়া বলতে নিষেধ করেছিল তাই বলা হয় নি।
তৃষ্ণা কথাটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। ইচ্ছে করেই মিথ্যা বললো। তার ভাইয়ের না বলার জন্য এমন বাজে ভাবে ফেঁসে গেলো। এবার তার ভাই কেও ফাঁসিয়ে দিল তৃষ্ণা। চিত্রা মুখটা গম্ভীর করে বলে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ একটু আকার ঈঙ্গিত দিয়ে বলতি।
-“ আরে বোকা মেয়ে আকার ঈঙ্গিত তো দিয়েই ছিলাম। বলেছিলাম না আমার ভাই তার হবু বউকে ভীষণ ভালোবাসে। আর তুই বিয়ে ভাঙার জন্য টিপস্ চেয়েছিলি আমি কি দিয়েছি বল?

-“ না।
-“ এ জন্য ই তো দেই নি।
-“ তুই তো তোর পরিচয় ও লুকিয়েছিস।
-“ ঐ যে বললাম ভাইয়ার নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
-“ তোর ভাই আমাকে আগে থেকে চিনতো?
-“ আরে হ্যাঁ ফাস্ট দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছে ভাই।
চিত্রার গাল লাল হয়ে গেলো। অধরা মাথা নিচু করে চুপচাপ দুই বান্ধবীর কথা শুনছে। ড্রয়িং রুমে বসে কথাবার্তা বলছে চয়নিকা বেগম আর তানিয়া বেগম। সবার সামনে পরিস্থিতি উল্টো দিকে যাচ্ছিল দেখে তৃষ্ণা চিত্রা কে নিয়ে রুমে আসে।

-“ তুমি ভীষণ মিষ্টি দেখতে চিত্রা।
চিত্রা অধরার পানে তাকালো। তৃষ্ণার থেকে জানা হয়েছে এটা ওর কাজিন। অধরার পাশে বসে লাজুক হেঁসে বলে-
-“ আপু তোমার ভাইয়ের পাশে মানাবে আমায় খুব তাই না? সে সুদর্শন আর আমি মিষ্টি।
কথাটা অধরার বুকে তীরের বেগে এসে বিঁধল। ব্যাথা যুক্ত হৃদয় নিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলে-

-“ একদম পারফেক্ট হয়ে মানাবে।
-“ আসো তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি।
চিত্রা অধরা কে জড়িয়ে ধরলো। চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। অতি সন্তপর্ণে সবার অগোচরে অশ্রু টুকু মুছে নিলো।
-“ তুমি খুব সুখী হবে দেখো।
চিত্রা অধরা কে ছেড়ে দেয়।
-“ দোয়া করো আপু।
-“ সর্বদা করে যাব।

-“ দাদাজান আপনারা ফিরবেন কবে?
-“ এই তো দাদু ভাই সপ্তাহ খানের মধ্যে ফিরবো তোমার দাদিজান কে নিয়ে।
তরিকুল খানের কথায় ভাবান্তর হলো তুষার। হজ্জ করতে গিয়েছে তরিকুল খাঁন ও তার স্ত্রী তাসলিমা খাঁন।
-“ সঠিক ডেট বলতে পারবেন না দাদাজান?
-“ আজ তো ২২ তারিখ ২৭ তারিখে হয়তো টিকিট। কোনো সমস্যা হয়েছে?
-“ না দাদাজান আপনাকে আর দাদি জান কে ২৭ তারিখ একটা সারপ্রাইজ দিব।

-“ কি সারপ্রাইজ তুষার?
-“ বলে দিলে সারপ্রাইজ আর সারপ্রাইজ থাকে কি করে?
-“ সেটাও ঠিক। এবার ফিরে কিন্তু ঘরে একটা নাতবউ চাই।
-“ তার জন্য দেশে ফিরতে হবে।
-“ ফিরছি তাহলে ২৭ তারিখ।
-“ জ্বি সাবধানে ফিরবেন।

তুষার তার দাদার সাথে কথা বলে সামনে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার সেদিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ ফিরলি কখন।
-“ এখনই।
-“ কিছু বলবি?
-“ রুমে ঢোকার পারমিশন দাও আগে।
-“ আয়।

