প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৬

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৬
তানিশা সুলতানা

পূর্ণতা চিন্তায় বিভোর। ইফতিয়ার চৌধুরির সাথে মিষ্টির দেখা কবে হলো? কি করে হলো সব? ফোনই না দিলো কি করে?
মিষ্টি কাঁপছে ভয়ে। এখন তাকে প্রশ্ন করলে ঠিকঠাক জবাব পাওয়া যাবে না এটা পূর্ণতা জানে৷ পূর্ণতা একটু হেসে মিষ্টিকে বলে

“আচ্ছা ঠিক আছে। ভয় পেয়ো না। আমি তোমার দাদাভাইকে কিছু বলবো না।
মিষ্টি যেনো একটু আশ্বাস পেলো। সে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে পূর্ণতাকে। পূর্ণতাও দুই হাতে আগলে নেয় মিষ্টিকে।
“আমি ওনাকে ভীষণ ভালোবাসি ভাবি৷ উনিও আমাকে ভালোবাসে। খুব তাড়াতাড়ি বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে।
পূর্ণতা মন দিয়ে শোনে মিষ্টির কথা। জবাব দেয় না। তবে মনে মনে ইচ্ছে হয় ইফতিয়ার চৌধুরীকে দেখার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পূর্ণতার বাবা মা মিষ্টি নিয়ে এসেছে। মেয়ের জামাই ভোটে জিতেছে। তাদের তো আসা উচিত। কিন্তু বেশ জড়তা কাজ করছিলো। জমিদার বাড়িতে তাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না এটা তারা জানে। তবুও এসেছে। দূর থেকেও যদি মেয়েটাকে এক পলক দেখতে পায়। মেয়ের সুখ দেখতে পায়।
জমিদার বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। দারোয়ান ঘুমচ্ছে চেয়ারে বসে। ডাকার সাহস হচ্ছে না দারোয়ানকে। ডাকলে বকাবকি করবে ঢুকতে দিবে না।
সেলেনা বেগম মাথার ঘোমটা টেনে বলে

“ঢুকপার দিবো না আমাগো। লন চইলা যাই। (ঢুকতে দিবে না আমাদের। চলেন চলে যাই)
সালাম উঁকি দিয়ে বলে
“একফোঁটা খাড়াই। যদি পূর্ণ এইদিগে আসে। চোখের দেখা খান দেখতাম।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেলেনা।।মনে মনে দোয়া করে যাতে তাদের মেয়ে এই দিকে আসে।
তখনই পেছন থেকে জিপ গাড়ির আওয়াজ ভেসে আসে। চমকে ওঠে দুজনই। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
জিপ গাড়িতে অভি ছিলো। ওনাদের দেখে সে গাড়ি থামিয়ে নামে। এগিয়ে আসতে আসতে সালাম দেয়

“আসসালামু আলাইকুম আব্বা। ভালো আছেন?
সালাম অবাক হয়ে সালাম ফেরায়। মাথা নিচু করে বলে
“ ভালা আছি আব্বা। তোমাগোরে দেখবার আইছিলাম।
“ভালো করেছেন। ভেতরে আসুন।
“ না না আব্বা ভেতরে যামু না। পূর্ণরে একটু ডাইকা দিবা? এক নজর দেখবার মন চাইতেছে।
অভি সালাম এর হাত ধরে

“আব্বা এটা আপনার মেয়েরও বাড়ি। আপনি যখত মন চাইবে আসবেন। পূর্ণতাকে দেখবেন। চলুন তো।
আম্মা আসুন।
অভি সালামের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট নেয়। দারোয়ানকে ডেকে গেইট খুলতে বলে। দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই ওনাদের নিয়ে ভেতরে যায়। লজ্জা করছে সেলেনার। ছেঁড়া রং চটা শাড়ি তার। কতো বড় বাড়ির বউ তার মেয়ে। বাবা মাকে দেখে নিশ্চয় লজ্জায় পড়বে।
অভি সোফায় বসায় সেলিম এবং সেলেনাকে। তারপর ডাকে পূর্ণতাকে

