মেজর পর্ব ২২

মেজর পর্ব ২২
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মিতু মুশফিকের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।জিপ গাড়ি পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে সাই সাই করে ছুটে যাচ্ছে।পাহাড়ি রাস্তার ড্রাইবাররা নিঃসন্দেহে খুব দক্ষ হয় তা না হলে এমন সরু, পাহাড় ঘেষা আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে এত নিপুণ ভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব না,অথচ কত সুন্দর করে গাড়ি চালাচ্ছে।মিতু মুগ্ধ চোখে দূরের ছোট বড় পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশ;এত সুন্দর!

মিতু হাত দিয়ে চেপে মুশফিকের শক্ত বাহু ধরে রেখেছে।মিতুর ধরার ধরন দেখেই মুশফিক মিতুর উত্তেজনার রেশ টের পায়।মেয়েটা জীবনের প্রথম এমন সুন্দর দৃশ্য দেখছে একটু উত্তেজিত তো হবেই।প্রথম যখন যে ট্রান্সফার হয়ে এখানে আসলো প্রথম কয়েক মাস,পাহাড়,আকাশ,চাঁদ,পাহাড়ের বুনো বাতাস এসবের উপর মুগ্ধ ছিলো।এতো সুন্দর লাগতো দেখা যেত রাতের অর্ধেকাংশ ছাদেই কেঁটে যেত,রাতের আকাশ ভরা তারা,চাঁদ, ঠান্ডা বাতাস যেনো ফিসফিস করে
শান্তির বার্তা নিয়ে আসতো।এ
কয়েক বছর থাকতে থাকতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে,চোখে মুগ্ধতা থাকলেও এখন আর পাহাড় দেখে বুক ছলাৎ করে উঠে না।
মিতুকে কাছে টেনে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভালো লাগছে?”
“ভিষণ।এতো সুন্দর কেনো চারপাশ? ”
“তুমি তার থেকেও বেশী সুন্দর।”

মিতু হাসে।স্বামীর সুন্দর সহয স্বীকারোক্তি তার মন দ্বিগুণ ভালো করে দেয়,সব মেয়েরা স্বামীর থেকে এমন প্রশংসা আশা করে,মিথ্যা করে হলে মেয়েদের প্রশংসা করা উচিত,মেয়েরা যার উপর খুশী থাকে তার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গঃ করতেও ভাবে না।মিতু জানালা দিয়ে বাহিরের ঢালু রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“আলুটিলা গুহা?”
“কিহ!নামগুলো খুব অদ্ভুত।এটা কি প্রাচীন গুহা?”

“হ্যাঁ।আলুটিলা একটা পাহাড়ের নাম।আমরা ঢাকা থেকে আসার সময় এই পাহাড় পেরিয়েই এসেছি।স্থানীয়দের কাছে আলুটিলা পাহাড় ” মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা” নামে পরিচিত।”
মুশফিক কথা বলতে বলতেই গাড়ি থামে।সে আর মিতু হেটে গুহার দিলে যায়।ড্রাইবারকে বলে সামনে ঝর্ণার রাস্তায় গিয়ে থাকতে।মিতু মুশফিকের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।মুশফিক গুহায় প্রবেশের আগে মূল গেটের কাছে থেকে দুজনের জন্য টিকিট কাটে।জনপ্রতি টিকিটের মূল্য চল্লিশ টাকা।মুশফিক মশাল নিলো।মিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,

“এটা কি?”
“মশাল?”
“কি করবেন এটা দিয়ে? ”
মুশফিক কিছু বলার আগেই একজন গাইড মশালের আগুন জ্বালিয়ে দিলো।মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“গুহার ভেতরে অন্ধকার, আমাদের রাস্তা চলতে সুবিধার জন্যই এই মশাল নেওয়া।”
মিতু অবাক হয়ে বললো,

