আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৩

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৩
Raiha Zubair Ripte

পার্টি অফিসে মুখোমুখি বসে আছে তুষার,রাকিব হোসাইন। দুজনের দৃষ্টি টেবিলে থাকা ফোনের দিকে। এতোগুলো বছর ধরে তাহলে একটা মিথ্যা সত্য কে জেনে এসেছে! তুষার এবার আর ধৈর্যের বাঁধ আঁটকে রাখতে পারলো না। রাকিব হোসাইন এর দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ ফারহান বেঁচে আছে! তার মানে লিমন সেদিন মিথ্যা বলেছিল!
রাকিব হোসাইন মাথা ঝাকালো।
-“ হুমম ফারহান বেঁচে আছে। নাম বদলে ফয়সাল শেখ করেছে।
-“ তুই আগে থেকে জানতি?
-“ নাহ্ গতকাল ই জেনেছি। সায়ানের ফোন থেকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ এই সায়ান টা কে? দেখ আজ অন্তত কোনো ভনিতা করিস না। প্লিজ সব টা বল। তুই যে বেঁচে আছিস কেনো সবাইকে জানাতে বারন করেছিস। আর কেনোই বা এতো গুলো বছর দেশের বাহিরে থাকলি? দেশে কেনো আসলি না? আর সেদিন কি ঘটেছিলো তোর সাথে? আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তোকে পাই নি। হঠাৎ দেশে ফেরার দু’মাস আগে ফোন করে জানালি তুই বেঁচে আছিস!
রাকিব হোসাইন সাইড থেকে পানির গ্লাস টা তুষারের দিকে এগিয়ে দিলো।

-“ পানি টা খা, শ্বাস নে। রিলাক্স হ।
-“ রিলাক্সের মায় রে বাপ। আগে তুই সব খুলে বল। তুই জানিস কি করে দিনগুলো পাড় করেছি। মাঝখানে একবার এমপি পদ টাও হাড়িয়েছিলাম। সে বছর হালিম সরকারের ছেলে হৃদয় জিতেছিল। তুই চলে যাওয়ার বছর দুই পর বাবাকেও হারালাম। এবার প্লিজ আর কোনো ধোয়াশার মধ্যে রাখিস না আমায়।

-“ আচ্ছা বেশ বলছি। সেদিন তোর গাড়ি নিয়ে সিএমবি যাওয়ার পথে হুটকরে গাড়ি ব্রেক ফেল হয়। গাড়ি কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। খাদের কিনারায় আসতেই গাড়ি টা গাছের সাথে ধাক্কা খায়। আমি ছিটকে বাহিরে পড়ে যাই। তখন ও খাদের নিচে পড়ে যাই নি। শক্ত গাছের সাথে ঝুলে ছিলাম। হাত অবশ হয়ে এসেছিলো,বাঁচার আশায় সৃষ্টি কর্তা কে বারবার স্মরণ করছিলাম যাতে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয়।

গাছের ডাল থেকে হাত ফস্কে আমি পড়ে যাই। যখন হাওয়ায় সাথে নিচে পড়ছিলাম তখন বারবার তোর আর মায়ের মুখ টা ভেসে আসছিলো। মৃত্যুর যে কি ভয় সেটা সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম আমি বেঁচে না থাকলেও আমার মায়ের কোনে অসুবিধা হবে না কারন তার জন্য তুই আছিস। খাদের সেই বড়বড় পাথরের উপর আমার মুখটা গিয়ে পড়ে। মনে হচ্ছিলো আজ’রাইল এসে জান কবজ করছে। তারপর গড়িয়ে নিচে রাস্তায় গিয়ে পড়ি। সেদিন ঐ রাস্তা দিয়ে সায়ানের বাবা মা যাচ্ছিলো। আমাকে রাস্তায় ওমন নির্মম ভাবে পড়ে থাকতে দেখে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে এডমিট করে। চেহারার যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। সাথে বুকে…

