মেজর পর্ব ১৯

মেজর পর্ব ১৯
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

জেনারেল কাইয়ুম হাসান রাগান্বিত দৃষ্টি মেলে ফারুক আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে।উনাকে দেখে কর্ণেল ফারুক আহম্মেদ উঠে দাঁড়ায়,বিনীত গলায় সালাম দেয়,উনার রাগান্বিত চেহারা দেখে বিচলিত হয়,রাগের কারণটা সঠিক বোধগম্য হয় না।

মুশফিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
কাইয়ুম হাসান এগিয়ে আসে।দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনাদের মত বিচক্ষণ মানুষের কাছে এমন ব্যবহার আশা করা যায় না।”
ফারুক আহমেদ বুঝতে পারলেন জেনারেল অফিসার সব শুনেছে।উনি বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“স্যার।মুশফিক কি করেছে জানেন?জানলে আপনিও রেগে যেতেন। ”
“আমার একটু মুক্ত বাতাসের প্রয়োজন আপনারা দুজন কি আমার হাটার সঙ্গী হবেন?”
দুজনেই বুঝতে পারে জেনারেল জরুরী কিছু বলবে; সেজন্য এখানে না বলে নিরাপদ জায়গায় বলতে চাচ্ছে;উনারা দুজনেই বিনাবাক্যে জেনারেলের পিছুপিছু যায়।

জেনারেল দুজনকে নিয়ে খোলা মাঠে গিয়ে দাঁড়ায়।কর্ণেল ফারুক আহমেদ বেশ চিন্তিত্ব হয়ে পরেছে, মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন মুশফিক অজ্ঞ,তার চেহারায় কোন চিন্তার ছাপ নেই।
জেনারেল কাইয়ুম হাসান ফারুক আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি অফিসে ঝগড়া করার আগে একবারও মনে হলো না আপনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি? সম্মান এভাবে নষ্ট করতে খারাপ লাগছে না? ”

ফারুক আহমেদ উশখুশ করে বললো,
“আমি ঝগড়া করিনি স্যার।মুশফিক আমার মুখে মুখে তর্ক করছিলো। ”
“কেন?”
“স্যার;মুশফিক সবার অগোচরে বিয়ে করেছে এমনকি স্ত্রী-কে সরকারী কটেজে নিয়ে এসেছে অথচ অফিসে ইনফর্ম করেনি।”
জেনারেল ঝাঁঝালো গলায় বললো,

“আপনি কিভাবে জানলেন সে ইনফর্ম না করেই স্ত্রী নিয়ে এসেছে?”
“ইনফর্ম করলে অবশ্যই জানতে পারতাম।”
“আপনাকে সবকিছু জানতে হবে কেনো?আপনার উপরেও উর্ধতন কর্মকর্তা আছে নিশ্চয়ই।”
ফারুক আহমেদ থমথম খেয়ে যায়।কি বলবে ভাষা খুঁজে পায় না।
জেনারেল আবার বললো,

“মুশফিক খুবই দক্ষ একজন অফিসার, সে তার দায়িত্ব, কর্তব্য খুব ভালোভাবে পালন করে।আর্মিদের সবকিছুর মতো বিয়ের ব্যাপারটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর মাধ্যমে একটা মেয়ে তার সাথে জড়িত হবে,যে কিনা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে,তাই মেয়েটাও গুরুত্বপূর্ণ ।এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা সংবাদ না জানিয়ে বিয়ে করার মতো ছেলে মুশফিক নয়।

তার বিয়ে হঠাৎ করেই হয়ে যায়,বিয়ের আগে সে আমাকে জানায় কিন্তু আমি কাউকে জানাইনি,তাকেও নিষেধ করেছি ব্যাপারটা শো করতে।আপনি ইতোমধ্যে অবগত আছেন যে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অ,পারেশনে নেমেছি,এই অপা,রেশনের মূল দায়িত্বে আছে মুশফিক,তার জীবন বাজি রেখে সে এই দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছে,আমি তার উপর শতভাগ ভরসা করতে পারি সে আমাকে কখনো নিরাশ করেনি।