“অন্ধকার? এটা কত বড় গুহা?এই গুহার দৈর্ঘ কত?”
“এই গুহার দৈর্ঘ ৩৫০ ফুট।”
মিতুর কেমন ভয়-ভয় লাগছে সে বললো,
“পেরোতে কতক্ষণ লাগবে? ”
মুশফিক মশালের লাল আলোয় মিতুর ফ্যাকাসে চেহারাটা দেখে বললো,
“বেশী না দশ থেকে পনেরো মিনিট।”

মিতু নিশ্চুপ হয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে পাহাড়ের বৃদ্ধ ভুতেরা তার পেছনে আসছে।মানুষের কথাগুলো কেমন গমগমে শব্দে ছড়াচ্ছে।মুশফিক বললো,
“তুমি কি ভয় পাচ্ছো?”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“হ্যাঁ।”

“ভয়ের কি আছে?আমি আছি না, আমি থাকতে মিতুলের গায়ে টোকা দেওয়ার হিম্মত কারও নেই।”
মিতু জানে মুশফিক কাছে থাকা মানে সে নিরাপদ।সে আশেপাশে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে হেটে যায়।আশেপাশে আরও মানুষ আছে তারাও হাটছে।একটা মেয়ে পাথরে হোচট খেয়ে নিচে পড়ে যায়,পিচ্ছিল পাথর হাতে লাগাতে ভাবে সাপ সে ভয়ে সাপ সাপ বলে চিৎকার দিয়ে গুহা কাঁপিয়ে তুলে,মেয়েটার চিৎকারে মিতুও ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।মুশফিক মিতুকে বুকে জড়িয়ে নেয়,আস্তে করে বলে,

“শান্ত হও।”
মিতু সাপে খুব ভয় পায়।সে বলে,
“সাপ!”
“না।এখানে পর্যটকরা আসে সাপ না আসার ব্যবস্থা করে রাখা আছে,নিশ্চয়ই অন্যকিছু।”
মশালের আলোতে দেখা যায় এটা একটা চিকন লম্বা পাথর।মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে পা চালিয়ে বের হয়ে আসে।গুহার বাহিরে এসে যেনো মিতুর বুকে প্রাণ ফিরে আসে।তার দিকে তাকিয়ে মুশফিক বললো,

“তুমি এত ভীতু! ”
মিতু গাল ফুলিয়ে বললো,
“এই একদম ভীতু বলবেন না।অন্ধকার আর সাপ একটু ভয় পাই;তাছাড়া আমি সাহসী।”
“আগে বলতে এই গুহায় না যেতাম।”
“না গেলে সারাজীবন আফসোস থেকে যেতো যে কি না কি আছে এই গুহায় দেখলাম না।”
মিতুর কথায় মুশফিক হেসে বললো,

“আর কি সামনে যাবে নাকি বাসায় ফিরে যাবে?”
মিতু অবাক হয়ে বললো,
“বাসায় যাবো কেনো?বেলা বারোটা বাজে মাত্র।”
“তোমার ফ্যাকাসে চেহারা দেখে বললাম।”
মিতু মুশফিকের পাথরকোদা বুকে আলতো আঘাত করে বললো,
“আমি মোটেই ভীতু না। আজ সারাদিন ঘুরবো।নো বাসায় ফিরাফিরি। ”

দুজনের হাতের আঙ্গুলে আঙ্গুল রেখে তারা সরু রাস্তা বেয়ে নেমে যায়।পাহাড়ের কোলঘেষে পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সিড়ি বানানো হয়েছে।মুশফিক আর মিতু সেই সিড়ি ধরেই হেটে যাচ্ছে।সিড়ির নিচে দিয়ে গাছগাছালির দেখে মনে হচ্ছে সৌন্দর্য যেনো আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।মিতু হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে গেলো।

“আমরা আর কতক্ষণ হাটবো?”
বেশী না একটু।”
“কোথায় যাচ্ছি?”
“রিসাং ঝর্ণায়।”
“অ মাই গড!ঝর্ণা? ”
“হ্যাঁ।খুব সুন্দর।”
“আচ্ছা।এই নামগুলো এত অদ্ভুত কেনো?”
মুশফিক হাসে।

“খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমা,রা গ্রামে রিসাং ঝর্ণার অবস্থান।স্থানীয়দের কাছে রিসাং ঝর্ণা সাপমারা রিসাং ঝর্ণা নামে পরিচিত।মারমা শব্দ রিসাং অর্থ উঁচু স্থান হতে জলরাশি গড়িয়ে পরা। রিসাং ঝর্ণার অপর নাম তেরাং তৈকালাই।”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“বেশ কিন্তু আপনি এতো কিছু জানেন কিভাবে?”

