প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৪

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৪
তানিশা সুলতানা

সাহেব পূর্ণতাকে দেখে। মেয়েটার তেজ এবং সাহস দেখে মাঝেমধ্যে তিনি রাগ করতে ভুলে যায়। বুকের পাটা আছে মেয়েটার। এই মেয়েটার মধ্যে তিনি অভির মা অনামিকার প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। এবং মনে মনে আফসোস করে
“এই সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটিরও নির্মম মৃত্যু হবে। ফুলের মতো শরীরটা কাঁটায় পরিণীত হবে। কেঁদে উঠবে গোটা শহর।”

মমতা বেগম আজকে আর তেড়ে এসে পূর্ণতাকে কিছু বলে না। বরং শান্ত হয়ে যায়। মাথার ঘোমটা টেনে স্বামীর পাশে বসে পড়ে। তরকারি দিতে যায় থালায়। পলি মমতার হাত থেকে তরকারির চামচ নিয়ে বলেন
“আপনার বয়স হয়েছে। আরাম করুন। আমি দিচ্ছি।
চোখ দুটো জ্বলে ওঠে মমতার। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন স্বামীর মুখ পানে। সাহেব কিছু বলে না। প্রতিবাদও করে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইফাদের ব্যাপার খানা ভালো লাগে না। সে স্পষ্ট গলায় বলে ওঠে
“আপনি দুই দিনের অতিথি এই বাড়িতে। যখন তখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে আপনাকে। তো আমার দাদিজানের কাজে বা হাত দিতে আসবেন না।
পলি হাসে। তবে জবাব দেয় না। সরে যায়। মততা স্বামীর খাবার বেরে দেয়।
সবার আগে খাওয়া শেষ হয় অভির। সে হাত ধুয়ে উঠে পড়ে।
মামুন বলে

“ভোট কেন্দ্রে যাবি না?
“ জয়ের ধ্বনি আমার বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ালো বলে। আমি কেনো এগিয়ে যাবো?
বলেই অভি চলে যায়। হতাশ হয় তিন চাচা এবং দাদা। ইফাদ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বলে ওঠে
“নিজেকে কি ভাবে ও?

জয়ের ধ্বনি শুনবে৷ পরাজয় নিশ্চিত ওর। ইফতিয়ার চৌধুরী মোটা টাকা বিলিয়েছে গোটা এলাকায়।
ইফাদের কথা খানা কারোরই ভালো লাগে না। অভির পরাজয় কেউ চায় না। তবে অভিকে এতোটা আত্নবিশ্বাসীও কেউ দেখতে চায় না। পূর্ণতা চোয়াল শক্ত করে ফেলে। ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকায় ইফাদের মুখ পানে।
ইমন বলে

“মেঝো ভাই।
তুমি বাজে কথা বলিও না।
ইফাদ যেনো তেঁতে উঠলো। সে ভাতের থালা ঠেলে দাঁড়িয়ে পড়ে।
গর্জে উঠে বলে

“ আমার মুখে মুখে কথা বলার সাহস একদম করবি না। বলে দিলাম।
ইমন মাথা নিচু করে ফেলে। পূর্ণতা দু পা এগোয়। চোখ রাখে ইফাদের চোখে। এবং বলে
“সেই মোটা টাকার মোটা একটা অংশ আপনার পকেটে ঢুকেছে সেটা জেনে গিয়েছি আমি।
হকচকিয়ে যায় ইফাদ। সাথে চমকায় সকলেই। দৃষ্টি সবার পূর্ণতার দিকে। রেশমা বেগম হাই হাই করে এগিয়ে আসে পূর্ণতার দিকে। ছেলের দিকে আঙুল সে উঠতে দিতে নারাজ। ঝাঁঝালো গলায় আঙুল তুলে বলে

“ যত বড় মুখ নয় ততবড় কথা। আমদর ছেলেকে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবে না। তোমার মুখ একদম ভেঙে দিবো।
পূর্ণতা রেশমার আঙুল নামিয়ে দেয়।
“পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছে আপনার ছেলে। সেখান থেকে পাঁচ হাজার আপনাকে দিয়েছে। আর পাঁচ হাজার মেঝো চাচাকে৷ বাকি চল্লিশ তার আলমারির দ্বিতীয় তাকের ডয়ারে লাল রুমালের ভেতর আছে।
ভয়ে সিঁটিয়ে যায় ইফাদ। রেশমা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নুয়িয়ে ফেলে। মামুন আর ভাত মুখে দিতে পারে না। গলা দিয়ে ভাত নামা দায় হয়ে পড়েছে।
সাহেব গম্ভীর গলায় বলে

“কি বলছো তুমি?
“ ঠিক বলছি একদম। এাকা লেনদেন হয়েছে তিন দিন আগে গোধূলি বিকেলে পদ্মা নদীর পাড়ে। প্রতিটা ভোট কেন্দ্র দুজন করে মানুষ হায়ার করে রেখেছেন আপনার মেঝো নাতী। ভোট চুরি করার জন্যও লোক রাখা হয়েছে।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে ইফাদের। সে পালানোর রাস্তা খুঁজছে। গলা শুকিয়ে পানির অভাব অনুভব করছে ইতোমধ্যেই।

সাহেব ভাতের থালা ফেলে দেয়। মুহুর্তেই ঝনঝনিয়ে থালা ভেঙে যায়। ভাত গুলো ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ে চারদিকে।
কেঁপে ওঠে সকলেই। পলি ভয় পেয়ে কয়েকটা পিছিয়ে যায়।
“যার খাচ্ছো তাকেই ডোবাতে চাচ্ছো? নিমকহারামি। তোমার পেটে পারা দিয়ে জিহ্বা বের করে দিবো আমি।
হাঁটু কাঁপতে থাকে ইফাদের। পূর্ণতা বাঁকা হাসে। যাকক আপাতত কাজ শেষ।

