আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৪

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৪
Raiha Zubair Ripte

সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। থামার নামই নিচ্ছে না। দোলন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সেই বৃষ্টি গুলো উপভোগ করছে। তন্ময় এখনও ঘুমে বিভোর। দোলন রেলিং ভেদ করে এক হাত বের করে বৃষ্টি গুলো কে ছুঁয়ে দিলো। ঠান্ডা বৃষ্টির পানি।হঠাৎ কাউকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে দেখে চমকে উঠে দোলন। পরক্ষনেই পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝে ফেললো কে এটা। আজকাল তন্ময় হুটহাট দোলন কে ছুঁয়ে দেয়। এমন ভাবে মিশে দেখে মনে হয় না তাদের বিয়ে টা অস্বাভাবিক ভাবে হয়েছে। ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিতেই দোলন এলেমেলো কন্ঠে বলে-

-“ ক…কি করছেন?
তন্ময় ফিসফিস করে বলে-
-“ বউ কে আদর করছি। তোমার কোনো প্রবলেম?
দোলন কিছু বললো না। এতেই যেনো তন্ময় আশকারা পেয়ে গেলো। ঘাড়ে ছোট ছোট চুমুর সাথে কামড় ও বসিয়ে দিলো। দোলন ব্যাথায় আহ সূচক শব্দ করে উঠলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ ব্যাথা পাচ্ছি তো।
তন্ময় আরেক বার কামড় দিয়ে দোলনের কাঁধে থুতনি রেখে বলে-
-“ সামান্য লাভ বাইট ই সামলাতে পারছো না,এই আস্ত আমিটার ভার কি করে সামলাবে দোলন?
দোলন বেশ বুঝলো তন্ময়ের কথার মানে। তন্ময় তার সাথে ইন্টিমেট হতে চায়! এটারই আভাস জানান দিচ্ছে।
দোলন কে চুপ থাকতে দেখে তন্ময় আবার বলে উঠল-

-“ হেই হোয়াট আই মিন। ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? আমি আর সময় দিতে পারছি না। নিজেকে প্রস্তুত করে রেখো। বাচ্চা কাচ্চার পৃথিবীতে আসার ব্যাবস্থা করতে হবে। আমার হ্যান্ডসাম এমপি বাবাকে দাদা ডাক শুনাতে হবে,কুইক।
দোলন এবার বেশ অনেকটাই লজ্জায় পড়ে গেলো। তন্ময়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। তন্ময় মুচকি হাসলো। পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠায় ফোন টা বের করে দেখে তার বাবা তুষার ফোন দিয়েছে। তন্ময় ফোনটা রিসিভ করলো।

-“ তোর নেক্সট প্ল্যান টা কি তন্ময়?
তন্ময় রেলিং এ এক হাত দিয়ে তুষারের প্রশ্নের জবাবে বলল-
-“ এই তো বাবা নেক্সট দু মাসের ভেতর আমি বাবা আর তোমাকে দাদা ডাক শুনানোর প্ল্যান করছি।
তুষার হকচকিয়ে গেলো। এই ছেলেটা একদম রাফির মতো। বাবাকে কি না বলছে এসব!

-“ আমি তো বাবা লাগি তন্ময়।
-“ আমি কখনও অস্বীকার করেছি?
-“ লাগাম টান কথায়।
-“ তোমার আর চাচার থেকেই তো শিখা। তোমাদের বংশের ছেলে আমি, এতো লাগাম টেনে আর কি হবে।
-“ আচ্ছা শোন। ফারহান কে খোঁজার ব্যাবস্থা কতদূর?
-“ কে ফারহান?
তুষার ভুলেই গিয়েছিল ফারহান নাম বদলে ফয়সাল শেখ করেছে।

-“ ফারহান ওরফে ফয়সাল শেখ।
তন্ময় ভ্রু কুঁচকালো । সন্দেহান গলায় বলল-
-“ তুমি চিনো এই ফয়সাল শেখ কে?
-“ হুমম।
-“ কে এই লোক বলো তো?

-“ আমার আর তোর রাকি…রাতুল চাচার ফ্রেন্ড ফারহান। ফারহান আমাদের থেকে বয়সে ছোট ছিলো। তোর দাদার হয়ে কাজ করতো। রাতুল ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতো। কিন্তু ও আমাদের রাজনৈতিক দলে থেকে আমাদের বিপরীতে থাকা দল হালিম সরকার কে সাহায্য করতো গোপনে। পরে ফারহান কে আমাদের দল থেকে বের করে দেই।

