আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৩০

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৩০
Raiha Zubair Ripte

লারা লুৎফর রহমানের অফিস থেকে সালামের সব ইনফরমেশন তন্ময়ের হাতে দেয়। তন্ময় সব ঘেঁটে দেখে। তারপর সাব্বির কে ফোন দেয়।
-“ নজর রাখছিস?
-“ হ্যাঁ। আমি বাইকে আছি। সালাম কোথাও একটা যাচ্ছে পিছু নিয়েছে। পরে ফোন দিচ্ছি বাইক থেকে নেমে।
তন্ময় ফোন কেটে দিলো। লারা মুড টাকে ফ্রেশ করার জন্য ব্যুরো থেকে বের হয়ে ব্যুরোর পাশে থাকা টঙের দোকান থেকে এক কাপ চা নেয় খাওয়ার জন্য।

চা টা নিয়ে বেঞ্চে বসে মুখে নিতেই পাশে পরিচিত পারফিউম এর ঘ্রাণ আসায় শ্বাস টা কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলো লারার। বুক টা কেমন উঠানামা করছে। এই পারফিউমের ঘ্রাণ টা লারা চিনে বেশ ভালো করেই চিনে। উৎফুল্ল মন নিয়ে ত্বরিত গতিতে পাশ ফিরে। পাশে বসে থাকা মানুষটির মুখের দিকে তাকাতেই উৎফুল্লতায় থাকা মুখটাতে আঁধার নেমে আসে। নাহ্ তামিম ফারুকী না এটা। এই সেম পারফিউম তামিম ফারুকী ইউজ করতো।
আবির চা খাচ্ছে। লারা কে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ চিনেছেন আমায়?
লারা মুখ ফিরিয়ে নিলো।
-“ আপনি এখানে কেনো?
-“ তন্ময়ের সাথে এসেছি। আচ্ছা বাই এনি চান্স আপনি কি সেদিনের জন্য আমার উপর এখনও রেগে আছেন?
-“ নাহ।
-“ কিভাবে যেনো কথা বলেন। তাই মনে হলো রেগে আছেন।

লারা তাড়াতাড়ি চা টা খেয়ে ব্যুরো তে চলে আসলো।
সায়ান তুলি কে নিয়ে একটা ক্যাফে তে এসেছে। একাকী কিছুটা সময় স্পেন্ড করার জন্য। তুলি চেয়ারে বসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে।ক্যাফের দক্ষিণা জানালা দিয়ে কি সুন্দর ঠান্ডা বাতাস আসছে। ক্যাফের ঠিক পাশেই একটা পদ্ম বিল। পদ্ম গুলো ফুটে আছে। তুলি দেখলো সেই পদ্ম গুলো।

-“ পদ্ম গুলোকে কি সুন্দর লাগছে তাই না?
সায়ান তাকালো পদ্ম গুলোর দিকে।
-“ লাগবে তোমার?
-“ তোলা যাবে পদ্ম গুলো?
-“ অবশ্যই। এনে দিব?
তুলি মাথা ঝাকালো। সায়ান তুলির হাত ধরে ক্যাফে থেকে বের হয়ে বিলের সামনে আসলো। বিলের পাশেই ছোট একটা নৌকা রাখা ছিলো। সায়ান তুলি কে নিয়ে সেই নৌকায় উঠে বসলো। তারপর বৈঠার দ্বারা নৌকা চালায় সায়ান আর তুলি পদ্মফুল তুলে।
পদ্ম তোলা শেষ হলে নৌকা টা আগের জায়গায় রেখে আবার ক্যাফেতে চলে আসে তারা।

-“ এখন কি অর্ডার দিব খাওয়ার জন্য বলো।
-“ কফি অর্ডার দিন।
সায়ান দু মগ কফি অর্ডার দিলো। ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেলো। তুলি সায়ান কফি টা খেয়ে নিলো। তারপর ক্যাফে থেকে বের হলো।
সায়ান তুলি কে খাঁন বাড়িতে নামিয়ে চলে গেলো নিজ বাসায়।

সাব্বির সালামের পিছু নিতে নিতে চলে আসে একটা পুরাতন চার তলা বিল্ডিংয়ের সামনে। সালাম অলরেডি ভেতরে ঢুকে গেছে। সাব্বির সতর্কতার সাথে ভেতরে ঢুকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। সাব্বির আওয়াজ টা অনুসরণ করে আগায়। একটা কক্ষে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে রনি কে। সাব্বির প্যান্টের পেছন থেকে রিভলবার টা বের করে ধির পায়ে এগিয়ে সালামের মাথায় ধরে।
সালাম পেছন ফিরে ছিলো বিধায় সাব্বির যে আসছে বুঝতে পারে নি। সে রনি কে বকাঝকা দিতে ব্যাস্ত ছিলো।
-“ এক পা ও নড়বে না সালাম। তা না হলে কিন্তু বুলেটে তোমার মাথা টা ঝাঁঝরা করে দিব।
সালাম ভয়ে ঢোক গিলে।

