মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ৩

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ৩
নুজাইফা নূন

-” বিয়ের আগেই ইন্টিমেন্ট হ‌ওয়া টা ঠিক নয় সৌখিন।আমার খুব ভয় করছে‌।যদি বাবা ,মা এই ব্যাপারে জানতে পারে‌।তাহলে অনেক বড় বিপদ হতে পারে।”
-” কাম অন আদিতা।এটা আধুনিক যুগ।অথচ এখনো তুমি সেই ব্যাকডেটেড ই থেকে গেলে। তাছাড়া আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড । কিছু দিন পরেই আমরা বিয়ে করবো।তাহলে তোমার সমস্যা কোথায় আদিতা? নাকি তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না? আমাকে ভালোবাসো না? সৌখিন কথাটা বলা মাত্রই আদিতা সৌখিনের ঠোঁটের উপর একটা আঙ্গুল রেখে বললো,

-” তোমাকে আমি যতোটা ভালোবাসি ততোটা ভালো আমি আমার নিজেকেও বাসি নি সৌখিন।তোমার জন্য‌ই আমি নতুন একটা জীবন পেয়েছি।মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে শিখেছি। কিন্তু এই ব্যাপার টা আমার ভালো লাগছে না সৌখিন। কোথাও না কোথাও আমার বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে।চলো না জান আমরা আজকেই বিয়ে করে ফেলি। এরপর তোমার আমার মাঝে আর কোনো দেয়াল থাকবে না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আর ইউ ক্রেজি আদিতা? তুমি খুব ভালো করেই জানো আমার পাপা একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি।তিনি তার একমাত্র ছেলের বিয়ে কখনোই যেনো তেনো ভাবে দিবেন না। আমাদের বিয়ে অনেক ধুমধাম করে করে।সারা শহরের মানুষ জানবে সৌখিন মির্জার বিয়ে হচ্ছে।আমার পাপা আমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে।আমি বিয়ের জন্য আমার পাপা কে খুব সহজেই ম্যানেজ করে নিতে পারবো‌। কিন্তু সমস্যা টা তো তোমার হবে। তুমি না বলেছিলে তোমার বাবা একজন নামকরা বিজনেস ম্যান।তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন? দেশে ফিরতে একটু দেরি হবে?”

-” আদিতা আমতা আমতা করে বললো, হ্যাঁ জান।বাবা একটা কাজে আটকে পড়ে গিয়েছেন।”
-” আদিতা কথাটা বলা মাত্রই সৌখিন আদিতার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
-” তোমার বাবা দেশে ফেরা মাত্র‌ই আমরা বিয়ে করে নিবো।এখন আর কোনো কথা নয়।জাস্ট ফিল দিস মোমেন্ট বলে সৌখিন আদিতা কে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে আদিতার অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয়।আদিতার ও তার ডাকে সাড়া দেয়।ধীরে ধীরে অনাবৃত হয় দুটি দেহ।দুজনে মেতে উঠে এক আদিম খেলায়।বদ্ধ রুমের চার দেয়াল সাক্ষী হয় আদিতার আর্তনাদের।”

-” সাদা বিছানায় উপর দুটো নিস্তেজ ,অনাবৃত দেহ পড়ে রয়েছে।সাদা বিছানায় র’ক্তে’র লাল লাল ছোপ ফুটে উঠেছে।আদিতা বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো। তৎক্ষণাৎ তার ফোন বেজে উঠলো‌।আদিতা বেড শিট গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে ফোনের স্ক্রিনে মা নাম টা জ্বলজ্বল করতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।আদিতা ফোন রিসিভ করবে কি না ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো।আদিতা এতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আদিতা ফোন রেখে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পুনরায় ফোন বেজে উঠলো।আদিতা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শায়লা খন্দকার বললো,

-” তুই কেমন আছিস মা?”
-” আমি কেমন আছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে মা‌। তুমি কেন ফোন দিয়েছো সেটা বলো মা?”
-” তোর কপাল খুলে গেছে রে মা। অনেক বড় পরিবার থেকে তোর জন্য বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে।উৎস গ্ৰুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর কর্ণধার জাহিদ তালুকদারের একমাত্র ছেলে উৎস তালুকদার স্বয়ং নিজে তোকে পছন্দ করে আমাদের বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে।ছেলে দেখতে একদম নায়কের মতো।আমি নিজেই তার থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আয় মা।সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। সেরকম হলে তারা আজকেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে যাবে।”

