প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৭

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৭
তানিশা সুলতানা

ইফতিয়ার চৌধুরীর বিশ্বস্ত বডিগার্ড মামুন। বিগত ৮ বছর হবে ইফতিয়ারের সাথে আছে। ইফতিয়ার তার মনের যাবতীয় কথা মামুনকে বলে। মনের ভাব প্রকাশ করে।
আজকে ইফতিয়ারের মনটা একটু বেশিই খারাপ। মনের কোণে ক্ষণে ক্ষণে ফুটে উঠছে পূর্ণতার তৃপ্তিময় মুখ খানা। কতোটা তৃপ্তি নিয়ে সে দেখে অভিকে। যেনো অভিরাজের মুখে রয়েছে সুখের ঠিকানা। এতোটা মুগ্ধ কেনো হলো পূর্ণতা?

জমিদার বাড়ির পুরুষ মানেই দুষিত পুরুষ। তারা নারী লোভী। সমাজের অসহায় নারীদের তারা বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থাকেন। এবং সেই টাকা দিয়েই এতোটা দাপট দেখায়।
সেই দূষিত পুরুষদের মধ্যে একজনকে পবিত্র পূর্ণতা কেনো মন দিলো? কেনো ভালোবাসলো?
ভাগ্যই বা ওদের কেনো মেলালো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইফতিয়ার চৌধুরী পূর্ণতার যোগ্য প্রেমিক পুরুষ। সে শুদ্ধ। এক পূর্ণ ছাড়া আর কোনো তাকে আকর্ষীত করতে পারে নি। কোনো নারীকে ছুঁয়ে দেখে নি।
পবিত্র পূর্ণতার কোনো পবিত্র ইফতিয়ারকেই প্রয়োজন ছিলো। তাহলে ভাগ্য এমনটা কেনো করলো?
অস্থির হয়ে উঠছে ইফতিয়ার। মিষ্টির থেকে জেনেছে মিষ্টি আজকে একা ঘুমবে। তার মানে পূর্ণতা অভির সাথে। মানতে বড্ড অসুবিধা হচ্ছে ইফতিয়ারের।

মামুন ইফতিয়ারের বিচলতা বুঝতে পারে। সে কাঁধে হাত রাখে। এবং নরম গলায় বলে
“অভিরাজের থেকে তোমার ক্ষমতা বেশি। তুমি চাইলেই পারো পূর্ণতা নিজের কাছে নিয়ে আসতে। আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখো জমিদার বাড়িতে। তাহলে কেনো হাত গুটিয়ে বসে আছো?
ইফতিয়ার তাচ্ছিল্য হাসে।

“পূর্ণতার জন্য আমি গোটা দুনিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে পারবো। জিততেও পারবো। কিন্তু ও যাকে চায়, ও যাকে ভালোবাসে, যার জন্য ওর চোখে মায়া দেখি তার সাথে কি করে যুদ্ধ করবো?
চুপ করে যায় মামুন। পূর্ণতাকে সে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। আর তার থেকেও বেশি চোখে চোখে রাখে ইফতিয়ারকে।

“মিষ্টি ভালো মেয়ে। এতো প্যাঁচ বোঝে না৷ তুমি তাকে কেনো ব্যবহার করছো?
ইফতিয়ার নিজের চোয়ালে হাত বুলায়। ফর্সা গালের কুচকুচে কালো দাঁড়িতে তাকে বেশ মানায়। যে কোনো নারীর হৃদয়ে আঘাত করার মতো সৌন্দর্য রয়েছে ইফতিয়ারের। তাকে পছন্দ করে না তার সঙ্গ পেতে চায় না এমন নারী খুব কমই রয়েছে।

ইফতিয়ার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দৃষ্টি রাখে আয়নায় নিজের অবয়নে।
“মিষ্টিকে ব্যবহার করছি পূর্ণতা ওবদি পৌঁছাতে। কাল পূর্ণতা স্কুল ফাঁকি দিয়ে আসবে আমার কাছে। তাকে এক নজর কাছ থেকে দেখার আশায় আমি সব করতে পারি।
ইফতিয়ার কথা বলার সময় মামুন ইফতিয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকে। পূর্ণতা নামটা উচ্চারণ করতে গেলেই ইফতিয়ারের ঠোঁটের কোণে সুন্দর হাসির দেখা মেলে।

“ তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো ইফতিয়ার পূর্ণতা ১৫ বছরের এক কিশোরী হলেও অসাধারণ বুদ্ধিমতি। নিজের বোনের মৃত্যুর রহস্য কিন্তু সে জেনে গেছে। এমনকি তুমি যে ইফাদকে টাকা দিয়েছিলে সেটাও সে জানে।
ইফতিয়ারের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে।
সে চট করে তাকায় মামুনের দিকে।
“এতোকিছু জেনেও সে চুপ করে আছে কেনো? আর জানলোই বা কি করে?
মামুন যেনো এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিলো। সে চটজলদি বলে

“নিশ্চয় বড় কিছু চলছে তার মাথায়। তুমি তো তাকে ভালোবাসো। যাকে ভালোবাসো তার চোখে খারাপ হইয়ো না।
এতোটা ভালোবাসা দাও পূর্ণতাকে যাতে সে দিন শেষে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে পারে “আমার স্বামী ছাড়াও আমাকে একটা পুরুষ পাগলের মতো ভালোবাসে”
ভালোবাসলে স্বার্থ ত্যাগ করতে হয় ইফতি।
ইফতিয়ার বোধহয় কিছু চিন্তা করে। তারপর বলে
“মামুন তুমি মিষ্টিকে পছন্দ করো জানি আমি। আর ওয়ার্নিংও দিচ্ছি। ভুলে যাও তাকে। নাহলে পরিনাম খারাপ হতে পারে।