“পূর্ণতা কোথায় তুমি। দেখে যাও কারা এসেছে।
পূর্ণতা নিজের রুমেই ছিলো। অভির ডাকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। বাবা মাকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। কতোদিন পরে দেখলো বাবা মাকে। অভি নতুন কাজের মেয়ে জবাকে ডেকে মিষ্টির প্যাকেট হাতে দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে বলে। এবং নিজে চলে যায় রুমে।

মমতা বেগম দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। কিছু বলতেও পারছে না সয্যও করতে পারছে না। ছোট লোক যাদের সামর্থ্য নেই চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলার তারা এসে জমিদার বাড়ির আসনে বসে? এসব চোখে দেখা যায়।
পলি মমতার দৃষ্টি খেয়াল করে তাকায় পূর্ণতার বাবা মায়ের দিকে।
আলতো হেসে বলে

“এতো অহংকার করতে নেয়। আজ মরলে কাল দুই দিন হয়ে যাবে।
মমতা চোখ পাকিয়ে তাকায় পলির দিকে।
“আপনাকে একটুও ভয় পাই না আমি। আমরা দুজনই কিন্তু জমিদারের বউ। অধিকার সমান সমান। তো চোখ রাঙিয়ে লাভ নেয়।
মমতা জবাব না দিয়ে চলে যায়। পলি এগিয়ে যায় পূর্ণতার বাবা মায়ের দিকে। ওনাদের সালাম দিয়ে গল্প করতে থাকে।

শিউলি এবং জবা মিলে খাবার দেয় ওনাদের। খেতে চায় না ওনারা। পূর্ণতা এবং পলি জোর করে খাওয়ায়।
বাবা মায়ের সাথে খুব সুন্দর কিছু মুহুর্ত কাটে পূর্ণতার। তারা চলে যেতেই খুশি মনে অভির রুমের দিকে ছোঁটে। অভির রুমের দরজা বন্ধ। পূর্ণতার হাসি মুখটা চুপসে যায়। দরজা কেন বন্ধ করেছে লোকটা?
হাতের সাহায্য দু বার টোকা মারে দরজায়। কিন্তু কোনো সাড়া নেয়। এবার পূর্ণতা ডাকতে শুরু করে অভিকে।
“এই যে শুনছেন। দরজাটা খুলুন না একটু। শুধু আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরবো। তারপর চলে যাবো পাক্কা
একটুও জ্বালাবো না।

পূর্ণতার কথা শেষ হতেই খট করে দরজা খুলে যায়। একটা লম্বা হাত পূর্ণতার ছোট্ট হাত খানা ধরে এক টানে রুমের মধ্যে নিয়ে নেয়। একটুও চমকায় না পূর্ণতা। বরং হেসে ফেলে।
পূর্ণতা জানে এই হাতটা তার স্বামীর।
রুমের মাঝখানে পূর্ণতা দাঁড় করায় অভি। পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। পূর্ণতা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে সব। এতো সুন্দর?
অভি পূর্ণতার সামনে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।

একটা স্বর্নের চেইন অভির হাতে
“আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি পূর্ণ। তোমাকে বিয়ে করতে চাই নি আমি। কারণ আমি তোমাকে সুন্দর একটা জীবন দিতে পারতাম না। আমাদের পরিবার সাংঘাতিক। এখানে হয় না এমন কোনো পাপ কাজ নেই।
এই পাপ থেকে তোমায় দূরে রাখতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু পারলাম না।
পূর্ণতা অভির হাতের ওপর হাত রাখে। কপালে কপাল ঠেকায়।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৫

“আমিও ভালোবাসি আপনাকে।
অভি দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পূর্ণতাকে।
“ যদি কখনো জানতে পারো আমিই ছিলাম পৃথিবীর সব থেকে বড় পাপী। সেইদিন আমাকে খুন করে নিজেও মরে যেয়ো। তবুও অন্য কারো হইয়ো না।
“অভি ছাড়া পূর্ণতা আর কারোর না। ইহকাল পরকাল সব,খানেই থাকবে অভির পূর্ণতা।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৭