-“ঠিক আছে মা ।আসছি আমি। অতঃপর আদি ফোন রেখে দিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা সৌখিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-” এজন্যই ফর্সা ছেলেদের আমার পছন্দ হয় না।ফর্সা ছেলেদের চেহারার মধ্যে কেমন একটা বলদা বলদা ভাব লুকিয়ে থাকে।বলদা ছেলেটা বুঝতে ও পারলো না তাকে কাছে পাওয়ার প্ল্যান টা এই আদিতার করা।সে বুঝতেই পারে নি আমি কখন ছলে বলে কৌশলে তার একাউন্ট থেকে আমার একাউন্টে পঞ্চাশ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছি।এখন তোকে আমার না হলেও চলবে বলে আদিতা সৌখিনের শরীরে‌ একটা ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে বললো, টাটা, খতম, গুড বাই।”

-” তোমার মাথা ঠিক আছে শায়লা? এসব তুমি কি বলছো? বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ে বিয়ে দেওয়া টা আমাদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না।সবাই বলবে বড় মেয়ের নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে।তাই তার বিয়ে হচ্ছে না। অথচ আমার মেয়েটা খাঁটি সোনা। চাঁদের কলঙ্ক থাকলেও আমার মেয়ের কোনো কলঙ্ক নেই।”

-” আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।বর্তমানে যৌতুক ছাড়া মেয়ে বিয়ে দেওয়া খুব‌ই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।দুইটা মেয়েকে বিয়ে দিতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন।সেখানে আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি।তারা শুধু মাত্র আদি কে চায়। এছাড়া তারা আর কিছু‌ই নিবে না আমাদের থেকে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।এমন সুযোগ বারবার আসবে না। অনেক বড় লোক এনারা। আমাদের মেয়ে তাদের বাড়িতে রাজরানীর মতো থাকবে।”

-” এতো লোভ ভালো না শায়লা।লোভ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।”
-” মেয়ের সুখের জন্য না হয় একটু লোভী হলাম।আদি কে ফোন দিয়েছিলাম।আদি এক্ষুনি চলে আসবে। তুমি বরং মেহমানদের কাছে যাও‌।দেখ তাদের কিছু লাগবে কি না?”
-” ঠিক আছে যাচ্ছি। কিন্তু আদ্রি কোথায়?”

-” তুমি আদ্রি কে চিনো না?বাড়িতে অপরিচিত কেউ আসলে আদ্রি কে কখনো তাদের সামনে যেতে দেখেছো? আদ্রি সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখতে পছন্দ করে।আমি ও আদ্রির ব্যাপারে কিছু বলি নি তাদের কে।এক বার ভালোই ভালোই বিয়েটা মিটে যাক। তারপর আদ্রির ব্যাপারে সবাইকে জানাবো। ”

-” ড্রয়িং রুমে উৎস সহ উৎসের গোটা পরিবারের সদস্যরা বসে রয়েছে।এর‌ই মধ্যে আদি সেখানে উপস্থিত হয়।তার পরণে রয়েছে স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে পাতলা ফিনফিনে একটা শাড়ি।তাকে এর রুপে দেখে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়।উৎস ও অনেক অবাক হয়ে যায়।সে ভেবেছিলো তার সন্ধ্যে কন্যা হয়তো লজ্জাবতী পাতার ন্যায় হবে।যাকে ছুঁয়ে দিতেই লজ্জায় একদম নুয়ে পড়বে। কিন্ত তার সন্ধ্যে কন্যা কে এমন খোলামেলা পোশাকে দেখবে এমনটা আশা করে নি উৎস।উৎস ভাবলো সে একবার আদিতার সাথে নিজে কথা বলবে।

কিন্তু কিভাবে আদিতার সাথে দেখা করার কথাটা তুলবে বুঝতে পারছিলো না।তাকে হাঁসফাঁস করতে দেখে উৎসের দাদু বললো, আমাদের যা জানার জেনে নিয়েছি।আমার মনে হয় যারা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলা উচিত। দাদুভাই তুমি বরং আদি কে নিয়ে ছাদে যাও। নিজেদের মধ্যে কথা বলে নাও।উৎস যেন এই কথাটার অপেক্ষায় ছিলো। উৎস সাথে সাথেই বললো ঠিক আছে দাদু।যাচ্ছি আমরা।”

-” ছাদের রেলিং ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে আদিতা আর উৎস।কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙ্গে আদিতা বললো,

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ২

-” আপনি অনেক হট এন্ড কিউট দেখতে।শ্যাম বর্ণের ছেলে আমার ভাল্লাগে।আপনি একদম পারফেক্ট আমার জন্য।”
-” আদিতার কথায় উৎস সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, কিছুদিন আগে যেই মেয়ের চোখে আমি লজ্জা, ভয় দেখেছিলাম ।মাত্র কয়েকটা দিনে সেই মেয়েটা এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো কিভাবে?নাকি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে।এটা কি সত্যিই আমার সন্ধ্যে কন্যা ? নাকি অন্য‌ কেউ??”

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ৪