এই অপা,রেশন সাকসেসফুল না হওয়া পর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে বিয়ের খবরটা দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে আপাতত গোপন রাখবো।আ,ততায়ীদের কানে যদি এ খবর যায় তাহলে তারা আরেকটা সুযোগ পাবে,প্রত্যেক পুরুষের দুর্বলতা তার স্ত্রী।সে সিদ্ধান্ত নেয় স্ত্রী এখানে নিয়ে আসবে আমি তাতে মত দেই কারণ কটেজে থাকলে সৈনিকদের পাহারায় থাকবে কোন ঝুঁ,কি থাকবে না।

অ,পারেশন সফল হলেই আমরা সবাইকে জানাতাম।”
ফারুক আহমেদ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা ঠিক রাখতে পারেনি,মুশফিক আসলেই দক্ষ, দায়িত্ববান একজন অফিসার,তার পক্ষে এমন কাজ সম্ভব না কিন্তু উনি কোন চিন্তাভাবনা না করেই এত কথা বলে ফেলেছেন এখন জেনারেলের কথা শুনে লজ্জিত বোধ করছেন।
ফারুক আহমেদ মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমি দুঃখিত।”
মুশফিক মাথা নাড়ে।জেনারেল আবার বললো,
“আপনার মেয়ে নয়না!সে কেনো একজন মেজরের কটেজে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবে?”
ফারুক আহমেদ জানেন যে নয়নার এই কাজের জন্য তাকে ভ,য়াবহ শা,স্তি দেয়া হবে উনি ঝটপট বললো,
“স্যার।নয়না মুশফিককে ভাইয়ের মতো দেখে তাই সে গিয়েছিলো,এর আগেও গিয়েছে তাই না মুশফিক?”

মুশফিক অবাক হয়।নয়না তাকে ভাই নয় বরং প্রেমিক রূপেই কল্পনা করে,আর এর আগে কখনোই কটেজে যায়নি কিন্তু এখন জেনারেলের সামনে অস্বীকার করলে কর্ণেল খুবই অপমানিত হবে,ইতোমধ্যে সে অনেক অপমানিত হয়েছে।সে মাথা নাড়িয়ে স্পষ্ট গলায় বললো,

“জ্বী স্যার।”
“আমি চাই না আমার সহকারী অফিসাররা কোনোরকম প্রশ্ন মনে রাখুক।যেহেতু খবরটা সবাই জেনে গিয়েছে সুতরাং আজকে রাতে অফিসারদের জন্য একটা পার্টির আয়োজন করবো,বিশেষ করে মেজর মুশফিক আহসান আর তার স্ত্রীর জন্য। সবাই যেনো নতুন এই দম্পত্তিকে শুভকামনা জানাতে পারেন।”
মুশফিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ফারুক আহমেদ বললো,

“জ্বী স্যার।”
জেনারেল বললো,
“এখানে আমরা একে অপরকে সম্মান করবো,মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করবো।তা না করে যদি আমরা নিজেরাই শ,ত্রু হয়ে যাই তাহলে কিভাবে হবে? শ,ত্রু তাহলে পালাবে।”
মুশফিক আর ফারুক আহমেদ একে অন্যকে হ্যান্ডশেক করে বললো,
“স্যার আমরা মিলেমিশে কাজ করবো।”

জেনারেল মাথা নাড়ে।মুশফিককে বললো,
“আগামীকাল তোমার ছুটি।বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার মিতুকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসো।”
মুশফিক কৃতজ্ঞতায় মাথা নাড়ে।
“জ্বী স্যার।”
“সন্ধ্যায় আমার কটেজে চলে আসবে।”
“জ্বী।”

মুশফিক বিকালে কটেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।বন্য পাখির কিচিরমিচির ছাড়া তার নিজস্ব পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে না,অর্থাৎ মিতু ঘুমাচ্ছে।মুশফিক কলিং না চেপে এক্সট্রা চাবি বের করে কটেজে প্রবেশ করে।রুমে গিয়ে দেখে মিতু গল্পের বই পড়ছে।বইয়ের নাম “ফিফটি শেডস উইথ গ্রে”।মুশফিকের ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠে।মিতু মুশফিককে দেখে উঠে দাঁড়ায়।হাতের বই বুকে চেপে ধরে বললো,

” আসসালামু আলাইকুম।”
মুশফিক গায়ের কাপড় খুলতে খুলতে জবাব দেয়।মুশফিকের ঠোঁটের মধ্যিখানে অবস্থিত হাসির কারণ কি তা মিতুর বোধগম্য হয় না,সে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“হাসছেন কেনো?”
“হাসতে মানা নাকি?”
“না কিন্তু কারণ ছাড়া কেউ হাসে না?”
“আমি হাসি।”