“আমি এখানকার আর্মি অফিসার তো এখানের প্রতিটা জায়গার বিস্তারিত বর্ননা আমার জানা জরুরী।”
“হুম।আমি হাপিয়ে গিয়েছি?”
“ঝর্ণা’টা এতো সুন্দর যে সব সব কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।”
মুশফিক মিতুর চেহারার দিকে তাকিয়ে বললো,
“বেশী কষ্ট হচ্ছে?”
“হুম।”

মিতু আর কিছু বলার আগেই মুশফিক তার বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে মিতুকে পাজকোলা করে নেয়।হঠাৎ শূন্যে ভেসে যাওয়াতে মিতু চিৎকার দিয়ে উঠে।
“আল্লাহ!”
মুশফিক অবলীলায় হেটে সামনে যাচ্ছে।মিতুর বিহব্বল কন্ঠস্বর শুনে মুচকি হেসে বললো,
“কি হলো?”

“কোলে নিয়েছেন কেনো?”
“তুমি বললে না হাটতে কষ্ট হচ্ছে।”
“তাই বলে কোলে নেবেন?”
“আমি থাকতে আমার বউ কষ্ট না পাক।”
মিতু হাত দিয়ে মুশফিকের ঘাড় আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
“এমন আরামে থাকার জন্য হলেও একটা বিয়ে করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।”
“তাই?”
“হ্যাঁ।আপনার কষ্ট হচ্ছে না? ”

“না।এইটুকু ওজন নিয়ে অভ্যেস আছে।”
মিতু মুশফিকের গলা জড়িয়ে তার বুকে মিশে যায়।মুশফিকের চোখজোড়া মূহুর্তেই শিকারী হয়ে যায়,চোখের তারায় বিরাজ করে বন্য এক হিংস্রতা।মিতুর গালে নাক ছুঁয়ে বললো,

“কি হচ্ছে?এতো কাছে এসেছো কেন?এটা পাবলিক প্লেস না?”
মিতু যেনো ক্ষানিক লজ্জা পেলো।সে তো কাছে যায়নি বরং মেজরই কাছে এসেছে অথচ তাকে কি বলছে এসব?মেজর খুব খারাপ, পাজি।

তাদের থেকে কয়েক গজ দূরে একটা মেয়ে শার্ট প্যান্ট পরা,মুখে মাক্স,মাথায় ক্যাপ চোখের চশমা হাতে নিয়ে বেশ দূরত্ব রেখেই হাটছে।সে হাটার মাঝেই বারবার এই দম্পতির দিকে তাকাচ্ছে।চোখে রাগের ফনা যেনো ডিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।বলা বাহুল্য মেয়েটা নয়না। সে যখন খবর পেয়েছে যে মুশফিক আজকে ঘুরতে আসবে সে ও অসুস্থতার বাহানায় ছুটি নিয়েছে।

মুশফিকদের খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিলো তাই আলুটিলা গুহায় অপেক্ষা করছিলো,এই গুহায় সবাই আসে আর এই গুহার পথ দিয়েই মূলত ঝর্ণার দিকে যায়,তার ধারণা অনুযায়ী কিছুক্ষণ পরেই মুশফিক আর মিতু আসে।সে তাদের চোখ এড়িয়ে পিছু নেয়।মাঝরাস্তায় মুশফিক যখন মিতুকে কোলে উঠিয়ে নেয় তখন নয়নার মনে হচ্ছিলো কেউ তার বুকে ছুরি দিয়ে খুচিয়ে যাচ্ছে।মনে পরে যায় সেদিনের কথা যেদিন পাহাড়ে অভিযানের সময় সে হোচট খেয়ে পরে গিয়েছিলো,মুশফিককে অনুরোধ করেছিলো একটু কোলে নিতে কিন্তু মুশফিক কোলে নেয়নি বরং কয়েকটা কথা শুনিয়েছে আর এখন এই মেয়েকে কেমন ঝাপটে কোলে নিয়েছে দেখেই নয়নার সারা অঙ্গ জ্বালাপোড়া করে উঠে।

