মেজর পর্ব ২০

মেজর পর্ব ২০
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মুশফিক চোখের পাতা খুলে প্রিয়তমার দিকে তাকায়।মিতু তার সাথে মিশে আছে।মুশফিক দেহে কা,মনার মৃদু ছন্দ টের পাচ্ছে।তার বুকের কাঁপন বাড়ে দ্বিগুন, বুকের ধুকপুক মিতু স্পষ্ট অনুভব করতে পারে।ডাগর চোখ মেলে তাকায়।মুশফিক চেহারা আলাদা এক অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে।মিতু হঠাৎ মুশফিককে ছেড়ে দেয়।এক পা দুই পা পিছিয়ে মুশফিকের নাগালের বাহিরে চলে যায়।

মুশফিক ধীর পায়ে রমনীর পিছু নেয়।খোলা বারান্দায় মিতু দাঁড়িয়ে আছে।সে জানে মুশফিক তার পিছু আসবেই,নতুন উদ্যমে ঠিকই কাছে টানবে তারপরও মিতু মুশফিকের কাছে থেকে পালিয়েছে,মেয়েরা এমনি ব্যক্তিগত পুরুষের কাছে আহ্লাদী হতে পছন্দ করে,তাদের পূর্ণ মনোযোগ পেতে চায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুশফিক রেলিং ঘেষে দাঁড়ায়।তার শি,কারী দৃষ্টি দিয়ে মিতুর মাঝে বয়ে চলা ঝড় সু,নামীতে রূপ নেয়।শুকনো ঠোঁট জ্বিভ দিয়ে ভিজিয়ে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।মুশফিকের ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে।মুশফিককে হাসতে দেখে মিতু খুব লজ্জা পায়, লজ্জায় ছুটে পালাতে ইচ্ছে করে কিন্তু পালাতে পারে না পা গুলো কোন এক জা,দুবলে ফ্লোরের সাথে আটকে আছে,লজ্জায় সে যেতে চাইলেও দেহ যেতে চায় না,দেহ চায় মুশফিকের উষ্ণ স্পর্শ,এটাই স্বাভাবিক,চিরন্তন সত্য।

সে আস্তে করে বললো,
“হাসছেন কেনো?”
মুশফিক বললো,
“তুমি খুব সুন্দর।”
“এটা আগেও বলেছেন।”
“একবার বললে কি আর বলা যাবে না?সুন্দর জিনিসের প্রশংসা বারবার করা উচিত আমি সেটাই করছি,প্রশংসায় কৃপণতা করা ঠিক না। ”
মিতু অন্যদিকে তাকায়।মুশফিক বললো,

“আজকে হ্যাপি? ”
“কেন?”
“সবার সাথে মিসেস আহসানকে পরিচয় করিয়ে দিলাম তাই?”
মিতুর ঠোঁট প্রসস্ত হয়।
“হুম।”
“এটা কিন্তু বি,পদজনক।”
মিতুর ভ্রু কুঁচকে যায়।
“বি,পদ!কি বি,পদ?”
মুশফিক দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“সেটা বলা যাবে না।”
“আমার কাছেও না?”
“না।ডিফেন্সে জব করা লোকদের অফিসিয়াল তথ্য কারও সাথে শেয়ার করতে নেই,স্ত্রীর সাথেও না।”
“ওকে।”
মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে অথচ মুখে কিছু বলছেনা।মিতু পলক ফেলে ফেলে তাকাচ্ছে।দুজনের মনের ভাষায় অজস্র কথা হচ্ছে অথচ মুখে কোন কথা নেই।এমন গভীর শিকারী চোখের দৃষ্টির তোপে মিতুর মাথা ঘুরে উঠে।

মিতুর শান্ত অথচ চঞ্চল চোখজোড়া মুশফিকের হৃদয় প্রশমিত করে,সে এগিয়ে আসে।দুজনের মাঝে নাম মাত্র দূরূত্ব রেখে দাঁড়ায়।একে অপরের তপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করতে পারছে।মুশফিক তার গমগমে কন্ঠ কোমল করে বললো,
“বালিকা বেশ সাহসী হয়েছো দেখছি।আগে তো একটু কাছে গেলেই চুপসে যেতে,এখন পারফেক্ট।”
মিতু বললো,

“ভেবে দেখলাম চুপসানো স্ত্রী মেজরের পাশে মানায় না।সিংহ’র সঙ্গী সিংহ’ই হয়।”
মুশফিক এই কথাটা নয়নাকে বলেছিলো।সে হেসে বললো,
“সিংহটার শক্তি কেমন তা কি পরিক্ষা করে দেখা উচিত? ”
“নো।”
“ইয়েস।”
“কিভাবে?”