মুশফিক মিতুর বইটার দিকে ইঙ্গিত করে বললো,
“নাইস বুক!পুরোটা পড়েছো?”
“আর তিন পৃষ্ঠা বাকি।”
মুশফিক শার্ট খুলে বিনে রাখে।মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“অলমোস্ট ডান।”
মুশফিকের মুচকি হাসির মানে কি?প্রথমে না বুঝলেও পরে ঠিকই বুঝতে পারে।বইটার দিকে তাকায়।মুশফিক বললো,

“খুব সুন্দর বইটা।”
মিতুর মুখ মূহুর্তেই লাজুক হয়।বইটা নিঃসন্দেহে প্রচুর রোমান্টিক।সে পড়েছে আর এই বইটা বোধহয় মুশফিকও পড়েছে।মিতু ভাবতে পারছেনা।সে অবাক হয়ে বললো,
“আপনি পড়েছেন?”
“হ্যাঁ।তিনবার।”
মিতু জোড়ে বললো,
“তিনবার!”
“হ্যাঁ।”
মিতু বিরবির করে বললো,

“অহ নো।”
“এত রোমান্টিক একটা উপন্যাস পড়ছো অথচ তুমি এত আনরোমান্টিক!”
মিতু অবাক হয়ে বললো,
“আমি আনরোমান্টিক? ”
“হ্যাঁ।এত সুদর্শন এক পুরুষের সংস্পর্শে থাকার পরেও কোন রা-শব্দ নেই।”
মিতু মুশফিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে বললো,
“সুদর্শন পুরুষ!হুহহ আমার কি করা উচিত? ”

“সারাক্ষণ সুদর্শন পুরুষের বুকে থাকা উচিত।তাকে বেশী বেশী ভালোবাসা উচিত।”
মিতু বইটা রেখে চলে যেতে যেতে বললো,
“এত ভালোবাসতে পারব না।”
মুশফিক পেছনে পেছনে গিয়ে বললো,
“আমি পারবো।খুব ভালোবাসতে পারব।”
মিতু লজ্জা পাচ্ছে।

“উফ।”
মুশফিক তার হাত ধরে বললো,
“রাতে স্যারের বাসায় আমাদের জন্য পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে।রেডি হয়ে যাও।”
“আচ্ছা।”

মুশফিক তার প্রিয়তমাকে নিয়ে রাত আটটার দিকে জেনারেল অফিসারের কটেজে যায়।মুশফিক সবার সাথে মিতুকে পরিচয় করিয়ে দেয়।সারা শাড়িতে পাথরের কাজ করা।মিতু সাদা পরী মনে হচ্ছে,সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে মুশফিক তার পরীকে দেখছে, মেয়েটাকে তার এত ভালো লাগে যে ইচ্ছা করে সারাদিন দেখতে।
উপস্থিত মেয়েরা মিতুকে দেখে খুব প্রশংসা করে, মুশফিক কত গুড বয় সেটাই ব্যাখা করে,মুশফিকের প্রশংসা শুনে মিতুর খুব ভালো লাগে।

জেনারেল অফিসার কাইয়ুম হাসান সবার সাথে মিতুকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
রাত এগারোটায় দুজন নিজ আবাস্থলে ফিরে আসে।মুশফিক নিজের ভেতরের ঝ,ড়টা ঠিক টের পাচ্ছিলো অথচ মিতু নিশ্চুপ।মিতু উপরে চলে যায় মুশফিক যায় না সে চুপচাপ সোফায় বসে থাকে।অন্তরে যে ঝড় বইছে সে কি এর তান্ডবের কথা বলবে মিতুকে?মিতু কি মনে করবে?যদি ফিরিয়ে দেয়?

মেজর পর্ব ১৮

মুশফিক চোখজোড়া বন্ধ করে রাখে।তারপর হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়, দ্রুত পা ফেলে রুমে চলে যায়।মিতু তার কানের দুল খুলেছে মুশফিক এগিয়ে যায় মিতুকে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসে।মিতু চোখ বন্ধ করে মুশফিকের কাধ ধরে নেয়,মুশফিক মুখ দিয়ে একটা টু শব্দও বের করতে পারছেনা।

মেজর পর্ব ২০