আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৫

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৫
Raiha Zubair Ripte

-“ জ্বি কাকে চাই?
দরজায় কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে ছিলো রাতুল। হঠাৎ দরজা খুলেই এমন প্রশ্ন শুনে ভেতর পানে তাকায়। মুহূর্তে দেখতে পায় অতি সাদামাটা শুভ্র এক রমণী কে। রমণী টাকে সে চিনে,একটু ভালো করেই চিনে। নিজের দৃষ্টি সংযত করে রাতুল জবাব দেয়-

-“ আমি রাতুল। তুষারের বন্ধু।
অধরা দরজা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে সরে দাঁড়ায় রাতুল কে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার জন্য। রাতুল একপলক আবার অধরার দিকে চেয়ে ভেতরে ঢুকে। সোফায় বসে তুষারকে মেসেজ দেয়। অধরা ওড়নার কোনা হাতে প্যাচাতে প্যাচাতে বলে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ চা আনবো নাকি কফি?
রাতুল নড়েচড়ে বসে। হালকা কেশে বলে-
– কফি উইদাউট সুগার।
অধরা রান্না ঘরে চলে যায়। সুগার ছাড়া কফি বানাতে শুরু করে। তুষার রাতুলের মেসেজ পেয়েই নিচে নেমে আসে। রাতুলের পাশে বসে বলে-

-“ কাজ কতদূর এতিমখানার?
-“ গাথনির কাজ ধরা হয়েছে।
-“ ইকবালের লোক বাঁধা দিয়েছিল?
-“ এখনও অব্দি দেয় নি।
-“ বাঁধা দেওয়ার মত দুঃসাহস আর দেখানোর মত ভুল সে করবে না।
-“ মাস কয়েক পর নির্বাচন মাথায় আছে তো?
-“ হুম।
-“ বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে। হুটহাট একে ওকে ধরে এনে ধুম ধাম মে’রে ফেলিস না।
-“ আমার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে ছেড়ে দিব না। আমি নিজে থেকে যাই না ওদের কাছে, ওরা নিজেই মৃ’ত্যুর কাছে আসে।

-“ আপনাদের কফি।
অধরার কথার আওয়াজে চুপ হয়ে যায় তুষার,রাতুল। তুষার কফির মগ টা হাতে নিয়ে বলে-
-“ রুমে যা এখন।
অধরা বাধ্য মেয়ের মতো চলে যায়। রাতুল কফি চুমুক দেওয়ার সময় একবার অধরার যাওয়ার পানে তাকায়।
-“ কাল তুই একবার এতিম খানার ওখানে যাস তুষার। রহমান চাচা যেতে বলেছেন।
-“ হ্যাঁ যাব। আজ রাতের ফ্লাইটে দাদাজান আর দাদিজান আসছে।
-“ ওহ্ ভালো খবর।

দুপুরে আজকাল শীতের মধ্যে ও তীব্র গরম পড়ে। হেঁটে আসা হলে শরীর ঘেমে যায়। গরম আসছে তার সিম্পল গরম ভাব এখনই দিয়ে দিচ্ছে সূর্য্যি মামা। তৃষ্ণা ঘামতে ঘামতে বাড়ি ফিরে। মাথায় রয়েছে হাজার ও চিন্তা ভাবনা। বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে ঢুকে পড়ে। কাঁধের ব্যাগ টা বিছানায় রেখে আলমারি থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়।

বেলকনি তে গিয়ে ভেজা জামা কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে রুমে আসে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে মনে মনে ভাবে-“ ভালোই হয়েছে, আমাকে ভালোবাসলে কি এখন তুই রাফি ছ্যাকা টা খেতি বল? খেতি না তো। কথায় বলে না ভালো জিনিস মানুষের চোখে পড়ে না,সেই অবস্থা হলো তোর। হে আমাকে ভালোবাসলে কোনো ছেলের হাত ধরে ঢলাঢলি করা তো দূর চেয়েও তাকাতাম না। কতটা লয়্যাল আমি জানিস? বেডা তুই ব্যাতিত আমি কোনো ছেলেকে কখনও ঐ নজরে দেখিই নি। আল্লাহ ছাড় দেয় ছেড়ে দেয় না।আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল এবার তুই পাবি।

কথাটা বলে নিজেকে প্রিপেয়ার্ড করে। যা সে দেখেনি সেটাও বানিয়ে বানিয়ে বলবে। মাথায় ওড়না টা দিয়ে সোজা রাফির ঘরের দিকে ছুটে তৃষ্ণা।
-“ রাফি ভাই আপনার তো সংসার ভাঙলো বলে।
রাফি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছিল। তৃষ্ণার এমন কথা শুনে ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার পানে দেয়। রাফি শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-

-“ মানে?
তৃষ্ণা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ মানে আপনার জন্য চমক আছে। আপনি জানেন আজ আমি কি দেখেছি?
রাফি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি দেখছো?
– “ ওয়েট দেখাচ্ছি।

কথাটা বলে তৃষ্ণা ফোনের গ্যালারি থেকে রিয়া আর রায়ানের পিক টা বের করে বলে-
-“ জানি কষ্ট পাবেন ভাই,রাগ হবে কিন্তু সত্যি তো মানতেই হবে। আপনাকে ঠকানো হচ্ছে যা আপনি ডিজার্ভ করেন,
রাফি তৃষ্ণার পানে তাকায়। তৃষ্ণা দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে বলে-
-“ মিস্টেক আপনি মোটেও এটা ডিজার্ভ করেন না।

