আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৪

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৪
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

মেঘ চলে যাওয়ার পর আবির পাশ থেকে ফোন নিয়ে মেঘকে হাইড করে ফে*সবুকে পোস্ট দিয়েছে,
“ভালবাসি তোকে সেই পুরনো অনুভবে,
এ মনের জগতে রাজকুমারী শুধু তুই। ”
কেটে গেল আবিরের নির্ঘুম রাত তবে এই রাত কষ্টে*র নয়, কাউকে মিস করার তী*ব্র অনুভূতি সারারাত ঘুমাতে দেয়নি আবির কে৷

শুক্রবার ১০ টার পর আবির ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে গেছে বাসা থেকে। ঘন্টাখানেক পর মেঘ সোফায় বসে টিভি দেখছিল। আবির সাদা রঙের শর্ট হাতার টি-শার্ট পড়েছে, শক্তপোক্ত বাহুতে টিশার্টের হাতাটা টাইট হয়ে আছে। চুল-দাঁড়ি ছোট করে কেটে, সুন্দর একটা হেয়ারস্টাইলও করেছেন। চোখে সানগ্লাস দিয়ে ড্যাশিং লুকে বাসায় ঢুকছে। মেঘের চোখ দরজার দিকে পরতেই আবির ভাইকে দেখে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে অকস্মাৎ বলে উঠলো,
“Hai! Me Mar Jaunga”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবির কাছাকাছি এসে সানগ্লাস খুলে মেঘের দিকে তাকিয়ে দু’বার ভ্রূ নাচালো, সঙ্গে সঙ্গে মেঘ ফিক করে উঠলো, হাসির দরুন মেঘের গালে থাকা বিউটি স্পট টা স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। আবির দৃষ্টি সরিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে।
আবির ভাইকে দেখার পর আর টিভি দেখতেও ইচ্ছে হচ্ছে না মেঘের। তারপরও কিছুক্ষণ টিভির দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ পর উঠে রুমের দিকে যেতে নিলে আবারো আবির ভাইকে দেখতে পেলো, পেস্ট রঙের একটা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি দিয়ে নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে নামাজে যাওয়ার জন্য।। মেঘ ঠায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো আবির ভাইয়ের পানে, দৃষ্টি যেনো সরছেই না।

আবির মেঘের কাছাকাছি এসে মেঘের চোখে দিকে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে শুধালো,
“এখন ভালো লাগছে তো?”
মেঘ উপর-নিচ মাথা নেড়ে, চিবুক নামিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
“ফিদা”

মেঘ বিড়বিড় করে বললেও আবির শব্দটা স্পষ্ট শুনেছে , আবির মুচকি হেসে সহসা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“আমার রুমে টেবিলের উপর তোর জন্য গিফট রাখা আছে। দেখিস পছন্দ হয় কি না! ”
আবির দীর্ঘ পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বেড়িয়ে যাচ্ছে মেইনগেইট পেরিয়ে, অষ্টাদশী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজপুত্রের গমনপথে, অধরের কোণে মৃদু হাসিটা এখনও লেগেই আছে।
কয়েক মুহুর্ত পর আবিরের রুম থেকে নিজের জন্য রাখা গিফট টা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসছে।

একটা ছোট বক্স সাথে একটা বড় বক্স। ছোট একটা চিরকুট ও আছে।
“সংকল্প, শক্তি, সাহস এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবনের প্রতিটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে৷ অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তোর জন্য । অভিনন্দন, Dear Sparrow. ”

কয়েকবার চিরকুট টা পড়ে মেঘ শুধু Sparrow লেখাটার দিকে চেয়ে আছে। আবির ভাই যে স্পেশাল কোনো নামে মেঘকে সম্বোধন করেছেন তা দেখেই মেঘ খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। ছোট বক্সের রেপিং সরাতেই চোখে পরলো লাল রঙের একটা সুন্দর বক্স, সচরাচর গোল্ডের জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে এগুলো বেশি থাকে। বক্স খুলতেই চোখে পরলো সুন্দর ডিজাইনের একটা গোল্ডের ব্রেসলেট।

মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে ব্রেসলেটের দিকে। মেঘের সকল অপূর্ণ ইচ্ছে আবির ভাই যেনো ধীরে ধীরে পূরণ করেই যাচ্ছে। iPhone, ল্যাপটপ, নুপুর, বাইকে ঘুরা থেকে শুরু করে ছোট বড় কত কত ইচ্ছে পূরণ করতেই যেনো মেঘের জীবনে আবির ভাইয়ের আগমন ঘটেছে। ব্রেসলেট হাতে দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে, ফোন নিয়ে কয়েকটা ছবিও তুলেছে। তারপর বড় বক্সটা খুলতে দ্বিতীয় বারের মতো বড়সড় শ*কট খেলো। ১০ কালারের ২ সেট করে মোট ২০ ডজন কাঁচের রেশমি চুড়ি বক্সে জ্বলজ্বল করছে, সাথে অনেকগুলো আংটি।

মেঘ চুড়ির দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবছে,
“যেই মানুষটা আমার সাথে ঠিকমতো কথায় বলেন না, উঠতে বসতে এত রা*গ দেখান, থা*প্পড় মা*রেন ওনি এসব কিছু আমার জন্য এনেছেন? যাকে এতদিন অনুভূতিহীন ভেবে আসছি ওনি আসলে এতটাও অনুভূতিহীন নয়। ”
মেঘ সব কালারের চুড়ি পড়ে পড়ে ছবি তুলেছে, গতকাল তানভির একটা ব্র্যান্ডের ঘড়ি দিয়েছিল, সেটা পরেও ছবি তুলেছে, সবগুলো হাতের ছবি একসাথে করে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকে কল করেছে,
বন্যাও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতকাল দুজনেই ব্যস্ত থাকার কারণে কথা বলতে পারে নি। বন্যা ফোন রিসিভ করেই বললো,

“এত গিফট তোরে কে দিলো রে?”
মেঘ স্ব শব্দে হেসে বললো,
” আমার স্বপ্নের নায়ক ”
বন্যা কপাল কুঁচকে বললো,
“আবার ফা*লতু ব্যাটারে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস?”‘
মেঘ ঠোঁট কামড়ে বললো,
“আমি কি করবো, আমার এত ভাল্লাগে কেন ওনারে!”
বন্যা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

“সেসব বাদ দে, চল বিকেলে দেখা করি। পাখি আর মায়াও বলছে বের হবে। অনেকদিন দেখা হয় না ওদের সাথে । রেজাল্টের খুশিতে একটু আড্ডাও দেয়া যাবে। আসবি?”
মেঘ একটু ভেবে বললো,
“ঠিক আছে। ”

আবির নামাজ থেকে এসে সকাল আর দুপুরের খাবার একবারে খেয়ে বেরিয়ে পরেছে। আবির বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মেঘ নিচে নেমেছে, হালিমা খানকে জরিয়ে ধরে আহ্লাদী স্বরে বলছে,
“”আম্মু একটু ঘুরতে যাই….!””
হালিমা খান মেয়ের দিকে না তাকিয়েই বললেন,
“আমাকে বলছিস কেন? আমি অনুমতি দেয়ার কে? তোর ভাই রা আছে, বাপ-চাচা আছে, তাদের থেকে অনুমতি নিয়ে যা। ”

মেঘ হাসছে আর বলছে,
“তুমি বললেই হবে। আর কেউ তো বাসায় নেই। বন্যা,পাখি আর মায়া ও আসবে। যাই না প্লিজ!”
হালিমা খান চিন্তিত স্বরে বললেন,
” যাবি যা কিন্তু বেশিদূর যাস নে আর ড্রাইভারকে বল দিয়ে আসতে। ”
মেঘ ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
“গাড়ি নিয়ে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেতে আমার ভালো লাগে না। আমি রিক্সা দিয়ে চলে যাবো।”
হালিমা খান কপাল কুঁচকে বলে উঠলেন,

