অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৯

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৯
Mousumi Akter

প্রভাত গাড়ি ড্রাইভ করছে। পূর্ণতা পাশেই মলিন মুখে বসে আছে।চোখের সামনে সারাক্ষণ নিজের মায়ের মুখটা ভেষে উঠছে।প্রভাত ড্রাইভের পাশাপাশি বারেবার পূর্ণতার দিকে তাকাছে।পূর্ণতার চোখের পানি প্রভাতকে ভীষণ যন্ত্রণা দেয়। সেই যন্ত্রণা ভয়াবহ রকমের।গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে প্রভাত নির্মল চাহনিতে পূর্ণতার দিকে চেয়ে বলল,

“পূর্ণ তোমার চোখের পানি আমার কাছে বিষক্রিয়ার মত লাগে। যেন বিষাক্ত কোনো বিষ আমি পান করেছি,সেই বিষক্রিয়ার জন্য ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।”
পূর্ণতা কোনো উত্তর দিলনা।সে মলিন মুখে, ধ্যান হয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে।পূর্ণতার নিশ্চুপ থাকা প্রভাতকে আরোও পো’ ড়া’ চ্ছে।প্রভাত আবার ও বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার অপূর্ণ জীবনের পূর্ণতা কখনোই তুমি ছাড়া পেতাম না।জীবনের সব অপূর্ণতা মুছে দিয়েই তোমার আগমন আমার জীবনে।তুমি সামান্যতম কষ্ট পেলে আমার কি হয়ে যায় তোমাকে বোঝাতে পারব না।আচ্ছা হৃদয়ের অনুভূতি দেখানোর মত কোনো ব্যবস্থা নেই।তাহলে তোমাকে দেখাতাম তোমার কষ্ট আমাকে কীভাবে দংশন করে।”
পূর্ণতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রভাতের দিকে তাকাল।চোখের পানি মুছল।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

“আপনি জানতেন আমার আম্মুর ব্ল্যাড ক্যান্সার।”
এমন ভয়ংকর প্রশ্নে প্রভাত চমকালো।সে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে না।এমন সিচুয়েশন এ কি উত্তর দেওয়া যায় তাও বুঝে উঠতে পারছে না।পূর্ণতা আবার ও জিজ্ঞেস করল,
“আপনি জানতেন?”

প্রভাত মৃদু কন্ঠে জবাব দিল, “জানতাম।”
পূর্ণতা খানিকটা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
“তাহলে কেন বলেন নি? কেন বলেন নি আমাকে?এতবড় ভয়ংকর এক সত্য কেন লুকালেন বলুন? একজন সন্তানের কাছে এই অনুভূতি কত বাজে অনুভূতি আপনি বুঝবেন না।কীভাবে বুঝবেন আপনার তো মা আছেই।যে চলে যাবে সে তো আমার মা।”

“চাচী আমার কাছে আম্মুর চেয়ে কম কোনদিন ছিলনা পূর্ণ। তুমি জেনে কেন এমন আঘাত দেওয়া কথা বলছো।তোমার সিচুয়েশন আমি বুঝতে পারছি।যদিও একজনের মনের অবস্থা আরেকজন পুরাটা বুঝতে পারেনা।তবুও আমি বোধহয় বুঝতে পারছি না।”

“তাহলে কেন বললেন আমাকে? আমি তাহলে আমার আম্মুর পাশে সারাক্ষণ থাকতাম।এই দুনিয়াতে আমার আম্মু আর বেশীদিন নেই।এটা আমি ভাবতেই পারছি না।আম্মুর কিছু হয়ে গেলে সেদিন আমিও নিজেকে শে’ষ করে দিবো।”
“তোমাকে বললে আরো অনেক দিন আগেই তোমার হাসি খুশি মুখটা মলিন হয়ে যেত। যেটা চাচী কখনোই চায়নি।চাচীর অনুরোধই তোমাকে কিছু বলা হয় নি।”

“আমার আম্মুর কিছু হলে আমি কি করব।কি হবে আমার? আমার আম্মু কি সত্যিই আর থাকবেনা।”
“কুল পূর্ণ। কার হায়াত কতটুকু তা আল্লাহ ভাল জানেন।আমরা নই।অসুস্থ মানুষ ও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে।আবার সুস্থ মানুষ হুট করে মরে যায়।চাচী মারা যাবে এসব কেন ভাবছো?”

“ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।আমার আম্মু মরে যাবে বলে আম্মুর অনুরোধে আমাকে দয়া করে বিয়ে করেছেন তাইনা প্রভাত চৌধুরী? না হলে আপনার মত ছেলে তো আমাকে কোনদিন জোর করে বিয়ে করত না। দয়া করেছেন আমাকে তাইনা? আমার মৃতু পথযাত্রী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করেছেন।জীবনে কখনো ভাবিনি কেউ দয়া দেখিয়ে বিয়ে করবে।”

প্রভাত হঠাত ব্রেক চাপল।তাতে একটা ঝাঁকি হল।হঠাৎ এভাবে ব্রেক চাপাতে পূর্ণতার বুকের মাঝে ধুকপুক করে উঠল।সে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি হল?”
চারপাশে লোকজন।প্রভাত গাড়ির সমস্ত গ্লাস নামিয়ে দিল।পূর্ণতা এবার-ও অবাক হল।কৌতুহলের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল,

” কি হচ্ছে?”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে দৃষ্টি মেলল।প্রভাত যতবার-ই পূর্ণতার দিকে তাকায় ততবার চোখের দৃষ্টিতে থাকে গভীর প্রণয়।এই দৃষ্টি দেখলেই পূর্ণতা থতমত খেয়ে যায়।সে বেশীক্ষণ টিকতে পারেনা এই দৃষ্টির সামনে।কেবল-ই পূর্ণতার ওষ্টদ্বয় নড়ে উঠল।কিছু একটা বলতে যাবে।তার পূর্বেই প্রভাত পূর্ণতার দিকে ঝুঁকল।পূর্ণতার কাধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল আলতো পরশে।

পরশটা এমন ছিলো আপনা-আপনি ভালবাসা নির্গত হচ্ছিলো।পূর্ণতা বুঝে উঠতে পারল না প্রভাত মাঝ রাস্তায় এমন কেন করছে।প্রভাত সুযোগ পেলেই তাকে জড়িয়ে ধরে,ভালবাসতে চায়, তাই বলে মাঝ রাস্তায় অসভ্যতা করার মত মানুষ তো সে নয়।এমন সময়ে প্রভাতের মসৃণ কণ্ঠস্বর ফিসফিসিয়ে পূর্ণতার কর্নকুহরে পৌছালো।প্রভাত আদর মাখা কোমল কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,

“আমার বুকে কান রাখো।হৃদস্পন্দনের গতিবেগ কি শুনতে পাও পূর্ণ? খেয়াল করে শোনো প্রতিটা স্পন্দন বলছে ভালবাসি পূর্ণ, তোমাকে পৃথিবী সমান ভালবাসি।ইহকালেও ভালবাসি,পরকালেও ভালবাসি।ভালবাসা ছাড়া কি আর অন্য কিছু আছে আমার হৃদস্পন্দনে পূর্ণ? ”
প্রভাতের এমন আদুরে কন্ঠ, ভালবাসার আকুলতায় পূর্ণতা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।প্রভাতের গেঞ্জির গলার খামছে ধরে বলে উঠল,

“সব মিথ্যা, বিশ্বাস করিনা আমি কিচ্ছু।”
প্রভাত পূর্ণতাকে নিজের বুকের সাথে আরোও একটু শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি জীবনে হয়তো প্রয়োজনে -অপ্রয়োজনে অনেক মিথ্যা বলেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো এই পৃথিবীর আমার ভালবাসার চেয়ে সত্য কিছুই নেই।”

“আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাই দিতে পারবেন?”
“চেয়েই দেখো, জা’ন দিতেও ভাবব না।”
পূর্ণতা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমাকে কথা দিন, আমার আম্মুর সাথে যে এত বড় অন্যায় করল তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন। ওই নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে একটু হলেও কষ্ট দিবেন।ওই নিকৃষ্ট ব্যক্তির কষ্ট দেখলেই আমার অশান্ত হৃদয় টা শান্ত হবে।আর আপনি যদি না পারেন, আমি নিজেই কি করব জানিনা।”
প্রভাত পূর্ণতার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,

“তুমি না বললেও আমি তাকে ছাড়তাম না।আমি চাচাকে কঠিন শাস্তি দিব।বুঝাব অর্ধাঙ্গিনী ছাড়া জীবন কতটা দূর্বিসহ হতে পারে।”
এমন সময় প্রভাতের চোখ গেল বাইরে।সে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিল।প্রভাত উঁকি দিল।দেখল রাজনের সাথে পুষ্প একটা ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রাজন আর পুষ্প দু’জনের মুখ হাসি-খুশিতে ভর্তি।প্রভাত যা অনুমান করছে তা কি সত্য।মুহুর্তের মাঝেই প্রভাতের অনুমান সত্য হল।রাজন একটা বেলি ফুলের গাজরা পুষ্পর চুলে বেঁধে দিল।তারপর পুষ্পের হাত ধরে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠল।পূর্ণতার গলা শুকিয়ে এল টেনশনে।এভাবে ওরা প্রভাতের সামনে ধরা পড়ে গেল।রিক্সাটা চলে যেতেই প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি কিছু জানতে এ ব্যাপারে?”
পূর্ণতা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
“না মানে।”
প্রভাত শক্তভাবে জিজ্ঞেস করল,
“আমি জানি পৃথিবীর কেউ না জানলেও তুমি সব জানো।কতদিন ধরে চলছে এসব।কতটুকু গভীরে গিয়েছে জানো?”
“এভাবে রেগে যাচ্ছেন কেন? আমাকে চোখ রাঙাচ্ছেন কেন? ”

“পুষ্প আমার একমাত্র বোন। ও ভুল করলে আমি রাগব না? টেনশন করব না?”
পূর্ণতা গভীর কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কীভাবে শিওর হলেন আপু ভুল করছে।ঠিক ও তো হতে পারে।”
প্রভাত চিন্তিত হয়ে উত্তর দিল,
“দেখো পূর্ণ তোমার কোনো আইডিয়া আছে ছেলেদের সম্পর্কে?জানো চারদিকে কি হচ্ছে? যাকে তুমি বেশী ভাল মনে করবে সেই হবে ভয়ংকর খারাপ।”

“তার মানে বলতে চাইছেন রাজন ভাইয়া ভাল মানুষ নন।”
“দেখো আমি তা বলতে চাইনি।রাজন কে যতটুকু দেখেছি স্ট্রং পার্সোনালিটির ছেলে হিসাবে দেখেছি।কিন্তু দুদিন দেখেই তো আমরা পরিপূর্ণ ভাবে একটা মানুষ চিনতে পারিনা।রাজন একজন এস আই শুধু এতটুকু জানি।ওর পরিচয় কী? কোন জেলার ছেলে। ফ্যামিলি কেমন কিছুই তো জানিনা।”
“চৌধুরী পরিবারের চেয়ে নিশ্চয়ই খারাপ পরিবার পৃথিবীতে নেই।তাছাড়া এত কিছু জানতে হবে কেন? মানুষ টা ভাল হলেই তো হল।”

প্রভাত আবার ও প্রশ্ন করল,
“কতটুকু গভীরে গিয়েছে জানো?”
পূর্ণতা ওদের দু’জনের কথা দু’সেকেন্ড ভেবে উত্তর দিল,
“যতটুকু গভীরে গেলে একজন আরেকজনকে ছাড়া অসহায় হয়ে পড়ে।”
“রাজন ভাল হলে ওর ফ্যামিলি নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।সবার বিপক্ষে গিয়ে ওদের বিয়ে দিবো।শুধু আমার বোনকে যেন ভালবাসে।”