“সিংহ যেহেতু সুতরাং তোমার উচিত গর্জন দেওয়া,আমার সাথে ল’ড়াই করা।”
মুশফিকের দুষ্টু হাসি দেখে বললো,
“আমি পরিক্ষা দিতে চাই না।”
মুশফিক তার বলিষ্ঠ হাত দিয়ে মিতুর নরম-পেলব কোমড় আঁকড়ে ধরে সামান্যটুকু দূরূত্ব ঘুচিয়ে দেয়।
“বলিষ্ঠ সিংহের সামনে এক অবুজ নাদান সিংহ দাঁড়িয়ে আছে।এই সিংহ কতোটুকু শক্তিশালী তা যাচাই করা আমার দায়িত্ব।”

মিতু গায়ের ভাজ মুশফিকের গা স্পর্শ করে যাচ্ছে,নতুন আলোড়নে হৃদয় আন্দোলিত হয়।
“খুব যাচাই করতে পারেন বুঝি?কত জনকে যাচাই করেছেন?”
“তুমিই প্রথম।তোমাকে দিয়েই আমার যাচাই শুরু আশা করি এটাই শেষ,অতিরিক্ত যাচাই ভালো না চোখ নষ্ট হয়।”
মিতু খিলখিল করে হেসে বললো,
“আমিই আপনার হৃদয়ের কুঠিরে সিলমোহর মে,রে দেবো মেজর।আজ থেকে এই হৃদয়ে অন্য নারীর আনাগোনা আজীবনের জন্য নিষি,দ্ধ ঘোষণা করা হলো।”
মুশফিক গভীর গলায় বললো,

“যথা আজ্ঞা মহারানী।”
মিতু হাত দিয়ে মুশফিকের বুকে আঁকিবুঁকি করে,মুশফিক কিছু একটা ভেবে বললো,
“হাজারও বু,লেট ছুড়েছি, নার্ভাস হইনি কিন্তু আজকে নার্ভাস লাগছে।ভিষণ।”
“আমি কোন বু,লেট নই,আমি মিতু,আমি আপনার হৃদয়হরিনী,আমি সাধারণ কেউ না মেজর।”
মুশফিক মিতুকে আরও কাছে টানে।নাকের সাথে নাক স্পর্শ করিয়ে বললো,
“আমি জানি।”

দূরের কটেজের বারান্দায় নর-নারীর আবছায়া ঠিক নয়নার নজরে আসে।সে পাথর কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে।এই যায়গায় তার থাকার কথা ছিলো অথচ এই মেয়ে!
মুশফিক তার হতো আর মিতু কিনা খুব সহযে তাকে বগলদাবা করে নিলো?নয়না সহ্য করতে পারে না,চিৎকার করে কেঁদে উঠে।হাত পা আছড়ে দেয়,আহাজারি শুনে তার মা বাবা ছুটে আসে।
“কি হয়েছে?”

নয়না বাচ্চাদের মত বায়না করে বললো,
“মুশফিক!”
নয়নার বাবা ফারুক আহমেদ শক্ত কন্ঠে বললো,
“কি!”
“আমি মুশফিককে ভালোবাসি।”
ফারুক আহমেদ হুংকার দিয়ে উঠে।সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নয়নার গালে থা,প্পড় দেয়।নয়না ছিটকে পরে,ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।ফারুক আহমেদ বললো,

“তোমার মুখ দিয়ে আর কখনো মুশফিকের নাম উচ্চারণ হতে যানো না দেখি।”
নয়নার শ্বাস রোধ হয়।অপমানে ভেতরটা চুরমার হয়ে যায়। বাবা মা চলে গেলেও সে দূরের কটেজের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে,প্রতিজ্ঞা দূঢ় হয়।
মুশফিক দু-হাত দিয়ে ভিষণ কোমল ভাবে মিতুকে তার দেহের সাথে আবদ্ধ করে।
মুগ্ধ দৃষ্টি ফেলে বললো,
“আজকে একটু বেশীই সুন্দর লাগছে।”