-“ তুমি চিত্রা কে বিয়ে করছো আগে বলো নি কেনো ভাইয়া?
-“ ভেবে দেখ তো কখনও জিজ্ঞেস করেছিস কি না মেয়ে টা কে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?
তৃষ্ণা ভেবে দেখলো। আসলেই সে কখনও জিজ্ঞেস করে নি।
-“ না। কিন্তু আমি যখন বললাম চিত্রার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন তো বলে দিতে পারতে।
-“ কি বলে দিতাম,বিয়ে ভাঙার টিপস্?
-“ না সেটা না এই যে ছেলেটা তুমিই।
-“ মনে রেখেছি বিষয় টা পৃথিবীতে একমাত্র তুই সেই বোন যে তার ভাইয়ের বিয়ে ভাঙার জন্য তার হবু বউকে টিপস দিতে চেয়েছিল।

-“ আচ্ছা বাদ দাও। তোমার এই বিষয় লুকানোর জন্য কতটা বিব্রতিকর পরিস্থিতি হয়েছিল। চিত্রা আর আমি দু’জন দু’জনকে দেখে জাস্ট হতবিহ্বল। কোনোরকমে মিথ্যা বলে বুঝ দিয়ে এসেছি।
-“ গুড।
তৃষ্ণা হতাশ হলো। গুড কেনো বললো তার ভাই? জিজ্ঞেস তো করবে বাহবা দিবে তা না করে গুড বলছে। দ্যিস ইজ ঠু মাচ ব্যাপার হলো।

-“ তোমার গুড তোমার কাছেই রাখো ভাই লাগবে না আমার।
কথাটা বলে তৃষ্ণা চলে যায়। রাফি তুষারের রুমে আসছিল তৃষ্ণা কে বের হয়ে যেতে দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে?
তৃষ্ণা দাঁড়ালো। কোমরে হাত গুঁজে বলে-
-“ আমাকে দেখলেই কি হয়েছে এটাই কেনো বের হয় আপনার মুখ দিয়ে? আর কোনো শব্দ নাই আপনার ডিকশনারিতে?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো তৃষ্ণার কথায়।

-“ আমার ডিকশনারি তে অনেক শব্দ আছে,কিন্তু সেগুলোর ভার তুমি সইতে পারবে না মেয়ে।
-“ মশকরা করছেন আমার সাথে?
-“ মোটেও না।
-“ তাহলে এটা বলছেন কেনে?
-“ সত্যি ই তো বললাম। আমার ডিকশনারি তে থাকা শব্দ গুলো একবার মুখ থেকে বের হলে মেয়ে তোমার সুস্থ ভাবে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে। সো সেগুলো ডিকশনারি তেই চাপা বদ্ধ থাকুক।
-“ আজাইরা প্যাচাল সরেন সামনে থেকে।

তৃষ্ণা রেগেমেগে বসার ঘরে যায়। তানিয়া বেগম সোফায় রিলাক্স মুডে বসে। তৃষ্ণা গিয়ে তানিয়া বেগমের পাশে বসতেই তানিয়া বেগম ফুরফুরে মেজাজে বলে উঠে –
-“ তোর দাদা দাদি আসলেই আমি তুষারের বিয়ে ঠিক করবো। পুত্র বঁধু ঘরে নিয়ে আসবো। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নাতিনাতনির মুখ দেখবো। এর আগে একটা কাজ করবো।
তৃষ্ণা রাগান্বিত চেহারা নিয়েই বলে-

-“ কি কাজ করবা?
-“ আরে তোর ও তো বিয়ে দেওয়া লাগবে। তুষার টা শেষ হলে তার পর তোর বিয়ে আর তা না হলে রাফির বিয়ে।
-“ আমি বিয়ে টিয়ে করবো না মা। রাফি ভাই কে বিয়ে দাও।
-“ ওমা কেনো? ব্রেকআপ হয়ে গেছে নাকি তোর?
তানিয়া বেগমের অবাক হয়ে বলা কথাটায় তৃষ্ণার মুখ হতবিহ্বল হয়।
-“ ধূর কিসের ব্রেকআপ, মা হয়ে কি বলো এসব।

