প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৮

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৮
তানিশা সুলতানা

মিষ্টি এবং পূর্ণতা স্কুলে এসেছে। তাদের স্কুল ওবদি পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে পূর্ণতার শশুর মনোয়ার। এবং সে বাইরে বসে চা খাচ্ছেন। ওদের নিয়ে ফিরবে। এমনিতেও তার কোনো কাজ নেই। ছোট বেলা থেকেই তারা ৩ ভাই বাবার টাকায় বসে বসে খায়।

ক্লাস রুমের এক কোণায় বসেছে মিষ্টি এবং পূর্ণতা। ব্যাগের ভেতরে মুঠো ফোন রেখে ক্ষণে ক্ষণে মেসেজ লিখে যাচ্ছে মিষ্টি। সেই মেসেজ প্রদান করছে ইফতিয়ার চৌধুরীকে।
পূর্ণতা কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে মুঠো ফোনের দিকে। ইফতিয়ার চৌধুরী সম্পর্কে জানতে চায় পূর্ণ। চিনতে চায় তাকে। মিষ্টিকে ভালো রাখবে সে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এতোসব চিন্তার মধ্যেই ক্লাসে স্যার ঢুকে পড়ে। ভাবনায় ব্যঘাট ঘটে পূর্ণতার। মিষ্টিও মুঠো ফোন বন্ধ করে ফলে রাখে বইয়ের নিচে। মনোযোগী হয় পড়ালেখায়৷
টিফিন পিরিয়ডে পূর্ণতা মিষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যায় স্কুল থেকে। পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়েছে বিধায় মনোয়ার দেখে নি তাকে।

পূর্ণতা শুনেছে এখানেই ইফতিয়ার চৌধুরীর বাড়ি। কিছুখন হাঁটতেই পেয়ে যায়। চিনতে অসুবিধা হয় না। কারণ এরকম রাজ প্রাসাদ গোটা শহরে একটাই আছে।
সাদা এবং নীল রংয়ে আবৃত বাড়ি খানা। আশ্চর্য জনক বিষয় হচ্ছে এই বাড়ির সামনেও বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে কালো গোলাপের বাগান। গোলাপ গাছ গুলো এমন আকৃতিতে লাগানো হয়েছে যে দেখলেই একটা নাম বোঝা যাচ্ছে। নামটা দেখে পূর্ণতার চোখ জ্বলে ওঠে। রহস্যের গন্ধ পায়। এবং খুব ভালো করেই বুঝতে পারে মিষ্টি ঠকে যাচ্ছে।

পূর্ণতা নাম লিখা গোলাপ বাগানে আবার নজর দেয় Purnota নামটা নিজের মনে উচ্চারণ করে। এবং দৃষ্টি সরিয়ে গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আপনাআপনি খুলে যায় কাঁচের তৈরি গেইট। পূর্ণতা কোনো কিছু চিন্তা না করেই ঢুকে পড়ে। এবং সাথে সাথে তার মাথায় কালো লাল এবং সাদা গোলাপের পাঁপড়ি পড়তে শুরু করে। সামনে গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লেখা “Welcome Priyo Purnota”

তোমার রাজ্যে তোমাকে স্বাগতম”
ভাড়ি অবাক হয় পূর্ণতা। এসব কি?
স্কুল ব্যাগটা বুকের সাথে চেপে ধরে পূর্ণতা। একটু ভয় পাচ্ছে সাহসী পূর্ণ। লম্বা চুল গুলো খোঁপা করে সাদা হিজাব দিয়ে মাথা ঠেকেছে। মুখে নেই কোনো সাজসজ্জা। তীব্র রোদে ফর্সা গাল দুটো রক্তিম রং ধারণ করেছে। ওষ্ঠ জোড়া শুকনো হয়ে চামড়া উঠছে।

পূর্ণতা জিভ দ্বারা ওষ্ঠ ভিজিয়ে সামনে এগোতে থাকে।
বাড়ির মেইন দরজা ওবদি পূর্ণতার মাথায় ফুলের পাঁপড়ি পড়তেই ছিলো। মেইন দরজা খোলা হওয়াতে খুব সহজেই পূর্ণতা ভেতরে ঢুকে পড়ে।

এবং সবার আগে নজর পড়ে ইফতিয়ার চৌধুরীর দিকে। যে আয়েশ করে বসে আছে মখমলে সোফায়।
পোস্টারে দেখেছিলো ইফতিয়ারের ফটো তাই চিনতে অসুবিধা হয় না।
তবে মানতেই হবে লোকটা ফটোর থেকেও বাস্তবে আরও বেশি সুদর্শন।
ফর্সা গালের চাপ দাঁড়িতে নতুন নকশা এঁকেছে। বেশ মানিয়েছেও। কালো শার্টে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।
লোকটার সৌন্দর্য দেখে পূর্ণতা মাশাআল্লাহ বলে মনে মনে। এবং মিষ্টির পছন্দের তারিফও করে।
পূর্ণতাকে দেখে ইফতিয়ার দাঁড়িয়ে যায়। মাথা নুয়িয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে আসে। চোখে মুখে তার আকুলতা নিয়ে সালাম দেয় ইফতিয়ার।

“আসসালামু আলাইকুম।
পূর্ণতা সালামের জবাব দেয়। ইফতিয়ার তাকায় পূর্ণতার দিকে। অতঃপর জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“বসুন প্লিজ। রোদে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আসতে? ইসস মুখটা লাল হয়ে গেছে।
পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে শুনতে থাকে ইফতিয়ারের কথা। এতোটা যত্ন সে আশা করে নি।
“ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি এখানে বসতে আসি নি৷ আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি।
“ হ্যাঁ বলবো তো কথা। বসে কথা বললে ভালো হবে না?