নয়না চুপচাপ পিঁছু নিতে থাকে,যদিও সে জানে এসব করে কোন লাভ নেই কিন্তু মনকে আটকাতে পারে না,দুজন কি করে সেটা দেখার লোভ সামলাতে পারেনি।
মিতু মুশফিককে বললো,

“নামিয়ে দিন।”
“কেনো?”
“আপনার কষ্ট হচ্ছে। ”
“কে বলেছে?”
“আমি জানি।তাছাড়া অনেকক্ষণ তো রেস্ট নিলাম এবার হাটতে পারবো।”
“শিওর?”
“হ্যাঁ।”
“আমার কষ্ট হচ্ছে না আরও থাকো।”
“না আমি হাটবো।”

মুশফিক মিতুর লাল চেহারার দিকে তাকিয়ে মিতুকে নামিয়ে দেয়।পেছনে আরও পর্যটক আছে,সবাই তাদের দিকে বারবার তাকাচ্ছে,ফিসফাস করছে যা কিনা মিতুকে খুব লজ্জা দিচ্ছে তাই সে তাড়াতাড়ি নেমে পরেছে।দুজনে হাতে হাত রেখে হাটতে থাকে।
মিতু হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়।কান খাড়া করে কিছু শোনার চেষ্টা করে। মুশফিক মিতুর কান্ড দেখে মুচকি হাসে।মিতুর কানে পানি পরার ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে,একটুপরে সে বললো,

“পানির কলকল শব্দ শোনা যাচ্ছে না?”
“হ্যাঁ। ”
মিতু উচ্ছাসভরা চোখে তার দিকে তাকালে সে বললো,
“ঝর্ণা!”
“আর কয়েক মিনিট হাটলেই। ”
“আচ্ছা এই ঝর্ণা কবে থেকে হলো?”
মুশফিক হাটতে হাটতেই বললো,

“এই জলপ্রপাত কবে থেকে শুরু হয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব পাওয়া যায় না। তবে আনুমানিক ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে এই জলপ্রপাতটি আবিষ্কৃত হয়। মূলত জুম চাষের কারণে এই ঝরনাটি সবার দৃষ্টিগোচর হয়। রিসাং ঝর্ণার ২০০ গজের ভেতরে আরও একটি ঝর্ণা রয়েছে যা রিসাং ঝর্ণা দুই বা অপু ঝর্ণা নামে পরিচিত।সময় থাকলে আমরা সেখানেও যাবো।”

মুশফিক কতকিছু যানে ভাবতেই মিতু পুলকিত হয়।
মিতুর পায়ের গতি বাড়ে।সে জীবনে কখনো ঝর্ণা দেখেনি।
অবশেষে দুজনে ঝর্ণার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।মিতুর চোখে মুখে বিষ্ময়ের ছাপ স্পষ্ট।কত উঁচু থেকে পানি আছড়ে পড়ছে।আশেপাশে অনেক মানুষ আছে।মিতু বললো,
“এতো উঁচু?”
“হ্যাঁ।”

