মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ১২

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ১২
নুজাইফা নূন

-“উৎস , আদ্রি দুজনে দুজনের মতো খাচ্ছে এমন সময় আদ্রির নানি এসে বললো, এ কি রে আদু?তোরা আলাদা আলাদা থালে খাচ্ছিস ক্যা রে? বিয়ার পর সোয়ামী ব‌উ দুজনে এক থালে খাতি হয়।তাইলে দুজনের মধ্যে মায়া, মমতা,প্রেম ভালোবাসা, মহব্বত বাড়ে। তার কথা শুনে মনে মনে উৎস তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, আমার জীবনে যার কোনো অস্তিত্ব ই নেই। তার প্রতি কি আদৌ আমার মায়া , মমতা, ভালোবাসা বাড়বে?আদ্রি উৎসের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,

-” ঐ বাড়িতে আমরা তো এক‌ই প্লেটে খাই নানী।কিন্তু এখানে সবার সামনে খেতে উনি ইতস্তত বোধ করছেন। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ। বুঝতেই তো পারছো।”
-” ওমা সেকি কথা? সেকি বেডি মানুষ নি? ব্যাডা মানুষের ইতস্তত বোধ করার কি আছে?”
-” হয়তো লজ্জা পাচ্ছে।”
-“আমরা পরের মানুষ নি?আমরা আমরাই তো।আমাগের সামনে আবার কিসের লাজ লজ্জা?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” থাক না নানী। তুমি আর জোর করো না বলতেই উৎস সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিজের প্লেট থেকে এক লোকমা খাবার আদ্রির মুখের সামনে তুলে ধরে।উৎস তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবে।এটা স্বপ্নেও ভাবেনি আদ্রি।আদ্রির খুশিতে চোখে পানি চকচক করে উঠে।যা দেখে উৎস বললো, নাও হাঁ করো। উৎস কথাটা বলা মাত্রই আদ্রি কালবিলম্ব না করে উৎসের হাতের খাবার নিজের মুখে পুরে নিয়ে তৃপ্তি সহকারে খেতে থাকে।তার কেমন যেন সুখ সুখ অনুভব হয়‌।সবটা স্বপ্নের মতো লাগে আদ্রির।আদ্রি নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে নিজে নিজের গায়ে চিমটি কা’টে‌। যখন ব্যাথা পায়, তখন বুঝতে পারে সে স্বপ্নে নয় ,বাস্তবে রয়েছে।আদ্রির এমন আকাশ কুসুম চিন্তার মধ্যে হুট করে উৎস বলে উঠলো,

-” আমি তোমাকে খাইয়ে দিলাম।এবার আমাকে ও খাইয়ে দাও।কথাটা শোনা মাত্রই চোখ বড়বড় হয়ে যায় আদ্রির‌।আদ্রি প্লেট থেকে এক লোকমা খাবার তুলে উৎসের মুখে দিতে গিয়ে হাত পা ক্রমশ অবশ হয়ে আসে তার।আদ্রির কাঁপা হাত দেখে উৎস নিজেই আদ্রির হাত থেকে খাবারের লোকমা মুখে পুরে চিবোতে থাকে।এক প্রকার ভয়, লজ্জা , অস্বস্তি নিয়ে খাবার শেষ করে আদ্রি দ্রুত নিজের রুমে এসে দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে নিয়ে বললো,

-” ইশ্ আজকে সকাল থেকে একটা পর একটা অঘটন ঘটে যাচ্ছে।আমার তো লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে।এত কিছুর পরেও আমি মানুষ টার সামনে দাঁড়াবো কিভাবে?তার চেয়ে বরং মানুষ টা রুমে আসার আগেই আমি নাতাশা কে পড়াতে চলে যাই।তাহলে আর মানুষ টার মুখোমুখি হতে হবে না আমাকে।হ্যাঁ তাই করি বলে আদ্রি আলমারি খুলে তার পছন্দের বোরকা টা খুঁজতে থাকে।আদ্রি সবে মাত্র বোরকা টা হাতে নিয়েছে ঠিক তখনি দরজা লাগানোর শব্দ শুনতে পায়।আদ্রি তৎক্ষণাৎ পেছনে ফিরে উৎস কে দেখতে পায়।উৎস কে দেখা মাত্রই আদ্রি আলমারি বন্ধ করে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উৎস আদ্রির হাত ধরে টান দেয়‌।আদ্রি তাল সামলাতে না পেরে উৎসের শার্ট খামচে ধরে।যা দেখে উৎস বললো,

-” এসব কিছু তোমার প্ল্যান করা তাই না? তুমি ঐ বুড়িদের এ সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছো তাই না?”
-” এসব আপনি কি বলছেন উৎস? আমি কেন নানী কে এসব শিখিয়ে দিবো?”