“তুই ও তো তোর ভাইদের মতই হইতেছিস। গাড়িতে চলাচল করতে তোদের এত কি সমস্যা , বুঝি না। ”
মেঘ স্ব শব্দে হেসে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে নামলো । মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সা করে চলে গেলো গন্তব্যস্থলে। ওরা তিনজন আগেই চলে এসেছে। ইচ্ছেমতো ফুচকা খেয়ে, কাছেই একটা ফাঁকা মাঠে ৪ বান্ধবী বসেছে আড্ডা দিতে। পড়াশোনা, পরিবারের কথার শেষে প্রেমের টপিক উঠলো। পাখির বিয়ে ঠিকঠাক, এডমিশন টেস্টের পরেই খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে।। এদিকে মায়ারও বয়ফ্রেন্ড আছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে৷ তাই মায়া মনেপ্রাণে চেষ্টা করছে যেনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে পারে৷ ধীরে ধীরে আবির ভাইয়ের কথা উঠলো, মেঘ অবলীলায় আবির ভাইয়ের প্রতি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলো।
সবকিছু শুনে মায়া অকস্মাৎ বলে উঠলো,

“আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে। ”
বাকি তিনজনই একসঙ্গে বলে উঠলো,
“কি প্ল্যান?”
মায়া বললো,
“আমাদের মধ্যে কারো ফোন থেকে তোর আবির ভাইয়ের নাম্বারে কল দে, একটু ঢং করে কথা বলবি দেখবি ওনার মনে কি আছে। যদি ওনি কাউকে পছন্দ করেন , তাহলে সেটাও প্রকাশ পাবে সাথে ওনার ক্যারেক্টার সম্পর্কেও ধারণা হয়ে যাবে। ”

মেঘ প্রথম দিকে রাজি না হলেও ওদের চাপে রাজি হলো৷ মায়ার নাম্বার থেকেই কল দিলো আবির ভাইয়ের নাম্বারে। আবির ভাই চট্টগ্রাম থাকাকালীন ই নাম্বার টা সেইভ করেছিলো মেঘ কিন্তু কোনোদিন কল দেয়ার সাহস করে নি। আজ মায়ার ফোনে আবির ভাইয়ের নাম্বার টা লেখার সময়ই মেঘের হাত কাঁপছিলো।

ডায়াল করলো আবির ভাইয়ের নাম্বারে, ভয়ে মেঘের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। প্রথম বার রিসিভ হলো না। মায়া আর পাখি মেঘকে সাহস দিলো, বন্যা নিরব দর্শক । সে চায় মেঘ ভালো থাকুক, সেটা আবির ভাইয়ের সাথেই হোক বা অন্য কারো সাথে যে মেঘকে ভালো রাখবে। দ্বিতীয় বার কল দিয়েছে, কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো,
লাউডস্পিকার দিয়ে মেঘ রোমান্টিক মুডে ডাক দিলো,

“জা…..ন”
আবির কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“কে?”
মেঘ ঢুক গিলে আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
“আমি তোমার বউ। ”
আবির মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ জান বলো। ”

মেঘ দাঁতে দাঁত চেপে, বৃহৎ চোখে চাইলো বান্ধবীদের দিকে।
রাকিব ডেকে উঠলো,
“কিরে আবির কার সাথে কথা বলিস। ”
আবির উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“আমার বউ কল দিছে, ডিস্টার্ব করিস না। ”

মেঘ সহ বাকি তিনজনই হা করে চেয়ে আছে। মায়া কল মিউট করে মেঘকে কানে কানে কি বলেছে,
আনমিউট করে মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“I miss you Jaan”
আবির নিঃশব্দে হেসে উত্তর দিলো,
“I miss you too jaan. কোথায় আছো বলো আমি এখনি আসছি৷ ”

আবিরের মুখে এমন কথা শুনে মেঘ তাজ্জব বনে গেলো, নিঃশ্বাস যেন গলায় আটকে যাচ্ছে। শরীর ঘামতে শুরু করেছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রেমিকা সুলভ মনে এক মুহুর্তেই আঁধার নেমেছে। চেনা নেই জানা নেই আননোন নাম্বারের কোনো মেয়ের সাথে আবির ভাই এভাবে কথা বলবেন সেটা মেঘ ভাবতেই পারছে না। মেঘ এক হাতে মাথা চেপে ধরেছে।
আবির পুনরায় প্রশ্ন করলো,