-“ আরে মা তো কি হয়েছি,আমার মতো মা পাবি নাকি বলতো? দেখ যদি ঐ ছেলেটার সাথে তোর ব্রেকআপ হয় তাহলে বল মা আমি ছেলেটার সাথে কথা বলবো।
-“ কোন ছেলের কথা বলছো তুমি?
-“ এখন ছেলেটাকে চিনতেও পারছিস না তুই? স্বীকার কর মা, আমি সবসময় তোকে সাপোর্ট করবো।
-“ তুমি আমার মাথা টা আউলিয়ে দিয়ো না মা। একেই যা হযবরল কান্ড ঘটছে তার উপর তুমি কিসব বলে যাচ্ছো মাথায় কিছু ঢুকছে না।

তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে চলে গেলো। তানিয়া বেগম ভাবনায় পড়ে গেলো,মেয়ে তার অতি শোকে এমন হয়ে গেলো নাকি? রাফি তানিয়া বেগমকে একা একা বিরবির করতে দেখে এগিয়ে বলে-
-“ কি ব্যাপার চাচি একা একা কি বিরবির করছো?
-“ আমার তৃষ্ণা টা বুঝি পাগল হয়ে যাবে রে।

-“ তোমার মেয়েতো পাগল করে অন্য কে। সেখানে তোমার মেয়ে নিজে পাগল হবে কেনো?
-“ আর বলিস না মেয়ে আমার প্রেম করে,আমি মা হয়ে বললাম তাকে সবসময় সাপোর্ট করবো তার বিনিময়ে সত্যি টা বলবি,ও বললোই না।
কথাটা কর্ণকুহর হতেই রাফির মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে যায়। হাস্যোজ্জ্বল মুখ চুপসে গম্ভীর হয়।

-“ তৃষ্ণার বয়ফ্রেন্ড আছে?
-“ আরে হ্যাঁ। দেখতে শুনতেও নাকি সুন্দর।
-“ তুমি কি ওর বিয়ে দিতে চাইছো?
-“ তৃষ্ণা হ্যাঁ বললে দিয়েই তো দিবো।
-“ তোমার মেয়ে কি বললো?
-“ সে বিয়ে করবে না। হয়তো মনমালিন্য চলছে দুটোর মাঝে।

রাফি ওহ্ বললো,আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,এর জন্যই কয়েকদিন যাবত তৃষ্ণার মধ্যে এতো পরিবর্তন এসেছে!বয়ফ্রেন্ড ছ্যাকা দিয়েছে। বাহ ভালোই তো। তলেতলে রিলেশন করলো আর সে জানতেও পারলো না! দেখে নিবে তৃষ্ণার সো-কোল্ড বয়ফ্রেন্ড কে রাফি। রিলেশন করা জন্মের মতো শিখিয়ে দিবে। কিভাবে করতে হয়।

-“ এই আপনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন,তৃষ্ণার ভাই আপনি আমাকে বলেন নি কেনো? আমি একদিক দিয়ে আপনাকে বিয়ে না করার কত প্ল্যান করছি আর অন্য দিকে বলেছি তৃষ্ণার ভাই কে ভালোবাসি। জেনেশুনে শুধু মজা নিয়েছেন।
চিত্রার বলা কথার প্রতিত্তোরে তুষার কিছুক্ষণ চুপ রইলো।

-“ ইচ্ছে করেই বলি নি।
-“ কিন্তু কেনো?
-“ এমনি।
-“ কাজ টা মোটেও ঠিক হয় নি।
-“ জানি তো।
-“ রেগে আছি আপনার উপর ভীষণ। রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করুন পুরুষ।
-“ বেলকনিতে একবার আসুন।
-“ এত রাতে বেলকনিতে গিয়ে কি করবো?
-“ আহ আসুনই না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১২

চিত্রা ফোন কানে নিয়েই বেলকনিতে যায়। প্রথমে আকাশ পানে তাকিয়ে নিচে তাকাতেই চোখ জোড়া আটকে যায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ টাকে দেখে।
-“ প্রেয়সীর কি রাগ ভাঙলো এই অধম কে দেখে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৪