আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৪

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৪
Raiha Zubair Ripte

রাস্তার ধারে ব্লাক কালারের হুডি পড়ে কানে ফোন নিয়ে ব্লাক কালারের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে প্রেয়সীর বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে এক প্রেমিক পুরুষ। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় প্রেমিক পুরুষ তার প্রেয়সী কে তার দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে থাকতে দেখে মুখের হাসি চওড়া হয়। জিহ্বা দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে শুধায়-

-“ কি হলো বললেন না তো রাগ কি ভেঙেছে?
-“ যদি বলি আপনার প্রেয়সীর রাগ এখনও ভাঙে নি তাহলে কি করবেন প্রেমিক পুরুষ?
-“ রাগ ভাঙানোর ব্রত করবো।
-“ তা এতো রাতে রাস্তার পাশে এভাবে দাঁড়ানো কেনো? বাসায় আসুন।
-“ বাসায় আসার অধিকার টা তো এখনও দেন নি। যখন হবে তখন আসতে বলবেন।
-“ বাসায় আসার জন্য অধিকার লাগে নাকি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ অবশ্যই লাগে।
-“ শীত লাগছে না?
-“ না।
-“ বাসায় চলে যান,রাত অনেকটা হলো তো।
-” তৃষ্ণা তো মিটলো না,এখনই চলে যাব!
-“ কিসের?

-“ আপনাকে দেখে তৃষ্ণা মিটে নি আমার।
-“ তো প্রেমিক পুরুষ কি করলে তৃষ্ণা মিটবে?
-“ আপনার বেলকনি থেকে কিছু ভালোবাসা ছুঁড়ে দিন। আমি সেটা বুকপকেটে ভরে নিয়ে যাব।
মুহুর্তে ফোনের ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো। চিত্রা হাসছে।

-“ হাসবেন না মিস চিত্রা।
চিত্রা হাসি থামিয়ে দিলো। কন্ঠে বিষণ্নতা এনে বলল-
-“ আমার হাসির আওয়াজ কি বাজে? নাকি হাসলে বাজে দেখায় কোনটা?
-“ আপনার হাসির শব্দ আমার বুকের বা পাশ টায় এসে বারি খায়। খুব যন্ত্রণা দেয় তখন।
-“ আচ্ছা বুঝে গেছি এখন বাসায় চলে যান কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে না থেকে।
-“ সত্যি চলে যাব?
-” হুমম।

তুষার মিনিট কয়েক ফোন ওভাবেই ধরে রেখে কেটে দেয়। চিত্রা তখনও ঠাই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রয়। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে পেছন ফিরে গাড়িতে উঠতে নিবে এমন সময় চিত্রা পেছন থেকে তুষার কে ডাক দেয়।
-“ বুকপকেট খালি করে বাসায় ফিরবেন?
কথাটা বলেই চিত্রা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দেয়। তুষার মৃদু হেসে ছুঁড়ে দেওয়া অদৃশ্য ফ্লায়িং কিস টা হাত বাড়িয়ে মুঠোয় বন্দী করে। মুঠো করা হাত টায় নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে সেটা হুডির পকেটে ভরে।

-“ সাবধানে যাবেন।
-“ এই মেয়ে তোমার বয়ফ্রেন্ড টা কে?
তৃষ্ণা পড়ার টেবিলে বসে মাথায় এক হাত ঠেকিয়ে বই পড়ছিলো। রাফির কথা শুনে বইয়ের থেকে মুখ সরিয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ কাকে কি বলছেন?
-“ বাংলা কথা বুঝো না?
-“ বয় ফ্রেন্ড মানে ছেলে বন্ধু ?তো ছেলে বন্ধু বললেই পারতেন। বয়ফ্রেন্ড বলার দরকার কি? বাই দ্যা ওয়ে আমার ছেলে বন্ধু নেই।
-“ চুপ। চাচি যে বললো তুমি প্রেম করে বেড়াচ্ছো।
-“ তো আপনার চাচি কে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন ছেলেটা কে।
-“ তুমিই বলো ছেলেটা কে?
-“ আমি তো জানি না।
-“ মিথ্যা বলছো কেনো?