“সবাই কি আর আপনার মত বউ পা-গ-ল হবে নাকি।”
পূর্ণর খোঁচা মারা কথায় প্রভাত হাসল।মৃদু হাসল।এই কথাটা তাকে প্রশান্তি দিল।প্রভাত পূর্ণ”র ঠোঁটে চুমু খেয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দিল। ঘণ্টা খানিকের মাঝে গাড়ি গিয়ে পৌছালো হসপিটালে।

জাহানের কেবিনে প্রবেশ করল প্রভাত আর পূর্ণতা।আজ পূর্ণতা পৃথিবীর সব মায়া এক জায়গা করে জাহানের দিকে তাকিয়ে আছে ফ্যাল ফ্যাল নয়নে।মনে হচ্ছে পূর্ণতা এখনি কেঁদে দিবে।কিন্তু জাহানের হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে পারল।জাহান আজ উঠে বসেছে।মন খুলে হাসছে।মেরি তার গালে খাবার তুলে দিচ্ছে।সে খাচ্ছে আর প্রাণ খুলে হাসছে।দু’ জা কি গল্প করছে কে জানে? দেখে মনে হয় দু’বোন।কোনদিন ঝগড়া হয়নি ওদের।প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,

“দেখো আমার শ্বাশুড়ি একদম সুস্থ আজ।”
“তাই বলে শ্বাশুড়ি বলবেন?”
“সত্য স্বীকার করাই শ্রেয় পূর্ণ। ”
এমন সময় মেরির চোখ গেল দরজায়।প্রভাত আর পূর্ণকে দেখে মেরি বলল,
“তোরা ভেতরে আয়।বাইরে কেন?”

ওরা দু’জন এগিয়ে এল।পূর্ণতা সরাসরি জাহানের কাছে এগিয়ে গেল।জাহানের অসুস্থতার কথা আর মনে করিয়ে দিয়ে হাসি মুখটা মলিন করল না।জাহান কে খুব আদর করে জড়িয়ে ধরল।জড়িয়ে ধরে রেখেছে খুব শক্তভাবে আর ছাড়ছে না। মেয়ের এমন পা-গ-লা-মি দেখে জাহান খুব জোরে হাসল।আজ কেন এত হাসছে কেউ জানেনা।শুধু হেসেই যাচ্ছে।অনেক্ষণ হয়ে গেলে জাহান বলল,

” এবার ছাড়ো সোনা।”
পূর্ণতা এবার জাহান’কে ছেড়ে বলল,
“কেমন আছো আম্মু? কত দিন তোমার হাসি মুখটা দেখিনা।তুমি এভাবে হাসলে আমি যেন স্বর্গের সুখ পাই।তোমাকে এভাবেই হাসি-খুশি দেখতে চাই আমি সারাজীবন। ”
জাহান পূর্ণর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

“ভেবেছি আর কোনদিন কাঁদব না।এখন থেকে শুধু হাসব।”
মেরি বলল,
“পূর্ণ আমাকে তো কোনদিন এভাবে আদর করিস না।আমি কি তোর কিছু হইনা।”
পূর্ণ মেরিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি আমার দ্বিতীয় মা বুঝছো।দু’জন কে সমান ভালবাসি আমি।”

আরো দশদিন কেটে গিয়েছে। এ বাড়িতে পূজা এসছে আজ দশদিন হল। জাহান ও বাড়ি এসছে। জাহান এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এখন সে আর ওয়াজেদের সাথে থাকছে না।আলাদা একটা রুম দিয়েছে প্রভাত আর পূর্ণতা।প্রভাত জাহান কে ডিভোর্স এর ব্যাপারে বলেছে। সে যেন ওয়াজেদ-কে ডিভোর্স দেয়। জাহান একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলেছে, ‘ শরীরে কঠিন ব্যাধি না হলে ডিভোর্স ই দিতাম।আমার হাতে আর বেশী সময় নেই।এখন ডিভোর্স হলে আমি আর তোমার চাচা এক বাড়িতে থাকতে পারব না।