রাতুল থেমে গেলো। তুষার রাতুলে কে থেমে যেতে দেখে বলে- বুকে কি?
রাতুলের হাত আপনা-আপনি বুকে চলে যায়। একটু সময় নিয়ে বলে-
-“ নাহ কিছু না। মাথায় আঘাতের জন্য চার বছর কমায় ছিলাম। আর ঐ হসপিটাল থেকে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। চিকিৎসক জানায় বাহিরের দেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে সাথে ফেস সার্জারী করাতে। সায়ানের বাবা মা ভীষণ ভালো মানুষ।

তারা তাদের অর্থ খরচ করে আমাকে লন্ডন নিয়ে গেছে সাথে পুরো চার বছর আমার সেবাযত্ন করেছে। আমি সত্যি সারাজীবন ঋণী ঐ দুজন মানুষের কাছে। প্রায় সাড়ে চার বছর পর আমি সার্ভাইব করি। আশেপাশে অপরিচিত মুখ দেখে কিছুই চিনতে পারি নি। আগের স্মৃতি গুলোও ঝাপ্সা ছিলো। নিজের পরিচয় নাম ঠিকানা ভুলে বসেছিলাম। সায়ানের মা শান্তা আমাকে নিজের ভাই বানিয়ে লোকজনের সামনে পরিচয় করায়।

তার ভাইয়ের নাম ছিলো রাকিব হোসাইন। আমাকে খুঁজে পাওয়ার দেড় মাস আগেই গাড়ি এক্সিডেন্টে মা’রা যায়। সেই থেকেই আমাকে দেখার পর তারমধ্যে একটা মায়া কাজ করে। আমাকে নিজের ভাই বানায়। আমিও তাকে নিজের বোন হিসেবে মানি। আমি সার্ভাইব করার আরে তিনমাস পর আমার সব মনে পড়ে। আমার নাম,ঠিকানা আমি কে। সব। আমি বাংলাদেশ ততক্ষণাৎ চলে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু শান্তা আপু আসতে দেয় নি। সে এক ভাই কে হারিয়েছে আরেক ভাই কে ফিরে পেয়ে আর কাছ ছাড়া কারতে নারাজ।

-“ এসবের পেছনে তাহলে ফারহান?
-“ এখনও ডাউট আছে?
-“ আমার মেয়েটাকে তাহলে ও কিডন্যাপ করেছে। ওকে খুঁজে পেলেই তো আমি আমার মেয়ের খোঁজ পেতে পারি।
-“ হুমম। তোর ছেলে আর সায়ান অলরেডি খুঁজছে ফারহান ওরফে ফয়সাল শেখ কে।
-“ এবার অন্তত বাসায় চল। খালা কে তোর কথা টা জানা যে তুই বেঁচে আছিস।
-“ ভুলেও না। রাতুল মা’রা গেছে। আগের রাতুল আর নেই এই পৃথিবীতে। এখন যে আছে সে রাকিব হোসাইন। এটাই তার পরিচয়। কাউকে বলবি না মানে কাউকে না। না চিত্রা না মা আর না অন্য কাউকে।

-“ ঠিক আছে। বাট আর কত দিন?
-“ আর বেশি দিন না।
-“ তুই কি বাহিরের দেশে গিয়ে রিলেশন টিলেশন করেছিস?
-“ না।
চোখ ছোট ছোট করে বলে রাতুল।

-“ তাহলে তোর প্রাক্তন টা কে?
রাতুল হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ মুখস্থ বিদ্যা ছিলো ওহা। যা আমি গড়গড় করে বলে দিয়েছি। এবার উঠি।
-“ অধরা আজও তোর অপেক্ষায় আছে রাতুল। মেয়েটাকে জানালে হয় না?
রাতুল বসা থেকে উঠতে উঠতে তুষারের দিকে তাকায়। মুচকি হেঁসে হাঁটা ধরে বলে-
-“ না।

