প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৫

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৫
তানিশা সুলতানা

অভি রাজের জয়ধ্বনিতে চারিদিক মুখোরিত। অভি নামটা সমাজের সকলের কাছে অনুপ্রেরণার একটা নাম। দুই চার দশ গ্রামে অভিকে সকলে চেনে। এবং ভালোবাসে।
অভি নিজের রুমের বারান্দা হতে দেখে সাধারণ জনগণদের। তারা ইফতিয়ার চৌধুরীর থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েও অভিকে ভোট দিয়েছে। অভি মুখ ফুটে তাদের কাছে ভোট চায়ও নি কখনো। এই ভালোবাসার প্রতিদান কি দিতে পারবে অভি? এই ভালোবাসার জায়গাটা ধরে রাখতে পারবে?

চিন্তিত অভি। জয় লাভ করেও সে খুশি হতে পারছে না।
ইশান ইমন এবং ইফতি অভির পাশে এসে দাঁড়ায়। অভির কাঁধে হাত রাখে ইশান। অভি অন্যমনষ্ক ছিলো বিধায় একটু চমকায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভাই তুমি চিন্তা করো না। আমরা আছি তোমার পাশে।
গম্ভীর দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকায় অভি। পরপর তাকায় ইফতির দিকে। ইফতি মাথা নিচু করে। আমতা আমতা করে বলে
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ভাই।
অভির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। তিন ভাইকে জড়িয়ে ধরে সে।

জমিদার তার তিন ছেলের সাথে বাইরে বের হয়। মুখে তার তৃপ্তির হাসি। এতো মানুষ কখনোই তার বাড়িতে ভিড় জমায় নি। জমিদার বাড়ির মানুষকে নিয়ে সাধারণ জনগণ কখনোই মাতামাতি করে নি। ঠিক এমনটাই চেয়ে এসেছিলো জমিদার। তার এই চাওয়া পূরণ করছে তার নাতী।
গেইট খুলে দেয় দারোয়ান। হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে সকলেই। অভি অভি বলে হুঙ্কার ছাড়তে থাকে।
জমিদার হাত উঁচু করে সকলে শান্ত হতে বলে। কিন্তু কেউ শান্ত হয় না। তারা জমিদারের কথা শোনেও না।
অপমানিত হয় জমিদার। সে চুপ করে যায়।

অভি বেরিয়ে আসে তখন। তিন ভাই পাশে অভি মাঝখানে। দাদা বাবা চাচাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। অভির দর্শনে জনগণের মুখে হাসি ফুটে। কয়েকজন ফুলের মালা বানিয়ে এনেছিলো। তারা অভিকে মালা পড়ায়। অভি জড়িয়ে ধরে তাদের।
অতঃপর অভি হাত উঁচু করে সকলকে শান্ত হতে বলে। সবাই শান্ত হতেই অভি বলে

“এই জয় শুধু আমার না। আপনাদেরও। আপনারা ভোট না দিলে আমি কখনোই জয়ী হতাম না। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমি।
এবং কথা দিচ্ছি দায়িত্ব থেকে কখনোই সরে দাঁড়াবো না।
এই টুকু বলতেই সকলেই হাত তালি দেয়। অভি আবারও বলে
“আজকে থেকে এই রাজপ্রাসাদের নাম জমিদার বাড়ি নয়।
এমপি বাড়ি এটা। সকলের জন্য এই বাড়ির দরজা খোলা। যার যখন যে প্রয়োজন পড়বে চলে আসবেন এই বাড়িতে।

আরেক দরফা খুশির ঝড় উঠে।
স্বামীর কথা মন দিয়ে শুনছে পূর্ণতা। সে কালো গোলাপ বাগানের পাশে লুকিয়ে আছে৷ লুকিয়েছে অভির কথা শোনার জন্য। সকলের খুশি দেখার জন্য।

এই সাধারণ মানুষের ভিড়ে মুখে রুমাল বেঁধে এসেছে ইফতিয়ার চৌধুরী। বন্দুক আছে তার সাথে। সে মূলত অভিকে মেরে ফেলতেই এসেছে। কিন্তু এখানে এসেই ইফতিয়ার পূর্ণতার উপস্থিতি বুঝতে পারে। না দেখেই অনুভব করতে পারে আশেপাশে পূর্ণতা আছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ইফতিয়ারের। খুব গোপনে বন্দুক রাখে পায়ের কাছে।
অতঃপর সন্ধান করতে থাকে মায়াবতীর। পূর্ণতার দিকে যত এগোচ্ছে ইফতিয়ারের হৃৎস্পন্দন ততো বাড়তে থাকে। বুঝতে পারে খুব কাছে সে। হাতের নাগালে।