ফলে আমি পূর্ণর থেকে দূরে থাকব।আমি মেরি আপাকে ছাড়াও থাকতে পারব না।পূর্ণ , পুষ্প, তুমি কাউকে ছাড়া থাকতে পারব না।যে কদিন আছি ওই মানুষের সাথে এক সাথে আর থাকব না।’ প্রভাত আর জোরাজোরি করল না।জাহান কে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে দিল।তবে ওয়াজেদ কে কঠিন হুঁশিয়ারী দিল, ‘জাহানের দিকে চোখ তুলে তাকালে বা স্বামীর অধিকার দেখাতে গিয়ে অত্যাচার করলে এ বাড়িতে ওয়াজেদের শেষ দিন হবে।ওয়াজেদ ও চুপচাপ আছে।জাহান কে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা।

পূজাকে দায়িত্ব দিয়েছে সে যেন সব সময় জাহানের কাজে সাহায্য করে।এই ছাড়া আর কিছু করা লাগবে না।বাকি টাইম পূর্ণ আর পুষ্পের সাথে গল্প করে, টিভি দেখে বই পড়ে কাটাবে। এ বাড়িতে সব চেয়ে বয়স কম এখন পূজার।পূজা এ বাড়িতে আসার পর কেমন যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে।একবার কিচেন,একবার ডায়নিং,একবার বাগান,একবার পূর্ণ, একবার পুষ্প এসব করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।খুব কম সময়ে এ বাড়ির সবাই পূজাকে আপণ করে নিয়েছে।

পুষ্প আর পূর্ণর মত মেশার মানুষ পেয়ে পূজার ও আর বাড়ি যেতে ইচ্ছা করেনা। প্রথম এক সপ্তাহ বাড়ি গেলেও এখন থেকে সে আর বাড়িতে যাবেনা। পূজার আগমনে বাড়িটা কেমন ময় ময় করছে।নতুন সুবাস ছড়াচ্ছে সব কিছুতে।বয়সে একটু ছোট হলেও পুষ্প আর পূজার খুব কাছের হয়ে উঠেছে।এখন ওরা তিনজন সারাদিন একসাথে থাকে আড্ডা দেয়।পূজার সাথে বাড়ির কাজের মেয়ের মত ব্যবহার করেনা।ওদের দুজনের অগনিত ড্রেস।সেখান থেকে নতুন দেখে দেখে কিছু ভাল পোশাক ও দিয়েছে।পূর্ণ আর পুষ্প পূজাকে ওদের মত স্টাইল করার চেষ্টা করছে।জেলে পাড়ার মেয়েটা এখন আর জেলাপাড়ার মত নেই।অনেক খানি বদলে গিয়েছে। পূজার ধর্ম আলাদা তবুও বাড়ির কেউ পূজাকে ছোট করে দেখছে না।পূজাও কেমন মিশে গিয়েছে।

তখন রাত।চাঁদ কেমন ক্ষয় হয়ে এসছে।তাও চাঁদের মৃদু আলোয় ধরণির সব কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পূর্ণ, পুষ্প আর পূজা ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।পূর্ণতা পূজাকে একটা গোলাপি রঙের গাউন দিয়েছে।পূজা সেটা পরে ছাদে দাঁড়িয়ে নায়িকাদের মত ঘুরছে আর মাঝে মাজবে নেচে উঠছে।পূজা হিন্দু, নাচ, গান আগে থেকেই ভাল জানে।পুষ্প একটা গান ছেড়ে বলল,

“পূজা একটা নাচ করতো দেখি।”
পূজা বলল, ” এখন না পুষ্পদি। তোমার বিয়েতে নেচে পূজা ফাঁ’ টি’ য়ে দেবে দেখে নিও।যদি আমাকে তোমার বিয়েতে বলো।”
পুষ্প বলল, ” তুই ছাড়া তো এখন বিয়েই হবেনা। তোকে কি আর আলাদা করে বলা লাগবে।”
পূর্ণতা বলল,
“তুই এত সুন্দর নাচ শিখেছিস কীভাবে রে?”