তুষার ফারহানের পিক টা তার লোকদের কাছে হস্তান্তর করে। যে কোনো মূল্যে ফারহানের খোঁজ লাগবে।
দোলনের আজ এইচএসসি রেজাল্ট দিবে। দোলন চুপচাপ বসে আছে সোফায়। তার পাশেই সোফায় বসে আছে মিথিলা,মরিয়ম মান্নান। দোলনের বাবা গ্রামে থাকায় আসতে পারে নি। তবে ফোনে কথা বলে মেয়েকে টেনশন করতে না করেছে। তন্ময় ওয়েবসাইটে ঢুকে দোলনের রেজাল্ট দেখছে। দোলন বারবার তন্ময়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। বাট মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝার উপায় নেই। বেশ অনেকক্ষণ ই তো হলো ফোন ঘাটছে। এতোক্ষণে তো চার পাঁচ জনের রেজাল্ট বের করে দেখা যায়।
মিথিলা তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ ভাই আর কত ঘন্টা লাগবে রেজাল্ট দেখতে? কিছু তো জানান।
তন্ময় ফোন থেকে মুখ সরালো। থমথমে মুখ করে চেয়ে রইলো দোলনের দিকে।
-“ মিথিলা তোমার বোন কে জিজ্ঞেস করোতে সে কি করে এতো বাজে রেজাল্ট করলো? সে না কনফিডেন্স নিয়ে বলল তার প্লাস আসবে তাহলে এটা কি আসলো?
দোলনের বুক ধক করে উঠলে।

-“ কি আসছে ভাই সেটা তো বলেন।
-“ এক সাবজেক্টে ফেল আসছে তোমার বোনের।
কথাটা তন্ময়ের মুখ থেকে বের হতে না হতেই দোলন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তড়িৎ গতিতে।
-“ কিহ! আমার ফেল আসছে!
-“ হুমম।

দোলন তন্ময়ের হাত থেকে ফোন টা ছিনিয়ে নিলো। ফোনের স্কিনে চোখ যেতেই ভয়ার্ত চোখ দুটো জলে টইটম্বুর করে উঠলো। মিথিলা দোলনের চোখে পানি দেখে বলে-
-“ আপা সত্যি ফেল করছিস?
দোলন ফোনটা এগিয়ে দিলো মিথিলার দিকে। মিথিলা তাকালো ফোনের দিকে। গোল্ডেন প্লাস এসেছে। মিথিলা ততক্ষণাৎ দোলন কে জড়িয়ে ধরলো। তন্ময় ফোন টা নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

রাতুল বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। আকাশ টা মেঘলাময়। হয়তো বৃষ্টি আসবে আবার নাও আসতে পারে। তুষার কে সে সম্পূর্ণ কথা বলে নি। কিছুটা না বেশ অনেক বড় একটা সত্য সে আড়াল করে রেখেছে। এই সত্য টা রাতুল নিজ চোখে সামনা-সামনি দেখতে চায়। কেনো সেদিন তার সাথে এমন করা হলো? সেদিন সে তার চোখমুখে হিংস্রতা ক্ষোভ দেখতে পেয়েছিল। কীসের জন্য সেই ক্ষোভ, হিংস্রতা? এখন চোখ বন্ধ করে ভেসে উঠে সেই চেহারা। পরপর দুটি গুলি সেদিন তার এই বক্ষপটে বিদ্ধকরণ করা হয়েছিল। আজও সেই ক্ষত বুকে লেগে আছে। মাঝেমাঝে ক্ষত টা দেখলে মন টা বিষিয়ে উঠে। কি করুন সেই ভাগ্য, এভাবেই তো পৃথিবীর বুক থেকো বিশ্বাস নামক শব্দ টা উঠে যায়!