সেই রাগ মিটায় একদিন,সেদিন তোর মা কে নিয়ে আমি ঘুরতে বের হয়েছিলাম। সেদিন চিত্রা কে মা’রার জন্য ফারহান গুলি ছুঁড়ে। চিত্রা কে বাঁচাতে গিয়ে গুলিটা আমার হাতে এসে লাগে। তারপর ফারহান কে খুঁজে আমার আস্তানায় নিয়ে আসি। অনেক টর্চার করেছিলাম। জানেই মে’রে ফেলতে চেয়েছিলা। রাতুল আর লিমন আটকায়। লিমন হচ্ছে এক বেইমান যে আমার সাথে চলে আমার পিঠ পিছেই ছুরি মে’রেছে।

ফারহানের অবস্থা ভালো ছিলো না। ফারহান কে দেখভালের জন্য লিমন কে দায়িত্ব দিয়েছিলা৷ মা***দ একদিন ফোন করে জানায় ফারহান মা’রা গেছে। আমি ও বলে দেই মাটি চা’পা দিতে। কিন্তু ঐ শু***বাচ্চা উল্টো ফারহান কে বাঁচিয়েছে । ফারহান মা’রা যায় নি৷ এই ফারহানই নিশ্চয়ই আমার তৃষা কে চু’রি করছে। চো’রের বাচ্চা রে খুঁজে জাস্ট আমার হাতে তুলে দিবি। ওর আস্ত কলিজা টেনে আমি বের করবো।
তন্ময় চুপচাপ শুনলো কথাটা। এই গেম তারমানে আজকাল থেকে নয়। সেই সাতাশ বছর আগে থেকে পরিকল্পিত ভাবে হচ্ছে! মানতেই হবে এই ফারহানের মাথায় বুদ্ধি আছে। কিন্তু এতো বুদ্ধি নিয়েও বা কি হলো? সেই তো সাতাশ বছর পর ঠিক ধরা পড়লো।

-“ আচ্ছা বাবা এখন রাখি৷ বউ আমার রাঁধছে ক্ষিদে পেয়েছে,খাবো। তুমিও গিয়ে তোমার বউয়ের হাতে রান্না খাও চিল মুডে। আমি আছি এসব দেখার জন্য।
তুষার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কে’টে দিলো তন্ময়।
রাকিব হোসাইন এসেছে খাঁন বাড়িতে। তুষার তখন রুমে। অধরা রাকিব হোসাইন কে বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেখে এগিয়ে এসে বলে-

-“ আপনি?
রাকিব হোসাইন তাকালো অধরার দিকে। বয়স হয়েছে কিন্তু রূপের কোনো পরিবর্তন হয় নি।
-“ ভুলে গেছেন আমায়?
অধরা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ মানে?
রাকিব হোসাইন হাসার চেষ্টা করে বলে-

-“ মানে সেদিন আসলাম। আর আজ আসতে না আসতেই জিজ্ঞেস করছেন। আপনি? বাই দ্য ওয়ে তুষার কোথায়?
-“ উনি রুমে।
-“ প্লিজ আপনার ভাই টাকে ডেকে দিন।
অধরা রাকিবের দিকে তাকিয়ে তারপর চলে গেলো। চিত্রা রাকিব হোসাইন কে দেখে এগিয়ে আসে। স্মিত হেঁসে বলে-

-“ আপনি বসুন ভাইয়া। আমি কফি নিয়ে আসছি।
রাকিব চমকে উঠলো ভাইয়া ডাক শুনে। তুষার কি চিত্রা কে বলে দিয়েছে?
তুষার নিচে আসলো। রাকিবের পাশে বসে বলে-
-“ কোনো খোঁজ পেলি?
-“ পাবো শীগ্রই। চিত্রা কে কি বলে দিয়েছিস সব?
-“ কই নাতো।

রোমিলা বেগম লাঠি ঠক্ ঠক্ করে বসার ঘরে আসলো। সোফায় বসতেই রাকিব এক ধ্যানে মায়ের দিকে তাকালো। ইশ কতগুলো বছর হলো মাকে ছুঁয়ে দেখে না সেভাবে। মায়ের হাতের রান্না খায় না। কোলে মাথা রেখে শুয়া হয় না। চোখ টা টলমল করে উঠলো। তুষার রাকিবের হাতের উপর হাত রাখলো৷ রাকিব সন্তপর্ণে অশ্রু টুকু মুছে নিলো। রোমিলা বেগম পানের বাটা থেকে পান বানিয়ে মুখে নিয়ে রাকিব হোসাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ বাবা তোমার বউ বাচ্চা আছে?
রাকিব চমকে উঠলো।
-“ ন..না আন্টি আমি এখনও পিউর সিঙ্গেল। বিয়ে শাদি করি নি।
-“ কি কও। বয়স তো অনেক হলো বিয়ে কেনো করো নি? তোমার মা বলে না কিছু?
রাকিব চুপ হয়ে গেলো। তুষার বলে উঠলো-