পূর্ণতা জবাব না দিয়ে বসে পড়ে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে বোতলের পুরো পানিটা খেয়ে চোখ বন্ধ করে একটু দম নেয়। ইফতিয়ার মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে পূর্ণতার কর্মকাণ্ড। এই মেয়েটার সব কিছুতেই মিশে আছে মুগ্ধতা।

“মিষ্টি আপনাকে খুব ভালোবাসে। আপনি কি তাকে ঠকাচ্ছেন?
পূর্ণতার সরাসরি কথায় হাসে ইফতিয়ার। হাঁটু মুরে বসে পড়ে ফ্লোরে পূর্ণতার ঠিক মুখোমুখি।
“অভিরাজ মানুষটা ভালো না। ভীষণ স্বার্থপর সে। গতকাল আশা নামের একটা মেয়েকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করেছে। মানুষ মারতে তার হাত কাঁপে না। তুমি তার সাথে ভালো থাক
বাকিটা শেষ করতে দেয় না পূর্ণতা। দাঁড়িয়ে যায়।

“ আমি ভালো না থাকলেও আপনার কাছে কখনোই আসবো না। বউয়ের কাছে বরের দুর্নাম করতে একটুও লজ্জা করছে না আপনার?
ইফতিয়ারও দাঁড়িয়ে যায়।
“করছে না তো পূর্ণতা।
তুমি আমার হবে। হবেই। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কেনো করলে না? আমি সারাজীবন তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় দাঁপড়াবো? এটা হবে না।
একটু থামে ইফতিয়ার। তারপর শান্ত গলায় বলে

“সংসার ছেড়ে অভিকে ছেড়ে চলে আসো আমার কাছে। রানীর মতো করে রাখবো তোমায়।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতা। দু কদম এগিয়ে ইফতিয়ারের মুখোমুখি দাঁড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে
“আমি আমার এমপি সাহেবকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার শরীর কেটে হৃদয় বের করে দেখুন সেখানে এমপি সাহেব নামটা লেখা আছে। ভালোবাসা পাপ না৷ আপনার ভালোবাসাকে আমি সম্মান করি।

আপনি দয়া করে মিষ্টির জীবনটা নষ্ট করবেন না। ও খুব ভালো মেয়ে। আপনিও ভালো মানুষ। ভালো থাকবেন।
বলেই পূর্ণতা চলে যায়। ইফতিয়ার তাকিয়ে থাকে। কলিজা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে তার। হৃদয় শান্ত হয়েছে।
বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরে ইফতিয়ার। বিরবির করে বলে
“তোমাকে আমি ভালো রাখবো পূর্ণতা। খুব ভালো রাখবো তোমায়। অভিকে চেনাবো তোমায়। শুধু একটু সময় প্রয়োজন আমার।

বাসায় চলে আসে পূর্ণতা। কালো গোলাপ বাগানের পেছন থেকে বেশ আওয়াজ আসছে। মন মেজাজ ভালো নেই। তবুও কিসের আওয়াজ জানার বেশ আগ্রহ বাড়ে। তাই সেই দিকে পা বাড়ায়। বরাবরই পূর্ণতার আগ্রহ বেশি। এইদিকে কিছু একটা আছে এটা আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলো পূর্ণতা।
বাগানের পেছনেবছোট ছোট কিছু ঘর আছে টিনের তৈরি।
সেই ঘর গুলো থেকেই আওয়াজের উৎপত্তি। বেশ কিছু মানুষ আছে ওই ঘর গুলোতে। ছেলে মেয়ে উভয়ই। কন্ঠ শুনেই সেটা বুঝে ফেলে।

পূর্ণতা সতর্ক হয়। মন কু ডাকছে। বুঝতে পারছে কিছু তো আছে ওই ঘরে। আওয়াজ গুলো বেশ অশ্লীল। নজর বুলায় পূর্ণ।
সব গুলো ঘরের দরজা বন্ধ। বেলা কয়টা বাজে? দুই টা বা তিনটা বাজবে। সময় খেয়াল নেই ঠিক পূর্ণতার।
হঠাৎ খুব পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে পূর্ণতার কানে। বুকটা কেঁপে ওঠে পূর্ণতার। জানালার কাছে চলে যায়। খুব সাবধানে জানালা একটু ফাঁকা করে উঁকি দেয় সেই রুমে। সাথে সাথে পূর্ণতার কলিজা লাফিয়ে ওঠে। হাত পা কাঁপতে শুরু করে। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠদ্বয় নাড়িয়ে বলে ওঠে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৭

“আমার এমপি সাহেব এমনটা করতে পারে না। এসব মিথ্যে
তখনই অভির নজর পড়ে পূর্ণতার জল ভর্তি আঁখি পল্লবের দিকে। থেমে যায় অভি।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৯