তন্ময় মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ফিরেছে। বাউ তার গোল্ডেন পেয়েছে সেলিব্রেট করবে না তা হয় নাকি? আর সায়ান কে ফোন করে আসতে বলেছে সাথে তুলি কে এতিমখানা থেকে রিসিব করে নিয়ে আসতে। মিষ্টির প্যাকেট মিথিলার হাতে দিয়ে দোলনের দিকে। ইশারায় কাছে এসে বসতে বলে। মরিয়ম মান্নান রান্না ঘরে রান্না করছে। দোলন তন্ময়ের পাশে বসে। তন্ময় পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে দোলনের হাত টেনে পড়িয়ে দেয়। তারপর সেই রিং পড়িয়ে দেওয়া আঙুলে চুমু খায়।

-“ আমার তরফ থেকে ছোট্ট উপহার ফর মাই লাভলি ওয়াইফ।
দোলন পুরোটা সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তন্ময়ের দিকে। তাদের মাঝে এখনও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয় নি। তবে মোটামুটি ফ্রেন্ডলি একটা সম্পর্ক হয়েছে। শুরুটা তন্ময়ের দিক থেকেই ছিলো। দোলন শুধু তন্ময়ের দেখানো পথে চলেছে। দোলন কে তাকিয়ে থাকতে দেখে তন্ময় বলে-

-“ আলমারি তে গিয়ে দেখো একটা প্যাকেট আছে। ঝটপট রেডি হয়ে নাও। আজকের দিনটা সেলিব্রেট করতে হবে তো নাকি।
-“ আপনি তখন ওমন ভয় দেখালেন কেনো যে ফেল করেছি?
-“ আমি তো জাস্ট এমনি বলেছিলাম পাগল মেয়ে। ওভাবে কেউ কাঁদে? আমি তো রেজাল্ট টা দেখে জাস্ট নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। তোমার কনফিডেন্স লেভেল বেশ ভালো।

-“ দেখতে হবে না কার বউ?
-“ হ্যাঁ আমার বউ বলে কথা। এখন যাও রেডি হয়ে নাও।
দোলন আলমারি থেকে প্যাকেট টা বের করে। প্যাকেটের ভেতর গ্রিন কালারের শাড়ি। দোলন ওয়াশরুমে চলে যায়।
তন্ময় রুমের বাহিরে আসে। সায়ান কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-“ আর কতদূর আপনি?
সায়ান কেবলই এতিমখানার সামনে এসে গাড়ি থামিয়েছে।

-“ এই তো কেবল এতিমখানায় আসলাম।
-“ তুলিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আসুন।
-“ হুমম আসছি।
সায়ান এতিমখানার ভেতর ঢুকে। মাঠে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা খেলছে। বাচ্চা ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো।

-“ আচ্ছা তুলি কোথায় তোমরা কেউ জানো?
একটা বাচ্চা ছেলে বলে উঠল-
-“ ঐ তো তুলি আপা।
তুলি এতিমখানার ভবন থেকে বের হয়ে আসছে। পড়নে পেয়াজ কালারের থ্রিপিস, চুল গুলো এক সাইডে বেণুনি করা। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। এই প্রথম সায়ান তুলিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আগের দেখা থেকে বেশ অনেকটাই অন্য রকম লাগছে।
তুলিকে তন্ময় ফোন করে বলে দিয়েছিল সায়ান এসেছে এতিমখানায়। তুলি যেনো সায়ানের সাথে আসে।
তুলি এগিয়ে আসে সায়ানের দিকে। সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ চলুন।
সায়ান মাথা ঝাকায়। তারপর হাঁটা লাগায়। তুলি পেছন পেছন হাঁটছে। গাড়ির কাছে আসতেই সায়ান দরজা খুলে দেয়। তুলি গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। পিনপিনে নিরবতা গাড়ি জুড়ে। এমন নিরবতা মোটেও পছন্দ হলো না সায়ানের। তাই শ্লো ভলিউমে ❝ ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে..রাখিব আখিতে আখিতে❞
তুলির বেশ পছন্দ এমন গান গুলো। চোখ বন্ধ করে ফিল করলো।