-“ ক..কে আপনি?
-“ সিআইডি।
কথাটা বলে সালাম কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চড় বসিয়ে দেয় গালে।
সালাম ভাবতেও পারে নি লুৎফর রহমান কে এতো ভয় দেখানোর পরও সে সিআইডি দের খবর দিবে। সাব্বির রনির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো। রনি কে বুকে আগলে নিয়ে বলল-
-“ ভয় পেয়ো না বাচ্চা। আমি এসে গেছি তো। তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাব।
সালাম পালানোর জন্য দৌড় দিতে নিলে সাব্বির সালামের পায়ে শুট করে। সালাম পায়ে হাত দিয়ে বসে পড়ে। র’ক্ত বের হচ্ছে পা বেয়ে। ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে আসছে। সাব্বির পকেট থেকে ফোন বের করে রাহাত কে চটজলদি চলে আসতে বলে। আর লোকেশন সেন্ড করে দেয়।

মিনিট বিশেকের মধ্যে রাহাত চলে আসে। সালাম আর রনি কে নিয়ে ব্যুরো তে আসে।
লারা লুৎফর রহমান কে ফোন করে ব্যুরো তে আসতে বলে। লুৎফর রহমান ব্যুরো তে এসে ছেলে কে দেখতে পেয়ে যেনো প্রাণ ফিরে পায় দেহে।আগলে নেয় ছেলেকে।
-” আমার ছেলেকে কে কিডন্যাপ করেছিল স্যার?
তন্ময় জবাব দেয়-

-“ আপনার ম্যানেজার সালাম
চমকে উঠলো লুৎফর।
-“ সালাম!
-“ হ্যাঁ। টাকার লোভে সে রনি কে কিডন্যাপ করে।
-“ এখন কোথায় ও?
-“ আছে লকাপে।
-“ প্লিজ ঐ সালামের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির ব্যাবস্থা করবেন।
-“ সেটা কোর্ট ই ঠিক করবে।

লুৎফর ছেলে কে নিয়ে চলে যায়।
সন্ধ্যায় খাঁন বাড়ির বসার ঘরে জরুরি আলোচনা শুরু হয়। তুলির বিয়ে নিয়ে। রাতুলের পাশে বসে আছে সায়ান। সায়ানের গার্ডিয়ান বলতে এখন রাতুলই। আলোচনা করে বিয়ের ডেট পাকাপোক্ত করা হলো। ডেট ফিক্সড করার আগে তুষার তুলির মতামত নিয়েছিল তার কোনো আপত্তি আছে কি না। তুলি না জানায়। তার কোনো আপত্তি নেই।
নেক্সট মান্থে তুলি সায়ানের বিয়ে। সাব্বির তুলি সায়ানের বিয়ের কথা শুনে আফসোস করছে শুধু। সবার বিয়ে, বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে যাচ্ছে শুধু তার টা হচ্ছে না। সেজন্য পকেট থেকে ফোন বের করলে মায়ের ফোনে ফোন লাগায়। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই সাব্বির বলে উঠে –

-“ কেমন আছেন আম্মা?
-“ ভালো আছি। তুমি?
-“ আমিও ভালো আছি। রাতে খেয়েছেন?
-“ হ। তুমি?
-“ না খাই নি।
-“ খাও নি কেনো? রাত তো অনেক হয়েছে।

-“ আসলে রান্না করা হয় নি। কেউ তো নেই যে রান্না করে রাখবে।
-“ সেজন্যই বলি বিয়ে টা করে নাও।
-“ তো ডেট ফিক্সড না করলে করবো কি করে বলেন।
-“ ডেট ফিক্সড করবো? ভ্রু কুঁচকে বলে সালমা বেগম।
-“ আপনার ইচ্ছে।
-“ আচ্ছা। কাল কথা বলে আসবো।
-“ আচ্ছা ভালো থাকবেন।
-“ হু তুমিও।

সাব্বির ফোন কে’টে দেয়। স্বস্তির শ্বাস ফেলে।
দোলন তুলির পাশে বসে আছে। তুলির কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে। দোলন তুলির গাল টেনে বলে-
-“ ওরে আমার আপাই টা কি লজ্জা পাচ্ছ নাকি।
তুলি মুখ ঘুরালো। সত্যি ই তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।
তুলির ফোনে কল আসলো তখনই। তুলি ফোন তুললো বিছানা থেকে। দোলন মাথা এগিয়ে দেখে সায়ান দিয়ে সেভ করা নম্বর।

-“ এখন আসি। কথা বলো কেমন?
দোলন চলে গেলো। তুলি ফোন টা নিয়ে বেলকনিতে আসলো।
-“ হ্যালো!
-“ কি করছেন?
-“ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি?
-“ সেম। আকাশের চাঁদ টা কিন্তু আজ অনেক সুন্দর দেখেছেন?
তুলি তাকালো আকাশের দিকে।