-“ খালা ওর মা নেই। পরিবার বলতে ওর বোনের ছেলে আর ও।
রোমিলা বেগম অপরাধীর মতে বলল-
-“ মনে কষ্ট পেয়ো না বাবা। আমি আসলে জানতাম না।
-“ ইট’স ওকে। বিয়েটাই সবার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য থাকে না আন্টি। মানুষ অন্য কোনো লক্ষে ও বিয়ে না করে থাকে। এই যে যেমন ধরুন আপনাদের বাড়ির এক মেয়ে এখনও বিয়ে করে নি। নিশ্চয়ই কোনো একটা কারন আছে বিধায়ই বিয়ে করে নি।
রোমিলা বেগম মন মরা হয়ে বলল-

-“ আমার মেয়েটা এখন ও অতীত আঁকড়ে আছে। কতবার বললাম বিয়ে করতে সে নাকচ করে দেয় প্রতিবার। জানি না এই মেয়ে কবে বুঝবে। যে চলে যায় তাকে আঁকড়ে থাকতে নেই।
রাকিব মুচকি হাসলো। চিত্রা কফি আনতেই কফির মগটা নিয়ে চুমুক বসালো। তুষারের ফোন আসায় তুষার বসা থেকে উঠে বাহিরে চলে যায়। রোমিলা বেগম ও নিজের রুমে চলে যায়।

রাকিব কফির মগ হাতে নিয়ে উঠে। সিঁড়ি বেয়ে সোজা ছাঁদে চলে যায়।
অধরা ছাঁদে দাঁড়িয়ে ছিলো। বেশ ঠান্ডা বাতাস আসছে। রাকিব গিয়ে অধরার পাশে দাঁড়ায়। অধরা পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুরায়। রাকিব কে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
রাকিব মুচকি হেঁসে বলে-

-“ কফি টা শেষ করতেই আসা ছাঁদে। জানতাম না আপনি আছেন।
অধরা কোনো টু শব্দ না করে নিচে নেমে যায়। রাকিব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
-❝তোমাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। তারপর? তারপর অনেক দিন হলো আর কাউকে ভালোবাসা হয়নি!❞
তুলি আজ একটু শপিং করতে এসেছে। সামনেই স্কুলে প্রোগ্রাম আছে। ডার্ক ব্লু কালারের একটা শাড়ি কিনলো। তার সাথে ম্যাচিং করে জুতা সহ কিছু জুয়েলারি কিনে মার্কেট থেকে বের হলো। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে তুলি। অথচ কোনো রিকশার দেখা নেই। উপায়ন্তর না পেয়ে হাঁটা ধরলো।

এতিমখানার প্রায় কাছাকাছি আসতেই আচমকা তুলি এক পুরুষালি দেহের সাথে ধাক্কা খেলো। হাতের সব প্যাকেট মাটিতে পড়ে গেলো। রাগ হলো তুলির। মাথা তুলে তাকাতেই এক মধ্য বয়সী পুরুষ বিরক্তির চাহনি নিক্ষেপ করে চলে গেলো। সরি টুকু বললো না। তুলি অবাক হলে। বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু ম্যানার্স শিখে নি ভদ্রলোক।
মাটি থেকে প্যাকেট গুলো তুলে হাঁটা লাগালো।

লারা গতকাল সারা রাত তামিম ফারুকীর সাথে চ্যাট করেছে। কেমন যেনো খুশি খুশি লাগছে লারার। যতক্ষণ কথা বলে ততক্ষণ মনে হয় যেনো কোনো সুখের রাজ্যে চলে গেছে সে। এটা প্রেম? মোহ, নাকি ভালোলাগা নাকি ভালেবাসা? এর আগেও তো লারা ক্রাশ খেয়েছে কত ছেলের উপ,ইভেন সায়ানের উপর ও ক্রাশ খেয়েছিল। কিন্তু কই তখন তো এতো টা ডেস্পারেট হয় নি লারা৷ এটা কি তাহলে অন্য কিছু? হ্যাঁ অন্য কিছু লারা ফল ইন লাভ৷
এই ছেলেটাকে লারার চাই। লারা ঘুম থেকে উঠেই তামিম ফারুকী কে মেসেজ দিলো। মেসেজ সিন হলো বাট রিপ্লাই আসলো না। লারা বারবার মেসেজ দিলো। কিন্তু সিন হলে ফিরতি রিপ্লাই আসলে না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৩

একটু আগেই কতটা না খুশি ছিলো। কিন্তু এই মূহুর্তে নিজেকে দুঃখী দুঃখী মনে হচ্ছে। মেসেজ সিন করছে কিন্তু রিপ্লাই কেনো দিচ্ছে না? কাল রাতেই ইনিয়েবিনিয়ে তামিম ফারুকীর ফেসবুক আইডি নিয়েছে লারা। কিন্তু মূহুর্তে লোকটা এমন করছে কেনো? লারার যে কষ্ট হচ্ছে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৫