মিতুর বিষ্ময় বাড়ে।পাহাড়ের বুক বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি। পাহাড়ের ঢালু গড়িয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ। চারদিকে উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, বুনোঝোঁপ, নামহীন রঙিন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে আর মিতু তো পাগল হয়ে যাচ্ছে।এত সুন্দর কেনো চারিপাশ?প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে এতো বেশী পরিমান তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।বাংলাদেশের আনাচে-কানাচেতে যে এত রূপভরা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা না দেখলে কেউ কখনো বিশ্বাস করবে না।মিতু ঝরনার কাছে গিয়ে হাত দিয়ে ঠান্ডা শীতল পানি ছুঁয়ে দেয়।মুশফিক আর মিতু একটা পাথরের উপর বসে।মিতু মুশফিকের কাধে মাথা রেখে বসে আছে।পানির কলকল শব্দে ঘুম চলে আসছে।কিছুক্ষণ পরে মুশফিক বললো,

“পানিতে নামবে?ভালো লাগবে।”
“নামা উচিত? ”
“এতদূর এসে ঝর্ণায় না ভিজলে কেমন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।তাছাড়া ঝর্ণার পানি স্বাভাবিক পানির তুলনায় বেশ আরামদায়ক।”

মিতু আর মুশফিক একে অপরের হাত ধরে ছোট বড় পাথর ডিঙ্গিয়ে ঝর্ণার খুব কাছে আসে।মিতু ভাবে এত পানি কই থেকে আসে,আল্লাহ এতো মহান।মুশফিক আর মিতু একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়।দাম্ভিক, গম্ভীর মুশফিক নিজের পেশা ভুলে পুরোদস্তুর যেনো সাধারণ এক যুবক হয়ে গেলো যে কিনা প্রিয় নারীর সাথে দুষ্টুমিতে মেতে আছে।ঝর্ণার সামনে প্রায় একশো ফুটের মতো ঢালু জায়গা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। সে ঢালু জায়গাটা অনেক পিচ্ছিল,অনেক ছেলে-মেয়ে পিছলিয়ে গিয়ে হ্রদে পড়ছে।একটা দম্পতি এবার স্লিপারের মত পিছলিয়ে গেল।মিতু উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,

“দারুণ তো।”
মুশফিক বললো,
“চলো আমরাও ট্রাই করি।”
মিতু অবাক হয়ে বললো,
“কি?”
“স্লিপার।”
“যদি পড়ে যাই।”
“আমি আছি না?”
“না আমার ভয় লাগে।”

মুশফিক ততক্ষণে ভিজে একাকার।সে পিচ্ছিল ঢালু জায়গাটার দিকে এগিয়ে যায় তারপর বসে সামনের দিকে একটু বাড়তেই ঝড়ের গতীতে হ্রদে গিয়ে পড়ে।তারপর মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“খুব মজা তো।তুমিও আসো।”

মিতু অবাক হয়ে মুশফিককে দেখছে।এই মুশফিকের মাঝে একটুও দাম্ভিকতা নেই বরং সাধারণ এক প্রেমিক পুরুষের সব গুন বিদ্যমান।মুশফিক একবার যাওয়াতে মিতুর সাহস হয়।সে আস্তেধীরে এগিয়ে যায়।মুশফিক পা ছড়িয়ে বসেছে, মিতু তার সামনে বসে।মুশফিক হাত দিয়ে যে পাথরটা ধরে রেখেছিলো সেটায় একটু ধাক্কা দেয়াতেই দুজন সাই সাই করে যেতে থাকে,ব্যাপারটা মিতুর এত ভালো লাগে যে সে খিলখিল করে হেসে উঠে,আবার ভয়ও পায়।হ্রদে পরে মিতু বললো,

“আমার কলিজাটা শুকিয়ে গেলো।”
মুশফিক হেসে উঠে।
“এটা প্রাকৃতিক স্লিপার।”
মুশফিক সারা শরীর পানিতে ডুবিয়ে শুধুমাত্র মাথাটা উপরে ভাসিয়ে রেখেছে।মিতু মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে।মানুষটা এত সুন্দর কেনো?মুশফিক মাথা উঠিয়ে তার দিকে মিতুকে এমন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“কাম।”