“কি হলো? কথা বের হচ্ছে না গলা দিয়ে?”
মায়া আর পাখির ঠ্যালায় মেঘ ধীর কন্ঠে শুধু বললো,
” কিছু না। ”
আবির এবার স্বভাব-সুলভ গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
” কোথায় বসে বাদড়ামি করা হচ্ছে শুনি ”

আবির ভাইয়ের প্রশ্নে মেঘ আরও বেশি আশ্চর্যান্বিত হলো। কয়েক মুহুর্ত নিরব থেকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“মা… মানে?”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারী করে জবাব দিলো,

“বাসা থেকে একা বের হয়েছিস, একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। এত বড় হয়ে গেছিস। ”
মেঘের চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসার অবস্থা হলো, শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছে, এভাবে আবির ভাইয়ের কাছে ধরা পরে যাবে এটা ভাবতেও পারে নি। লাউডস্পিকার অফ করে ফোন কানে ধরেছে।
মেঘকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবির নিরেট কন্ঠে বললো,
“যেখানে নিঃশ্বাসের শব্দে

আমি তোর অস্তি*ত্ব উপল*ব্ধি করতে পারি,
সেখানে তোর কন্ঠ আমি চিনবো না?
ভাবলি কিভাবে !”
মেঘ পাথরের ন্যায় বসে আছে। আবির ভাই কি বলছে তার কিছুই মাথায় ঢুকতে না। সে যে ধরা পরে গেছে এটা ভেবেই লজ্জায় ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে। আবির ভাই কি না কি ভাববে, থা*প্পড় না দিয়ে বসেন আবার। থা*প্পড়ের কথা মনে পরতেই সঙ্গে সঙ্গে গালে হাত দিলো মেঘ।
আবির পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“কোথায় আছিস?”

মেঘ তখনও গালে হাত দিয়ে নি*স্তব্ধ হয়েই বসে আছে। আবির রা*গান্বিত স্বরে বলে উঠলো,
“কি হলো? বল!”
মেঘের গলা কাঁপছে, কোনোরকমে জায়গার নামটা শুধু বললো।।
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে জানালো,
“আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি। ”
বলেই কল টা কেটে দিলো৷

আবির ভাই কল কাটতেই অষ্টাদশী আকাশের পানে চেয়ে বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“আল্লাহ বাঁচাও আমায়। আর জীবনে এমন কান্ড করবো না। এবারের মতো বাঁচিয়ে নাও।”
বন্যা চিন্তিত স্বরে শুধালো,
“কি হয়ছে ব*কা দিছে?”

পাখি আর মায়াও অবুঝের মতো চেয়ে আছে। মেঘ এপাশ-ওপাশ মাথা নেড়ে জানালো,
“কিছুক্ষণের মধ্যে আসবে। দোয়া কর যাতে মা*ইর না খায়। ”
এই কথা শুনে পাখি, মায়া আর বন্যাও তটস্থ হয়ে গেছে। সবাই চিন্তায় পরে গেছে । ফাজলামো করতে গিয়ে এভাবে সিরিয়াস হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বাইক এসে থামলো রাস্তার পাশে। সেই নামাজের সময় পরা পাঞ্জাবি টা দেখেই মেঘ চিনতে পারলো।

মেঘ সেদিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ভয়ে ভয়ে বললো,
“আবির ভাই….. ”
বাকি তিনজনের নজর পরলো সেদিকে। আবির বাইক থেকে নেমে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হেলমেট খুলছে। বন্যা আবির ভাইকে আগে দেখলেও পাখি আর মায়া আগে দেখে নি।
মায়া উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“ওনি কি আবির ভাই?”
বন্যা জবাব দিলো,
“হ্যাঁ”

মায়া পুনরায় বললো,
“আল্লাহ কি হ্যান্ডসাম! মাশাআল্লাহ। এত কিউট জানলে আমিই কথা বলতাম, পটিয়ে আমার করে নিতাম। ”
মেঘ রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো,
“আমার আবির ভাইয়ের দিকে কেউ ন*জর দিবি না বলে দিলাম। ”