-” কেন আবার? আমার স্ত্রীর অধিকার পাবার জন্য।যাতে করে আমার কাছাকাছি আসতে পারো।আমার স্ত্রী হয়ে উঠতে পারো। কিন্তু তুমি যতোই চেষ্টা করো না কেন সফল হতে পারবে না।আমি কখনো তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো না ।কখনোই না বলে উৎস এক প্রকার আদ্রি কে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দেয়।যার দরুন আদ্রি কোমড়ে আবারো বেশ ব্যাথা অনুভব করে। কিন্তু উৎস কে ব্যাপার টা বুঝতে না দিয়ে আদ্রি নিচ থেকে উঠে উৎস কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উৎসের ফোন বেজে উঠে।উৎস ফোনে বাবা নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে ফোন নিয়ে বাইরে এসে কল রিসিভ করে বললো,

-” কিছু বলবেন মিস্টার জাহিদ তালুকদার?”
-” আমি তোমার বাবা হয় উৎস।আর কতো অভিমান করে থাকবে আমার উপর? কতো গুলো বছর হয়ে গিয়েছে তুমি আমাকে বাবা বলে ডাকো না।আমি সবসময় চাতক পাখির মতো বসে থাকি ।মনে হয় এই বুঝি আমার উৎস আমাকে বাবা বলে ডাকবে।বাবা ডেকে আমার অশান্ত হৃদয় টা করবে। কিন্তু না। দিন ,মাস , সপ্তাহ , বছর পেরিয়ে যায়।অথচ আমার ছেলে আমাকে বাবা বলে ডাকে না। তুমি তো বিয়ে করেছো।দোয়া করি খুব শীঘ্রই আল্লাহ তায়ালা তোমাকে যেন সন্তান দান করেন।নিজে যখন বাবা হবে, তখন আমার জ্বালা , আমার কষ্টটা বুঝতে পারবে উৎস। বুঝতে পারবে বাবা ডাক শোনার মধ্যে কতো শান্তি পাওয়া যায়।”

-” জাহিদ তালুকদারের কথায় উৎসের চোখ ভিজে আসে। জাহিদ তালুকদারের সাথে অভিমান করে তাকে বাবা বলে ডাকে না উৎস।এতে নিজেও ভেতরে ভেতরে যন্ত্রনা ভোগ করে। কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না। উৎস সন্তর্পণে চোখের পানি মুছে বললো, কি জন্য ফোন দিয়েছেন সেটা বলুন।”

-“তুমি দেশে ফেরার পর থেকেই তোমাকে বলছি আমার বিজনেস এর দায়িত্ব নাও।আমার নিজের ও তো বয়স হয়েছে।কখন কি হয়ে যায়, কিছু বলা যায় না।আমি যাচ্ছি তুমি একটু একটু করে বিজনেসে ইনভলব হ‌ও।”
-” এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে , আমাকে কি করতে হবে তাই বলেন?”
-” আজকে ফারুক চৌধুরীর সাথে আমার একটা মিটিং ছিলো।একটা হোটেলে মিট করার কথা ছিলো আমাদের। কিন্তু হুট করে ফারুক চৌধুরী নাকি একটু অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন।তাই আমাকে তার বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন।আমি চাই আজকের ডিল টা তুমিই ফাইনাল করো।”

-” ঠিক আছে।”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ বেটা‌।আমি লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
-” তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি ফারুক চৌধুরী কে চিনি।তার মেয়ে নাতাশার জন্মদিনের পার্টিতে আমি সেখানে গিয়েছিলাম বলে ফোন কেটে দিয়ে আদ্রির রুমে এসে দেখে আদ্রি তার শার্ট প্যান্ট গুছিয়ে রাখছে। উৎস ব্যাপার টা দেখেও না দেখার ভান করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ফারুক চৌধুরীর সাথে মিট করতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়।তাকে রেডি হতে আদ্রি মনে করে উৎস হয়তো তাকে রেখেই বাড়ি চলে আসতে চাইছে। তবুও শিওর হবার জন্য আদ্রি উৎসের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

-” আপনি কি তখনকার ব্যাপার টা নিয়ে রেগে আছেন? সামান্য একটা বিষয় কে ইস্যু করে কাউকে কিছু না জানিয়ে ঐ বাড়িতে চলে‌ যাচ্ছেন?আমি ও কি যাবো আপনার সাথে? আমরা তো আজকেই এ বাড়িতে এলাম‌।কটা দিন থাকি এখানে?আদ্রি একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু উৎস কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে আদ্রি আবারো বললো, কোথায় যাচ্ছেন আপনি? কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

-” তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য ন‌ই আমি।”
-” আপনাকে না দেখতে পেলে‌ , বাবা মা তো জিজ্ঞেস করবে আপনার কথা।তখন আমি তাদেরকে কি জবাব দিবো??”

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ১১

-” আদিতার বিষয়ে সত্যিটা না জানা পর্যন্ত আমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাচ্ছি না। তুমি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকো বলে উৎস বেরিয়ে পড়ে।তার যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আদ্রি ও বোরকা হিজাব পরে নাতাশার বাড়িতে আসার জন্য বেরিয়ে পড়ে।”

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় শেষ পর্ব