পূজা এক গাল হেসে বলল,
“আমাদের পাড়ায় এক কাকিমা তার মেয়েকে নাচ শেখাতো।আমি তাই দেখে দেখে নাচ শিখে ফেলেছি।”
পূর্ণতা আবার বলল,
” আচ্ছা পূজা তুই যে সেদিন বললি ভিডিও ফোনের কথা। কেন লাগবে আমাকেই বলবি শুধু।বললি নাতো।”
পূজা ওর মাথাটা পুষ্প আর পূর্ণর দিকে এগিয়ে নিয়ে বলল,

” কাউকে বলবে নাতো।”
পুষ্প বলল,
” না বলব না। তুই বল।”
পূজা লাজুক হেসে বলল,
” আমি একজনকে ভালবাসি।ওর আবার ভিডিও ফোন আছে। আমার তো নেই। ওর কাছে আবার এখন বেশী টাকা ও নেই। তাই এই ছোট ফোনটা আমাকে কিনে দিয়েছে।বলেছে আমার মুখ নাকি চাঁদের মত।সারাক্ষণ কল্পনায় দেখতে ভাল লাগেনা। টাকা জমিয়ে একটা ভিডিও ফোন কিনে দিবে।তখন সারাক্ষণ খালি আমার ই মুখ দেখবে।ও কবে দিবে তার ঠিক নেই। তাই ভাবলাম কাজের সুযোগ যখন পেয়েছি এই টাকা দিয়ে ফোন কিনব আমি।”
পুষ্প বলল,

“বলিস কি? এই বয়সে এত প্রেম তোর কোথা থেকে আসে।এই তুই প্রেমের কি বুঝিস রে।”
পূজা আবার ও এক গাল হেসে বলল,
“আমি সেভেন থেকেই প্রেম করি কৃষ্ণের সাথে।”
কৃষ্ণ নামটা পুষ্পর খুব চেনা।মুহুর্তের মাঝে তার চেনা কৃষ্ণের মুখটা ভেষে উঠল।পুষ্প কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ওর নাম তাহলে কৃষ্ণ। ”
“হ্যাঁ দিদি।”
পূর্ণতা দুই গালে হাত দিয়ে বলল,

“বলে কি এই মেয়ে।এ নাকি সেভেন থেকে প্রেম করে।তুই তো ভীষণ ইচড়ে পাকা।”
পূজা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরেক টা গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনবা তোমরা।”
দুজনেই বলে উঠল, “কি?”
“আমি বিয়েও করে ফেলেছি গোপনে।আমি কিন্তু অবিবাহিত না।কৃষ্ণ ওর আঙুল কে’ টে র’ ক্ত দিয়ে সিঁদূর পরাই দিছে।”

পুষ্প আর পূর্ণ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেল।এই মেয়ে তো যেন তেন ইচড়ে পাকা নয়। পূর্ণতা চোখ কপালে তুলে বলল,
“তুই কি বাসর ও করেছিস?”
“না সে সুযোগ হয়নি।মন্দিরে গিয়ে ভাল করে বিয়ে করতে হবে।কৃষ্ণ বলেছে সাত পাক ঘোরার সময় প্রতিবার বলবে, ভালবাসি পূজা।তোমাকে অনেক পূজা করে পেয়েছি।”
পূর্ণতার চোখ এখনো কপালে।সে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৮

“আপু জীবনে করলাম টা কি? এই মেয়ে কি বলে এসব।আমার তো মাথা ঘোরায়”
পূজা খুব আগ্রহ নিয়ে বলল,
“পূর্ণ দি, তোমার কি তাহলে বাসর টাসর হয়নি।”
পূর্ণ চোখ রাঙিয়ে বলল, ” একদম মা’ র খাবি।ওসব আবার কি হ্যাঁ। ”
পুষ্প ওদের কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here