সায়ান আড় চোখে তাকালো চোক বন্ধ করে রাখা তুলির দিকে। মেয়েটাকে বেশ মায়াবী লাগছে।
সায়ান ভ্রু কুঁচকালো নিজের এমন কার্যকলাপ দেখে। মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বলল- হোয়াট’স ইউর প্রবলেম সায়ান মাহবুব? এমন নির্লজ্জ হলি কবে থেকে? তুই তো এমন নস।
লম্বা শ্বাস ফেলে সব ধ্যান জ্ঞান গাড়ি চালানো তে দিলো।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তন্ময়,দোলন,মিথিলা,সায়ান,লিখনের বউ টায়রা,মরিয়াম মান্নান,তুলি। সামনেই টেবিলে ফোন। ভিডিও কলের ওপাশে বসে আছে, সাব্বির,রাহাত লিখন।
লারা কে দেখতে না পেয়ে তন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ পাগলটা কই?
রাহাত তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-

-“ ওর রুমে আছে। শরীর নাকি ব্যাথা তার।
রাহাত,সাব্বিট,লিখন তন্ময়ের পাশে বসে থাকা দোলন কে কংগ্রেস জানালো তার রেজাল্টের জন্য। দোলন ধন্যবাদ জানালো। মিথিলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাব্বিরের দিকে। এই অসভ্য ছেলে তার জিজুর ফ্রেন্ড! সাব্বির হয়তো এখনও খেয়াল করে নি মিথিলা কে। কারন তার মুখের ভঙ্গিমা দেখে কিছুই বোঝার জো নেই।
লিখন বায়না ধরলো তন্ময় কে একটা গান গাওয়ার জন্য। তন্ময় রাজি হচ্ছিলো না দেখে তুলি বলে-

-” ভাইয়া গাও না ভাবিপুর জন্য একটা গান।
দোলন লজ্জায় লাল হয়। তুলির সাথে এই একটু খানি সময়ের মধ্যে মিলে বেশ ভালোই একটা বন্ডিং হয়েছে।
টায়রা কে ইশারায় গিটার আনতে বলে। টায়রা রাহাতের ফ্লয়াট থেকে রাহাতের গিটার নিয়ে আসে। তন্ময় গিটার টা নিয়ে সুর তুলে তারপর দোলনের দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠে-

pehle bhi main tumse mila hu,
pehli dafa hi milke laga,
tuney chuaa zakhamo ko mere,
marham marham dil pe laga,
baadal pagal hain thode,
baadal pagal hain dono,
khulke barse bheegein aa zra,

সায়ান বেশ জানে এই গান টার মানে। তার জান মতে তন্ময়ের আর দোলনের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয় নি। কিন্তু গানটর মানে অন্য কিছু বলছে। গান শেষ হতেই ফোনের ওপাশ থেকে হাত তালির আওয়াজ ভেসে আসে। তন্ময় মুচকি হাসে। দোলনের বেশ ভালোই লাগলো।

রাহাত, সাব্বির,লিখন আর টুকটাক কথা বলে ফোন কে’টে দেয়।
ডাইনিং টেবিলে সবাই খেতে বসে। দোলন আর মরিয়ম মান্নান খাবাড় বেরে দেয়। তুলি মরিয়ম মান্নান আর দোলন কে টেনে বসিয়ে দেয়। সায়ান আড়চোখে দেখে। তুলিকে দেখে এটুকু বুঝা শেষ তুলি সবার খুব পছন্দের সাথে ভালোবাসার ও। তুলি একবার মুখ ফুটে কিছু বললে সেটা করিয়েই ছাড়ে। বিষয় টা ভালো লাগলো সায়ানের। খাওয়া দাওয়া শেষে সায়ান চলে আসতে নিলে তন্ময় ডেকে তুলিকে পৌঁছে দিতে বলে একটু যদি সায়ানের প্রবলেম না থাকে। সায়ান জানায় তার প্রবলেম নেই।