মিতুর চোখজোড়ায় লজ্জার ঝাপটা পরে।মুশফিক সেই লজ্জা দ্বিগুণ করতে বললো,
“এতো সুন্দর একটা চেহারা দেখে আমার কিছু দেওয়া উচিত।”
মিতু নিশ্চুপ।মিতুর এই লাজুক মুখ,অবনত চোখ,ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠা সবকিছু যেনো মুশফিকের ভেতরটা ল,ন্ড ভ,ন্ড করে দেয়।বিনা সংকেতে পুরুষালী ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় মিতুর নরম ঠোঁট।মিতু ক্ষনকাল চোখ বন্ধ করে রাখে যখন তাকায় তখন দেখে মুশফিক তার দিকে তাকিয়ে আছে।

মুশফিক বললো,
“ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ। ”
মিতুর ঠোঁট সামান্য ফাঁক হয়,ফিসফিস করে বললো,
“প্রথম নয় এটা দ্বিতীয়।”
মেজরের ঘন কালো ভ্রু কুঁচকায়।
“প্রথমটা?”
মিতু ঘন শ্বাস ফেলে।ঠোঁটের ভাযে হাসি দেখা যায়।
“সেদিন,বাসে।”

দূরে কোথাও নাম না জানা এক পাখি তার কন্ঠ দিয়ে পাহাড় কাঁপিয়ে ডেকে উঠে,সেই ডাক আছড়ে পরে সর্বত্র।মুশফিক স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে;গলায় কথা ফুটাতে পারে না।নিজেকে ধাতস্ত করে বিষ্ময়ভরা কন্ঠে বললো,
“তুমি জেগেছিলে?”
মিতু কিছু না বলে হাসে।মুশফিক নড়ে উঠে,তার ছন্দ তাল হারায়।

পুরুষালী ঠোঁট দিয়ে ভিষণ আদরে মিতুর অধরে ভালোবাসার ছোঁয়া দেয়।শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বুকের খাঁচায়।মিতু তাল সামলাতে না পেরে কয়েক পা পিছয়ে যায়। হঠাৎ হওয়া ভূমিকম্পের মত মুশফিক যেনো তাকে ঠেলে ফেললো নাম না জানা সাগরে।সেই সাগরে সে মুশফিকের ভেলায় আরোহন করেছে।মিতু প্রথমে ভালোবাসার স্পর্শে সাড়া না দিলেও একটু পরে সাড়া দেয়।হাত দিয়ে মেজরের ছোট ছোট চুলভর্তি মাথা আঁকড়ে ধরে।

মুশফিক মিতুকে কোলে উঠিয়ে রুমে যায়।নরম তুলোর বিছানায় মিতুকে রেখে পাশে বসে।মিতু ভিষণ নরম চোখে তাকিয়ে আছে মুশফিক মিতুর চাহনি দেখে তার ডাগর চোখে চুমু দেয়,কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“আই লাভ ইউ সো মাচ।”

সাদা বিছানায় মিতুর সন্নিকটে মুশফিক এসেছে।ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন হবে তখনি মুশফিকের ফোন তীব্র শব্দে চেচিয়ে উঠে।দুজনেই থমকে যায়।
মুশফিক কানে ফোন ঠেকায়।নরম চেহারা মূহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
“স্যার আমাকে তো ছুটি দিয়েছিলেন?”
“ইয়েস স্যার।”

মোবাইল ফোনটা রেখে মুশফিক মিতুর দিকে তাকায়,তাকে তাকাতে দেখে মিতুর বুকটা ধুক করে উঠে।মুশফিক মিতুর কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“আই’ম সরি সোনা।যেতে হবে।”
মিতু চুপচাপ শুয়ে থাকে।তার থমকানো মুখের দিকে তাকিয়ে মুশফিকের নিজেরও খারাপ লাগছে।মিতুর গালে হাত রেখে বললো,

মেজর পর্ব ১৯

“প্লিজ।”
মিতু মাথা নাড়ে।মিনিটের মাঝেই এত বড় কটেজে মিতুকে একা রেখে মুশফিক ছুটে যায় দূর অজানায়।বিশাল বড় সাগরে সে একা।মিতু জানে মুশফিকের পেশা কি কিন্তু তারপরও বুকটা ভেঙ্গেচুরে যায়,অসহনীয় ব্যথা হয়।দু-হাতে মুখ ঢেকে ঢুকরে কেঁদে উঠে।এটাই তাদের প্রথম ভালোবাসার মূহুর্ত ছিলো আর ভালোবাসার আগেই কিনা……….

মেজর পর্ব ২১