তৃষ্ণার মুখ জুড়ে এবার রাগ উড়ে আসলো। কিসের প্যাচাল পারছে তখন থেকে। কথা বলার কোনো ওয়ে পাচ্ছে না দেখে কি এসব হযবরল বলে আমার মাথা হযবরল করতে চাচ্ছে?
-“ আপনার কাজ নেই ভাই?
-“ হুমম আছে। তোমার বয়ফ্রেন্ড কে খুঁজার কাজ এখন।
তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে শব্দ করে বইটা বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ আমার শ্বাশুড়ির পেটে আছে সে। যান গিয়ে খুঁজে নিয়ে আসেন।
-“ হ্যাঁ তা না হয় খুঁজবো…. কথাটা বলার পরই রাফির টনক নড়ে। “ মজা করছো আমার সাথে?
-“ ওমা মজা কেনো করবো?
-“ রিলেশন করো না কারো সাথে?
-“ না।
তৃষ্ণার সোজাসাপ্টা জবাব শুনে রাফি ভ্রু কুঁচকালো।

-“ কেনো?
-“ কেনো আবার কি?
-“ রিলেশন কেনো করো না?
-“ কারন আমি যারে পছন্দ করি সে অন্য কাউকে পছন্দ করে তাই।
-“ সত্যি?
-“ হ।
-“ কষ্ট হয় তখন?
তৃষ্ণা তপ্ত শ্বাস ফেলে। যারে ভালোবাসে তার কথাই তারে বলছে।
-“ কলিজা ফেটে যায় তখন।
রাফি বিরবির করে বলে –

-“ যাক ফেটে আমি জোরা লাগিয়ে নিব সমস্যা নাই।
-“ কিছু বললেন?
-“ না,পড়াশোনায় মনোযোগ দাও,ওসব হারাম ভালোবাসার জন্য কষ্ট পেয়ো না। তোমার জন্য হালাল অপেক্ষা করছে।
তৃষ্ণা সরু চোখে তাকায় রাফির দিকে। রাফি হাসি উপহার দিয়ে চলে যায়।

ক্লাস রুমে মনমরা হয়ে বসে আছে তৃষ্ণা । পাশেই চিত্রা তৃষ্ণা কে পর্যবেক্ষণ করে চলছে।
-“ কিরে এমন মন মরা হয়ে বসে আছিস কেনো,কি হইছে?
-“ আমার জামাই ম’রছে তাই এমন মনমরা হয়ে বসে আছি। আর কোনো প্রশ্ন?
-“ আবার ছ্যাকা খাইছিস?
-“ না।
-“ তাইলে? বলিস নাই তোর কাজিন কে? আচ্ছা তোর কোন কাজিন রে তুই ভালোবাসিস? ছেলেটা আমার দেবর নাকি ভাসুর?

-“ দেবর হয় সম্পর্কে তোর। আমার চাচার ছেলে।
-“ তোর চাচি কে আনলি না কেনো সেদিন? তাহলে মহিলা টাকে পটিয়ে তোর আর ঐ ছেলের বিয়ে দিয়ে দিতাম।
-“ চাচি বেঁচে নেই। মা-রা গেছে বছর পাঁচেক হলো। ক্যান্সার হয়েছিল।
-“ ওহ্ সরি।

-“ তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে চলে আয় বোইন।
-“ গাধির ঘরে গাঁধি আমায় না বলে তোর ভাইকে বল।
-“ আচ্ছা আজ বলবো মাকে। আর কাল তো দাদান আসবে।
-“ কোথা থেকে?
-“ হজ্জ থেকে। তারা আসলেই মেবি বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে তোদের।
-“ আচ্ছা চল এবার বাসায় যাওয়া যাক। ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না।

চিত্রার কথায় তৃষ্ণা সায় দেয়। দুই বান্ধবী ক্লাস পালিয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকে। টুকটাক কথাও বলতে থাকে। কথা বলার একপর্যায়ে তৃষ্ণা সামনে তাকাতেই দেখে রিয়া আর অচেনা এক ছেলে হাত ধরে হাঁটছে। ছেলেটা কিছু একটা বলছে আর রিয়া হেঁসে চলছে তো কখনো ছেলেটার কাঁধে মাথা রাখছে। ফটাফট ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তৃষ্ণা কয়েকটা ছবি তুলে রিয়ার।

রাফি কে সাবধান করা লাগবে। ভালোবাসার মানুষ টিকে না পাক জীবনে তাই বলে জেনেশুনে ক্ষতি তো হতে দিতে পারে না।
চিত্রা নিজের বাসার মোড়ের দিকে আসতেই তৃষ্ণার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। তৃষ্ণা ফোনটার দিকে তাকায় বারবার। তার রাফি ভাই রিয়ার সত্যি টা জানলে কিভাবে রিয়াক্ট করবে? কষ্ট পাবে নিশ্চয়ই খুব যেভাবে সে পায়।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৩

-“ ভাই ওর তো শ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে কি করবো এবার?
লিমনের কথা শুনে তুষার বলে উঠে –
-“ বাংলোর পেছনে কবর দিয়ে দাও। রাতুল কোথায়?
-“ ভাই তো নেই, আপনার বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা, তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সেটা যেনো ফুলফিল হয়।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৫