মিতু কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজেকে আবিষ্কার করলো মুশফিকের বুকে।ঠান্ডা শরীর জুরানো পানি তার উপর মুশফিক নামক পুরুষের হিং,স্র চোখ,শিরশিরানো স্পর্শ সব মিলিয়ে মিতু নেতিয়ে পরে।মাথাটা ভাসিয়ে দেয় পানির স্রোতে।মুশফিক আরও কাছে টেনে নেয়।বেশালাম ইচ্ছেরা বাসা বাধে মন পিঞ্জিরায়,অনুভূতিরা লুটোপুটি খায় হৃদয় অঙ্গনে।হাতের বাধন শক্ত করে জড়িয়ে আরও কাছে টেনে নেয় তার সুখতুল্য নারীটাকে।সবকিছু এত সুন্দর হতে পারে তা এই রমনীর সংস্পর্শে না আসলে বুঝি জানাই হতো না।মিতু মুশফিকের চোখের ভাষা,শক্ত কড়াপড়া হাতের স্পর্শ, গভীর শ্বাস সব টের পাচ্ছে।

দুজনের চোখের মিলন হয়,মুশফিক জানে মিতুকে কাছে টানার এটা সঠিক স্থান না।সে আলতো করে মিতুকে পানিতে ভাসিয়ে উঠিয়ে ধরে।দুজন ডুবে-ডুবে ভেসে উঠে।মুশফিক সবাইকে উপেক্ষা করে,মিতুর নরম পানিতে ভেজা ঠোঁটের ভাজে তার পুরুষালী ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয়।মিতু খিলখিল করে হেসে উঠে।এই পুরুষের ছোঁয়া এতো সুখের লাগে কেনো?রিসাং ঝর্ণার পানিতে দুজন ভেসে ভেসে আনন্দে আনন্দিত হলো।

মুশফিক গাড়িতে বসেও এদিক-ওদিক সতর্ক চোখে তাকাচ্ছে।তার কেমন শরীর ভার লাগছে,যখন কোন বিপদ আশেপাশে থাকে তখনই তার এমন লাগে,অসস্তি হয়,শরীর ভার লাগে।ঝর্ণা থেকে এমন লাগছে মনে হচ্ছে হিং,স্র কোন চোখ তাদের দিকে ধারালো দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে।অল্পবয়সী কয়েকটা ছেলে ঘুরেফিরে মিতুর দিকে তাকাচ্ছিলো।আরেকটা ব্যাপার ওখানে নয়না ছিলো।

ক্যাপ,মাক্স,যাই পরনা কেনো মুশফিকের দক্ষ চোখের কোন হতে এড়ানো অসম্ভব।মিতুকে বলেনি নয়নার কথা,ও কি আনন্দে আছে এই মেয়ের কথা বলে সময়টা নষ্ট করতে চায় না।যদিও কোন রিসোর্টে থাকার কথা ছিলো কিন্তু মুশফিক রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে বাংলোতে চলে এসেছে।মিতুকে রেখেই অফিসে ছুটেছে।মিতু গাল ফুলিয়ে বললো,

“আপনি আমার জন্য ছুটি পেয়েছেন এখন অফিসে কেনো?”
মুশফিকের ভ্রু কুঁচকে আছে। সে বললো,
“একটা জরুরী কাজে যাচ্ছি।ইনফর্ম করেই চলে আসবো।তুমি দরজা আটকে বসে থাকো।মেইন ডোরে কেউ কলিং দিলেও খুলবে না।আমি আসলে চাবি দিয়েই খুলবো।মনে থাকবে?”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,

“থাকবে।”
মুশফিক চলে যাওয়ার পরে মিতু মুশফিকের শার্ট নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।শার্টটা নাকে চেপে ধরে মুশফিকের ঘ্রাণ পায়।আশ্চর্য সে তো এতোক্ষণ মুশফিকের সাথেই ছিলো কিন্তু এমন লাগছে যেনো পারলে মুশফিককে তার বুকের খাঁচায় আটকে রাখতো।মন তাকে বললো,

মেজর পর্ব ২১

“এই পুরুষটা ভ,য়ংকর প্রেমিকপুরুষ মিতু।”
মিতু বলে,
“আমার এটাই চাই।”

মেজর পর্ব ২৩