-“ হ্যাঁ। অনেক বড় লাগছে।
-“ হুমম। খেয়েছেন?
-“ হ্যাঁ খেয়েছি। আপনি?
-“ এখনো খাই নি। ডেলিভার ম্যান এখনো আসে নি।
-“ আপনি বাহিরের খাবার খান?
-“ হ্যাঁ। বউ তো নেই যে রেঁধে খাওয়াবে। আপনি পারেন রান্না?
-“ হ্যাঁ।
-“ তাহলে তো ভালই। আপনার হাতের রান্না খাব রোজ।
-“ হ্যাঁ করল্লার জুশ,মিষ্টি কুমড়ার পায়েশ,বেগুনের চাটনি। বেশ ভালোই বানাতে জানি। খাবেন?
সায়ান মুচকি হেঁসে বলল-

-“ আপনি ভালোবেসে যা রেঁধে দিবেন। চোখ বন্ধ করে খেয়ে ফেলবো।
-“ আচ্ছা। ডেলিভারি ম্যান আসলে খাবার টা নিয়ে ঝটপট খেয়ে নিয়েন।
-“ আচ্ছা রাখি তাহলে।
-“ হুমম।
সায়ান ফোন কেটে দিলো। মিনিট বিশেক পর ডেলিভারি ম্যান আসতেই খাবার টা রিসিভ করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

বাড়ির বাগানে বসে আছে তন্ময়, আবির,রাহাত। ফাহাদ মা-রা যাওয়ার দু মাস হয়ে গেছে। লারা ফাহাদের কবরস্থানে গিয়েছে। তন্ময় লারা কে ফোন করছে কিন্তু লারা রিসিভ করছে না। বিরক্ত হলো তন্ময়। রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ ফোন রিসিভ করছে না লারা। তোর উচিৎ ছিলো ওর সাথে যাওয়ার। একা কেনো যেতে দিলি। এটলিস্ট আমাকে বলতি আমি না হয় যেতাম।
আবির ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কোথায় গেছে লারা?
-“ কবরস্থানে।
-“ কার কবরস্থানে?
-“ ফাহাদের। ওহ্ তুমি তো চিনো না ফাহাদ কে। ফাহাদ হচ্ছে ক্রিমিনাল যাকে লারা ভালোবাসতো।
আবিরের কেমন যেনো অনুভূতি হলো। বিষাদে ছুঁয়ে গেলো মন।

-“ কোন কবরস্থানে গেছে?
তন্ময় ঠিকানা টা দিলো। আবির বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ আমি লারা কে নিয়ে আসছি।
আবির চলে গেলো। তন্ময়, রাহাত আসতে চাইলে আবির মানা করে। তারপর চলে যায়।

আবির কবরস্থানে আসতেই দেখতে পারে সাদা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে একটা কবরের সামনে মাটিতে বসে আছে লারা। আবির এগিয়ে গেলো। আর তখনই গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো। লারা কাঁদছে! কিছু এলোমেলো শব্দ ভেসে আসলো। লারা বলছে-“ দেখুন না আমি জানি কেমন হয়ে গেছি। আপনাকে ভুলতে পারছি না। কেনো পারছি না বলুন না। আমার হৃদয় টাতে থেকে থেকে অসহ্য ব্যাথা হয়। কেনো আপনার সাথে দেখা হলো আমার? আমি ভুলতে চাই আপনাকে। ভালো ভাবে বাঁচতে চাই। আপনার স্মৃতি আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে শেষ করে ফেলছে।
আবির লারার কাঁদে হাত দিলো। লারা চমকে উঠলো। পিছু ফিরে আবির কে দেখে কপালে সূক্ষ্ম দু ভাজ পড়লো।

-“ আপনি এখানে?
-“ আপনাকে নিতে এসেছি৷ তন্ময়, রাহাত ওরা দুশ্চিন্তা করছে।
লারা উঠে দাঁড়ালো। ফাহাদের কবরের দিকে তাকিয়ে থেকে হাঁটা ধরলো। আবির ও পেছন পেছন আসলো। লারা কে গাড়িতে ঢুকতে না দেখে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে-
-“ গাড়িতে উঠুন মিস লারা।

লারা গাড়িতে উঠে বসলো। আবির গাড়ি স্টার্ট দিলো। পুরো গাড়িতে পিনপিনে নিরবতা। আবিরের মনে অশান্তির ঝড় বইছে। কেনো বইছে,কিসের জন্য বইছে,কার জন্য বইছে তার উত্তর নেই
-“ আপনি কি ফাহাদ কে এখনও অনেক ভালোবাসেন?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৯

লারা তাকালো আবিরের দিকে। কিন্তু কিছু বললো না। সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
আবির লারা কে খুঁটিয়ে দেখলো। দুধে আলতা গায়ের রং। সাদা সেলোয়ার-কামিজে একদম শুভ্রপরির মতো লাগছে। ঠোঁটের নিচে থাকা কালো কুচকুচে তিলটা লারার সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আবির নিজেকে নিজে ধিক্কার জানিয়ে গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৩১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here