অতঃপর তুলিকে নিয়ে বের হয়। গাড়িতে তুলি উঠে বসতেই সায়ান গাড়ি টান দেয়। সোজা এতিমখানায় এনে গাড়ি থামায়। তুলি গাড়ি থেকে নামার জন্য উদ্যত হলে সায়ান ডেকে উঠে –

-“ মিস তুলি।
তুলি তাকায় সায়ানের দিকে।
-“ কিছু বলবেন?
সায়ান সময় নিলো।
-“ আপনাকে আজ সুন্দর লেগেছে ভীষণ।
তুলি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ এর আগে আমাকে দেখতে কি বাজে লেগেছে?
সায়ান মুচকি হাসলো।
-“ আগে সেভাবে খেয়াল করি নি আজ করলাম। বেশ ভালোই লাগলো দেখতে।
-“ থ্যাংস ফর ইউর নাইস কমপ্লিমেন্ট।
সায়ান হাসলো। তুলি নেমে চলে গেলো। সায়ান এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো। তুলি চোখের আড়াল হতেই সায়ান গাড়ি স্টার্ট দিলো।

লারা বেলকনিতে রেলিঙে মাথা দিয়ে বসে আছে। কোন কপালে ঐ ছেলের সাথে দেখা হলো? মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু বিচরণ করছে। কোনো কিছুতেই মন বসছে না। আকাশে থাকা ইয়া বড় চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ এই মালদ্বীপ শহরের মালে সিটির চাঁদ। ঐ সুদর্শন অভদ্র ছেলে কে আরেকবার আমার সামনে এনে দাও। এই দ্বিতীয় সাক্ষাৎে যে করেই হোক ঐ সুদর্শন অভদ্র ছেলের নাম্বার আমি হাতিয়ে নিবো,প্লিজ প্লিজ দেখা করিয়ে দাও।
চাঁদ টা যেনো লারার হুকুমের অপেক্ষাতেই ছিলো। লারা দের হোটেলের ঠিক নিচেই ঐ পুরুষটি কে দেখতে পেলো। মুহূর্তে লারা ভীষন রকমের খুশি হলো। মনে হলো কোনো মূল্যবান রত্নের দেখা পেলো। তামিম ফারুকী তার হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে!

লারা তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলো। তামিম ফারুকীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ হেই সুদর্শন অভদ্র ছেলে আমাকে খুজতে আমার হোটেল অব্দি চলে এসেছেন!
তামিম ফারুকী ফোন টা কান থেকে নামালো। লারার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল-
-” সরি কি বলছেন?
লারা হেসে বলল-

-“ চিনেছেন আমায়?
-“ জ্বি চিনেছি। তা আপনি এখানে কেনো?
-“ আরে সেটা তো আমি জিজ্ঞেস করবো। আপনি আমাদের হোটেলের সামনে কেনো?
-” আপনাদের হোটেল!
-“ না মানে আমি এই হোটেলে উঠেছি।
-“ ওহ্ আচ্ছা।
-“ আপনার নম্বর টা দিন না।
-“ সরি, আপনাকে কেনো আমার নম্বর দিব?

-“ আপনি কিসের ছাতার মাথার মলম দিছেন আমার কোমড়ের ব্যাথা সারে নি। দিন ফোন নম্বর দিন।
-“ না।
-“ তাহলে ফেসবুক আইডি দিন।
-“ না।
-“ হোয়াটসঅ্যাপ?
-“ না।
-“ ইন্সটাগ্রাম?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১২

-“ না।
-“ তাহলে ই-মেইল ঠিকানা টাই দিন।
-“ [email protected]
-“ ধন্যবাদ এবার আসি।
লারা চলে গেলো। তামিম ফারুকী আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকো চলে গেলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৪