রাফি তৃষ্ণার হাত থেকে ফোন টা নেয়। তৃষ্ণা সেটা দেখে মনে মনে হেসে বাহিরে দুঃখি দুঃখি ভাব করে বলে-
-“ আমি মোটেও আপনাকে এটা দেখিয়ে হার্ট করতে চাই নি। কিন্তু কি করবো আপনার অগোচরে রিয়া আপু অন্য একটা ছেলের সাথে এমন মেলামেশা করছে ভাবা যায়?
রাফি পিক টা জুম করে দেখে বলে-
-“ আরে এটা তো রায়ান।
তৃষ্ণা রকেটের গতিতে জিজ্ঞেস করে-
-“ আপনি চিনেন এই ছেলেটাকে?
-“ হ্যাঁ।

,-“ দেখছেন ওরা দুজনই কিভাবে আপনায় ঠকালো। এরজন্য ই ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশন করতে হয় না। আপনার সাথেও করছে আবার ঐ লোকের সাথেও করছে।
রাফি তৃষ্ণার কথার একটার ও মানে বুঝলো না। কি করে বেড়াচ্ছে, কে কাকে ঠকাচ্ছে?

-“ তখন থেকে কি ভুলভাল বকে যাচ্ছ?
-“ আমি একটুও ভুলভাল বলছি না ভাই। সত্যি টা তুলে ধরতে চাচ্ছি। চোখ কান খোলা রাখুন। পরে কিন্তু পস্তাবেন।
-“ এই মেয়ে চড়িয়ে গাল লাল করবো,কিসব বলছো। খুলে বলো আর তা না হলে আমার রুম থেকে বিদায় হও।
তৃষ্ণা রাফিকে ভেঙচি কেটে বলে-
-” আমি কি আপনার রুমে থাকতে আসছি নাকি। আপনার গার্লফ্রেন্ড যে অন্য বেডার লগে ভেগে যাচ্ছে সেদিকে কি খেয়াল রাখেন?

-“ আমার গার্লফ্রেন্ড কে?
-” আপনাকে আমি এখন কার পিক দেখালাম?
-” রিয়ার।
-“ তাহলে কি দাঁড়াল?
রাফি বিষয় টা বুঝার চেষ্টা করলো। বিষয়টা বুঝতেই তার মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হল। মুখ থেকে সুস্পষ্ট হলো–“ হোয়াট…. ইডিয়ট রিয়া আমার গার্লফ্রেন্ড?
-“ আমি জানি তো আপনার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু মেয়েটা আপনি থাকাকালীন ঐ ছেলের সাথে এমন ঢলাঢলি করে ক্যান?
রাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে-

-“ কারন ওর হবু হাসবেন্ড ও তাই।
কথাটা তৃষ্ণার কর্ণকুহর হতেই তৃষ্ণা বিস্ময়ের সাথে বলে-
-“ কিহ! আপনাকে ছেড়ে ঐ ছেলেকে বিয়ে করছে?
-“ বিয়েটা তো রায়ানের সাথেই হবার কথা।
-“ কেনো ভাই আপনি কি ঐ ছেলের থেকে কোনো অংশে কম নাকি? ঐ ছেলের থেকে তো আপনি বহুত সুন্দর।
-“ তাতে রিয়ার কি? ও ওর বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করছে। সেখানে আমি সুন্দর নাকি অসুন্দর ও সেটা দেখবে কেনো?
-“ আপনি রিয়া আপুর বয়ফ্রেন্ড না?
-“ না জাস্ট ফ্রেন্ড।

তৃষ্ণা কথাটা শুনে রিয়াক্ট করা ভুলে গেছে। ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না জাস্ট ফ্রেন্ড। আর আজকাল জাস্ট ফ্রেন্ড নিয়ে ও তো কতকিছু বের হয়। রাফি তৃষ্ণা কে চুপ থাকতে বলে উঠে-
-“ আর কিছু বলার বাকি আছে আমার মাথা খারাপ করার জন্য?
তৃষ্ণা রাফির হাত থেকে নিজের ফোন টা নিয়ে নেয়।
-“ আপনারা জাস্ট ফ্রেন্ড?

-“ হুম।
-“ কোনো কিছু নেই আপনাদের মধ্যে?
-“ থাকবে না কেনো আছে?
,-“ বন্ধুত্ব।
ওহ্ ভালো। কথাটা বলে তৃষ্ণা চলে আসে রাফির রুম থেকে। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফোন টিপতে শুরু করে।

এয়ারপোর্টে বাহিরে মুখে মাক্স পড়ে ব্লাক হুডি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। অপেক্ষা করছে তার দাদা-দাদির জন্য। তরিকুল খাঁন তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী তাসলিমা খাঁনের হাত শক্ত করে ধরে এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে তুষার দৃশ্য টা দেখলো। একদিন সে আর চিত্রা ও এভাবে হজ্জ করে ফিরবে। মুহুর্ত টা কল্পনা করতেই মুখে হাসিরা এসে হানা দিলো। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দাদা আর দাদির দিকে এগিয়ে গেলো। তরিকুল খাঁন কে জড়িয়ে ধরে সালাম দেয়। তরিকুল খাঁন সালামের জবাব দেয়। তুষার তরিকুল খাঁন কে ছেড়ে দিয়ে তাসলিমা খাঁন কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৪

-“ কেমন আছেন দাদিজান? হজ্জ যাত্রা কেমন হলো?
-“ আলহামদুলিল্লাহ দাদু ভাই সব ভালো ছিলো।
-“ তো চলুন বাসায় যাওয়া যাক। সবাই অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৬