অভির কামড়ার দরজার সামনে পায়চারি করছে পূর্ণতা। ঢুকবে কি ঢুকবে না বুঝতে পারছে না। মানুষটা এমনিতেই মুখ খানা গম্ভীর করে আছে। পূর্ণতা ধমক বসিয়ে দিবে না তো?
মুহুর্তেই পূর্ণতা ভাবে ধমক দিলে দিবে। দুই একটা ধমক না খেলে যুদ্ধ জয় করা যায় না।

দরজা হালকা ফাঁকা করে মাথা ঢুকিয়ে দেয় পূর্ণতা। জমিদার বাবুকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। অতঃপর হালকা ধাক্কা দিয়ে দরজা পুরোপুরি খুলে ফেলে এবং ঢুকে পড়ে কামড়ায়। বিছানায় নজর পড়তেই দেখতে পায় ডাইরিখানা।
বেশ কাজের ডাইরি এটা। এই ডাইরিই পূর্ণতাকে জানিয়েছে সব। তাই তো গড়গড় করে বলতে পারে। ঠোঁটের হাসি চওড়া করে পূর্ণতা কালো ডাইরি খানার পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকে।
চতুর্থ পৃষ্ঠায় লেখা

“আমার ভয়ংকর জীবনে কেনো এলে তুমি?
ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আগলে রাখতে পারবো না আমি।
ক্ষমা করো না আমায়।
দিও কঠোর মৃত্যু।
আমি ভীষণ খারাপ মানুষ।
এটাই চিরো সত্য

এই ডাইরি পড়তে গেলেও পূর্ণতার দুটো ভ্রু কুচকে যায়। মাথায় ঢুকে নতুন চিন্তা। বুঝতে পারে না ডাইরির লেখা গুলো। কে লিখে এসব? কি উদ্দেশ্য তার? পূর্ণতা মুখোমুখি হতে চায় এই ডাইরির মালিকের সাথে। দেখতে চায় তাকে। কিছু প্রশ্ন করতে চায়।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতা বরাবরের মতো ডাইরি খানা খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। যাতে অভির চোখে না পড়ে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধুমপান করছিলো অভি। দৃষ্টি তার আকাশের পানে। কালো গোলাপ বাগানের প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে আজ। আকাশ পরিষ্কার। দুপুরের রোদের তেজ আজকে প্রখর। অভির চোখ মুখ যেনো ঝলসে যাচ্ছে।
পূর্ণতার অভির পাশে এসে দাঁড়ায়৷ নাক এবং ঠোঁট ফাঁক দিয়ে ধোঁয়া বের করতে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
“রেগে কেনো আছেন? আমি কি করেছি?

অভি আসমান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পূর্ণতার মুখ পানে তাকায়। সময় নিয়ে দেখতে থাকে গোলগাল মুখ পানে। বা পাশের নাকে জ্বলজ্বল করছে অভির নামে পড়া নাক ফুলটি। যা পূর্ণতার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পূর্ণতা মাথা নিচু করে ফেলে। লোকটা তার দিকে তাকালে কারণ ছাড়াই লজ্জা লাগে তার। তাকিয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে। কাচুমাচু হয়ে যায়।

অভি ফোঁস করে শ্বাস টানে।
নজর ফিরিয়ে নিয়ে বলে
“মিষ্টির রুমে যাও। আজকে থেকে তুমি ওই রুমেই থাকবে। মিষ্টির সাথে ঘুমাবে।
চমকায় পূর্ণতা। আতঙ্কিত গলায় বলে
“ কেনো?
আমি কি করেছি?

অভি নিজের ডান হাতখানা এগিয়ে পূর্ণতার গালে রাখে। আলতো হাতে কিছুখন গালে হাত বুলিয়ে অতঃপর শক্ত করে চেপে ধরে। বুড়ো আঙুল ডান গালে এবং বাকি চার আঙুল বাম গালে। পূর্ণতা ব্যাথা পায়। চোখে পানি চলে আসে। ভেজা চোখে তাকায় অভির দিকে।
অভির দৃষ্টি কঠিন। সে দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়

“মুখেমুখে একদম তর্ক করবা না। যা বলবো সেটাই করবে। কোনো প্রশ্ন করা চলবে না।
পূর্ণতা মাথা নারায়। অভি গাল ছেড়ে দেয়। মুহুর্তেই দুই গাল লালচে রং ধারণ করেছে। যেনো রক্ত জমে গিয়েছে। টপটপ করে দু ফোঁটা পানি দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। অভি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“যাও

পূর্ণতা ফুঁপিয়ে ওঠে। এমন কেনো করছে মানুষটা? কিছু বলতে চায় পূর্ণতা। অভির কঠোর দৃষ্টি দেখে বলার সাহস হয়ে ওঠে না। মাথা নিচু করে চলে আসে।
অভি তাকিয়ে থাকে অভির যাওয়ার দিকে।
পূর্ণতা দরজা ওবদি এসে থেমে যায়। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে অভির দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
অভি তাকিয়েই ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায়।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৩

পূর্ণতা গোমড়া মুখে বলে ওঠে
“আপনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি নেতা সাহেব। আমার সাথে জল্লাদের মতো ব্যবহার করবেন না। আমার ছোট্ট বুক খানা জ্বলে পুরে যায়।
বলেই দৌড়ে চলে যায়।
অভি ঠোঁট বাঁকায়। বিরবির করে বলে
“আমি জল্লাদের মতো ব্যবহার করি?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৫