বরাবরই গম্ভীর বদমেজাজী অভিরাজ একজন শ্রেষ্ঠ প্রেমিক পুরুষও বটে। সে তার বউয়ের কাছে সব থেকে বেশি দুর্বল। এই যে আজকে অভির হাত কাঁপছে। ভয় পাচ্ছে অভি। অথচ গোটা দুনিয়াতে অভিরাজ কোনো কিছুতেই ভয় পায় না। গোটা একটা শহর চলে তার হাতের ইশারায়। সেই অভিরাজ ভীতু। এটা জনগণ মানবে? হাসবে না?
বউকে একটু গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জন্মেছে মনের কোণে। কিন্তু ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে চাচ্ছে না। ছোট্ট বউ তার। যদি বাড়াবাড়ি হয়ে যায়?

কয়েক মুহুর্তের শারীরিক তৃপ্তির থেকে তার কাছে তার বউয়ের সুস্থতা অনেক আগে। কিন্তু তবুও মনটা আনচান করছে। অস্থির হয়ে উঠছে।
বিছানার দুই প্রান্তে দুজন শুয়ে আছে। পুরো রুম জুড়ে বইছে বেলি এবং গোলাপ ফুলের সুবাস। ঘুম নেই কারোর চোখে। দুজন দুজনার হওয়ার তাগিদ দুজনের মনেই বইছে। অথচ কেউ প্রকাশ করতে নারাজ। হয়ত সংকোচ হয়ত ভয়।

অভি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আবেদনময়ী রুম,পরিবেশ এমনকি পাশে থাকা রমনীও। তারপর আবার শখের নারী। কোনো পুরুষ নিজেকে আটকাতে পারবে?
হয়ত না। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে অভি নিজেই পূর্ণতার দিকে চেপে শয়। হাত রাখে পূর্ণতার হাতের ওপর। পূর্ণ যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। তাই অভি ছুঁয়ে দিতেই সাথে সাথে ঘুরে যায় অভির দিকে। চট করে চুমু খেয়ে নেয় গম্ভীর পুরুষের ললাটে। কপালে ভাজ পড়ে গম্ভীর মানবের। দুই হাতে শক্ত করে জাপ্টে ধরে ছোট্ট দেহখানা।
এবং দুষ্টুমির সুরে সুধায়

“পাকনা হয়ে গেছো দেখছি। কে শেখায় এসব? লজ্জা পায় পূর্ণতা। মুখ লুকাতে চায় অভির বুকে। কিন্তু লুকাতে দেয় না অভি। বরং সময় নিয়ে দেখতে থাকে আবেদনময়ী ওষ্ঠজোড়া। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে। যেনো অভিকেই ডাকছে।
ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে পূর্ণতার ওষ্ঠদ্বয় হালকা ছুঁয়ে দেয় অভি। কেঁপে ওঠে পূর্ণতা। তিরতির করে কেঁপে ওঠে ওষ্ঠ।

অভিরাজের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। হামলে পড়ে ছোট্ট দেহে সুখ খুঁজতে। গভীর থেকে গভীর উম্মাদনায় প্রেয়সীকে মাতাল করে তোলে। বেহায়া হয়ে ওঠে হাত দুটো। ছুঁয়ে দেয় নারীর শরীরের কাতর অংশ।
অস্পষ্ট স্বরে অভি বলে
“আমার জান

কতো অপেক্ষা করেছি আমি তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য।
আমি পাগল হয়ে যাবো। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তুমিই আমার সুখ, আমার শান্তি। জান আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি মরে যাবো।
পূর্ণতা জবাব দিতে পারে না। সে তো নিজেকে সামলে নিতেই হিমশিম খাচ্ছে। অভির উন্মাদনায় হারিয়ে যাচ্ছে। সুখ কষ্ট দুটোই তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। বাঁধা দিতে ইচ্ছে করছে আবার ভালোও লাগছে।।
এ কেমন সুখ?
এ কেমন অনুভূতি?

স্বামীর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মমতা। দরজায় খিল লাগানো। ভেতরে রয়েছে পলি এবং সাহেব। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে মমতার। বিয়ের পর থেকে এমন কেনো রাত ছিলো না যে রাতে সে স্বামীর সাথে ঘুমায় নি।
মানুষটার বুকে মাথা না রাখলে তার যে ঘুম আসে না।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৬

অথচ মানুষটাকে দেখো অন্য নারীকে নিয়ে দিব্যি ঘুমচ্ছে।
চোখ দুটো ভিজে ওঠে মমতার। কলিজা ফেঁটে যাচ্ছে।
হাঁটু মুরে বসে পড়ে দরজার সামনে। আঁচলে মুখ লুকিয়ে নীরবে কাঁদতে থাকে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৮

1 COMMENT

  1. লেখিকা লিখতে না পারলে আমাকে দিয়ে ছবি তুলে আমি পরে নিব কিন্তু এই ভাবে আর ঘুরে জাব না।

Comments are closed.