অবশেষে দেখতে পায় টকটকে লাল কাপড়ের ঘোমটা টানা মায়াবতীকে। যে চুপটি করে বসে আছে কালো গোলাপ গাছের নিচে। গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অভিকে দেখছে। গোলাপি মনোমুগ্ধকর অধর জুড়ে তৃপ্তিময় হাসি।
হৃদয় জ্বলে ওঠে ইফতিয়ারের। মুখখানা দেখে যেমন জ্বলন্ত হৃদয় শীতল হয়েছিলো। ঠিক তেমনই ভাবে ফের জ্বলে ওঠে। আঁখি পল্লব বন্ধ করে নেয় ইফতিয়ার৷ বিরবির করে বলে

“মায়াবতী
তুমি আমার হৃদয়হরণী। তোমাকে না পেলে যে আমি বাঁচবো না। তোমারই কারণে মরে গেলে তোমার ওই কোমল হৃদয় কাঁদবে না আমার জন্য?
আফসোস হবে না একটি বার? চোখের কোণে অশ্রুকণা জমবে না?
এক মুঠো মাটি দিবে তো আমার কবরে?

সাড়া বাড়ি জুড়ে পূর্ণতার বিচরণ। অভি বেরিয়েছে অনেকখন হলো। পূর্ণতা অভির কামড়ায় পা রাখতেই নজর পড়ে খাটের দিকে। সেখানে একটা চিরকুট এবং এক জোড়া নুপুর পেয়েছে পূর্ণ। চিরকুটে লেখা ছিলো
“তোমার জন্য “

পূর্ণতার আর বুঝতে বাকি নেই তার বর তার জন্য নুপুর এনেছে। এক গাল হেসে নুপুর জোড়া পায়ে পড়ে নেয় পূর্ণ। ঝুন ঝুন শব্দ হতে থাকে। যাতে পূর্ণতার খুশি আরও বেড়ে যায়।
সে গোটা বাড়ি চক্কর দিচ্ছে এবং সকলকে বলছে “আমার এমপি সাহেব উপহার দিয়েছে আমায়”
বলতে বাদ রাখে না মমতা বেগমেকেও
মমতা বেগম আফসোসের সুরু বলে

“হাহহহহ
নাতী মানুষ করলাম আমি। আর আমার কপালেই উপহাত জোটে না। এই মাইয়া তাবিজ করছে আমা নাতীডারে।”
পূর্ণতা তর্ক করে না। বরং মমতাকে ভেংচি কেটে চলে যায় মিষ্টির কামড়ায়
সেখানে গিয়ে দেখতে পায় মিষ্টি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। পূর্ণতাকে দেখেই ফোন লুকিয়ে ফেলে মিষ্টি। আতঙ্কেও ওঠে। পূর্ণতার কপালে সরু ভাজ পড়ে। হাসি মুখটা চুপসে গিয়েছে।
মোবাইল ফোন জমিদার বাড়িতে অভি ছাড়া আর কারোর কাছেই নেই। পূর্ণতা শুনেছে অনেক দাম মোবাইলের। তাহলে মিষ্টি কোথায় পেলো?

মিষ্টি আমতা আমতা করে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে
“ভা…বি এসো এসো। প……ড়তে বসি৷
পূর্ণতা চুপচাপ এগিয়ে আসে। মিষ্টির পাশে বসে। এবং সরাসরি প্রশ্ন করে
“কোথায় পেলে ফোন?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৪

মিষ্টি কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। মিথ্যে সে গুছিয়ল বলতে পারে না। পূর্ণতা সহজেই বুঝে ফেলবে।
তাই সত্যি বলাই উচিত।
“আমি একজনকে ভালোবাসি ভাবি। সেই দিয়েছে।
“ কে সে? নাম কি?
শুকনো ঢোক গিলে মিষ্টি বলে
“ই..ফতিয়ার চৌধুরী।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৬