কথাটা বলেই মায়ার ফোন নিয়ে সেখান থেকে আবির ভাইয়ের নাম্বার টা ডিলিট করে ফোন রেখে নিজের পার্টস নিয়ে রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে উঠে চলে গেছে। মেঘের এমন কান্ডে পাখি আর মায়া দুজনেই হাসছে। কিন্তু বন্যা স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে মেঘের দিকে। আবির ভাইয়া কিভাবে রিয়েক্ট করবেন সেটা দেখতে ব্যস্ত বন্যা।
মেঘ আবিরের কাছাকাছি আসতেই আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘের দিকে চাইলো, ক্রো*ধিত মুখশ্রী দেখে আবির কপাল গুটালো, মেঘের সরু নাকের ডগা ফুলে উঠেছে, ঘামে চিকচিক করছে মুখ, সাথে লাল হয়ে আছে দু গাল। মেঘ কাছাকাছি আসতেই আবির ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,

” রা*গ উঠেছে কেন? আরও আড্ডা দিলে যাহ! আমি ওয়েট করছি। সমস্যা নেই। ”
মেঘ রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে উত্তর দিলো,
“আড্ডা দিবো না, চলে যাবো। ”
আবির চিন্তিত স্বরে বললো,
“কি হয়েছে? কে কি বলছে? ”
মেঘ মনে মনে বলছে,

“আপনার উপর কারো নজর আমি সহ্য করতে পারবো না। ”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,
“চলে যাবি?”
মেঘ উপর-নিচ মাথা নাড়লো।
আবির নিজের হেলমেট টা মেঘকে নিজের হাতে পরিয়ে দিচ্ছে। মেঘ ভ্রু কুঁচকে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,

“এটা তো আপনার হেলমেট, আমায় দিচ্ছেন যে!”
আবির ভারী কন্ঠে উত্তর দিলো,
“রাকিবের হেলমেট নিয়ে আসছি। আমি ঐটা পরবো। ”
এই দৃশ্য তিন বান্ধবী অবাক চোখে দেখছে। বন্যা এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আবির ভাইয়া রিয়েক্ট করেন নি সেই অনেক।।
পাখি হাসিমুখে বলছে,

“মেঘ ওনাকে পেলে সত্যিই অনেক হ্যাপি থাকবে। দোয়া করি মেঘ যেনো ওনাকে পেয়ে যায়। ”
মায়া ও সঙ্গে সঙ্গে তাল মেলাবো। কয়েক মুহুর্ত পর আবির বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।। ওরা তিনজন ও যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
আবির মেঘকে একটা ভালোমানের হেলমেটের আউটলেটে নিয়ে গেছে। মেঘকে লেডিস হেলমেট পছন্দ করতে বলে আবির সাইডে বসে আছে। মেঘ ঘুরে ঘুরে দেখছে, অনেক ঘুরে ৩ টা হেলমেট নিয়ে হাজির হলো আবিরের সামনে।।
ছোট করে প্রশ্ন করলো,

“কোনটা নিবো?”
আবির তিনটা হেলমেট পাশে রেখে ভারী কন্ঠে বললো,
“আমার জন্য পছন্দ করে নিয়ে আয়৷ ”
মেঘ আহাম্মকের মতো চেয়ে আছে । নড়ছেও না জায়গা থেকে।
আবির কপাল কুঁচকে তাকালো, গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কি বললাম আমি?”

মেঘ চুপচাপ চলে গেলো। অনেক খোঁজে দুটা নিয়ে আসছে। আবির সবগুলো হেলমেট ভালো ভাবে দেখে প্যাকিং করে দিতে বললো।।
মেঘ বিষ্ময় চোখে চেয়ে কোমল কন্ঠে বললো,
“এত হেলমেট নিয়ে কি করবেন! হেলমেট তো একটা হলেই হয়। ”
আবির চোখ রাঙিয়ে মেঘের দিকে চাইলো। মেঘ সঙ্গে সঙ্গে চিবুক নামালো গলায় । মনে পড়ে গেলো হিজাব কেনার ঘটনা। মনে মনে বলছে,

” কি মানুষ রে বাবা! আমি কনফিউজড হয়ে ওনার কাছে এনেছি আর ওনি পছন্দ না করে সবগুলোই নিয়ে নিলেন। আমি যদি জানতাম ওনি ৫ টায় নিয়ে নিবেন তাহলে আমি ২ টা হেমলেট ই বেছে নিয়ে আসতাম।”
হেলমেট কিনে বের হয়ে আবির ভারী কন্ঠে শুধালো,
“কাচ্চি খাবি?”

মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো,
“হাবিজাবি অনেক কিছু খেয়েছি এখন আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
আবিরও আর কথা বাড়ালো না। মেঘকে বাসার সামনে নামিয়ে নিজের মতো চলে গেছে। মেঘ হেলমেট গুলো আবির ভাইয়ের রুমে রেখে নিজের রুমে এসে রেস্ট নিয়ে পড়তে বসেছে৷

বেশকিছুদিন চলে গেছে। মেঘের পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ছাড়ছে, ভর্তি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। পড়াশোনার ব্যস্ততার মাঝেও রোজ নিয়ম করে আবির ভাই অফিসে যাওয়ার সময় এবং রাতে ফেরার সময় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখে। আবিরও অফিসের কাজে ব্য*স্ত হয়ে পরেছে। চারদিক সামলাতে যথারীতি হিমসিম খাচ্ছে।

একদিন মেঘের কাচ্চি খেতে খুব ইচ্ছে করছে। তানভির ভাইয়া নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত তাই ফোন দিতে সাহস হচ্ছে না। মীমের কাছে গিয়ে বলাতে, মীম সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,
“ভাইয়া কে বলো নিয়ে আসতে। ”
মেঘ ঢুক গিলে বললো,
“আমি বলতে পারবো না। তুই কল দিয়ে বল। ”
মীম ভয়ে ভয়ে জানালো,
“আমি বলবো?”

মীম টেলিফোন থেকে আবিরকে কল দিলো। আবির রিসিভ করতেই মীম বললো,
“আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া। ”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবি?”
মীম অকস্মাৎ বলে উঠলো,
“আপুর কাচ্চি খেতে ইচ্ছে করছে। ”

মেঘ রাগে মীমের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করে বলছে,
“তুই আমার কথা বললি কেন ?”
আবির কন্ঠ ভারী করে প্রশ্ন করলো,
“মেঘ কোথায়? ”
মীম মৃদু হেসে বললো,
“এখানেই আছে।”

আবির রাগান্বিত কন্ঠে বললো ,
“ওর কি ফোন নেই? নাকি ও কথা বলতে পারে না? তোকে দিয়ে বলাতে হয় কেন?”
ধ*মক শুনে মেঘ সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে দু হাতে কান চেপে ধরলো যাতে আবির ভাইয়ের বাকি কথা শুনতে না পারে।
আবির গম্ভীর কন্ঠে পুনরায় বলে উঠলো,
“ওর কাছে ফোন দে। ”
মীম ভীত স্বরে বললো,

“আপু চোখ-কান বন্ধ করে বসে আছে। ”
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রা*গ হজম করে বললো,
“ওর কান থেকে হাত সরিয়ে, ফোন টা ওরে দে।”
মীম যথারীতি তাই করলো। মেঘ ভয়ে ভয়ে ফোন কানের কাছে নিলো। কিছু বলার আগেই আবির ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“কাচ্চি কি এখনই আনতে হবে নাকি ঘন্টাখানেক পর নিয়ে আসলে হবে?”
মেঘ বিস্ময় চোখে তাকালো মীমের দিকে, ভেবেছিল না জানি কত ব*কা খাবে কিন্তু ঘটলো পুরো উল্টো । মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো,
“পরে আনলেও হবে। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৩

ঘন্টাদুয়েক পর মেঘ রুমে বসে ইয়ারফোন দিয়ে গান শুনছিলো। এরমধ্যে আবির বাসায় এসেছে। গানের সাউন্ডে বাইকের শব্দও শুনেনি মেঘ।
আবির মীমকে দু প্যাকেট দিয়ে বাকি একটা কাচ্চির প্যাকেট নিয়ে মেঘের রুমে গেলো। হঠাৎ আবির ভাইকে দেখে মেঘ ভূ*ত দেখার মতো চমকে উঠে কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেললো। আবির কাচ্চির প্যাকেট মেঘকে দিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো,
“তোর ফোনটা দে। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৫